-দিদি, আমিও আসি তোর সাথে?
-তোকে আসতে হবে না।এই কাঠফাটা রোদে তোর গা জ্বলে যাবে।
-কিছুই হবে না। আসি নারে দিদি।
-বললাম না আসতে হবে না। ধমক দেয় প্রমীলা।
দিদির ধমক খেয়ে থমকে দাঁড়ায় শ্যামল। আর সে সামনে পা বাড়ায় না। শীতল চোখে তাকিয়ে থাকে প্রমীলার দিকে। দু’চোখে জল টলমল কর‡Q তার।
প্রমীলার মায়া হয়। সে এগিয়ে যায় শ্যামলের দিকে। বলে, যাবি, তাহলে চল। তুই বুলুকে কোলেনে আর আমি দুলুকে কোলেনিচ্ছি ।
বুলু আর দুলু হচ্ছে ছাগল-ছানা। চারদিন আগে তাদের ছাগির দুইটা বেটা বাচ্চা হয়েছে। প্রথমে বুলু তারপর দুলু। বুধবারে জন্ম হওয়ায় নাম রাখা হয়েছে বুলু এবং প্রথমটির নামের সাথে মিল রেখে দ্বিতীয়টির নাম রাখা হয়েছে দুলু।
কিছু পথ যাওয়ার পরই মিঞাদের আম বাগান।
প্রমীলা বাগানের দূর্বা ঘাসের দিকে দেখিয়ে শ্যামলকে বলে, বুলুকে ছেড়ে দে। এই ঘাসগুলো খাক।
বুলু আর দুলু কোল থেকে মুক্তি পেয়েই ছুটে যায় তার মায়ের কাছে। স্তনে মুখ লাগিয়ে দুধপান করে।
বৈশাখের দিন। প্রকট সূর্যের তাপদাহ। চতুর্দিকে যেন দাউদাউ করে আগুন জ্বলছে। ব্ৃষ্টির দেখা নাই।
বাগানে ছোট ছোট কলি আম পড়ে আছে। তারা সেই আমগুলো কুড়িয়ে নেই।
প্রমীলা বলে, আমের কুচি বানাবো। বাড়ি থেকে তুই একটা লবণ আর ছুরি নিয়ে আয় না।
শ্যামল আমে কামড় দেয়। বলে, তুই যা না দিদি। আমি বরং বুলু-দুলুর মাকে দেখে থাকছি।
-দেখে থাকবি, ঠিক তো?
শ্যামল মাথা নাড়ায়।
প্রমীলা আবার বলে, আমি যাবো আর আসবো। দেখিস, ছাগল যেন, মোল্লের ক্ষেতে না যায়।
তাদের এই একটাই ভয়। মোল্লের ক্ষেত। মোল্লের ক্ষেতে ছাগল গেলে বিপদ। তারা ছাগল ধরে খোঁয়াড়ে দিয়ে দেয়। কারো কোনোরকম নিষেধ বারণ শুনে না।
প্রমীলার চলে যাওয়ার পর শ্যামল বুলুকে ধরে তার গালে গাল ঘষে। তার সাথে নিজের মনেই কথা বলে। বলে, তুই আমার বন্ধু হবি?
বুলু কিছুই বলে না। নিজেকে শ্যামলের কাছে সঁপে দিয়ে উষ্ণ নিঃশ্বাস ছাড়ে।
শ্যামল আবার বলে, মা বলছিল, তুই বড় হলে, তোকে নাকি বেঁচে দিবে। বেঁচে আমাদের স্কুলের বেতন দিবে। আমি বলেছি, আমি তোকে কিছুতেই বেঁচতে দিবো না।
দরকার হলে লেখাপড়া ছেড়ে দিবো।
বুলু এবারও কিছু বলে না।
প্রমীলা ফিরে এসে শ্যামলকে আমগুলো ধুয়ে আনতে বলে। শ্যামল কালক্ষেপন না করে আম হাতে ছুটে যায় পুকুরের দিকে।
কাছেই পুকুর। সারা বছর পানি থাকে। তবে বৈশাখ মাসে পানি কমে একেবারে তলানীতে চলে যায়। আষাঢ়-শ্রাবণ মাসে ভারী বর্ষণে আবার পুকুর ভরে যায়।
শ্যামল পুকুরের ঢাল বেয়ে আস্তে আস্তে নামতে থাকে। পুকুরের পানিতে অনেকগুলো কচুপাতার নৌকা ভাসছে। কেউ এসে কচুপাতার নৌকা বানিয়ে ভাসিয়ে দিয়ে গেছে। তারপর খেলা শেষে চলে গেছে।
শ্যামল পানিতে হাত দিয়ে তরঙ্গ সৃষ্টি করে। নৌকাগুলো আরো দূরে ভেসে যায়।
পরদিন মায়ের ডাকে তাদের ঘুম ভাঙে। তারা গোয়াল ঘরের দিকে ছুটে যায়। গোয়াল ঘরে মা দাঁড়িয়ে আছেন। কী হয়েছে তা জিজ্ঞাসা করতে হয় না। তারা বুঝে যায়। বুলু স্থির হয়ে মাটির উপর শুয়ে আছে। তার খোলা চোখ দু’টি তাদের দিকে অপলকে তাকিয়ে আছে। সেই চোখে কোনো রাগ বা অভিমান নেই।
Comments (0)
লিখা চলুক...