আজ হাসানের বিয়ে। বাড়ীতে অনেক লোকের সমাগম। হাসান বাবা মায়ের একমাত্র সন্তান। তাই বাবা হামিদের ইচ্ছা অনুযায়ী জাঁকজমক করে বিয়ে দিবে। সে ভাবেই হাসানের বিয়ে হচ্ছে। বহুদনি আগের ঘটনা। দিনটি শবিবার ছিল। নতুন বউ আনা হলো বাড়ীতে। সবাই বাড়ীতে ব্যস্ত নতুন বউকে নিয়ে। নতুন বউয়ের সাথে কথা বলার মজাই আলাদা।
এদিকে হাসানের বাবা মা খুবই চিন্তায় পড়ে গেল। ছেলে ঘুম যাওয়ার পূর্বে একাকি অন্ধকারের মধ্যে হাঁটার অভ্যাস আছে। না জানি আজ রাতে কি ঘটে ! হাসানকে বহুবার জিজ্ঞেস করেছে সে ঘুমাবার পূর্বে হাঁটতে হাঁটতে কোথায় যায় ? কিন্তু সে ব্যাপারটি এড়িয়ে চলে সব সময়। তাই হাসানের মা হাসিনা বানু তার বাবা হামিদকে বললেন পূর্বের মতো এই ঘটনা যেন না ঘটে ! সেজন্য হাসানকে বলতে হবে যে, সে যেন আজ ঘুমের পূর্বে ঘরে না হাঁটাহাঁটি করে। দরকার পড়লে আজ আমরা তাকে পাহারা দিব। হাসানের বাবা বলল ঠিক আছে তাই হবে। হাসানের বাবা হাসানকে ডেকে বলল বাবা তুমি আজ অত্যন্ত সাবধানে থাকবে । আর ঘুমের ঘরে হাঁটাহাঁটি করবে না। হাসান বলল তোমরা যে কি বল না ? কবে দেখেছ যে, আমি ঘুমের মধ্যে হাঁটাহাঁটি করি ? হাসানের বাবা ভাবলো তাইতো সে কিভাবে বলতে পারবে কারণ সেতো ঘুমের মধ্যে হাঁটাহাঁটি করে। হাসানের মা হাসানকে বলল যাও বাবা ঘুমিয়ে পড় অনেক রাত হয়েছে। বউমা ঘরে একাই আছে। হাসান বলল ঠিক আছে মা।
এই বলে হাসান চলে গেল ঘরে। পরের দিন হাসানের বউভাত অনুষ্ঠান। বিশাল অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে। ৬টি গরু ও ১২টি ছাগল জবাই করা হয়েছে। ঘরের বাইরে টুক টাক টুক টাক মাংস কাটানোর আওয়াজ আসছে। মুরুব্বীরা বাইরে বসে গল্প করছে। হাসানের বাবা খুব ব্যস্ত কালকে এত বড় অনুষ্ঠান কিভাবে সামলাবে ? কাকে কোন কাজের দায়িত্ব দিবে ? এই বিভিন্ন রকম কাজ নিয়ে খুব ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছে। হাসানের মা‘ও খুব ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছে।
তো যাই হোক হাসান গেল তার ঘরে। হাসান লাজুক ছেলে। তার বউ আখলিমা বিছানায় একাই বসে আছে , হাসান কি বলবে কিছুই বুঝতে পারছে না। হাসান বিছানায় বসল। আখলিমা তাও কিছুই বলনা। হাসান আখলিমাকে বলল , কেমন লাগছে এ বাড়ীতে ? আখলিমা কিছুই বলল না। হাসান বলল কি হলো কোন কথা বলছনা যে ? আখলিমা বলল- জানিনা। হাসান বলল- লজ্জা পাচ্ছ বুঝি ? আখলিমা মাথা নাড়িয়ে বলল না। হাসান বলল- তাহলে আমার সাথে ঠিক মত কথা বলছনা কেন ? আখলিমা বলল- না মানে এমনিতে। হাসান বলল- ও তোমার মনে হয় ঘুম পাচ্ছে ? ঘুম পাবারি কথা অনেক রাত হয়েছে। আখলিমা বলল- আমার ঘুম পাচ্ছে না। হাসান বলল- আজ অনেক পরিশ্রম হয়েছে চল ঘুমিয়ে পড়ি।
