Site maintenance is running; thus you cannot login or sign up! We'll be back soon.

কিংবদন্তি সমরকৌশলী মহামতি আলেকজান্ডার দি গ্রেট এর মৃত্যু দিবসে শ্রদ্ধাঞ্জলি


(মহামতি আলেকজান্ডার দ্য গ্রেট)
পৃথিবীর ইতিহাসে অন্যতম সফল সামরিক প্রধান কিংবদন্তির সমরকৌশলী মহামতি আলেকজান্ডার। তিনি তৃতীয় আলেকজান্ডার বা মেসিডনের রাজা হিসেবেও পরিচিত। গ্রিক শব্দানুসারে আলাকেজান্ডার নামের অর্থ হলো- মানুষের সাহায্যকারী। অনেকেই আলেকজান্ডারকে গ্রিক বীর বলে ভ্রম করেন। আসলে তিনি গ্রিক নন, পাশের রাজ্য মেসিডোনিয়ার নাগরিক ছিলেন। আলেকজান্ডার এর শক্তিশালী ব্যক্তিত্বের বৈশিষ্ট্য তার বাবার সান্নিধ্যে গঠিত। তার মায়ের খুব উচ্চাকাঙ্ক্ষা ছিল এবং তিনি আলেকজান্ডারকে বিশ্বাস করতে উৎসাহিত করতেন যে পারস্য সাম্রাজ্য জেতাই তার নিয়তি।টলেমির মানচিত্র অনুযায়ী পৃথিবীর অধিকাংশই তিনি জয় করেছিলেন। তার সাম্রাজ্য মেসিডোনিয়া থেকে পাঞ্জাব পর্যন্ত বিস্তৃত ছিল। আলেকজান্ডারই ইতিহাসের বিখ্যাত সমরবিদ সাহসী মহামতি "আলেকজান্ডার দ্য গ্রেট"। তবে পারস্যে তিনি অভিশপ্ত আলেকজান্ডার নামে পরিচিত। আলেকজান্ডার ৩২৩ খ্রিস্টপূর্ব জুন মাসের আজকের দিনে ব্যাবিলনে দ্বিতীয় নেবুচাদনেজারের প্রাসাদে মৃত্যুবরণ করেন। মৃত্যুদিবসে তাঁর জন্য আমাদের গভীর শ্রদ্ধাঞ্জলি।

আলেকজান্ডার ৩৫৬ খ্রিস্টপূর্ব অব্দের জুলাই মাসে মেসিডোনিয়ায় জন্মগ্রহণ করেন। তিনি ছিলেন মেসিডোনিয়ার রাজা দ্বিতীয় ফিলিপ ও তার চতুর্থ স্ত্রী অলিম্পাসের সন্তান। তবে তাঁর জন্মনিয়ে কিংবদন্ত কিংবদন্তি প্রচলিত আছে যে, মূলত রাজা ফিলিপ আলেকজান্ডারের পিতা ছিলেন না। তার মা অলিম্পাস সাপের সঙ্গে থাকতে অভ্যস্ত হওয়ায় ফিলিপ তার সঙ্গে মিলিত হতে ভয় পেতেন এবং জিউসের উরসে অলিম্পাসের গর্ভে আলেকজান্ডারের জন্ম হয়। আলেকন্ডার ১৬ বছর পর্যন্ত মহাগুণী অ্যারিস্টটলের কাছে শিক্ষাগ্রহণ করেন। তরুণ বয়সে সিংহাসনে আরোহণ করে ৩০ বছরের মধ্যে সে সময়ে বিশ্বের সবচেয়ে বৃহত্তম সাম্রাজ্য গড়ে তোলেন মহামতি আলেকজান্ডার। আলেকজান্ডারের পিতা দ্বিতীয় ফিলিপ ছিলেন মেসিডোনিয়ার রাজা। তিনি তার শাসনামলে গ্রিসের নগর রাষ্ট্রগুলোকে নিজের শাসনাধীনে আনেন। পিতার মৃত্যুর পর আলেকজান্ডার পশ্চিমে অভিযান চালান ইউরোপ জয় করার জন্য। এরপর আলেকজান্ডার একে একে ইউরোপ, আফ্রিকা ও এশিয়ার বিভিন্ন দেশ জয় করে নিজের সাম্রাজ্যভুক্ত করেন তিনি। তার সাম্রাজ্য মেসিডোনিয়া থেকে ভারতীয় উপমহাদেশের পাঞ্জাব পর্যন্ত বিস্তৃত ছিল।

