Site maintenance is running; thus you cannot login or sign up! We'll be back soon.

কদম রসূল দরগাতে ভ্রমণ (প্রতিযোগিতা/২০১৬, পর্ব-৪ ক্যাটাগরি-৩)

 

নারায়নগঞ্জ কেল্লা পরিদর্শন শেষে আমরা ফিরে আসি রিক্সা করে তারপর অন্য একটি রিক্সা নেই কদম রসূল দরগাহতে যাওয়ার জন্য। দশ মিনিটের মধ্যে আমরা পৌঁছে গেলাম শীতলক্ষ্যা নদীর পাড়ে।

সে নদী পার হয়েই যেতে হয় কদম রসূল দরগাতে। শীতলক্ষ্যা নদীল কূল ঘেঁষেই কদম রসূল দরগাহের অবস্থান।


নদীতে গিয়ে অইপাড়ে যাবার জন্য নৌকায় চড়ে বসি। কিন্তু পানি সেই বুড়িগঙ্গার মতই কালো আর গন্ধযুক্ত। দেখেই মন খারাপ হয়ে গেলো। আমাদের নদীলগুলোর আসলেই খুব খারাপ অবস্থা। সেদিকে কোন সরকারই নজর দেয় না।

 

 


যাই হোক নৌকায় চড়ে বসলাম আমি আর আপা। কি সুন্দর নেৌকার ভিতরে পাটি বিছানো। জুতা রেখে দুইজনেই আসন পেতে বসলাম। বিকেলের রোদ চোখে এসে পড়ছিল নদী হতে রিফ্লেকশন হয়ে ।

 

 


কত নৌকা আসছে যাচ্ছে, ভূঁ ভূঁ করে ট্রলার লঞ্চগুলো যাচ্ছে নির্নিমেষ দৃষ্টিতে তাই দেখে যাচ্ছি। অবশ্য এক হাতে ক্যামেরা ছিল আর অন্য হাতে মণ্ডা মিঠাই আসার সময় নদীর ঘাট থেকে কিনে নিয়ে আসছিলাম ।

 

 


আমি আর আপা চিবুচ্ছিলাম এগুলোই কারণ দুপুরেতো আর খাওয়াই হয়নি। সাথে সুন্দর মিষ্টি একটা বাচ্চা ছিল তাকেও দিলাম খেতে।

 

 

 

একটার পর একটা ছবি তুলেই যাচ্ছি। আমি আবার সকল কিছুইতে মুগ্ধ হয়ে যাই । মুগ্ধ হয়ে দেখে যাই। মানুষ দেখি, মাঝি দেখি, নৌকা দেখি । ছলাৎ ছলাৎ জল দেখি। অপূর্ব সময় কেটেছে তখন। ভাল লাগায় চোখ বুজে আসছিল।

 

 


 

 

হঠাত দেখি সেখানে একটা কুকুরকে সেম্পু মাখিয়ে গোসল দেয়া হচ্ছে

 

 


প্রকৃতির ফুল হাসি দেখলেই মন ভাল হয়ে যায়........ যারা আমাদের সহযাত্রি ছিলেন। বাচ্চাটা মিঠাই খাচ্ছে :)

 

 

 


দেখছে সেও মুগ্ধতায়


ছুটে চলা নৌকায় গিয়ে তার দৃষ্টি আবদ্ধ হয় । সেও আমার মতো মুগ্ধ হয়ে দেখছে।

ভেসে চলেছে নৌকাগুলো ছলাত ছলাত করে কালো আঁধারি পানিতে

ডুবে আবার ভাসছে স্টিমার মনে হয় বালি বহন করছে


ধীরে ধীরে আমরা নদীর অই পাড়ে পৌঁছে গেলাম। তারপর রিক্সা নিলাম তাও একটু সামনে গিয়েই রিক্সা আর যেতে পারলনা। রাস্তার ছিল বেহাল অবস্থা তখন ড্রেন কাটছে বলে বুঝি রাস্তা পুরোটা বন্ধ। প্রচণ্ড গরমে দুইজন হেঁটে হেঁটেই রওয়ানা হলাম । শেষে গিয়ে গন্তব্যে পৌঁছলাম আমরা তবে খুব কষ্ট হইছিল হাঁটতে রাস্তার অবস্থা ভাল ছিল না বিধায়

