Site maintenance is running; thus you cannot login or sign up! We'll be back soon.

বাংলা নিউজ

৯ বছর আগে

ঘটনা তাহলে এই

বিশ্বসেরা ক্রিকেট অলরাউন্ডার সাকিব আল হাসানকে ঘরোয়া ও আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে ছয় মাসের জন্যে নিষিদ্ধ করেছে বিসিবি। কিন্তু ঘটনার মূলে উম্মে আহমেদ শিশির, সাকিবের স্ত্রী। যিনি ইভটিজিংয়ের শিকার।  সাকিব আল হাসানকে নিষিদ্ধ করার নেপথ্যে আসলে যা সক্রিয় ভূমিকা রেখেছে তাহলো জিঘাংসা চরিতার্থ করা।

প্রতিহিংসার বশে সাকিবের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে গিয়ে বিসিবি এমন ভাবে শাস্তি বিধান করেছে যাতে তার ক্যারিয়ারের বারোটা বেজে যায়। এমনকি তারা বলল, ‘২০১৫ সালের ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত বিদেশি কোনো লীগে খেলার জন্যও অনাপত্তিপত্র (এনওসি) দেওয়া হবে না তাকে। এখন থেকে বিজ্ঞাপনের শুটিংসহ যে কোনো ধরনের বাণিজ্যিক কার্যক্রমে অংশ নিতে হলে বিসিবির অনুমতি নিতে হবে’।

শৃঙ্খলটা জোরদার করার পর বিসিবি আরেকটু আগ বাড়াল, ‘ভবিষ্যতে শৃঙ্খলা ভঙ্গের পুনরাবৃত্তি হলে আজীবন নিষিদ্ধ করা হবে’।

নিষেধাজ্ঞার কারণে সাকিব আগামী আগস্টে ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফর এবং অক্টোবরে ঘরের মাঠে জিম্বাবুয়ে সিরিজও খেলতে পারবেন না।

সোমবার যখন সাকিবের বিরুদ্ধে এসব শাস্তির ঘোষণা দিচ্ছিলেন বিসিবি সভাপতি ও সরকারদলীয় সাংসদ নাজমুল হাসান পাপন, তখন বিস্ময়কর ব্যাপারগুলো দৃশ্যমান হলো।

পাপন অসৌজন্যমূলক তুইতোকারির সম্বোধন করে সাকিবকে বারবার ‘ও’ ‘ও’ বলছিলেন। তার কণ্ঠ থেকে যেন ক্রোধ ঝরে পড়ছিল। দেহভঙ্গিতে ছিল প্রতিশোধ চরিতার্থ করার আত্মতৃপ্তি।

তবে পাপন গোলমাল পাকিয়েছেন সাকিবকে নিষিদ্ধ করার ব্যাখ্যা দিতে গিয়ে।

তিনি বললেন, ‘ওর বিরুদ্ধে যে অভিযোগগুলো শুনেছি...কতগুলো…এত অমানবিক মনে হয়েছে যে আমরা অনেকে ইমোশনাল হয়ে পড়েছিলাম। কীভাবে একটা মানুষ এমন করতে পারে!’

সাকিব এমন কি অমানবিক কাজ করেছেন যা পাপনদের এত ইমোশনাল করে ফেলল, আর তিনি ডায়লগ দিলেন-‘আর বাড়তে দেওয়া যাবে না’?

কোথাও কি বাড়াবাড়ি করেছেন সাকিব, যেন তাকে বাড়তে না দেয়ার প্রশ্ন আসল?

ঘটনার নেপথ্যের ঘটনা বলব না বলব না করেও যা চেপে রাখেননি পাপন। এক পর্যায়ে তিনি ঠিকই বললেন গত ১৫ জুন ভারত ও বাংলাদেশের তিন ম্যাচ ওয়ানডে সিরিজের প্রথম ম্যাচের খেলা দেখতে গিয়ে সাকিবের স্ত্রী উম্মে আহমেদ শিশিরকে ইভটিজিংকে কেন্দ্র করে যা ঘটেছে তার খণ্ডাংশ।
 
ওই দিন ভিআইপি গ্র্যান্ডস্ট্যান্ডে বসে খেলা দেখতে আসা চার জন তরুণ সাকিবের স্ত্রীকে ইভটিজিং করে। নিপীড়নের ঘটনা জেনে বউকে হেফাজত করতে ছুটে যান সাকিব। এক অপরাধীকে ঘটনাস্থলেই কিল-ঘুষি দেন তিনি। এ ঘটনায় চার অপরাধীর বিরুদ্ধে মামলাও করেন অলরাউন্ডার সকিব।

