Site maintenance is running; thus you cannot login or sign up! We'll be back soon.

গঙ্গা আমার মা

গঙ্গা  ভারত  বাংলাদেশে প্রবাহিত একটি আন্তর্জাতিক নদীএই নদীভারতীয় প্রজাতন্ত্রের জাতীয় নদীও বটে। গঙ্গার দৈর্ঘ্য ২,৫২৫ কি.মি. (১,৫৬৯ মাইল); উৎসস্থল পশ্চিম হিমালয়ে ভারতের উত্তরাখণ্ড রাজ্যে। দক্ষিণ ও পূর্বে গাঙ্গেয় সমভূমি অঞ্চলের উপর দিয়ে প্রবাহিত হয়ে গঙ্গা মিশেছে বঙ্গোপসাগরেগঙ্গাবাংলাদেশেপদ্মানামেপরিচিত।জলপ্রবাহের ক্ষমতা অনুযায়ী গঙ্গা বিশ্বের প্রথম ২০টি নদীর একটি। গাঙ্গেয় অববাহিকার জনসংখ্যা ৪০ কোটি এবং জনঘনত্ব ১,০০০ বাসিন্দা প্রতি বর্গ মাইলে (৩৯০ /কি.মি.)এটিই বিশ্বের সবচেয়ে জনবহুল নদী অববাহিকা। পৃথিবীর এক পঞ্চমাংশ মানুষ ভারতিয় উপমহাদেশে বাস করে তার কারণ গঙ্গা ও এর শাখা নদী। এ নদী প্রতি বছর ৪৩০ টন পলি বয়ে আনে যা দ্বারা আমাদের কৃষি কাজের জন্য অপরিহার্য।

গঙ্গা হিন্দুদের কাছে পবিত্র নদী। তাঁরা এই নদীকে দেবীজ্ঞানে পূজা করেন। গঙ্গার ঐতিহাসিআরক গুরুত্বও অপরিসীম; একাধিক পূর্বতন প্রাদেশিক ও সাম্রাজ্যিক রাজধানী (যেমন পাটলিপুত্র, কনৌজ, কাশী, এলাহাবাদ, মুর্শিদাবাদ, মুঙ্গের  কলকাতা) এই নদীর তীরেই অবস্থিত। উৎস থেকে মোহনা পর্যন্ত সম্পূর্ণ গঙ্গা নদীটিই হিন্দুদের কাছে পবিত্র। সব জায়গাতেই গঙ্গাস্নান হিন্দুদের কাছে একটি পুণ্যকর্ম বলে বিবেচিত হয়। গঙ্গার জলে হিন্দুরা পূর্বপুরুষদের তর্পণ করে। গঙ্গায় ফুল ও প্রদীপ ভাসায়। এমনকি গঙ্গাস্নান সেরে ঘরে ফেরার সময়েও কিছু পরিমাণ গঙ্গাজল ঘরোয়া ধর্মানুষ্ঠানে ব্যবহারের জন্য তুলে নিয়ে যায়। প্রিয়জনের মৃত্যু হলে মৃতের অস্থি গঙ্গায় বিসর্জন দেওয়া হয়।

হিন্দু পুরাণের সবখানেই গঙ্গাজলকে পবিত্র বলা হয়েছে। অনেক জায়গায় স্থানীয় নদীগুলিকে "গঙ্গাতুল্য" মনে করা হয়। যেমন, কাবেরী নদীকে বলা হয় "দক্ষিণের গঙ্গা"। গোদাবরী নদীকে মনে করা হয়, ঋষি গৌতম কর্তৃক মধ্যভারতে আনীত গঙ্গা। হিন্দুদের প্রতিটি ধর্মীয় অনুষ্ঠানে গঙ্গাকে আবাহন করা হয়। মনে করা হয়, সকল পবিত্র জলেই গঙ্গা অধিষ্ঠিত। গঙ্গোত্রী, হরিদ্বার, প্রয়াগ  বারাণসীতে গঙ্গাস্নান হিন্দুদের কাছে বিশেষ পুণ্যকর্ম। গঙ্গার প্রতীকী ও ধর্মীয় গুরুত্ব ভারতে সংশয়বাদীরাও স্বীকার করেন। জওহরলাল নেহেরু নিজে ধর্মবিরোধী হলেও তাঁর চিতাভষ্মের একমুঠো গঙ্গায় বিসর্জন দিতে বলেছিলেন। তিনি লিখেছিলেন, "গঙ্গা ভারতের নদী। ভারতবাসীর প্রিয়। এই নদীকে ঘিরে রয়েছে কত জাতির কত স্মৃতি, কত আশা ও ভীতি, বিজয়ের কত গান, কত জয়পরাজয়। গঙ্গা ভারতের প্রাচীন সংস্কৃতি ও সভ্যতার প্রতীক। কত পরিবর্তনের মধ্যে দিয়ে নিত্য বয়ে চলে গঙ্গা। তবু সে রয়েছে সেই গঙ্গাই।"

 

হিন্দুরা মনে করে মা গঙ্গার সব কিছু ধুয়ে নিয়ে যাবার ক্ষমতা আছে। কন্তু আজ কাল যে পরিমান দূষণ চলছে তাতে কতদিন এ ক্ষমতা থাকবে বলা মুশকিল।

