Site maintenance is running; thus you cannot login or sign up! We'll be back soon.

"কনফেসন অব আ সাইকো"

টেবিলের উপরে খবরের কাগজটা খুব ধীরে ছুঁড়ে দিয়ে সাংবাদিক লুতফুন নাহার অর্শা জিজ্ঞেস করেন-“তাহলে মিঃ রিফাত, খুনগুলো কিভাবে করতেন আপনি! আই মিন, স্বাভাবিকভাবে সিরিয়াল কিলারদের যেমনটা হয় আরকি সবারই নিজেস্ব একটা স্টাইল থাকে কিনা…!” একবার কেশে নিয়ে সামনের চেয়ারটা টেনে নিয়ে বসতে বসতে পুনরায় বলেন তিনি-“তা আপনার স্টাইলটা কেমন!? সেটাই জানতে চাইছিলাম আরকি।”
-“স্টাইল! হাহা…” টেবিলের অপর প্রান্তে বসা লোকটা হাসতে হাসতেই সামনের দিকে ঝুঁকে এসে বলে-“ আমি কেবল কনফার্ম করি ব্যাপারটা। ঠিক এইদিকটায়,(কপালের মাঝে আঙ্গুল ঠেকিয়ে দেখিয়ে দিয়ে) কপালের মাঝ বরাবর বন্দুকটা ঠেকাই আমি, নাহ! ওটাকে বন্দুক নয়, বরং আমার প্রিয় সঙ্গী বার্সা বললে বেশ হয়। যাই হোক কপালে ঠেকিয়েই আমি কাজটা করি, যেন এক সুটেই শেষ! দ্বিতীয়বার চিন্তার কোন বিষয় নেই।” ছোট্ট রুমটার হালকা আলো-আঁধারের মাঝে যেখান থেকে অপর প্রান্তে বসা লোকটার মুখায়বও ঠিক ভালোভাবে বোঝা যায় না, তার তীক্ষ্ণ শীতল কন্ঠস্বরে একবার মনের অজান্তেই কেঁপে উঠে দেশের একটি স্বনামধন্য পত্রিকার জনপ্রিয় সাংবাদিক অর্শা।
-“অহেতুক এতটা পেইন দিয়ে...” শেষ করতে পারেন না তিনি তার আগেই সিরিয়াল কিলার রিফাত এক হাত উঠিয়ে তাকে থামিয়ে দিয়ে বলে-“আহ! আমার লিস্টে অহেতুক বলে কোন শব্দ নেই। সুতরাং এটা ব্যাবহার করবেন না আর মারবই যখন মনস্থির করেই ফেলেছি তখন এটাকে উপভোগ করেই শেষ করাটা শ্রেয়। তাছাড়া একটা বন্দুকের খোসা কিভাবে যে মাথার এফোঁড়-ওফোঁড় হয়ে বেরিয়ে যায়, আহ! সেই মজাদার দৃশ্য স্বচোখে না দেখলে বুঝতে পারবেন না যে বিষয়টা সত্যিই কতটা উপভোগ্য!” হাসির দমকে খেঁকিয়ে উঠেন রিফাত। এমন উত্তরের বিপরীতে কি ধরনের প্রশ্ন করবেন ভাবতেই একটাবারের জন্য চিন্তায় পরে যান অর্শা। কিন্তু পরক্ষণেই ভাবেন, একজন সাইকোর কাছে থেকে এরচেয়ে বেটার কোন কথা তিনি প্রত্যাশাও করতে পারেন না কেননা এটা মানানসই হবেও না।
-“হুম... তাহলে এ পর্যন্ত মোট কতজনকে আপনি... আই মিন আপনার শিকার হতে হল কতজনকে?”
-“আমার শিকার! কথার ধরণটা ঠিক হলো না। অযথাই কোন কিছু হয় না পৃথিবীতে। মানুষ তার কৃতকর্মের ফল জীবনের একটা পর্যায়ে ভোগ করেই। এটা কেবল আমি নির্ধারণ করে দিচ্ছিলাম। যাই হোক আপনি ওসব বুঝবেন না, আপনাদের কাজ তো কেবল শোনা বিষয়টাকে যাচাই বাছাই না করেই সত্য কি মিথ্যে কাগজের পাতায় ছাপানো। কখনও পারলে ভিতরে এসে দেখবেন, এটা রক্তে আগুন ধরিয়ে দেয়ার মত কিভাবে কাজ করে! আর খুন... হিসেব তো সেভাবে রাখিনি। তবে ৭০থেকে ৮০জনের মত তো হবেই!”
-“এবং আপনার মাঝে কোন অনুশোচনা নেই এখন পর্যন্ত!?”
-“হাহা... আপনি কার সামনে বসে কথা বলছেন সেটা ধারনায় রেখে প্রশ্নটা করলেন তো? বাদ দিন সবটা বোঝার ক্ষমতা সবার থাকে না। পরবর্তী কোন গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন থাকলে করুন নয়ত এখান থেকে কেটে পড়ুন। ঘুম পাচ্ছে, এটা আমার বিশ্রামের সময়!” রিফাত বিরক্ত হয়ে যাচ্ছে বুঝতে পেরেই দ্রুত কথার মোড় গুরুত্বের দিকে ঘুরিয়ে নেয় অর্শা। বিগত কয়েক সপ্তাহ ধরে এই কেসটা নিয়ে পত্রিকায় অনেক লেখা-লেখি হয়ে গেছে কিন্তু সরাসরি কোন সাংবাদিকই তার সাথে একান্তে ইন্টারভিউ নেয়ার সুযোগ পায়নি যেটা অর্শা বহু চেষ্টার পরে করে নিয়েছে, তাই কাজ সিদ্ধির আগেই এটাকে ভেস্তে দেয়া যাবে না।
-“অবশ্যই আছে। একটা বিষয় যেটা সবচেয়ে বেশি কৌতূহলের সৃষ্টি করেছে ইতোমধ্যেই। সেটা হল, আপনি যখন ধরা পড়লেন এবং আপনার বিরুদ্ধে ফাঁসির রায় ঘোষণা করা হল আপনি ভরা আদলতে নিজের দোষ স্বীকার করে নেয়ার পর এত অনুনয়-বিনয় করলেন যেন আপনাকে ফাঁসি দেয়া না হয়, অতঃপর যখন জজ আপনার অনুরোধ মেনে নিয়ে আপনার দায় স্বীকার এবং প্রতিজ্ঞার উপরে ভিত্তি করে আপনাকে প্রাণ ভিক্ষা দিল আর আজীবন সাশ্রম কারাদন্ডে দন্ডিত করা হল। এরপরও আপনি দু’ দু’বার সুইসাইড এটেম্পট করেছেন এবং শেষেরবার মরতে মরতে বেঁচে এসেছেন। কিন্তু কেন? যদি সুইসাইড করবেন তাহলে ফাঁসির রায়ে সমস্যাটা কোথায় ছিল?!”
-“আর কোন প্রশ্ন?!”
-“আপনি এটার উত্তর করেন নি এখনও।” ‘মেয়েদের বরাবরই অপছন্দ করি আমি। সবসময় গুরুত্বহীন প্রশ্ন নিয়ে সময়ের অপচয়!’ বিড়বিড় করে বলে রিফাত যেটা স্পষ্ট অর্শা বুঝতে না পেরে জিজ্ঞেস করে-“সর‍্যি?”
-“আহ! কথায় কথায় সর‍্যি বলবেন না। অপরাধীর মত শোনায়, আর নিশ্চয় আপনি আমার পরবর্তী শিকার হতে চাইবেন না! হাহাহা... যাই হোক বোঝ-ক্ষমতা তো খুবই কম দেখছি আপনার। কেননা অপরাধীর মত মৃত্যু আর সম্মানের মধ্যকার পার্থক্য ধরতে পারলে এমন প্রশ্ন কেউ করত না। বাদ দিন, অন্য কোন প্রশ্ন থাকলে করেন নয়ত কেটে পড়েন।” সম্মান! এতগুলো খুন করার পরও সে আশা করে! রিফাতের বলার ভঙ্গিতে চটে যায় অর্শা কিন্তু সেটাকে ভিতরেই দমিয়ে রাখে, প্রয়োজনটা যেহেতু ওর এবং কথা যেহেতু ওকে বের করে নিতে হবে তাই পাত্তা দেয়না এটাকে।

