Site maintenance is running; thus you cannot login or sign up! We'll be back soon.

ইফ্ফাত রুপন

৭ বছর আগে

একটি মৃত্যুবরণ

সবকিছু ঠিক ঠাক মতো গুছিয়েছো তো?

হ্যাঁ বাবা গুছিয়েছি।

গরম কাপড়, সুয়েটার নিয়েছো তো? সিলেটে কিন্তু এখন অনেক ঠাণ্ডা পরছে।

আরে হ্যাঁ সবকিছুই নিয়েছি।

আর কিছু লাগবে তোমার? লাগলে বল আমি এনে দিচ্ছি। মোবাইলের চার্জার নিয়েছ তো? পরে আবার মোবাইলের চার্জ শেষ হয়ে যাবে তোমাকে আমি আর খুঁজে পাব না।

আরে বাবা সব কিছুই নিয়েছি। কিছুই বাদ রাখি নি। আর আমার কিছু লাগবে না । চল তো বের হই।

তুমি শিওর তো?

হ্যাঁ আমি শিওর। চল বের হই।

এই বলে নাদিয়া রাতুলের হাত ধরে টান দেয় বের হবার জন্য। নাদিয়া জানে রাতুলকে এভাবে বের না করলে সে কোন মতেই বের হতে চাইবে না। নাদিয়ার প্রচণ্ড খেয়াল রাখে রাতুল, সেই সাথে প্রচণ্ড ভালোবাসেও তাকে। আজ নাদিয়া ভার্সিটি থেকে পিকনিকে যাচ্ছে সিলেট এর চা বাগানে। টানা ৩ দিন থাকবে সেখানে। তাই রাতুলের চিন্তার কোন শেষ নেই। একই ভার্সিটিতে না পড়ার কারণে রাতুল আজ নাদিয়ার সাথে যেতে পারছে না। তার জন্য অবশ্য তার বেশ খানিকটা মনও খারাপ। কিন্তু নাদিয়ার সামনে সে তা প্রকাশ করলো না। মেয়েটা ভার্সিটি লাইফে প্রথম বার ট্যুরে যাচ্ছে। একটু হাসি মুখে যাক না।

রাতুল আর নাদিয়া তাদের সাথে থাকা ব্যাগ আর অন্যান্য টুকটাক কিছু জিনিসপত্র নিয়ে বের হোল। ভোর ছয়টায় বাস ছাড়বে। তার আগেই নাদিয়াকে রাতুলের পৌঁছে দিতে হবে ক্যাম্পাসে। সকালের আলো এখনো ঠিকমতো ফুটে উঠে নি। রাতুল তার বাইকে করে নাদিয়াকে পৌঁছে দেয় তার ক্যাম্পাসে। বাস আরও আধ ঘণ্টা পর ছাড়বে। রাতুল আর নাদিয়া পাশাপাশি কিছুক্ষণের জন্য একসাথে বসলো। নাদিয়াকে আজ বেশ সুন্দর লাগছে। হালকা হলুদ রঙের একটা জামা পরেছে সে আজ। ভোরের এই হালকা আলোয় তাকে দেখতে বেশ মিষ্টি লাগছে। রাতুল কিছুক্ষণের জন্য নাদিয়ার দিকে তাকিয়ে রইলো। নাদিয়া সেটা বুঝতে পেরে রাতুলকে জিজ্ঞেস করলো,

এই এভাবে তাকিয়ে আছো কেন?

তোমাকে আজ বেশ সুন্দর লাগছে তাই।

এভাবে তাকিয়ে থাকবে না। আমার লজ্জা লাগে। আচ্ছা এই তিন দিন তো আমি থাকবো না। এই তিন দিন তুমি কি করবে?

কি আর করবো? খাবো দাবো আর ঘুমাবো। আমার কি আর কাজ আছে।

ক্লাসগুলো করো কিন্তু ঠিকমতো। আমি নেই বলে যে ক্লাস মিস দিবে সেটা কিন্তু হবে না।

আচ্ছা। আমাকে তুমি পিকনিক থেকে এসে ফোন দিও।

কেন পিকনিক থেকে এসে ফোন দিব কেন? ওখানে থাকতে দিতে সমস্যা কি? এমন তো নয় যে আমি এমন জায়গায় যাচ্ছি যেখানে মোবাইলের নেটওয়ার্ক নেই।

আচ্ছা ঠিকাছে বাবা ওখানে থাকতে আমাকে ফোন দিও। আমাকে জানিও কি করছো কেমন আছো। নাদিয়া তোমাকে একটা কথা জিজ্ঞেস করি?

হ্যাঁ করো।

তুমি কখনো আমাকে ভুলে যাবে নাতো?