আলেকজান্ডার তার সামরিক কৌশল ও পদ্ধতির জন্য বিশ্ব বিখ্যাত। আলেকজান্ডার তার সেনাবাহিনী ও প্রশাসনে বিদেশী (বিশেষ করে যারা গ্রিক বা মেসিডোনিয়ান নয়) ব্যক্তিদের অন্তর্ভুক্ত করেন। এর মধ্যে কিছু জ্ঞানী ব্যক্তি তাকে "একত্রিকরণ"-এর ব্যাপারে ধারণা দেয়। তিনি তার সেনাবাহিনীতে বিদেশীদের সাথে বিবাহ উৎসাহিত করেন এবং নিজেও বিদেশী মেয়েদের বিয়ে করেন। পৃথিবীর ইতিহাসে বিভিন্ন সময়ের বিভিন্ন জাতির কাছে বহু নামে তিনি পরিচিত ছিলেন আলেকজান্ডার। পারস্যে তিনি 'অভিশপ্ত আলেকজান্ডার' নামে পরিচিত। কারণ তিনি পারস্য জয় করে রাজধানী পারসেপলিস ধ্বংস করেন। তিনি তৃতীয় আলেকজান্ডার বা মেসিডনের রাজা হিসেবেও পরিচিত। মেসিডোনিয়া বর্তমান গ্রিসের একটি অঞ্চল।

টলেমির মানচিত্র অনুযায়ী আলেকজান্ডার পৃথিবীর বেশির ভাগ এলাকা জয় করেন। এতে তাঁর আমলে বিভিন্ন সভ্যতার মিলন ঘটে। যেমন মিসর, গ্রিক, পারস্য ও ভারতীয় সভ্যতার সংশ্লেষণে শুরু হয়েছিল এক নতুন সভ্যতা। এই সভ্যতাই হেলেনেস্টিক সভ্যতা নামে পরিচিত। ফরাসি ভাষায় তাঁকে ইস্কান্দর বলা হয়। মধ্য-পশ্চিম স্থানে জুলকারনাইন, আরবে আল ইস্কান্দর আল কাবের, উর্দুতে 'সিকান্দরে আজম' বলা হয়। আলেকজান্ডার একের পর এক রাজ্য জয় করে ইরান, আফগানিস্তান হয়ে ভারতের পাঞ্জাব পর্যন্ত পৌঁছেছিলেন। তখন ভারত অঞ্চলের রাজা গঙ্গারিডি। গঙ্গারিডি সম্পর্কে প্রাচীন গ্রিক ও লাতিন ঐতিহাসিকদের লেখায় পাওয়া যায়। খাইবার গিরিপথ দিয়ে বিশাল বাহিনীকে পার করে দিয়ে নিজে অল্পসংখক সৈন্য সঙ্গে নিয়ে আরও উত্তরের দিকে এগিয়ে চলেন। এ সময় তক্ষশিলার রাজাকে পরাজিত করে ঝিলাম নদীর দেশ ঝিলাম রাজ্যের দিকে এগিয়ে যান। এখানে রাজা পোরাস বা পুরুর সঙ্গে তার সেই বহুল আলোচিত ঘটনা ঘটে। প্রবল বিক্রমে লড়াইয়ে আলেকজান্ডারকে প্রায় পর্যুদস্ত করে ফেলেছিল পুরুর বাহিনী। এখানে প্রথম হাতিদর্শন করেন আলেকজান্ডার ও তার বাহিনী। আলেকজান্ডারের সৈন্যরা এবং তাদের ঘোড়াগুলো রীতিমতো ভড়কে যায়। পরাজয় প্রায় ছুঁই ছুঁই অবস্থায় সামলে ওঠেন আলেকজান্ডার। হারানো বিজয় ছিনিয়ে আনেন। প্রতিপক্ষের রাজা পুরুকে বন্দি করে তার সামনে আনা হয়। এ সময় পরাজিত রাজার কাছে তিনি জানতে চান, কী রকম আচরণ আশা করছেন তিনি আলেকজান্ডারের কাছে?

