Site maintenance is running; thus you cannot login or sign up! We'll be back soon.

রাজীব নূর খান

১০ বছর আগে

একটি বিড়ালের আত্মকাহিনী

আমার নাম টম।টম নামটি রেখেছে এ বাড়ির মেঝ ছেলে রাজিব নূর।আমি এ বাড়িতে আছি অনেকদিন।আমার জন্ম পাশের বাড়ির গ্যারেজে।এই গ্যারেজে কোনোও গাড়ি থাকে না।আছে রাজ্যের অপ্রয়োজনীয় জিনিস।আমার জন্মের পাঁচ দিন পর মা আমাকে এ বাড়ির সিড়ি ঘরের নিচে রেখে কোথায় যেন চলে যায়।আমি আজ জানি না আমার মা বা আমার অন্য ভাই বোনেরা কোথায়।তাদের জন্য মাঝে মাঝে আমার অনেক কান্না পায়। চার মাস এ বাড়িতে আমি সুখেই ছিলাম।

একদিন আমি মনের ভুলে রান্না ঘরে চলে যাই,সত্যি করে বলছি কোনও খাবারে মুখ দেইনি।কিন্তু রাজিব নূরের মা আমাকে ভুল বুঝে- ফাহিমের আম্মাকে দিয়ে আমাকে একটা ব্যাগের মধ্যে ভরে মালিবাগ মোড়ে রেখে আসে।সেদিন যা ভয় পেয়েছিলাম!এত মানুষ!এত গাড়ি,বাস,রিক্সা!মালিবাগ মোড় থেকে রাজিব নূরের বাসায় ফিরে আসা কোনও ব্যাপার'ই না।কিন্তু আমি রাগ করে আর তাদের বাসায় ফিরে যাইনি।

বেশ কিছুদিন পর আমি জানতে পারি- রাজিব নূরের বাসায় আমার জন্য সবাই অস্থির হয়ে পড়েছেন।আমার জন্য সাতশো লিফলেট বিলি করেছেন।মজার ব্যাপার হলো, আমার ছবি ছিল ওই লিফলেটে।খবরের কাগজে বিজ্ঞাপনও দিয়েছিলেন।রাজিব নূরের মা তো আমার জন্য অসুস্থ'ই হয়ে পড়েছিলেন।প্রায় রাতেই নাকি আমাকে স্বপ্নে দেখতেন।সতের দিন পর যখন আমার রাগটা একটু কমে,তখন আমি আবার রাজিব নূরের বাসায় ফিরে আসি।আমাকে ফিরে পেয়ে তাদের কি উল্লাস!সেদিন রাতে আমার উদ্দেশ্যে বাসায় পার্টি হয়েছিল।রাজিব নূর কি একটা হিন্দি গান ছেড়ে দিল,সেই গানের তালে তালে আমি অনেকক্ষন নেচে ছিলাম।এ বাড়ির মানুষ গুলো অনেক আন্তরিক।

রাজিব নূর মানূষ টা বড় অদ্ভুত!সত্যি কথা বলতে কি এই মানুষটার জন্যই,আমি এ বাড়িতে আবার ফিরে আসি।এ মানুষটা সারাদিন কোথায় কোথায় ঘুরে বেড়ায় কে জানে!প্রায়ই সে গভীর রাতে ছাদে গিয়ে আকাশের দিকে তাকিয়ে থাকেন।তখন তার দু'চোখে পানি টলটল করে।আমি বুঝি না রাত হলেই কেন মানুষটা এমন অস্থিরবোধ করেন!তার চোখে-মুখে আমি স্পষ্ট দেখতে পাই, এক আকাশ ভয়,হতাশা আর সংশয়।কিন্তু কেন? রাজিব নূর রাতে ভাত খাওয়ার আগে প্রতিদিন পাশের বাসা থেকে ফাহিম নামের বাচ্চাটাকে নিয়ে খেতে বসে।নিজের হাতে ফাহিমকে খাইয়ে দেয়।ফাহিমের খাওয়া শেষ হলে আমাকে খেতে দেয়।যদিও এ ব্যাপারটা তার মা একেবারেই পছন্দ করেন না।আর একটা ব্যাপার পছন্দ করেন না সেটা হলো- চেয়ারম্যান বাড়ির সাদা কালো বিড়াল টা আমার সাথে দেখা করতে আসলে।রাজিব নূর আমার সাথে নানান বিষয়ে কথা বলেন।তার সব কথাই পানির মতো সহজ।আমার বুঝতে কোনো সমস্যা হয় না।তবে সবচেয়ে মেজাজ খারাপ হয় তখন, যখন তিনি হিমি হিমি হিমি বলে চেঁচায়।এই হিমিটাকে আমার দেখার খুব সখ।আমি অপেক্ষায় আছি।
 