এই কথাটা রাতুল প্রায় সময় নাদিয়াকে জিজ্ঞেস করে। নাদিয়া কিছুক্ষণ রাতুলের দিকে তাকিয়ে থেকে তার হাতটা ধরল। রাতুলের হাতটা নিজের দুহাত দিয়ে বেশ শক্ত করে ধরে নাদিয়া বলল,

না রাতুল আমি কখনো তোমাকে ভুলে যাবো না।

প্রমিস।

হ্যাঁ প্রমিস। শুক্রবারে আমরা পিকনিক থেকে চলে আসবো। ঐদিন সন্ধায় বাস আমাদের এখানে নামিয়ে দিয়ে যাবে। তুমি আমাকে নিতে এসো। আসবে তো?

হ্যাঁ নাদিয়া আমি আসবো।

বাস চলে এসেছে। সবাই তাদের ব্যাগ পত্র নিয়ে একে একে বাসে উঠতে শুরু করলো। রাতুল নাদিয়াকে বাস পর্যন্ত এগিয়ে দেয়। বাস ছেড়ে দেবার পরও নাদিয়া জানালা দিয়ে রাতুলের দিকে তাকিয়ে থাকে। নাদিয়া এটা সবসময় করে। রাতুল যতক্ষণ পর্যন্ত না তার চোখের আড়াল হয় ততক্ষণ পর্যন্ত সে তার দিকে তাকিয়ে থাকে।









আজ শুক্রবার। নাদিয়ারা ফিরে এসেছে বেশ কিছুক্ষণ আগে। বাস এসে তাদের সবাইকে ক্যাম্পাসে নামিয়ে দিয়ে গেছে। নাদিয়ার মন আজ ভীষণ খারাপ। এই তিন দিনে একটি বারের জন্যও তার সাথে রাতুলের কথা হয় নি। নাদিয়া দুষ্টুমি করে রাতুলকে বলেছিল, কেন ফোন করবো না? আমি কি এমন জায়গায় যাচ্ছি যেখানে মোবাইলের নেটওয়ার্ক নেই। কিন্তু সেখানে গিয়ে দেখে সত্যিই তাই। মোবাইলের নেটওয়ার্ক নেই। খালি নাদিয়ার ফোনে নয়। কারো মোবাইলেই নেটওয়ার্ক ছিল না। চা বাগানের বেশ খানিকটা মাঝখানে ছিল তারা এতোদিন। বাহিরের দুনিয়ার কারো সাথেই তাদের এই কয় দিন কোন যোগাযোগ ছিল না।

আজ রাতুলের নাদিয়াকে নিতে আসার কথা। কিন্তু নাদিয়া অনেকক্ষণ ধরে দাঁড়িয়ে আছে। রাতুল আসছে না। অন্যদিকে তার ক্লাসমেটরা সবাই এক এক করে যে যার বাসায় চলে যেতে লাগলো। অনেকে তাকে সাধলো তাদের সাথে যাওয়ার জন্য। কিন্তু নাদিয়া গেলো না। রাতুল এলে রাতুলের সাথে যাবে সে।

রাত প্রায় ১০টা বেজে গেছে। কিন্তু রাতুল এখনও আসছে না। একটিবারের জন্য সে নাদিয়াকে ফোন পর্যন্ত করে নি এখনো। নাদিয়ার প্রচণ্ড মন খারাপ হোল। রাতুল কি ভুলে গেছে তাকে। আগে তো কখনো এমন করে নি সে। তাদের দুই বছরের সম্পর্কের মধ্যে এই প্রথমবার টানা তিন দিন তাদের মধ্যে কোন কথা হয় নি। তার উপর নাদিয়া তাকে বলেছে আজ সে ফিরে আসবে। তাকে যেন রাতুল নিতে আসে।  

রাত একটার দিকে নাদিয়া কাঁদতে কাঁদতে প্রচণ্ড অভিমান নিয়ে তার বাড়ি ফিরল।










কিরে খাচ্ছিস না কেন? রাতে ভালো ঘুম হয় নি?

নাদিয়া সকালে তার বাবা মার সাথে নাস্তার টেবিলে বসে আনমনে খাবারগুলো নাড়ছিল। খেতে ইচ্ছে করছে না তার। তার মা আবার তাকে জিজ্ঞেস করলেন, কিরে খাবি না?