-“শুরুর দিকের ঘটনা বলুন। প্রথম খুন এবং এ পথে আসার নেপথ্যে কি কাজ করছিল আপনার?” অর্শার প্রশ্নে একটা মুহূর্ত ভেবে নিয়ে রিফাত শুরু করে-“প্রথম খুন, এটা আমার সবচেয়ে কাছের বন্ধু অর্ঘ ছিল। ভুল হল, বন্ধু না বলে নিমকহারাম বললে ভালো হয় বেশি। আমি খুব ছোট থেকেই একা একা বড় হয়েছি। খুব একা, একেবারে নিঃসঙ্গ বলতে যা কিছু বোঝায় আর কি। ছোট থেকেই নিজের মাঝে গুটিয়ে নেয়া আমি না কারো সাথে মিশতে পারতাম নিজ থেকে না কেউ আমার সাথে মিশতে পারত। আমার মানুষে বিশ্বাস করা নিয়ে কিছু সমস্যা আছে কিনা আর একাকীত্ব ব্যাপারটাই এমন যে যখন এটা আপনাকে ভয়াবহভাবে পেয়ে বসবে, এটা থেকে বেরিয়ে আসাটা সত্যিই বড় কঠিন। কিন্তু কতকাল! মানুষ মাত্রই অভ্যন্তরীণ একটা চাহিদা থাকে এবং আমিও এর ব্যাতিক্রম ছিলাম না। কাজেই এক ধরনের ভালোলাগা অনুভব করি বান্ধবী দীপার উপর। মেয়েটাও হয়ত এটাই চাইছিল আর তাছাড়া ও পছন্দ করার মতই ছিল কিন্তু সব পছন্দই একসময় অপছন্দে রূপান্তরিত হয় কিনা। যাই হোক, এটা বলার আগে জানিয়ে রাখতে চাই যে, মেধার দিক থেকে আমি ছিলাম অতুলনীয়, এমন কোন সাবজেক্ট নেই যেটাতে আমার রেজাল্ট ফার্স্ট ক্লাস আসেনি। প্রতিটা বিষয়ে আমার জ্ঞান ছিল প্রখর কারন আমি পড়তে ভালবাসতাম। ভার্সিটিতে পা দেয়ার পূর্ব পর্যন্ত বই-ই ছিল আমার একমাত্র সাথী এরপর যখন আমার বন্ধু হল, অর্ঘ আর দীপা, আমি যেন আমার শামুকের খোলস থেকে বেরিয়ে আসতে পেরেছিলাম অনেকটাই। বন্ধু-আড্ডা-গান! উফ! কি সেসব দিন, বলে বোঝানো যাবে না যে কিভাবে আমি বুঝতে পারছিলাম চার-দেয়ালের বাহিরেও একটা জগত আছে যেটা আরো বেশি মায়াবি আর সুন্দর! আর তখন, রঙ্গীন সে জগতে আমি হাওয়ায় ভাসছিলাম এবং ভাসতে ভাসতেই একসময় টুপ করে নিচে পড়ে গেলাম। নিচে না বলে গভীর খাঁদ বললে উপযুক্ত শোনায় সম্ভবত। এখানে ছিল গভীর অন্ধকারের ন্যায় বিশ্বাসঘাতকতা, নিকষ কালো অপার্থিব কিছুর ন্যায় ধোঁকা এবং ভয়াবহ রকমের নির্জনতার ন্যায় কষ্ট! এটা ছিল খুব যন্ত্রণার যখন আমি জানতে পারি আমার কথিত বন্ধুরা যারা আমার সাথে অপরূপ অভিনয় করে গেছে কেবলমাত্র একটা বাজিতে জিতবে বলে! হ্যাঁ বাজি, ঠিকটাই বলছি আমি। খুব সহজ স্বাভাবিক আমাকে পেয়ে, আমার অগোচরে ওরা খেলে ওদের নোংরা খেলা। ওরা আমাকে দীপার প্রতি দুর্বল করে তোলে আর এই মেয়েটা, ওর প্রেমিক অর্ঘর সাথে মিলে কতটা সহজেই বোকা বানায় আমাকে, কি সূক্ষ্ম মিথ্যে অভিনয়! যেমনটা আমার বাবা করেছিল আমার মায়ের সাথে। আমার মনে পড়ে যায় আর আমি বুঝতে পারি এখানে অভিনয়ের