Site maintenance is running; thus you cannot login or sign up! We'll be back soon.

sokal roy

৮ বছর আগে

গ্যাব্রিয়েলের কুকুরজন্ম




 

 

কুকুরের নাম গ্যাব্রিয়েল।
কসুমদ্দিন জিজ্ঞাসা করলো, পিপড়া ভাই, এইটা কি বিদেশী কুত্তা?
-না-ভাই এটা বিদেশী না সহি দেশী প্রাণী, তবে দেখলে সহসা বুঝা যায় না। আর মিয়া কসুমদ্দিন, কুকুরকে কুত্তা বলা ঠিক না। কসুমদ্দিনের মুখের দিকে তাকিয়ে বুঝলাম কথাটা ঠিক তার মনঃপুত হলো না। তাই ত্রিশ সেকেন্ড অপেক্ষা করে আবার বললো, দেশী কুত্তার নাম তো দেশী ই হওন দরকার, গ্যাব্রিয়েল নামডা তো বিদেশী মনে অয়।

আমি বসেছিলাম গ্যাব্রিয়েল কে নিয়ে। ওর গলার শিকল ছাড়িয়ে মাঠের ঘাসে ছেড়ে দিলাম। তিন মাসের বাচ্চা। আর কয়েক মাস চলে গেলেই নিজেকে রক্ষা করতে শিখে যাবে। শিকলটা ব্যাগে ঢুকাতে ঢুকাতে বললাম, মিয়া কসুমদ্দিন দেশী মানুষের নাম যদি গ্যাব্রিয়েল হতে পারে তাহলে দেশী কুকুরের নাম গ্যাব্রিয়েল হতে দোষ কি?
কথা শেষ হতেই মাথা চুলকে কসুমউদ্দিন বললো, কুত্তা আর মানুষ কি এক হইলো নি? কই টাই-স্যুট পড়া মানুষ আর কই রাস্তার নেড়ি কুত্তা!
ওর কথা শুনে কিছুক্ষণ দাঁত চেপে হাসির ভাব নিলাম।
 
কুকুর আর মানুষে অনেক মিল আছে, বহুকাল ধরে কুকুর আর মানুষ বন্ধুর মতো চলে আসছে। বিস্তর কাহিনীর দৃশ্যায়নে নাইবা গেলাম তবে কসুমদ্দিন, একটা কথা তো স্বীকার করবে নিশ্চয়ই, কুকুর একজন প্রভুভক্ত প্রাণী ট্রেনিং দিয়ে নিলে সে অনেক কাজই করতে পারে এমনকি মানুষের সাথে সহবাস ও করতে পারে তবে তার ভেতরকার কুকুরত্ব হারিয়ে সে মানুষের মতো কুকুর হতে পারে না।

কথা শেষ করে দেখি কসুমদ্দিনের হাতের চায়ের কাপ
তাতে সে বিস্কুট ডুবিয়ে খাচ্ছে। তার মানে বোঝাই গেল আমার কথাগুলো বিস্কুটের মতো তার পেটে চলে গেছে। কিছুই মাথায় ঢুকে নি। সেদিনের মতো তাকে বুঝিয়ে বললাম কুকুরকে কখনো কুত্তা বলে গালি দিও না, কারন তুমি মানুষ। মানুষ কুকুর হতে পারে, কিন্তু কুকুর মানুষ হতে পারে না আর গালিও দিতে পারে না।

তারপর অনেকদিন কসুমদ্দিনের সাথে দেখা নেই। আমার গ্যাব্রিয়েল এখন নিজেকে রক্ষা করতে শিখে গেছে। তাকে নিয়ে সেদিন বেড়িয়েছিলাম। তিন পয়সার মোড়ে আসতেই দেখি কসুমদ্দিন মুখ আন্ধার অবস্থায় দাড়িয়ে আছে। মাথায় হুলস্থুল গামছা বাঁধা। তাকে জিজ্ঞাসা করলাম কি হয়েছে মিয়া কসুমদ্দিন?
 
সে গলাভাঙ্গা স্বরে যা বললো, তার মর্মার্থ এই- কসুর মেয়েকে কোন অপাঙেতয় কেউ তুলে নিয়ে গেছে। নিরাপত্তা বাহিনী লোক বলেছে, চেষ্টা চলছে...
পইপই করে খোঁজাখুঁজির কাজ আপাতত শেষ। মেয়েকে আমার সামনেই শাপ-শাপান্ত করেই চলেছে কসুমদ্দিন।
  কথার ফাঁকে ফাঁকে আবার বলছে- কুত্তার বাচ্চারা আমার মাইয়ারে উডাইয়া নিয়া গেছে...

