Site maintenance is running; thus you cannot login or sign up! We'll be back soon.

আবোলতাবোল বালক

১০ বছর আগে

একটি সতর্কীকরণ গল্পঃ {পীর সাহেব}

কিছু দিন আগের কথা।সকাল ১২ টার মত হবে।আমি আমাদের ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে বসে পত্রিকা পড়ছি।পত্রিকায় ভালো কোন খবরের সন্ধানে এ-পাতা ও-পাতা উলটচ্ছি।আমার কাছে ভালো খবর মানে খুনখারাপির খবর।খুনের ঘটনা যতই নির্মম আমার পড়ার আগ্রহ তত বেশি।তো আমি সেরকম একটা দুটা খবরের জন্যই পত্রিকার পৃষ্ঠা উলটে যাচ্ছি।এমন সময় পীর দরবেশে টাইপের একজন আমার সামনে এসে হাজির।পীর দরবেশ টাইপের বলার কারন আপনাদের আগে ব্যাখ্যা করি-উনার দাঁড়িগোঁফ রবিন্দ্রুনাথের মতো লম্বা,হাতে সাপের মতো বাঁকানো লাঠি,গলায় বড় বড় গুটির ৫-৭ টা তব্জি,শরীর ছেঁড়া বস্তায় জড়ানো।শরীর বস্তা দিয়ে ঢাকা থাকায় আমি মনে মনে পীর সাহেবের নাম দিলাম;বস্তাবাবা।বস্তাবাবা আমার সামনে দাঁড়ীয়ে চোখ বন্ধ করে কি জেনো জপছেন আর হঠাৎ হঠাৎ হোক মাওলা বলে ডান হাত উপরের দিকে তুলছেন।মাওলাকে তিনি কি হোক বলছেন বুঝতে পারছি না,শুধু দেখে যাচ্ছি।প্রায় ২ মিনিট এই অবস্থা চলার পর বস্তাবাবা চোখ মেলে বললেন,

“আমি মাওলাকে বলেছি,তুই এরকম অনেক প্রতিষ্ঠানের মালিক হবি”।এবার তিনি ডানহাত বাড়িয়ে বললেন,দে দে,কি দিবি দে।এতক্ষণে বুঝতে পারলাম বস্তাবাবা মাওলার কাছে আমার জন্য এমন অনেকগুলো প্রতিষ্ঠান চেয়েছেন এখন তাঁর বিনিময়ে পারিশ্রমিক চাচ্ছে।আমি বুঝতে পারলাম না যিনি আমার জন্য মাওলার কাছ থেকে এত কিছু এনে দিতে পারেন তিনি কেন আবার আমাকে কিছু দিতে বলছেন?এরূপ প্রশ্ন না করে খুব ভক্তির স্বরে বললাম,কি দিলে আপনি খুশি হবেন?আমি এই দোকানের কর্মচারী,আপনাকে দেয়ার মতো আমার কাছে বেশি কিছু নাই।বস্তাবাবা ধমক দিয়ে বললেন,চুপ কর পাপী।ধমক খেয়ে একটু স্তম্ভিত হলাম।বললাম,কি হয়েছে বাবা,আমি কি পাপ করেছি?তিনি তিগ্ন কণ্ঠে বললেন,আমি সব জানি।তুই এই প্রতিষ্ঠানের মালিক।আমাকে মিথ্যে বলবি না।মিথ্যে বললেন ধ্বংস হয়ে যাবি।আমি মৃদু হেঁসে বললাম,এটি একটা শিশু বাচ্চাও বলতে পারবে।আমার attitude দেখে খুব সহজে এটা বুঝা যায়।বস্তাবাবা খুব রেগে গিয়ে বললেন, তোর নাম বল,খবরদার মিথ্যে বলবি না।আমি আবার মৃদু হেঁসে বললাম,মিথ্যে বললে আপনি ধরতে পারবেন?তিনি আবার তিগ্ন কণ্ঠে বললেন,আমার সাথে ঠাট্টা করবি না,ধ্বংস হয়ে যাবি।আমি সব জানি।এবার আমি বস্তাবাবার আসল-নকল পরীক্ষা শুরু করলাম।আমি আমার সঠিক নামটিই বললাম।বলার সময় মুখের ভঙ্গি এমন করলাম যাতে মনে হয় আমি মিথ্যে বললাম।তারপর বস্তাবাবাকে বললাম,বলুনতো সত্যি নাকি মিথ্যা বলছি?