শিরোন্নত গর্বে আর আত্মমর্যাদাবোধে বলীয়ান যুদ্ধাহত উপমহাদেশীয় বীর পুরু বলেন, একজন রাজার কাছে আরেকজন রাজার যে মর্যাদা, তাই তিনি আশা করেন। এ ধরনের জবাবে মুগ্ধ আলেকজান্ডার তখনই মুক্তি দেন পুরুকে এবং রাজ্য ফিরিয়ে দেন, তবে এক শর্তে আর তা হলো তাকে শাসন করতে হবে আলেকজান্ডারের নামে। এসময়ই ভারতীয় শহর মুলতানে আলেকজান্ডার স্থানীয় এক সেনার তীরবিদ্ধ হয়ে (কারো কারো মতে তরবারীর আঘাতে) ঘোড়া থেকে পড়ে যান। এতে তার ফুসফুস বিদীর্ণ হয় এবং পরবর্তী এই আঘাত তাকে ভোগায় বাকি জীবন। এদিকে রক্তাক্ত অবস্থায়ও সৈন্যদের উজ্জীবিত করে যুদ্ধে জয় ছিনিয়ে আনেন তিনি। তাকে রক্ষা করেন বিশ্বস্ত কয়েকজন দেহরক্ষী। তবে উপমহাদেশের অনেকেই মনে করেন, ওই আঘাতেই আলেকজান্ডার মারা যান। এজন্য মুলতানের অনেক মহল আলেকজান্ডার বধের গর্বে এখনও সুখভোগ করেন মনে মনে। তবে তাদের সেই দাবি বা ধারণা সত্য নয়। ইতিহাসনির্ভর তথ্য হচ্ছে, ভারত দখলের প্রথম বাধা হয়ে দাঁড়ায় বিপাশা (গঙ্গা) নদী। তা ছাড়া গঙ্গারিডির চার হাজার হস্তীবাহিনীর কথা শুনে আলেকজান্ডার বিপাশা (গঙ্গা) নদী পার হয়ে আসেননি। এই হস্তিবাহিনীর সম্মুখে তাঁর ক্লান্ত সেনাবাহিনীর বিজয় সুনিশ্চিত না হতে পেরে দীর্ঘ অভিযানজনিত ক্লান্তি আর গঙ্গা নদীর বিশালত্ব এবং সৈন্যদের আর সামনে এগোনোয় অনীহা বুঝতে পেরে অভিযানে যতি টানেন তিনি। তাছাড়া ভুলে ভরা গ্রিক মানচিত্রের অনুসারী আলেকজান্ডারের ধারণা ছিল, ভারতই হচ্ছে পৃথিবীর শেষ সীমানা। এটাও তার ফিরে চলার একটি কারণ ছিল। এ সময় তার নিজ দেশেও বিদ্রোহ দেখা দেয়। তিনি ফিরে চলেন মেসিডোনিয়ায়। কিন্তু পথে পারস্য এলাকায় পৌঁছানোর পরই দিন ঘনিয়ে আসে তার। এক রাজকীয় ভোজের অনুষ্ঠানে পানাহারের পর পর অসুস্থ হয়ে পড়েন তিনি। অচিরেই হারিয়ে ফেলেন হাঁটাচলা আর কথা বলার শক্তি।

