Site maintenance is running; thus you cannot login or sign up! We'll be back soon.

জাবেদ ভুঁইয়া

১০ বছর আগে

ঘাসফড়িংয়ের দেশে

 

 

কুয়াশা ঢাকা সকালে বারান্দার দুটো সিঁড়ি টপকে যেই খুকু একটা লম্বা লাফ ফেলেছে অমনি যেন সে কুয়াশার মধ্যে হারিয়ে গেল।
ওর মনে হল ও বাতাসে ভাসছে। সামনে কুয়াশা ,পেছনে কুয়াশা , ডানে বায়ে সব দিকে কুয়াশা। সাদা ফকফকে কোন মখমলের চাদরে তাকে জড়িয়ে যেন কোথায় নিয়ে যাচ্ছে ওকে।
খুকু কিন্তু ভয় পেলনা। ও ভারি সাহসী। বাবা , মা রোজ দেড়ি করে অফিস থেকে ফিরে। কোনদিন রাত দশটা আবার কোনদিন এগারোটা। বুয়া হা হয়ে টিভিতে সিরিয়াল দেখে। খুকু তখন রুমে একা বসে পড়ে। পড়া শেষ হলে বাতি নিভিয়ে ঘুমিয়ে পড়ে। একটুও ভয় পায়না।
মখমলের মত সাদা চাদরমত কুয়াশা ভারি ভাল লাগে খুকুর। ধুয়োর মত কেমন ভাসছে ওর সাথে সাথে। খুকুর ইচ্ছে করে ছোঁয়ে দেখতে। হাতের মধ্যে খানিকটা কুয়াশা পুরে দেখতে।
কিন্তু হাতদুটো তার নড়ছেনা। পা দুটোও ঠিক সেই লাফানোর মতই রয়ে গেছে। শুধু মাথাটা নড়ছে।
মাথা ঘুরিয়ে সোজা সামনে তাকায় খুকু। কুয়াশার চাদরটা পাতলা হয়ে আসছে। হ্যাঁ , সত্যিই তো । ঐ যে একপাশটা ফুড়ে কেমন  আলো উকি মারছে। সেই আলোটা আসতে আসতে বড় হতে থাকে। চোখ বরাবর আলোটা পড়তেই খুকু আর চেয়ে থাকতে পারেনা।
চোখ খুলতেই ও দেখে , একি ?
পায়ের নিচে সবুজ নরম দূর্বাঘাস। একটা বড় খোলা প্রান্তর। সে মাঠটাকে ঘিরে আবার লম্বা লম্বা সব পাহাড়। ডানপাশে যে মাথায় মত দেখতে বাঁকা পাহাড়টা , তার গা বেয়ে আবার পড়ছে একরাশ জলের ধারা। ঝর্ণা !
খুকু আনন্দে নেচে উঠে। দুহাত ছড়িয়ে মাথা থেকে ওমাথায় দৌড়ে চলে।
মাঠটার একপাশে আবার লম্বা সব গাছের সারি। সেখান দিয়ে গিয়েছে আবার একটা সরু রাস্তা। সে রাস্তাটা যেখানে বাক নিয়ে সেখানে একটা বেটে গাছ। সেটা গাছে লাল রঙের ফল ধরে আছে। খুকুর খুব খিদে পেয়েছিল। ও ভাবল একটা খাওয়া যাক।
যেই ও একটা ফলে হাত দিতে যাবে অমনি একটা চিকন ফিনফিনে স্বরে যেন কে বলে ,
: ওকি খুকু , ও ফল ধরোনা !
কে কথা বলে ? খুকু চারপাশে চোখমেলে তাকায়। কই কেউ তো নেই ! চারপাশে সব লম্বা লম্বা গাছ । একটারও নাম জানেনা খুকু।
: দেখতে পাচ্ছনা কি খুকু ?
আবার চিকন ফিনফিনে স্বরে কথাটা ভেসে আছে। খুকু এবার খুব ভয় পায়। ওযে সেবার ছুটিতে দাদুর বাড়ি গিয়েছিল , সেবার দাদু ওকে একটা গল্প শুনিয়েছিল। এ গল্পে একটা পাঁজি ভূত থাকে। সে অদৃশ্য হয়ে ছোট ছোট বাচ্চাদের ঘাড় মটকে দেয়।
সেরকম কিছু নয়তো ?
: কে তুমি ? তোমাকে দেখতে পাচ্ছি না কেন ? তুমি কি অদৃশ্য ভূত ?
খুকু ভয়ে ভয়ে বলে।
ফিনফিনে স্বরটা এবার কেমন ফিনফিনিয়েই হেসে উঠে। খুকু ভাবে , এই বুঝি দিল এবার ঘাড় মটকে। ওর ভারি কান্না পায়। গাল দুটো কেমন ফুলে ঢোল হয়ে উঠে।
: ওকি খুকু , ভয় পেয়েছে নাকি ?
ভয় পেওনা ভয় পেওনা
নইতো আমি ভূত
কারও আমি ঘাড় মটকাইনা
কোন অদ্ভুত !
সুন্দর ছড়া শুনে খুকুর ভয় কিছুটা কাটে। তাও সে তেমনি ছলছল চোখে গাল ফুলিয়ে বলে ,
: তাহলে কে তুমি ?
ফিনফিনে গলাটা আবার ভেসে আসে ,
: আমি যে কে , কেমন আমি
দেখতে যদি চাও
তোমার বায়ে ,বটের পাতায়
একটুকু তাকাও ।
খুকু তাকায়। ওমা , এযে একটা রঙচঙে ফড়িং। কেমন লেজ নাড়িয়ে ,পাখা ঝাঁকিয়ে পাতার উপর পরীর মত ভাসছে।
খুকু বলে , তোমার নাম কি ফড়িং ?
ফড়িংটা ভেসে একেবারে খুকুর নাকের ডগায়ে এসে পড়ে।
তারপর তার ফিনফিনে গলায় সুর করে বলে ,
ইরিং বিড়িং তিড়িং ছিড়িং
ফংড়ি দেশের ফুলকা ফড়িং নাম
হাওয়ার উড়ি , বাওয়ার ঘুড়ি
মিষ্টি স্বরে গেয়ে বেড়ায় গান ।
তারপর বলে , তোমার নামকি খুকু ?
খুকু বলে , আমার নাম পলকা।
শুনে ফড়িং বলে , বাহ! বেশতো নাম। চল এবার তোমাকে খেতে দিই।এসো আমার সাথে।
ফুলকা ফড়িং হাওয়া ভেসে চলে। খুকু চলে তার পাশে হেটে। দেখতে দেখতে জঙ্গলটা ফুরিয়ে যায়। আর তার পরেই পরেই আরেকটা খোলামাঠ। আর সে মাঠে ভেসে বেড়াচ্ছে অসংখ্য ফড়িং।

