এই রতন .........রতন, কি হয়েছে তোর। এভাবে কেন জানালার পাশে বসে মাথায় হাত দিয়ে কি চিন্তা করছিস? রতনকে এভাবেই ডাকছিল তার সব থেকে প্রিয়বন্ধু রকি। রতন ও রকি খুব কোজ বন্ধু। তারা দুইজনে কাস সেভেনে পড়ে। তাদের চাল চলন, উঠন বসন সব একই। তাই দুজনের মধ্যে খুব মিল।
রকি বার বার ডাকা শর্তেও রতন কোন জবাব দিচ্ছিল না। সে ভাবছে কয়েকদিন ধরে দেখছি। কারো সাথে কথা বলছে না। সব সময় একা একাই থাকছে। আমাকেও কিছু বলছেনা। স্কুলের টিফিনের ফাকে সবাই মাঠে খেলা করছে। আর সে কিনা বসে বসে চিন্তা করছে।
রকি রতনের কাছে গেল। কি হয়েছে দোস্ত তোর? এভাবে কি চিন্তা করছিস?
অবশেষে অনেকন পর রতন জবাব দিল-
-আমার মন ভালো নেইরে। আমাকে বিরক্ত করিস না। এখন একাই থাকতে দে।
- দেখ দোস্ত আমি তোমার সব থেকে কোজ বন্ধু, তুমি যদি তোমার কষ্টেরকথা আমাকে না বল, তাহলে কাকে বলবে। আর তোর এমন কি হলো যে, আমাকেও বলা যাবে না, শুধু শুধু এড়িয়ে চলছিস। কাসের পড়াও ঠিকমত করে আসিস না। শুধু শুধু স্যারের হাতে বোকা খাচ্ছিস।
- এখানেই তো আমার সমস্যা রাতে কাসের হোম ওয়ার্ক করি। সকালে স্কুলে এসে দেখি সব উধাও। এমনকি আমার পড়ার টেবিলে কোন দিন কলম হারাচ্ছে। কোন দিন খাতা হারাচ্ছে। আর কেন যেন আমার ডাইরীতে লেখাগুলো কলম দিয়ে কেটে কেটে দিচ্ছে। এই নিয়ে খুব টেনশনে আছি।
-তোর আম্মুকে বলিসনি কে এই কাজগুলো করে।
- আম্মুকে বলেছি কেন এমন হচ্ছে আমার সাথে, আ¤মু বলছে তোর যত ফাজলমি, কে ঢুকবে তোর ঘরে, সারাদিন বাড়ীতে তো কেউ থাকে না।
-ব্যাপারটা খুব জটিল। কিছু একটাতো করতে হবে। এভাবে তো আর চলতে দেওয়া যায় না।
- তোর কি কোন আইডিয়া আছে যে এখন কি করা যায়।
- আমার কাছে একটা আইডিয়া আছে। আজ রাতে আমি তোমার বাসায় থাকবো। দেখি কে এই কাজটা করছে।
- ঠিক আছে আজকে বাসায় আসিস।
রতন ও রকি এই সিদ্ধানাত নিল যে তারা আজ সারা রাত পাহাড়া দিবে কে এই কাজটা করছে।
তো ওই দিন রাতের কি আসলো রতনের বাড়ীতে। তখনও তার বাবা মা এখনও অফিস থেকে বাড়ী ফিরেনি।
রতন বাবা মায়ের একমাত্র সন্তান, দুজনেই চাকুরী করে। তাদের বাড়ীতে সারাদিন কেউ থাকে না। শুধু কাজের বুয়া সকালে আসে দুপুরে মধ্যে সে রান্না করে দিয়ে চলে যায়।
রকি রতনকে বলল
-তোমাদের কাজের বুয়াকে বলেছিস। সে এই কাজ করে নাকি।
- বলেছিলাম সে বলেছে আমি কিছু জানিনা। আমি তোমার রুমে ঢুকি না।
-ঠিকইতো কেন সে ঢুকেবে তোমার রুমে।
রতন ও রকি দুজনই পরিকল্পনা অনুযায়ী আজ সারা রাত জেগে থেকে পাহাড়া দিবে যে কে এই কাজটা করছে। এর মধ্যে রতনের বাবা মা আসলো বাড়ীতে। এবং সবাই খাওয়া দাওয়া করে শুয়ে পড়লো । তখন বাজে রাত ১১টা। তারা দুজনই পড়া লেখা করে বিছানায় শুয়ে আছে।
রকি ভাবছে এখনো আসছেনা কেন। তারা দুজনে জেগে আছে। আর ভাবছে আমরা আজ তাকে ধরেই ছাড়বো কে এই কাজটা করে। এভাবেই রাত দুইটা বেজে গেলো। রকি দেখলো রতন ঘুমিয়ে পড়েছে। কারেন্টাও চলে গেছে। ঘরটা অন্ধকার হয়ে গেছে। রকি ভাবলো আর জেগে থেকে লাভ নেই এখন আর কেউ আসবে না, মনে হয়।