এই বলে হাসান শুয়ে পড়ল বিছানায়। আর আখলিমাও কিছুণ পর শুয়ে পড়ল। কিন্তু আখলিমার নতুন বাড়ীতে কিছুতেই ঘুম আসছে না। আর এই ঘরটাতে তাকে খুব বিরক্ত লাগছে। কেন জানি মন বসছে না। আর সে ভাবছে না জানি আব্বু আম্মু আমাকে নিয়ে কি ভাবছে ? আমি কেমন আছি ? কি করছি ? এখানে কেমন লাগছে ? এসব কথা ভাবছে হয়তো। আর আমারও এই বাড়ীতে ঘুম আসছে না। এদিকে এসব কথা ভাবতে ভাবতে রাত ২ টা বেজে গেছে। বাইরে কোন আর আওয়াজ আসছেনা। সবাই ঘুমিয়ে পড়েছে হয়তো। কিন্তু আখলিমার যে, ঘুম আসছেনা। আখলিমা হাসানের দিকে তাকালো সে ঘুমিয়ে পড়েছে। আবার ঘড়ির দিকে তাকালো দেখে আড়াইটা বেজেছে। এবার আখলিমা চোখ বন্ধ করল। আর ভাবলো ঘুম আসুক আর না আসুক চোখ বন্ধ করে থাকায় ভালো। কিছুণ পরে এক শব্দ শুনতে পেল আখলিমা । সে চোখ খুলে দেখে হাসান দরজা খুলে ঘর থেকে বের হলো। আখলিমা ভাবলো প্রকৃতির ডাকে হয়তোবা সে ঘর থেকে বের হলো। অপোয় রইল আখলিমা দেখি কতণে সে ঘরে আসে । এই ঘরে তার একায় একায় থাকতে ভয় পাচ্ছে। ওই যে চোখ খুলল আখলিমা আর চোখ বন্ধ করতে পারলো না। আখলিমা ভাবছে , এত দেরি হচ্ছে কেন তার ? একবার ঘড়ির দিকে তাকালো সে দেখে রাত ৩ টা বেজে ১০ মিনিট। আখলিমা অবাক হলো মানুষটার ঘর থেকে বের হয়ে যাওয়ার আধা ঘন্টা হয়ে গেল, এখনো ঘরে ফিরছে না কেন ? অন্য কোন কাজে গেলেতো আমাকে বলে যেতে হবে , আমার কি ভয় পাচ্ছে। একবারও কি আমাকে জিজ্ঞেস করা উচিৎ ছিল না ? আখলিমা বিছানা থেকে উঠে ঘরের লাইট জ্বালালো। আরো কিছুণ অপোয় থাকলো। তার পরও হাসানের কোন খবর নেই। এবার অন্তত বাইরে গিয়ে দেখা দরকার। না আমি তো এ বাড়ীর কিছুই জানি না। এত রাতে আমার ঘর থেকে বের হওয়াটাও ঠিক হবে না ভাবছে আখলিমা । রাত শেষ হয়ে ভোর হয়ে আসছে। আর ১ ঘন্টা পরে ফজরের আযান দিয়ে দিবে। না এখন আমি কি করব। আমার খুব ভয় হচ্ছে। আখলিমা ভয়ে কান্না করতে লাগলো। এদিকে হাসানের বাবা মা হাসানের ঘরের বারান্দায় ঘুমিয়ে ছিল। খুব পরিশ্রম হয়েছে তাদের। তাই তারা গভীর ঘুমে আছন্ন। এক