কসুমদ্দিনের বিলাপে ইতোমধ্যে চারপাশে জটলা হয়ে গেছে। আমি উপায়ন্তর না দেখে বললাম মিয়া কসুমদ্দিন থামো। আমি ব্যাপারটা দেখছি। ইতিমধ্যে ইউনিয়নের ছেলেরা এসে হাজির। ব্যাপারটা বলতেই পুলিশ স্টেশনের দিকে ছুটলো ওরা। ছুটির দিন থাকায় অনেকেই জমায়েত হয়ে গেলেন তিন পয়সার মোড়ে। কসুমদ্দিন আর গ্যাব্রিয়েলকে নিয়ে পাশের গার্ডেনে বসে রইলাম। ঘন্টা দুয়েক পর খবর এলো ভিকটিমের সন্ধান মিলেছে।
  

আসবার সময় বললাম কসুমদ্দিন তুমি তো ভুল বকছিলে তখন। কোন কুকুরের বাচ্চার সাধ্য নাই তোমার মেয়েকে উঠিয়ে নিয়ে যায়। তবুও তুমি তাদেরকেই গালি দিলে। ফ্যাল ফ্যাল করে তাকিয়ে থেকে কসুমদ্দিন বির বির করে বললো, ভাইরে মাথাডা খারাপ হয়া গেছে তো হের লাইগ্যাই...

 

খারাপ কিছু হলেই মানুষ কুকুরের জাত তুলে মানুষকে তিরস্কার করে। ভাগ্যিস কুকুরদের সেসব বোঝার ক্ষমতা নেই নয়তো কামড়ে দিত এদেরকে। 

তিনদিন পর থানায় আমার ডাক পড়লো। আমি একটু অবাকই হয়েছিলাম। কসুমদ্দিনের মেয়ের বিষয়ে তো আমার কিছুই জানা নেই। কি বলবো জিজ্ঞাসাবাদে? তের-একত্রিশ না ভেবে গ্যাব্রিয়েলকে সাথে নিয়ে বেড়িয়ে পড়লাম। থানার বারান্দার চেয়ারে বসে ছিল কসুমদ্দিনের বউ আর ভেতরে হতেই কসুমদ্দিনের গলার আওয়াজ শুনা যাচ্ছিল। কসুম চিকারে করে বলছে- কুত্তার বাচ্চাগো ঘরে মনে অয় মা-বইন নাই! 

ইউনিয়নের ছাত্ররা আন্ধাপাড়া ফ্ল্যাট থেকে কসুমদ্দিনের মেয়েকে উদ্ধার করেছিলো। সাথে ভিকটিম ছেলেটিকেও। ফুঁসলিয়ে নিয়ে গিয়েছিল। ধর্ষনের পর ডাক্তারি পরীক্ষায় হাসপাতালে রয়েছে মেয়েটি। ইউনিয়নের ছেলেরা অবশ্য ইতোমধ্যেই উত্তম-মাধ্যম দিয়ে দিয়েছে। বর্তমানে ধর্ষনের বিচারের ব্যাপারে এলার্জি সর্বত্রই আছে। বিচারের বদলে লাঞ্চনায় মৃত্যু উপহার নিশ্চিত যেন না হয় সেটাই ভাবছিলো সকলে। বিচার তো হবে না। কদিন পরেই বেল পেয়ে যাবে। অগ্যতা ভিকটিমের শাস্তি স্বরূপ মেয়েটিকে বিয়ে করতে বাধ্য করলো ওরা।

সন্ধ্যের দিকে সবাই যখন ফিরে গেছে। কসুমদ্দিনের হাতে বেশকিছু টাকা গুজে দিয়ে বললাম, আজিব বাত কি জানো কসুমদ্দিন? কুকুর কি আকাশ থেকে জন্মায় নাকি? ওদের ও মা আছে। কুকুরের সমাজে ধর্ষণ বলে কিছু নেই সবটাই আপোষ। তোমার মেয়েকে কুকুর তো কিছু করে নি, তবুও আবার তাদের গালি দিলে।
কসুমদ্দিন আমার হাত ধরে বললো, ভাই আমারে মাফ দ্যান। কসুমদ্দিনকে কমন কিছু শান্তনা দিয়ে ফিরে এলাম আর শেষবারের মতো বলে এলাম- কসুমদ্দিন কুকুর কখনো মানুষ হতে পারে না কিন্তু মানুষ কুকুর হতে পারে অনায়াসেই। তাই মানুষের কুত্তামির জন্য মানুষি গালি দিবা, কুত্তা গালি না।
   

যখন গ্যাব্রিয়েল কে নিয়ে অটোতে উঠছিলাম তখন ও কুই কুই করে শব্দ করছিল।
  মনে হচ্ছিল ও মনে মনে বিদ্রোহ করছিলো আর ভাবছিলো মানুষ কেন এই প্রভুভক্ত প্রাণীটির নাম ধরে  নরপশুদের গালি দেয়।

 

৫ Likes ৭ Comments ০ Share ৫৩৬ Views

Comments (7)

  • - মাসুম বাদল

    ভাললাগা জানালাম... 

    • - চারু মান্নান

      ধন্যবাদ কবি দা

    - ওয়াহিদ মামুন

    সুন্দর।

    - চারু মান্নান

    ধন্যবাদ ভা্