কিছুণের মধ্যে রকিও ঘুমিয়ে যায়। ঠিক রাত ৩টার রকি কি যে একটা আওয়াজ শুনতে পাচ্ছে। সে চোখ খুলে দেখলো ঘরের ওই কোনায় পড়ার টেবিল থেকে আওয়াজটা আসছে। অন্ধাকারে কিছু দেখা যাচ্ছে না। ঘরের বাইরে থেকেও আওয়াজ আসছে। কে যেন দৌড়া দৌড়ি করছে। রকি একটু ভয় পেয়ে গেলো। সে এখন কি করবে। রতনতো পুরো দমে ঘুমাচ্ছে। তাকে এখন ডাকলেও সে ঘুম থেকে উঠবে না। সে বিছানায় শুয়ে আছে আর রতনের পড়ার টেবিলে তাকিয়ে আছে। অন্ধকারে কিছু বুঝা না গেলেও কে যেন চেয়ারে বসে আছে আর আস্তে আস্তে করে পড়ছে। সে বিছানা থেকে উঠতে সাহস পাচ্ছে না। অনেকণ ধরে এসব কাণ্ড দেখছে সে, কিন্তু বুঝতে পারছেনা। কে সেই লোকটি শুধু চেয়ারের ওই জায়গায়টুকু কালো দেখাচ্ছে বেশি।
এক সময় সিদ্ধান্ত নিল সে আস্তে আস্তে তার কাছে যাবে। কে ওই লোকটি! বিছানা থেকে আসতে আসতে উঠলো। পড়ার টেবিলের কাছাকাছি আসতেই দেখে ভয়ঙ্কর এক কান্ড। চেয়ারে বসে থাকা লোকটি পিছন দিকে তাকালো কালো কুচকুচে এক লোক, চোখ গুলো বড় বড় করে লাল হয়ে আছে, মুখ দিয়ে আগুনের আভার মত বের হচ্ছে। এই দেখে সে আর এগুতে আরছে না। ভয়ে তার শরীর কাঁপছে, কোন কথা বলার শক্তি টুকু নেই তার।
রকির আর বুঝতে বাকি থাকলো না সে এক ভয়ঙ্কর কালো ভূতের সামনে পড়েছে। সে এর আগে তার দাদুর কাছে গল্প শুনেছে কালো ভূতেরা নাকি খুব ভয়ঙ্কর হয়।
হঠাৎ ওই কালো ভূতটি বলে উঠলো কেন আমার ঘরে এসেছিস, এটা আমার ঘর, এখানে আমি কাউকে থাকতে দিব না, আজ তোকে আমি মেরেই ফেলবো?
কালো ভূতটির কথা শুনে রকি আরো বেশি করে ভয় পেয়ে যায়, হাত-পা কাঁপতে থাকে তাঁর।
কিছু বুঝার আগেই রকি দেখলো কালো ভূতটি তার সামনে আসছে। তাঁর কাছে আসতেই কালো ভূতটি তার গালে একটি চড় বসিয়ে দেয়। সাথে সাথে রকি মাটিতে পড়ে অজ্ঞান হয়ে যায়।
সকালে রতন ঘুম থেকে উঠে দেখে রকি বিছানায় নেই। সে মেঝেতে পড়ে আছে। সে সাথে সাথে তার আম্মুকে ডাক দিল। তারাও এসে দেখে রকি অজ্ঞান হয়ে ঘরের মেঝেতে পড়ে আছে। তাকে বিছানায় উঠিয়ে মুখে পানি ছিটিয়ে তার জ্ঞান ফিরালো। রতনের আম্মু বলল কি হয়েছে বাবা তোমার? রকি ভাবলো এই মূহুর্তে রাতের ঘটনাটা বললে সমস্যা হতে পারে। তাই সে বলল কিছুই হয়নি আন্টি এমনিতে বিছানা থেকে পড়ে গেছিলাম।
-না বাবা তুমি মিথ্যে বলছ তোমার বাম গাল কেন লাল হয়ে গেছে। নাকি তোমরা দুজন রাতে মারামারি করেছে।
রকি আর উপায় না খুঁজে পেয়ে বাধ্য হয়ে বলল
- না আন্টি রতনের বই খাতা যে চুরি করে তাকে আমি দেখেছি, সে কোন মানুষ নয়। আপনাদের বাড়ীতে একটা কালো ভূত আছে। সেই ভূতটি এইসব কাজ করে এবং সেই আমাকে চড় মেড়েছে। আর সে দাবী করছে এটা তাঁর বাড়ী। তাই সে এখানে কাউকে থাকতে দিবে না।
- কি বলল বাবা তুমি তার সাথে কথা বলেছো?
- না আন্টি আমি কিছু বলিনি, সে এগুলো কথা বলছিল।
- তোমার যদি কোন বিপদ হত!
- হ্যা আন্টি বড় বিপদ থেকে বেঁচে গেছি। তাই বলছিলাম কি, আপনারা একজন হুজুর ডেকে নিয়ে এসে, এটাকে তাড়ানোর ব্যবস্থা করেন?
- হ্যা বাবা আমাদের তাই করতে হবে।