পর্যায়ে আখলিমার কান্না শুনে হাসানের মা হাসিনা বানুর ঘুম ভেঙ্গে যায়। আখলিমার কান্না শুনে তিনি হাসানের বাবাকেও ডাকতে শুরু করল , এই হাসানের বাবা, এই হাসানের বাবা উঠতো। হাসানের বাবা বলল কেন কি হয়েছে ? হাসানের মা বলল দেখতো বউমা কান্না করছে কেন ? হাসানের বাবা বলল হ্যাঁ ঠিকইতো বউমা কান্না করছে , ঘরে আবার লাইট জ্বালানো ! এই বলে হাসানের মা হাসানের ঘরের দরজাতে গিয়ে ডাক দিতে লাগলো এই হাসান ? হাসান কি হয়েছে ? বউমা কেন কান্না করছে ? আখলিমা দরজা খুলে কাঁদতে কাঁদতে বলল আপনার ছেলে কখন ঘর থেকে বের হয়েছে। এখনো ফিরে আসার কোন খবর নেই। হাসানের বাবা বলল কি বলছ বউমা ? হাসান কখন ঘর থেকে বের হয়েছে ? আখলিমা বলল এই ঘন্টা খানেক আগে। হাসানের মা বলল কি বলছ বউমা ? তুমি কি জানোনা মা তার ঘুমের মধ্যে হাঁটা অভ্যাস আছে ? কোথায় যে গেল এখন। এই বলে হাসানের বাবা কয়েকজন লোক নিয়ে হাসানকে খুঁজতে লাগলো। অনেকণ ধরে হাসানকে খুঁজলো তারা। আর কিছুণ পর ফজরের আযান দিবে। হাসানের বাবা খুব কান্ত। তারা খুঁজতে খুঁজতে এক পর্যায়ে হাসানকে দেখতে পেল বাড়ি থেকে একটু দূরে পুকুরপাড়ে । সে পুকুর পাড়ে আম গাছের নিচে কি যেন করছে। হাসানের বাবা হাসানের কাছে আসতেই দেখে এক কান্ড হাসান আম গাছের নিচে গলায় ফাঁস লাগানোর চেষ্টা করছে। হাসানের বাবা দৌড়ে গিয়ে ধরে ফেলে হাসানকে। একি করছিস বাবা ? হাসান বলল তোরা আমাদের রাস্তা থেকে সরে যা ! আজ আমি তাকে মেরে ফেলব। হাসানের কথা শুনে সবাই অবাক একি হাসানের গলায় মেয়েলি কণ্ঠস্বর। তাদের আর বুঝতে বাকি থাকলো না যে, তাকে ডাইনী ভর করেছে। তাকে মেরে ফেলার চেষ্টা করছে। ডাইনী একবার যাকে ধরে তার আর রেহাই থাকে না।
সবাই তারাতারি হাসানকে ধরে ফেললে হাসান ছুটে পালানো চেষ্টা করে কিন্তু ছুটে পালাতে না পেরে হাসান সেখানেই অজ্ঞান হয়ে যায়। হাসানের চাচা বলল আমাদের আর একটু দেরি হলে হাসানকে বাঁচানো যেত না। ওই শয়তান ডাইনীটা তাকে মেরে ফেলতো। চল তাকে বড় ভাইয়ের কাছে নিয়ে যাওয়া হোক।
