যথাযোগ্য মর্যাদা ও ভাব গাম্ভীর্যের সঙ্গে কানাডার সাস্কাচেওয়ান প্রদেশের সাস্কাতুনে বাংলাদেশের বিজয় দিবস উদ্যাপিত হয়েছে। বাংলাদেশি কমিউনিটি অ্যাসোসিয়েশন অব সাস্কাচেওয়ানের (বিকাশ) নবনির্বাচিত কমিটি খুব কম সময়ের মধ্যে এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করে। স্থানীয় সেন্ট পল ইউনাইটেড চার্চে ২৭ ডিসেম্বর রোববার এই অনুষ্ঠান উদ্যাপিত হয়।
বিজয় দিবস উপলক্ষে বিভিন্ন সাংস্কৃতিক পরিবেশনার পাশাপাশি এবার সাস্কাতুনে বসবাসরত তিনজন মুক্তিযোদ্ধাকে সম্মাননা প্রদান ছিল বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। এই তিন মুক্তিযোদ্ধা ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে সরাসরি অংশগ্রহণ করেছেন। তাদের বিকাশ বিশেষ মুক্তিযুদ্ধ সম্মাননা স্মারক পদক প্রদান করে। যারা এই স্মারক গ্রহণ করেন তারা হলেন; মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর সেলিম, বদরুল আলম দেওয়ান ও নিশীথ রঞ্জন দত্ত।
অনুষ্ঠানে প্রথমে মুক্তিযুদ্ধের শহীদদের বিদেহী আত্মার স্মরণে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়। নীরবতা পালনের পর সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক মাহমুদুল হাসান চৌধুরী অনুষ্ঠানের উদ্বোধন করেন। বাংলাদেশ ও কানাডার জাতীয় সংগীত পরিবেশনার মাধ্যমে মূল অনুষ্ঠান শুরু হয়। শুরুতে সদ্যবিদায়ী সভাপতি আবুল হোসেন নবনির্বাচিত কমিটির সদস্যদের পরিচয় করিয়ে দেন। এরপর শুরু হয় মুক্তিযোদ্ধা ও মুক্তিযুদ্ধের গল্প নামের একটি বিশেষ পর্ব।
নুরুল হুদা পলাশের সঞ্চালনায় এই পর্বে সাস্কাতুনে বসবাসরত তিনজন মুক্তিযোদ্ধা মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর সেলিম, বদরুল আলম দেওয়ান ও নিশীথ রঞ্জন দত্ত এবং মুক্তিযুদ্ধের কয়েকজন প্রত্যক্ষদর্শী নুরুল আমিন চৌধুরী (বিকাশের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি), খলিলুর রহমান (বিকাশের প্রাক্তন সভাপতি), অধ্যাপক জীবন পোদ্দার ও ফেরদৌস আলম তাদের বক্তব্যের মাধ্যমে মুক্তিযুদ্ধের সংক্ষিপ্ত পটভূমি ও মুক্তিযুদ্ধের সময়কার খণ্ড খণ্ড গল্প এবং তাদের ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতার কথা বর্ণনা করেন।
তিনজন মুক্তিযোদ্ধাকে মুক্তিযুদ্ধ স্মারক সম্মাননা পদক প্রদান করেন নুরুল আমিন চৌধুরী, খলিলুর রহমান ও সংগঠনের সভাপতি জাকির হোসেন। বিকাশ প্রথমবারের মতো এবার সাস্কাতুনে বসবাসরত বাংলাদেশিদের মধ্য থেকে কমিউনিটিতে বিশেষ অবদান রাখার জন্য অধ্যাপক নুরুল আমিন চৌধুরীকে বিশেষ সম্মাননা স্মারক পদক প্রদান করে। জাকির হোসেন পদকটি নুরুল আমিন চৌধুরীর হাতে তুলে দেন। বিকাশের কর্মকর্তারা জানান এখন থেকে প্রতিবছর কমিউনিটিতে বিভিন্ন ক্ষেত্রে বিশেষ অবদান রাখার জন্য নিয়মিতভাবে এই পদক প্রদান করা হবে।
সংগঠনের সংস্কৃতি বিষয়ক সহসভাপতি শহিদুল খান ও সম্পাদক গুরু প্রসাদ হোম চৌধুরীর তত্ত্বাবধানে দ্বিতীয় পর্বে পরিবেশিত হয় মনোমুগ্ধকর সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। ঊর্মি রহমান, শাহিনা পারভিন, উৎপল দত্ত ও শরিফ উদ্দিনের স্বতঃস্ফূর্ত সঞ্চালনায় পুরো সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানটি প্রাণবন্ত হয়ে উঠে। সংগঠনের স্থানীয় শিল্পীরা যন্ত্র সংগীত, দলীয় সংগীত, একক সংগীত, নাচ ও মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক কয়েকটি বিখ্যাত কবিতার আবৃতি পরিবেশন করেন। প্রচণ্ড শীতকে উপেক্ষা করে বিপুল পরিমাণ দর্শকের উপস্থিতি বিকাশের এই নিয়মিত জাতীয় দিবস উদ্যাপনকে সাফল্যমণ্ডিত করে। অনুষ্ঠান চলাকালে দেশীয় মুখরোচক বিভিন্ন রকমের খাবার পরিবেশিত হয়।
মুল লেখক নুরুল হুদা পলাশ
Comments (0)