দরগা

 

কদম রসূলের ইতিহাস : কদম রসূল বলতে মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) পায়ের ছাপ কে বোঝায়। শুনা যায়, মহানবী (সা:  ) মেরাজের রাত্রে বোরাকে উঠবার সময় এবং বিভিন্ন সময় বেশ কিছু পাথরে তার পায়ের ছাপ পড়ে। এই পায়ের ছাপওয়ালা পাথর গুলি বিশ্বের বিভিন্ন জায়গায় ছড়িয়ে আছে। ইস্তাম্বুল, কায়রো, দামেস্ক, জেরুজালেম ।


আমাদের দেশেও নাকি এমন দুটি পাথর আছে। বিষয়টি অবিশ্বাস্য, এর কোন ভিত্তি বা কোন সূত্রও আমার জানামনে নেই। তাই অন্তত আমার বিশ্বাসযোগ্য হয়নি। যাই হোক ...

 

নারায়নগঞ্জের শীতলক্ষ্যা নদীর তীরে অবস্থিত কদম রসূল দরগাটি অত্যন্ত সুপরিচিত। মির্জা নাথান এর বাহারিস্থান-ই-গাবী গ্রন্থে ও বিভিন্ন ঐতিহাসিক সূত্রের আলোকে জানা যায়, হযরত মুহাম্মদ (সা:  ) এর পবিত্র পদচিহ্নটি বহু শত বৎসর পূর্বে হাজী নূর মোহাম্মদ নামক এক তাপস ও সাধক পুরুষ একজন আরব দেশীয় বণিক হতে সংগ্রহ করে এই কদম রসূল এদেশে নিয়ে আসে। পরবর্তীতে ধর্মপ্রাণ ভক্তরা বিভিন্ন সময় বিভিন্ন ভক্তির নির্দশন স্বরূপ এখানে বিভিন্ন স্থাপনা নির্মাণ করেন।

 

১৬ শতকের শেষ দিকে মাসুম খাৎ কাবুলি নামে একজন সম্ভ্রান্ত রাজা তিনি ঈশা খাঁর বন্ধু। তিনি ১৮৫০ খ্রিস্টাব্দে আরব বণিকদের নিকট থেকে বহু অর্থ নিয়ে এই মহামূল্যবান পাথরটি খরিদ করেন। এবং সেটি সেটি নারায়নগঞ্জে স্থাপন করেন। সুবাদার ইসলাম খান, শাহজাহানসহ আরো অনেক আমির-ওমরা এ স্থানদর্শন করেন। সুলতান সুজা এই দরগার জন্য ৮০ বিঘা জমি দান করেন। গোলাম নবী ১৭৭৮ খ্রিষ্টাব্দে পবিত্র কদম মোবারক স্থাপনে এক কক্ষ বিশিষ্ট একটি দালান ঘর তৈরী করেন। যার সামনের দিকে একটা বারান্দা এবঙ একটি গম্বুজ আছে। কক্ষেরে মাঝে কদম মোবারক রক্ষিত যা সর্বদা একটি পাত্রে গোলাপজলে ডুবিয়ে রাখা হয়। স্মৃতি পদচিহ্নযুক্ত দরগাহে সর্বদাই দেশ বিদেশের ধর্মপ্রাণ সকল শ্রেণীর লোকজন দর্শন করতে আসেন।  একটি গাছের নিচে আবার এই পদচিহ্ণযুক্ত পাথরটিকে নিয়মিত গোসল করানো হয়।

 

আসলে দরগা মাজার এসবে আমার খুব অনীহা । মাজার পুজারীদের আমি দুচক্ষে দেখতে পারি না। এসব বিশ্বাসও করিনা। নিজের ঈমান ঠিক রাখাই যথেষ্ট। নামাজ রোযা নিয়মিত করলে মাজারে যেতে হবে কেনো শুনি।

কদম রসূল দরগা ৩০ ফুট উঁচু টিলায় স্থাপিত। সামনের দিকে স্থাপত্যে নকশায় মনোরম স্থাপনার প্রধান প্রবেশদার। দেখতে দারুন লাগে কিন্তু । গিয়ে দেখলে চোখ জুড়িয়ে যাবে। আমাদেরও তাই হয়েছে। মুগ্ধ হয়েছি। ছবিতেই দেখুন......