বস্তাবাবা আমার ডানহাতের মধ্যমা আঙ্গুলের অগ্রপ্রান্ত ধরলেন এবং চোখ বন্ধ করে কিছুক্ষণ দাঁড়ীয়ে থাকলেন।ডাক্তাররা ব্লাড প্রেশার মাপার সময় যেভাবে স্ফিগমোম্যানোমিটার শিরার মধ্যে ধরে হৃদ স্পন্দন শুনে,ঠিক সেরকম।মনে হচ্ছে আমি মিথ্যে বললেই হৃদ স্পন্দনের মতো মধ্যমা আঙ্গুলের অগ্রভাগ সিগন্যাল দিবে,আর সেটি ধরার ক্ষমতা শুধু বস্তাবাবারই আছে।আমাকে ভাবনার মধ্যে রেখেই তিনি আঙ্গুল ছেড়ে দিয়ে বললেন,তুই মিথ্যে বলিস নি।তোর নামটা খুব সুন্দর।নামের মান রাখবি,৫ ওয়াক্ত নামাজ পড়বি,গরীবের উপকার করবি।আমি খুব স্তম্ভিত হলাম।মনে হচ্ছে বস্তাবাবার সত্যমিথ্যা ধরার ক্ষমতা রাখেন।উনার সাথে খুব বড় বেয়াদবি করে পেলছি।মনে মনে অনুশোচনা করলাম,আসলে এমনটি করা ঠিক হয় নি।তাই মনে মনে তিন বার তওবা করলাম এবং ৪ বার সরি বললাম।কি এখনো বিশ্বাস হচ্ছে না রে পাপী?বলেই আবার মধ্যমা আঙ্গুলের অগ্রপ্রান্ত ধরলেন।এবার বাবা বললেন,দে মনে মনে একটা ফুলের নাম বল,ঠোট নাড়াবি না কিন্তু।আমি মনে মনে গোলাপ বলতে গিয়েও বললাম না।বললাম জবা।আপনাদের গোলাপ না বলার পিছনের কারণ বলি।গবেষণায় দেখা গেছে ১০০ জন মানুষকে যদি একটি ফুলের নাম বলতে বলা হয় এর মধ্যে ৮০ জনই বলে গোলাপ আর বাকি ২০ জন অন্য ফুলের নাম বলে।অরথাদ ৮০% লোক গোলাপ বলে।এটাকে পুঁজি করে কিছু ভণ্ড পীর ফকির নিজেকে মাইন্ড রিডার হিসেবে পরিচয় দেয়।কিছু কিছু ম্যাজিশিয়ান এই বুদ্ধিকে কাজে লাগানোর চেষ্টা করে।তাই আমি গোলাপ না বলে বললাম,জবা।