খেয়াল করার বিষয় হল, পাপন এ ঘটনার প্রেক্ষাপটকে আমলে নেননি। বিসিবি প্রধান হলেও তিনি বিশ্বসেরা অলরাউন্ডারের স্ত্রীর নিপীড়িত হওয়াকে পাত্তাই দিলেন না। বরং জঘন্য ইভটিজারের অপরাধ আড়াল করে তিনি অপরাধিকে ‘একটি ছেলে’ বলে উল্লেখ করলেন।

এই ‘একটি ছেলে’র নিপীড়ন থেকে স্ত্রীকে হেফাজত করতে ড্রেসিং রুম ছেড়ে ভিআইপি গ্যালারিতে যাওয়া নাকি পাপনের চোখে ‘ধৃষ্টতা’! আর এই ধৃষ্টতাকে ‘আর প্রশ্রয় দেওয়া যায় না’ বলে বিসিবি প্রধানের দৃঢ়তা (!) বিশেষ তাতপর্যবহ।

প্রশ্ন হচ্ছে স্ত্রীকে ইভটিজা্রদের কবল থেকে রক্ষায় এগিয়ে যাওয়া, একজন ইভটিজা্রকে শায়েস্তা করা কেন সাকিবের ধৃষ্টতা হয়ে যাবে?

এটা খুবই শঙ্কার ব্যাপার যে সাকিবের উপর বিসিবির যা কিছু খড়গ হস্ত হওয়া তার মূলে রয়েছে এই ঘটনাটি।

তথ্যানুসন্ধানে জানা গেছে, সাকিবের স্ত্রীকে নিপীড়ন করার সাথে জড়িত চার তরুণই কথিত অভিজাত পরিবারের সদস্য। তাদের একজন রাহিদ রহমানকে (২৩) গত ১৮ জুন রাত সাড়ে ১০টার দিকে রাজধানীর অভিজাত এলাকা বনানীর ১০ নম্বর রোডের নিজ বাসা থেকে গ্রেফতার করে পুলিশ।

গ্রেফতার হওয়া তরুণ ইভটিজিংয়ের মত ফৌজদারি অপরাধে জড়িত হলেও তিনি অভিজাত পরিবারের সন্তান। তার বাবা দেশের বিশিষ্ট ব্যবসায়ী বজলুর রহমান।

এছাড়া অন্য তিন জন ইভটিজারও অভিজাত পরিবারেরই সন্তান। তাদের একজন হলেন চট্টগ্রাম থেকে নির্বাচিত সরকারদলীয় এক সাংসদের ছেলে।

ঘটনাচক্রে এই অভিজাত টিজারদের একজনের বাবা বিসিবি প্রধান পাপনের বন্ধু। পাপন যেই ক্লাবের হয়ে ক্রীড়া সংগঠক পরিচয়ে বিসিবির সভাপতি হয়েছেন, ইভটিজারের বাবা আবার সেই ক্লাবের একজন পরিচালক।

ফলে এটিই হয়তো অভিজাত ন্যায় নীতি যে সাকিব তার স্ত্রীকে নিপীড়নের প্রতিকার চেয়ে মামলা করলেও তাকে সেই মামলা তুলে আপোষ করতে হবে। এজন্য সাকিবকে প্রচণ্ড চাপের মুখোমুখি হতে হয়েছে।

বিশ্বের খ্যাতিমান ক্রিকেটার হয়েও স্ত্রীর নিপীড়িত হওয়ার ঘটনায় তিনি বিসিবিকে পাশে পাননি। বরং বিসিবির পক্ষপাত ছিল ইভটিজারদের পক্ষে। এই পক্ষপাতের কারণেই জাতীয় ক্রিকেট দলের টিম হোটেলে গিয়ে ব্যবসায়ী বজলুর রহমান ও তার স্ত্রী সাকিবকে মামলা তুলে নিতে চাপ দিতে পেরেছেন।

অবশ্য সাকিব অপরাধীদের চাপ সত্ত্বেও মামলা চালানোর ব্যাপারে অটল থাকেন। এতে তিনি বিসিবির চাপের মুখে পড়েন, পাশে দাঁড়ানোর বদলে তার বিরুদ্ধে শৃঙ্খলা ভঙ্গের অভিযোগ তুলে শাস্তি দেয়ার পায়তারা করে বিসিবি।

তবে বাংলাদেশের অভিজাতরা যতখানি অভিজাত হোন না কেন সাকিবকে দেখে নেয়াটা তাদের জন্য রিক্সাঅলাদের চড় মারার মত সহজ ব্যাপার নয় কখনোই। সাকিব বিশ্বসেরা অলরাউন্ডার, জাতীয় ক্রিকেট দলের সাবেক অধিনায়ক। দেশ-বিদেশের ক্রিকেটপ্রেমীর অকুণ্ঠ সমর্থন রয়েছে তার প্রতি।

গুরুত্বপূর্ণ হল ক্রিকেট অন্তঃপ্রাণ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও সাকিব আল হাসানকে বিশেষ পছন্দ করেন। তার খেলার মুগ্ধ সমর্থক তিনি। তাই সাকিবের জ্বর হলেও তাকে হাসপাতালে দেখতে যান প্রধানমন্ত্রী।