 

গোলাম নবীর ছেলে গোলাম মুহাম্মদ ১৮০৫-০৬ সালের দিকে এই প্রধান ফটকটি নির্মান করেছেন। এই স্থাপনা সংলগ্নে উত্তর দক্ষিণে একটি মুক্ত স্থান আছে যেখানে ঈদের নামায পড়া হয়। বিভিন্ন ধর্মীয় অনুষ্ঠানাদিতে ব্যবহৃত য়। উত্তর দিকে একটি সুন্দর মসজিদ আছে। দক্ষিন দিকে কবরস্থান হিসেবে বিদ্যমান যেখানে হাজী নূর মোহাম্মদ (র:) সাহেহের মাজার। তাছাড়া হযরত শাহজালালের (রহ: ) এর অন্যতম সাথী শেখ বোরহান উদ্দিন (রহ: ) যিনি ধর্ম প্রচারে অত্র অঞ্চলে এসেছিলেন তার মাজার বিদ্যমান। সব মিলিয়ে সুন্দর পরিবেশ সেখানের।


তবে স্থানে স্থানে মহিলারা বসে খানাদানা গল্প গুজব করছে পরিবেশটাই খারাপ লাগছিল। এসব মাজার পুজারীরা সারা বছরই কোন না কোন উছিলায় মাজারে পড়ে তাকে। ভণ্ডামি আর কাকে বলে সেসব মাজারে না গেলে বুঝা যায় না। জটাধারী লোকের সংখ্যাও কম ছিল না।


কেমন দেখলেই ভয় লাগে। ভয়ংকর চাহনী তাদের......মদখোর গাঁজাখোর সবার বসবাস এখানে। পবিত্র স্থানকে অপবিত্র করার জন্য এরাই যথেষ্ট। তবু মানুষের হুশ ফিরে না তবু মানুষ সেখানে মানত করে দেখে খুব কষ্ট লাগে। আল্লাহ তাআলাহ এদের হেদায়েত করুন।

 ফিরে আসার সময় হয়ে এলো। আমরা মহিলা বলে সাহস করে কদম রসূলের ভিতরে হেঁটে হেঁটে দেখতে পারিনি। আনইজি ফিল করাতে খুব তাড়াতাড়িই চলে আসছিলাম। ভিতরের তেমন ছবি উঠাতে পারি নাই :( মানুষের চোখগুলো আমাদের দিকে কেমন জানি তীরের মতো বিঁধে যাচ্ছিল। দেখেই চমকে যাই। আর দ্বিধাদ্বন্দ্ব তো আছেই । মেয়েদের ছবি তোলাতে অনেক বাঁধা। তাই আর ভিতরের ছবি বেশী তুলা হয়নি।

ফেরার সময় হয়ে এলো আবার। ........ সেখান থেকে ধীরে ধীরে সিঁড়ি বেয়ে নামছি তখন দেখলাম একটা বাচ্চা ছেলে মাথা ঠেকিয়ে সিজদা করছে সিড়িতে। আমরা দুইজনেই তাকে বুঝালাম যে আল্লাহ ছাড়া কারো সামনে মাথা নোয়াতে নেই। সে ফ্যাল ফ্যাল করে তাকিয়েই থাকল। কি জানি তার অবুঝ মনে বুঝ আসছিল কিনা। আল্লাহ ওর ভিতরে হেদায়েতের শিফা দান করুন।

ফিরতি পথে আরো ছবি

 

 

 

 

 




 

আশা করি ভাল লাগবে আপনাদের।

তথ্যসূত্র : নেটের বিভিন্ন ভ্রমণ পোষ্ট থেকে এমনকি আমাদের ভ্রমনপ্রিয় কামাল ভাইয়ার পোষ্ট থেকেও । এসব ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেনা। আল্লাহ হাফেজ.........

৩ Likes ১ Comments ০ Share ৬৮০ Views