রাজিব নূর যখন কম্পিউটার নিয়ে বসেন,তখন আমি তার পায়ের কাছে বসে থাকি।মানুষটা সারাক্ষন কি যেন টাইপ করতে থাকেন।মাঝে মাঝে মনিটরের দিকে তাকিয়ে হাসেন।আবার কখনও কখনও মন খারাপ করে বসে থাকেন।তখন তাকে দেখলে আমার খুব মায়া হয়।কিন্তু খুব রাগ হয় যখন দেখি কম্পিউটার ছেড়ে রেখে সিগারেট খাওয়ার জন্য ছাদে যান।আমিও তার সাথে সাথে ছাদে যাই।তার খুশিতে খুশি হই,আনন্দে আনন্দিত হই,কষ্টে কষ্টিত হই।সিগারেট শেষ করে এসে চিৎকার করে বলে আমাকে চা দাও।মজার ব্যাপার হলো শুধু চা না,চায়ের সাথে বিস্কুটও দেওয়া হয়।রাজিব নূর সেই বিস্কুট আমাকে আর ফাহিমকে সমান ভাগ করে দিয়ে দেয়।এই ফাহিমটা আমাকে খুব অত্যাচার করে।সুযোগ পেলেই সে আমাকে লাথি দেয়।আমাকে লাথি দেওয়ার কারনে ফাহিমকে অনেক বার ধমক দেওয়া হয়েছে।কিন্তু সেই ধমকে কোন কাজ হয়নি।

ইদানিং প্রায়ই রাজিব নূরকে মোবাইলে চিৎকার করে কথা বলতে শুনি।এই শান্ত ছেলেটা কেন এত চিৎকার করে কথা বলে,তা আমি একেবারেই বুঝতে পারি না।তবে খুব বুঝতে পারি,অপর প্রান্তে যার সাথে কথা বলছে সেই মানুষটা তাকে রাগিয়ে দিচ্ছে।সে যাই হোক,আগে আমি রাজিব নূরের বাসার সিড়ি ঘরের নিচে ঘুমাতাম।কিন্তু শীতে আমার খুব কষ্ট দেখে রাজিব নূর আমাকে তার ঘরে সোফায় ঘুমানোর অনুমতি দিয়েছেন।আমি যখন ঘুমিয়ে পড়ি,তখন সে আমার গায়ে চাদর দিয়ে দেন।এই মানুষটার জন্য আমার চোখ বার বার ভিজে উঠে।

০ Likes ১ Comments ০ Share ৩৬২ Views

Comments (1)

  • - মোঃ সাইফুল্লাহ শামীম

    আপনার কবিতার যে জিনিসটা আমার সবচেয়ে ভালো লেগেছে তা হলো আপনি কবিতাটির যে শিরোনাম দিয়েছেন তা এই কবিতার সাথে যথার্থ হয়েছে। কিছুটা দুর্ভেদ্য হলেও সার্বিক বিচারে সুন্দর একটি কবিতা। 

    • - কে এম রাকিব

      ধন্যবাদ মাকড়সা আপনার মূল্যবান মতামতের জন্য।
      হয়ত এই যুগে আমাদের অনুভবগুলোই ঊর্ণাজালের শৃংখলের মতই জটিল।

      শুভেচ্ছা রইল মাকড়সা।

    - নুসরাত জাহান আজমী

    কবিতাটা কেমন যেন... একটু অন্য রকম। ভালো লাগলো।

    • - কে এম রাকিব

      কবিতাটা কেমন যেন... একটু অন্য রকম।

      কোন অর্থে অন্যরকম বুঝলাম না।
      পাঠের জন্য কৃতজ্ঞতা। ভাল থাকুন নুসরাত জাহান আজমী।

       

    • Load more relies...
    - ইকবাল মাহমুদ ইকু

    সুন্দর লিখেছেন... ভালো লাগলো ... শুভেচ্ছা জানবেন 

    • - কে এম রাকিব

      ধন্যবাদ ইকবাল মাহমুদ ইকু।
      শুভেচ্ছা রইল। ভাল থাকুন নিরন্তর।

    Load more comments...