খ্রিস্টপূর্ব ৩২৩ সালে ২ জুন গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়েন মহামতি আলেকজান্ডার। জুন মাসের ১১ তারিখে ব্যাবিলনে দ্বিতীয় নেবুচাদনেজারের প্রাসাদে মৃত্যুবরণ করেন। তবে অনেকে মনে করেন তিনি মারা গেছেন খ্রিস্টপূর্ব ৩২৩ সালের ১২ জুন। মৃত্যুর সময় তাঁর বয়স ছিল মাত্র ৩২ বছর। ধারণা করা হয় হয়ত তিনি ম্যালেরিয়া, টাইফয়েড অথবা ভাইরাল এনকেফালাইটিস্‌ এর আক্রান্ত হয়ে মারা যান। তবে তার মৃত্যু আজো রহস্যাবৃত। সাম্প্রতিককালে একজন বিশেষজ্ঞ দাবি করছেন আলেকজান্ডার দি গ্রেট মারা গিয়েছেন বিষাক্ত ওয়াইন পানে। আলেকজান্ডারের মৃত্যুর প্রায় ২০০ বছর পরে অটাগো বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ডঃ লিও শেপ দাবি করেছেন আলেকজান্ডা দি গ্রেট মারা গেছেন বিষাক্ত ওয়াইন এর প্রভাবে যা তৈরী করা হয়েছিলো দেখতে ক্ষতি করেনা এমন একটি গাছ থেকে। ডঃ শেপ এর সহ লেখক উল্লেখ করেন যে আলেকজান্ডার এর উপর প্রয়োগকৃত ভেরেট্রাম এলবাম বিষ যা মূলত সাদা গোলাপ জাতীয় একটি ফুল গাছ। এই সাদা ফুলের গাছকে প্রাচীন গ্রীসে গাজন প্রক্রিয়ায় বিষাক্ত ওয়ানে রূপান্তরিত করা হতো যা গ্রীকদের কাছে বমির ভেষজ চিকিৎসায় ব্যবহার করা হতো। যদিও কিছু ইতিহাসবিদ মনে করেন তিনি স্বাভাবিক কারনেই মারা গিয়েছিলেন।

আলেকজান্ডার চেয়েছিলেন পৃথিবীব্যাপী রাজত্ব প্রতিষ্ঠা করতে। তার মনের অতিমানবীয় এই ইচ্ছাকে পূর্ণ করার জন্য স্বল্পকালীন জীবনের অর্ধেকেই প্রায় অতিবাহিত করেছেন যুদ্ধক্ষেত্রে। গ্রিক ও গ্রিসের বাইরের বিভিন্ন সভ্যতায় আলেকজান্ডার ইতিহাসে, সাহিত্যে, পুরাণে জীবিত হয়ে আছেন। তবে তাকে ‘আলেকজান্ডার দ্য গ্রেট’ নামে অভিহিত করা হলেও প্রকৃতপক্ষে তিনি সভ্যতা সম্পর্কে উৎসাহী ছিলেন না। তার কাছে খ্যাতিও প্রভুত্ব অর্জনটাই বড় ছিল। তবুও তিনি সাহসী যোদ্ধা হিসেবেই ইতিহাসে রয়ে গেছেন।তার বীরত্ব ও সাহসিকতার জন্য ঐতিহাসিকরা তাকে পৃথিবীর অন্যতম শ্রেষ্ঠ নৃপতি আসনে বসিয়েছেন। আজ মহামতি আলেকজান্ডারের মুত্যুদিনে তাঁকে স্মরণ করছি গভীর শ্রদ্ধায়।
০ Likes ০ Comments ০ Share ১০৮১ Views

Comments (0)

  • - মোকসেদুল ইসলাম

    সমসাময়িক বিষয়ে সুন্দর ছড়া। বেশ সুন্দর হয়েছে