মূল্য আছে সত্যের নয়, এখানে ধোঁকার মুল্য আছে, প্রকৃত অনুভূতির নয়! আমি আবারো হারিয়ে যাই, হতাশায়?! না, আমি ফিরে যাই যেখান থেকে আমি এসেছিলাম, যেটা ছিল আমার প্রকৃত স্থান, আমার নিশ্চয়তার একমাত্র জায়গা যেখান থেকে আমার প্রতারিত হওয়ার মাত্রা শুণ্য, আমার চার-দেয়ালের মাঝে, আমি ফিরে আসি আবার আমার ছোট্ট শামুকের খোলসের ভেতরে। কিন্তু পৃথিবী তার জালিয়াতির হাত থেকে ছেড়ে দেয়না আমাকে খুব সহজেই। যাদের একটা সময় খুব কাছের কিছু মনে করতাম তারাই কতটা সহজে আমার জীবনটাকে বিষিয়ে তোলার আনন্দে মত্ত হয়ে গেল, আমি ভাবতাম। অর্ঘ-দীপা আমাকে নিয়ে পদে পদে কিভাবে, কি বাজেভাবে মজা করত, হেয় করত আমাকে। তারপর আমি সিদ্ধান্ত নিলাম, কিছু না করেও লুকিয়ে আমি বাঁচব কেন, যারা ছিল সত্যিকার অপরাধী তারা কেন নয়! এরপর সুদীর্ঘ চিন্তা ভাবনার শেষে আমি উপযুক্ত সময় খুঁজে নিয়ে কাজটা শেষ করি। হুম, সেটা ছিল আমার প্রথম, হয়ত ঘাবড়ে ছিলাম অনেক অথবা কিছুটা কিন্তু এরপর আর কোনবার ভাবতে হয়নি আমাকে, কেননা অস্ত্রটা হাতে তুলে নেয়ার পর থেকে এটা রক্তে কিভাবে, ভিতরে কি আশ্চর্যরকমভাবে আগুন জ্বালিয়ে দিতে পারে সেটা আপনি নিজে চেষ্টা না করলে বুঝবেন না। এটা অসাধারণ, দায়বদ্ধতার হাত থেকে মুক্তি পেলে যেমনটা অনুভব হতে পারে এটা ঠিক তেমন...!”
-“দায়বদ্ধতা!” কৌতূহল, ভয়, বিস্ময় কোনটাই আর লুকায়িত থাকেনা অর্শার কন্ঠে।
-“হ্যাঁ, দায়বদ্ধতা। সমাজের প্রতি আমার নিজেস্ব কিছু দায় আছে যেটাকে আমি অন্তত অগ্রাহ্য করতে পারিনা। আমি চাইনা আর কেউ আমার মত একটা কষ্টকর সময় অতিবাহিত করুক। আপনি কি খোঁজ নিয়ে দেখেননি আজ পর্যন্ত আমি যতজনকে শাস্তি দিয়েছি তাদের প্রত্যেকটা এবং সবাই ছিল এক একটা বিশ্বাসঘাতক, অকৃতজ্ঞ এবং ধোঁকাবাজ আর যেমনটা আমি শুরুতেই বলেছিলাম প্রত্যেকটা মানুষকেই জীবনের একটা পর্যায়ে তার কৃতকর্মের ফল ভোগ করতেই হয়।”
-“তাই বলে...এটা নির্ধারণ করার আপনি কে! দেশে আইন আছে, সরকার আছে।”
-“আইন!? হাহা... পৃথিবীতে প্রতিনিয়ত কতজন লোক বিনাদোষে আত্মহত্যার পথ বেঁছে নিচ্ছে অথবা বেঁছে নিতে তাদের বাধ্য করা হচ্ছে তার কতটা খোঁজ রেখেছেন আপনারা? আমাকে কি সঠিক কি ভুল তা শেখাতে চাইলে, দরজাটা ঐদিকে। আমার জায়গা থেকে চিন্তা করার মত মানসিকতা যাদের নেই, অহেতুক বলাটা এখানে মূল্যহীন।” প্রতিউত্তরে অর্শা কিছু বলতে যাওয়ার আগেই রিফাত উঠে দাঁড়ায়। এমন একজন মানসিকরোগিকে উঠে দাঁড়াতে দেখেই বাহির থেকে পুলিশ এগিয়ে এসে অর্শাকে চলে যেতে বাধ্য করে।