বস্তাবাবা আগের মতো চোখ বন্ধ করে আছেন।আমি বার বার জপ করছি জবা ...জবা ...।বস্তাবাবা আগের মতো ১ মিনিট পর আঙ্গুল ছেড়ে দিয়ে বললেন,নিজেকে খুব চালাক ভাবিস তাই না?বাবার কথা শুনে আমি ভড়কে গেলাম।মনে হয় উনি আমার চালাকি ধরে ফেলেছে!সাথে সাথে নিজেকে গুছিয়ে নিয়ে বললাম,না বাবা আপনি তো সব জানেন।আপনার সাথে কি আর চালাকি করবো?বাবার মুখে একটু খানি হাঁসির ঝলক দেখলাম।কিন্তু কোন অর্থ বুঝলাম না। তিনি এবার বললেন,মাওলার পবিত্র সৃষ্টির মধ্যে সবচে সুন্দর হচ্ছে ফুল।ফুলের মধ্যে সবি সুন্দর,কিন্তু একেক জনের পছন্দ একেক রকম।যেমন তোর পছন্দ গোলাপ।সেজন্য তুই মনে মনে বলেছিস,গোলাপ।এবার আমি পীর সাহেবকে থামিয়ে দিয়ে বললাম,আমি বলেছি জবা।শুনে সর্বজান্তা পীর সাহেব পরাজিত হওয়ার ভঙ্গিতে ঢোঁক গিললেন।বললেন,আসলে জবা বলেছিস?আমি জয়ের হাসি হেঁসে বললাম বললাম, “হু”।তিনি এবার দার্শনিক ভাব নিয়ে বললেন,চিংড়ি যেমন মাছ নয় তেমনি জবাও ফুল নয়।কারণ জবা এর কোন গন্ধ নাই।এবার আমি কঠিন যুক্তি দাঁড় করানোর চেষ্টা করলাম।বললাম,চিংড়ি মাছ নয় এটি বিজ্ঞান প্রমান করেছে।সেই জন্য বিজ্ঞান চিংড়িকে Arthropoda পর্বের অন্তর্ভুক্ত করেছে।Arthropoda পর্বে যারা যারা আছে তারা প্রায় সকলেই পোকামাকড়।তাই বইয়ের ভাষায় চিংড়িকে মাছ বলা হয় না।কিন্তু বিজ্ঞান আজ পর্যন্ত জবাকে ফুলের কাতার থেকে সরাতে পারে নি।কারণ ফুলের একটা বৈশিষ্ট্য “গন্ধ” ছাড়া সকল বৈশিষ্ট্যই জবার মধ্যে বিদ্যমান।আমার বলা শেষ হওয়ার আগেই পীর সাহেব আমাকে থামিয়ে দিয়ে বললেন,মামা ১০ টাকা দাও,অনেক খিদা পাইছে।না হয় কিন্তু তোমার সামনের মোবাইল টা নিয়া দোর দিমু।আমি অবাক হলাম!যিনি এতক্ষণ ছিলেন পীরবাবা,এখন তিনি দৌড়বাবা।আমি বললাম,এতক্ষণে লাইনে আইছ মামু।এত ভাব না ধইরা আগে কৈইলেই পারতা,১০ টাকা দিয়া দিতাম।এখন আর তোমারে টাকা দিমু না।তোমার হাতের লাঠিটা তোমার পাছায় ঢুকাইয়া এখানে দাঁড় করাইয়া রাখুম।সময় থাকতে দৌড় দেও।

এই গল্পে একটি সত্য ঘটনার সাথে কিছু সংযুক্ত করা হয়েছে...

আমাদের চলার পথে এমন হাজারো বাবার সন্ধান পাওয়া যায়।যেমন, লাঠিবাবা, ঘটি বাবা, ছটি বাবা, পটি বাবা।এরা মানুষকে ঠকানোর জন্য অভিনব কৌশল অবলম্বন করে।তারা যে দুই একটি কথা বলে,সেগুলো কাকতালীয় ভাবে লেগে যেতে পারলেই হল।তারপর এদের স্বার্থসিদ্ধি পর্ব শুরু হয়। ...............................................................................................................।                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                      

০ Likes ৫ Comments ০ Share ৫৩৫ Views

Comments (5)

  • - গোলাম মোস্তফা

    চেষ্টা করবো। ধন্যবাদ। 

    • - এনামুল রেজা

      চেষ্টা করুন। :)

    - জাকিয়া জেসমিন যূথী

    আপনাদের তীরন্দাজ পড়েছি। সবগুলো লেখা এখনও না পড়লেও বইটা খুব ভালো লেগেছে।

    আশা করা যায় লেখা পাঠাবো। কিন্তু সময় এত কম কেন ভাইয়া?? আর একটা সপ্তাহ বাড়িয়ে দিলে ভালো হতো। 

    বিষয়টা বিবেচনা করা যায় কিনা দেখবেন। 

    - মাসুম বাদল

    তীরন্দাজ-এর জন্য শুভকামনা ...

    Load more comments...