গঙ্গার বিশ্বের পাঁচটি সবচেয়ে দূষিত নদীর একটি। বারাণসীর কাছে এই নদীতে ফেসাল কলিফর্মের পরিমাণ ভারত সরকার নির্ধারিত সীমার চেয়ে একশো গুণ বেশি। গঙ্গাদূষণ শুধুমাত্র গঙ্গাতীরে বসবাসকারী কয়েক কোটি ভারতীয়েরই ক্ষতি করছে না, করছে ১৪০টি মাছের প্রজাতি, ৯০টি উভচর প্রাণীর প্রজাতি ও ভারতের জাতীয় জলচর প্রাণী গাঙ্গেয় শুশুকেরও গঙ্গাদূষণ রোধে গঙ্গা অ্যাকশন প্ল্যান নামে একটি পরিকল্পনা গৃহীত হয়েছিল। কিন্তু দূর্নীতি, প্রযুক্তিগত অদক্ষতা, সুষ্ঠ পরিবেশ পরিকল্পনার অভাব, ভারতীয় ধর্মীয় ঐতিহ্য ও বিশ্বাস এবং ধর্মীয় সংগঠনগুলির অসহযোগিতার কারণে এই প্রকল্প ব্যর্থতায় পর্যবসিত হয়।

মা গঙ্গার ইতিহাসও বেশ মজার। গঙ্গা প্রথম মানুষ থেকে শুরু করে আজ পর্যন্ত যা কিছু এই ভারতীয় উপমহাদেশে হয়েছে সব কিছুর সাক্ষী এই মা গঙ্গা। সিন্ধু সভ্যতার অন্তিম হরপ্পা পর্যায়ে (১৯০০-১৩০০ খ্রিস্টপূর্বাব্দ) হরপ্পাবাসীরা সিন্ধু উপত্যকা ছেড়ে পূর্বদিকে বসতি স্থাপন করতে করতে গঙ্গা-যমুনা দোয়াব পর্যন্ত চলে আসে। যদিও কেউই গঙ্গা পার হয়ে পূর্বতীরে বসতি স্থাপন করেনি। খ্রিস্টপূর্ব দ্বিতীয় সহস্রাব্দের গোড়ার দিকে হরপ্পা সভ্যতার ভেঙে যাওয়ার সময় থেকে ভারতীয় সভ্যতার প্রাণকেন্দ্রটি সিন্ধু উপত্যকা থেকে সরে চলে আসে গাঙ্গেয় অববাহিকায়।[৪০] গাঙ্গেয় অববাহিকায় অন্তিম হরপ্পা বসতি এবং সমাধিক্ষেত্র এইচ পুরাতাত্ত্বিক সংস্কৃতি, ইন্দো-আর্য জাতি  বৈদিক যুগের মধ্যে কোনো সংযোগ থাকলেও থাকতে পারে।

আদি বৈদিক যুগ বা ঋগ্বেদের যুগে গঙ্গা নয়, সিন্ধু ও সরস্বতী নদীই ছিল পবিত্র নদী। কিন্তু পরবর্তী তিন বেদে গঙ্গার উপরের অধিক গুরুত্ব আরোপ করা হয়েছে।তারপর মৌর্য থেকে মুঘল সাম্রাজ্য পর্যন্ত অধিকাংশ ভারতীয় সভ্যতারই প্রাণকেন্দ্র ছিল গাঙ্গেয় সমভূমি।[১৭][৪২]

প্রথম যে ইউরোপীয় পর্যটকের রচনায় গঙ্গার উল্লেখ পাওয়া যায়, তিনি মেগাস্থিনিস (৩৫০-২৯০ খ্রিস্টপূর্বাব্দ)। তাঁর লেখা ইন্ডিকা বইটিতে একাধিকবার গঙ্গার উল্লেখ পাওয়া যায়: "ভারতে অনেক বড় ও নৌবহনযোগ্য নদী আছে। এই নদীগুলি উত্তর সীমান্তের পার্বত্য অঞ্চল থেকে উৎপন্ন হয়ে সমতল অঞ্চল বরাবর প্রবাহিত। অনেকগুলি নদী আবার পরস্পরের সঙ্গে মিলিত হয়ে সম্মিলিত রূপে মিশেছে গঙ্গা নদীতে। গঙ্গা নদী উৎসের কাছে ৩০ স্টেডিয়া চওড়া। এই নদী উত্তর-দক্ষিণে প্রবাহিত হয়েগঙ্গারিডাই দেশের (যে দেশে সবচেয়ে বড় আকারের হাতিদের বাহিনী রয়েছে) পূর্ব সীমান্তের মহাসাগরে পড়েছে।" (ডিওডোরাস ০ Likes ২ Comments ০ Share ৫৯০ Views

Comments (2)

  • - জাকিয়া জেসমিন যূথী

    জেনে উপকৃত হোলাম। থ্যাংক্স। 

    - Debabrata Das Mona

    শেয়ারটি আরও আগে দিলে আমার আরও উপকার হতো। ধব্যবাদ