অনেককিছু হয়ত জানার ছিল, বোঝার ছিল কিন্তু অনেকটাই জানা হয়নি। হাতে ধরে রাখা ব্যাগটার দিকে তাকিয়ে অর্শা কেবল ভাবে-পৃথিবীতে কত ধরনের মানুষ আছে, তাদের প্রত্যেকের মাঝে চিন্তা-ভাবনার কতটা পার্থক্য রয়েছে, কতকিছু কাজ করে তাদের ভেতরে, এর কতটা খোঁজ রেখেছি আমরা অথবা রাখতে পেরেছি! নৈতিকতার খোঁজে কিভাবে কেউ এগিয়ে যায় অনৈতিক পথে... অর্শা ভাবে-মানুষ, জীবন, বেঁচে থাকা-অদ্ভুত! বড়ই অদ্ভুত!
১ Likes ১ Comments ০ Share ৪৪৬ Views

Comments (1)

  • - মাসুম বাদল

    দারুন...!!! 

    - চারু মান্নান

    অন্ধ রাত চোখে দেখেনা
    বুঝে শুধু ব্যথা কণ্ঠের চাপা শূন্যতা
    কি চাইতে , কি পেলে
    কি ঘটে গেল অবুঝ হৃদয়ের সংযোগে
    প্রাপ্তি ছাড়া কিছুই না...

    বাহ দারুন তো!!!!!!!!!!!!!!!emoticons