ফলে সাকিবকে শিকার করতে দরকার ছিল চক্রান্তের। যেই চক্রান্ত সামনে রাখলে ঠাণ্ডা মাথায় পরিকল্পনা করে তার ক্রিকেট খেলা নিষিদ্ধ করা যায়।

চক্রান্তের ধাপগুলো দেখে বুঝতে অসুবিধা হয় না সাকিব বিরোধীরা কত গভীর পানির রুই-কাতলা। প্রথমে ক্যারিবিয়ান প্রিমিয়ার লীগ (সিপিএল) খেলতে যাওয়া নিয়ে ফাঁদ পাতা হল, তারপর অসত্য প্রচারণা চালিয়ে প্রথমে তার প্রতি জনমতের একাংশকে বিগড়ে দেয়া হল।

ব্যস, হয়ে গেল। সাকিব বধের যজ্ঞ প্রস্তুত করতে আর কোন অসুবিধা থাকল না ইভটিজার অভিজাতদের সমর্থক বিসিবির অভিজাতদের।

কিন্তু যজ্ঞে সাকিব বধ শেষে পাপন কিছুই আর লুকিয়ে রাখলেন না। সাকিবের ‘ধৃষ্টতা’র কথা তুলে ধরে তিনি ক্রোধ প্রকাশ করলেন। প্রতিশোধ নিতে পারায় দেহভঙ্গিতে জিঘাংসার তৃপ্তি জাহির করলেন।

অথচ, সাকিব সিপিএল খেলার অনাপত্তি পত্র (এনওসি) যোগার করতে বিসিবির ক্রিকেট অপারেশনস কমিটির প্রধান আকরাম খানের সাথে যোগাযোগ করেছিলেন। তিনি সাকিবকে বলেছিলেন বিসিবির ভারপ্রাপ্ত প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) নিজাম উদ্দিন চৌধুরীর সাথে যোগাযোগ করতে।

নিজামের সাথে যোগাযোগ করলে তিনি সাকিবকে ফের আকরাম খানের সাথেই যোগাযোগ করতে বলেন। এ দফার যোগাযোগে আকরাম তাকে সিপিএলে খেলতে সমস্যা নেই জানিয়ে মৌখিক অনুমতি দিলেন এবং বললেন দেশে ফিরলে এনওসি সাইন করে দেবেন।

কিন্তু আকরাম খানের আশ্বাসে অনাপত্তি ছাড়াই সিপিএল খেলতে যাওয়াই যে ফাঁদে পা দেয়া তা টেরও পাননি সাকিব।

তাই গত বুধবার স্ত্রীকে নিয়ে সাকিব দেশ ছাড়ার পরপরই কলকাঠিগুলো নড়েচড়ে ওঠে। সিপিএল খেলতে বারবাডোজ যাওয়ার পথে লন্ডনে অবস্থান কালেই তাকে যত তাড়াতাড়ি দেশে ফিরে জাতীয় দলের অনুশীলনে যোগ দিতে বলে দেয় বিসিবি।

বিসিবির নোটিশ পেয়ে গত রোববার দেশে ফিরে আসেন সাকিব। কিন্তু এর মধ্যেই নয়া কোচ চন্দ্রিকা হাথরুসিংয়ের বরাত দিয়ে দেশের পক্ষে সাকিবের ক্রিকেট না খেলার হুমকিসহ নানা অভিযোগের জোরালো প্রচারণা হয়ে গেছে।

তাই দেশে ফিরে সাকিব দেশের হয়ে আরো দশ বছর ক্রিকেট খেলতে চাওয়ার কথা বলেও তার দেশপ্রেমের প্রমাণ দিতে পারলেন না। বরং ক্রিকেট বিশ্বে বাংলাদেশকে মর্যাদার আসনে বসাতে তার সব অর্জনই এক ঘষাতেই মুছে দেয়া হল।

যেকোনো মূল্যে শাস্তি দেয়া যখন ক্রিকেট অঙ্গনে আসা ক্ষমতাবান অখেলোয়াড়দের উদ্দেশ্য হয়ে যায় তখন একজন ক্রিকেটারের নিষিদ্ধ হওয়া ছাড়া আর কোন উপায় থাকে না।

উপায় সাকিবেরও থাকল না। 
০ Likes ০ Comments ০ Share ৫১৪ Views

Comments (0)

  • - রোদেলা

    emoticons

    • - আলমগীর সরকার লিটন

      emoticons

    - পিয়ালী দত্ত

    ভালোলাগা রইল...আমার পাতায় আমন্ত্রণ রইল।

    • - আলমগীর সরকার লিটন

      অবশ্যই আপনার পাতায় আসব

      মনত্ব্য করার জন্য ধন্যবাদ ভাল থাকুন