(বড় ভাই হচ্ছে হাসানের বড় আব্বা) হাসানের বড় আব্বা ভূত, জ্বিন, তাড়াতে পারে। তাই হাসানকে নিয়ে যাওয়া হলো বাড়ীতে। হাসানকে দেখে সবাই কান্নাকাটি করছে। আর সবাই বলতে লাগলো হাসানকে ডাইনী ভর করেছে। ডাইনীটাকে তাড়াতে হবে। জলদি তার বড় আব্বাকে ডেকে আনা হলো। হাসানের বড় আব্বা হান্নান আসলো। এসে বলল কি হয়েছে হাসানের ? সবাই বলল হাসানকে নাকি ডাইনী ভর করেছে। হাসানের বড় আব্বা বলল তাই নাকি, ঠিক আছে আজ ডাইনীটাকে আমি এমন শিা দিব যে তার সারা জীবন মনে থাকবে । এই বলে তিনি মাটিতে লাঠি দিয়ে কি যেন আঁকতে লাগলেন চার কোণা ঘরের মত। মাঝে আবার গোল চিহ্ন। সেখানে হাসানকে বসাতে বললেন। তাই হাসানকে গোল চিহ্নটার মাঝে বসানো হলো। তার চারপাশে কি কি যেন দেওয়া হলো। তারপরে হাসানের বড় আব্বা কি যে বলতে লাগলো। পরণে হাসান মেয়েলি কণ্ঠে বলতে লাগলো আমাকে ছেড়ে দে নইলে সবাইকে আমি মেরে ফেলব ! হাসানের বড় আব্বা বলল কেন তুই এই গ্রামে এসেছিস ? আর তোর নাম কি ? সে বলল আমার নাম “খেতি ডাইনী ” । এই গ্রামের কোন যুবককে আমি বিয়ে করতে দিবনা। যে বিয়ে করতে যাবে তাকে আমি মেরে ফেলব হা.........হা.........হা........হা। হাসানের বড় আব্বা তার কথা শুনে মাটিতে লাঠি দিয়ে মারতে লাগলো আর খেতি ডাইনী চিৎকার করে বলতে লাগলো। আমাকে ছেড়ে দে রে, আমাকে ছেড়ে দে রে আমি এবারে পালিয়ে বাঁচি। হাসানের বড় আব্বা বলল আমি তোকে বিশ্বাস করতে পারছিনা যে তুই এই গ্রাম ছেড়ে যাবি। খেতি ডাইনী বলল আমি সত্যি বলছি, আমি এই গ্রাম ছেড়ে চলে যাব। হাসানের বড় আব্বা বলল এই যে আমার হাতে বোতলটা দেখছিস, এই বোতলে তোকে ঢুকতে হবে। নইলে তোর রেহাই নেই। খেতি ডাইনী বলল , না এটা হবে না। আমি একবার এই বোতলে ঢুকলে আর বের হতে পারবোনা। হাসানের বড় আব্বা আবার মাটিতে লাঠি দিয়ে মারতে লাগলো অনেকণ ধরে। আর খেতে ডাইনী চিৎকার করে বলতে লাগলো ঠিক আছে, ঠিক আছে আমি ওই বোতলের ভিতরে ঢুকছি। এই বলে খেতি ডাইনী যেই বোতলের ভিতরে ঢুকে পড়লো অমনি হাসানের বড় আব্বা সাথে সাথে বোতলের মুখের ছিপিটি শক্ত করে লাগিয়ে দেয়। আর হাসান সেখানেই অজ্ঞান হয়ে পড়ে যায়। হাসানের বড় আব্বা বলল হাসান এখন বিপদ থেকে মুক্ত। ওকে ঘরে নিয়ে যাও । ওর বিশ্রামের প্রয়োজন আছে। আর এই খেতি ডাইনীটাই ওকে মাঝে মাঝে ভর করত। এই খেতি ডাইনী আর যেন না আসতে পারে সে জন্য তাকে বোতলে বন্দি করে রেখেছি।
॥ আসাদুস জামান বাবু ॥
Comments (2)
চারু দা
অসাধারণ--
কবিকে মাঘের শুভেচ্ছা,,,,
দাগ কেটে যাওয়ার মত লেখা , মান্নান ভাই ।
কবিকে মাঘের শুভেচ্ছা,,,,
মৃত্যুর অঙ্গেই সফেদ কফিনে শবদেহ,
আমি আমাকেই বয়ে চলি;
শুধু বেঁচে থাকে বর্ণময় দৈত জীবন।
অসাধারণ!
মাঘের শুভেচ্ছা,,,,