লালচে ,নীলচে ,কালচে রঙের ফড়িং ,
দেখে খুকু নাচে তিড়িং বিড়িং ।

ফুলকা ফড়িং বলে , এই আমাদের দেশ খুকু ।আমাদের দেশে নাম ফংড়ি।
ফুলকার কথা ফুরোবার আগেই হৈ হৈ রৈ রৈ পড়ে যায় ফড়িংদের দেশ ফংড়িতে। ঝাঁকে ঝাঁকে ফড়িং ঘিরে ধরে ওকে। সবার মুখে ছড়া। সবাই তার ছড়া আগে শুনাতে চায় খুকুকে।
ফুলকা এবার ধমকে উঠে , থাম তোমরা । খুকুর খুব খিদে পেয়েছে । ওকে আগে রাজপ্রাসাদে নিয়ে খেতে দেই। তারপর সব হবে ।
রাজপ্রাসাদে যেতেই বাঁধল বিপত্তি। প্রাসাদের চারপাশ ঘিরে রয়েছে একটা দিঘি। ফড়িংরা তো উড়ে চলে যায়। কিন্তু খুকু যাবে কি করে ? ওর তো আর পাখা নেই ।
খুকুকে এখানে রেখে ফুলকা যায় ফড়িং রাজার কাছে। বিজ্ঞ ফড়িংদের নিয়ে সভা বসে সেখানে। শেষমেশ সিদ্ধান্ত হয় সব ফড়িং মিলে খুকুকে উড়িয়ে নিয়ে যাবে।
সেই বলা সেই কাজ।

পাঁচশো ফড়িং দল বাঁধিয়ে পড়ে
একশ পায়ে একশো হাতে ধরে
একশ আগলায় খুকুর মাথায় চুল
একশ ফড়িং ধরে খুকুর দুল ।

তারপর , হেঁইয়ো ! বলে সব ফড়িং মিলে খুকুকে হাওয়ায় ভাসিয়ে নিয়ে যায় ।
সে এক রাজপ্রাসাদ বটে ফড়িংদের । দুটি বিরাট ময়ূরয়ের উপর একটা বিরাটকার ফড়িং যেন হাওয়ায় ভাসছে।
খুকুর খাওয়া দাওয়া শেষ হতে না হতেই রাজপ্রাসাদে খুকুর স্নানে বসে গেল বিরাট একটা আসর।
হৈ রৈ রৈ করে ফড়িংরা শুরু করে দিল অনুষ্ঠান ।

একদলে নাচে ওরে, আরেকদলে গায়
নাট্যফড়িং , ফড়িংস্কৃতি ,ফড়িংনৃত্য পায় ।

খুকু ভাবে , ভারিতো মজা। এখানেই থাকব সারাজীবন। বাবা , মা থাকুক ওদের কাজ নিয়ে ।খুকু ফড়িংদের দেশেই থাকবে ।
অনুষ্ঠান শেষ হতেই ফুলকা ফড়িং বলে ,এসো খুকু তোমাকে আমাদের চাঁদ দেখায়।
প্রাসাদের জানালায় এসে দাড়ায় খুকু ।কোথায় চাঁদ ? এযে ঘনকুয়াশার চাদর ! মূহুর্তেই যেন ফড়িং রাজা , ফুলকা ফড়িং ,ফড়িংদের রাজ্য সব সাদা চাদরে ঢেকে যায়।
খুকুর মা ডাকেন , পলকা উঠ । আটটা বেজে গেছে ,খেয়ে দেয়ে তোকে স্কুলে দিয়ে আমি অফিসে যাব ।
খুকু বিছানা থেকে উঠে চোখ কচলায়। তবে কি সব স্বপ্ন ?
ওর ইচ্ছে করে বেশ করে কাঁদে। আর চেঁচিয়ে মাকে বলে , মা আমি স্কুলে যাবনা , আমি ফড়িংদের দেশে যাব !

সমাপ্ত

 

২ Likes ৬ Comments ০ Share ৪৮০ Views

Comments (6)