না মা খেতে ইচ্ছে করছে না। আমি বরং যেয়ে একটু শুয়ে থাকি। গতকাল রাতে ভালো মতো ঘুমুতে পারি নি।

ঠিকাছে যা। গিয়ে শুয়ে থাক।

নাদিয়া তার বিছানায় এসে শুয়ে পরল। গতকাল রাতে আসলেই তার ভালো ঘুম হয় নি। ঘুমই হয় নি ধরতে গেলে। সারারাত সে তার মোবাইলের স্ক্রীনে চোখ রেখে কাটিয়েছে। যদি রাতুল তাকে ফোন করে। কিংবা একটি এসএমএস পাঠায়। কিন্তু রাতুল কিছুই করে নি। সেও রাতুলকে ফোন করে নি। প্রচণ্ড রাগ করেছে সে তার উপর। যতক্ষণ রাতুল তাকে ফোন না করবে সেও রাতুলের সাথে কথা বলবে না।

এসব চিন্তা করতে করতে কখন যে নাদিয়া ঘুমিয়ে পরেছিল তা সে নিজেও জানে না। তার ঘুম ভাঙল মোবাইল ফোন বেজে উঠার শব্দে। সে লাফ দিয়ে উঠে তার মোবাইলটা হাতে নিলো। কিন্তু রাতুল ফোন করে নি। ফোন করেছে উপমা। উপমা তার ছোটবেলার ফ্রেন্ড।

হ্যালো উপমা। কিরে কেমন আছিস?

নাদিয়া তুই কোথায়?

উপমার কণ্ঠে কেমন যেন একটা কাঁপা কাঁপা ভাব। যেন কোন কিছু নিয়ে প্রচণ্ড ভয় পেয়েছে সে। নাদিয়া বিষয়টা বুঝতে পেরে তাকে জিজ্ঞেস করলো, কিরে উপমা তোর গলা কাঁপছে কেন? কি হয়েছে রে?

তুই কি বাসায় আছিস এখন?

হ্যাঁ আছি তো। আজকে তো ক্লাস নেই তাই আর বের হই নি।

নাদিয়া তুই বাসায় থাক। আমি আসছি তোর বাসায়।

কেন কি হয়েছে রে?

আমি এসে তোকে সব খুলে বলবো। তুই একটু অপেক্ষা কর আমি এখনি আসছি।  

না তুই বল আগে কি হয়েছে। তুই এভাবে কাঁপছিস কেন? কি হয়েছে আগে বল।

উপমা কাঁপা কাঁপা গলায় নাদিয়াকে যা বলল তা হোল,

এই কয়দিন ধরে রাতুল তোকে নিয়ে অনেক দুশ্চিন্তায় ছিল। তোর মোবাইলটা বন্ধ পাচ্ছিলো তাই আমাদের কাছে প্রায়ই ফোন করে জিজ্ঞেস করতো তোর কথা। গতকাল তুই তাকে বলেছিলি তোকে যেন সে নিতে আসে। সে তোকে নিতে যাওয়ার জন্য বাসা থেকে বের হয়েছিল। কিন্তু পথে একটি ট্রাকের সাথে তার বাইকটার এক্সিডেন্ট হয়। বাইকসহ রাতুল ট্রাকের নিচে চাপা পরে। রাতে তাকে ঢাকা মেডিকেলে ভর্তি করানো হয়েছিলো। আর আজ সকালে রাতুলের মৃত্যু হয়।  

এই বলে উপমা শব্দ করে কাঁদতে শুরু করে। নাদিয়া কি বলবে কিছুই বুঝতে পারছে না। উপমা এতো সিরিয়াস একটা বিষয় নিয়ে তার সাথে ঠাট্টা করবে এটা সে জীবনেও ভাবতে পারে নি। বলে কি উপমা। সেদিনও তো সে রাতুলকে হাসি মুখে বিদায় দিয়েছে। রাতুলের হাত ধরেছিল সে। রাতুলের হাতের গন্ধটা এখনো লেগে আছে তার হাতে। আর কি বলছে এসব উপমা। রাতুল আর নেই। নাদিয়া উপমাকে কিছু না বলেই ফোনটা রেখে দিল।









প্রায় এক ঘণ্টা যাবত নাদিয়া তার রুমের দরজা বন্ধ করে রুমের মধ্যে পায়চারি করছে। খুব অস্থির লাগছে তার। সে তার আরও কয়েকজন ফ্রেন্ডকে ফোন করেছিল এর মধ্যে। এমনকি রাতুলের ছোট বোনকেও সে ফোন করেছে। সবাই একই কথা বলছে। রাতুল আর নেই। এটা কি করে সম্ভব? নাদিয়ার কিছুতেই বিশ্বাস হচ্ছে না। এখনই সে রাতুলকে ফোন করবে। ফোন করে জিজ্ঞেস করবে যে সে কেন তার সাথে এমন করছে?

নাদিয়া কাঁপা কাঁপা হাতে তার মোবাইল ফোনটা তুলে নেয়। রাতুলের নাম্বারটা এনে তাকে ফোন করে সে।

কিন্তু ওপাশ থেকে কেউ আর নাদিয়ার ফোনটা রিসিভ করলো না।

১ Likes ০ Comments ০ Share ৪৬১ Views