Site maintenance is running; thus you cannot login or sign up! We'll be back soon.

robin iqram

৮ বছর আগে

এক মৃত্যুর একাধিক মৃতদেহ

একটার পর একটা ফোন দিয়ে যাচ্ছে শিউলি,কিন্তু আজ সেদিকে রহিমের কোন খেয়াল নেই।রহিম বেশ যত্ন করেই আধো খাওয়া সিগেরেটটা জ্বালাচ্ছে,তিন দিন হল গুলশানের এই চায়ের দোকানের বেঞ্চির সাথে তার সখ্যতা।প্রথম দিন স্যারের বাসার সামনের ওয়েটিংরুমে দাড়োয়ান বেশ কিছুক্ষণ অনুমতি আনতে গিয়ে দাড়া করিয়ে রাখলেও,দ্বিতীয় দিন গলাধাক্কা দিয়ে তাকে বের করে দেয়।তারপরও স্যারেকে একবার দেখে একটু কথা বলবার আশায় সে স্যার বাসার কাছের এই চায়ের দোকানে বেঞ্চিতে বসে আছে।স্যার রহিম কে বেশ স্নেহ করতেন তাই রহিমের ধারণা যে কিছু বলতে চাইলে স্যার অবশ্যই সেটা বুঝবেন,ওদিকে বেঞ্চির মালিক দোকানদার বিরক্ত হলেও রহিমের মায়া মাখা চেহারাটার দিকে তাকিয়ে কেন জানি অযথা বসে থাকার জন্য ঝাড়ি দিতে গিয়েও পাড়েন নি।
রহিম ঢাকায় আসে ঠিক এগারো মাস আগে, সদ্য উচ্চ মাধ্যমিক পাশ করা যুবকের চোখে যখন বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়ার স্বপ্ন ঠিক তখনই রহিমের বাবা অসুস্থ হয়ে পড়ে,অর্থনৈতিক ক্ষরার ভূগতে থাকা পরিবারকে বাচাতে পড়াশোনার স্বপ্নটাকে পাশ কাঠিয়ে জীবন যুদ্ধে নেমে পড়তেই রহিমের ঢাকায় আসে। কিছুটা পড়াশোনা জানায় পরিচিত এক গ্রাম্য কাকার মাধ্যমে খুব দ্রুত এক পোষাক কারখানার ফ্লোর ম্যানেজারের সহকারী হিসাবে চাকরিও জুটে যায়। তারপর মাস শেষে বেশ কিছু টাকা বাড়ি পাঠিয়ে বাবা চিকিৎসা আর সংসার খরচ প্রায় ভাল ভাবেই চলে যাচ্ছিল।

দীর্ঘ আট মাস পর রহিম বাড়ি যায়।রহিমের আব্বা ডেকে বলে,বাবা শরীরের যে অবস্থা,কবে জানি উপরে চলে যাই,তার আগেই তোমার বউয়ের মুখটা দেখে যাবার ইচ্ছা।তুমি কি বলো? রহিম সব কিছু বাবা উপর ছেড়ে দেয়।খুব দ্রুত শিউলির সাথে রহিমের বিয়ে ঠিক হয়, তিন মাস পর তাদের বিয়ে।সেখান থেকেই শিউলির সাথে টুকটাক কথা শুরু হয়।দুজনে মিলে বুনতে থাকে নতুন জীবনের স্বপ্ন।

ঢাকায় আসার একমাস পর বেতন আনতে গিয়ে রহিম জানতে পারে এ মাসে অনেক গুলা শিপমেণ্ট ডিলে হওয়ায় অফিসে বেতন দেবার মত অবস্থা নেই। সামনে মাসে এক সাথে দুই মাসের বেতন দেয়া হবে।

দুই মাস দশদিন, আজ শ্রমিক বিক্ষোভের মুখে জানানো হয়েছে কালকে নাকি বেতন হবে,এ কয়দিন ধার বাকির উপর চলতে হইছে।খালি ধার আর দেনা।বাড়িওয়ালা,দোকানদার সবাই টাকা চাইতে আসলে রহিম বলেছে এই তো বেতন হবে আর কয়টা দিন। সবাই তাকে ভালো জানে তাই কেউ বেশি কিছু বলে নি। নতুন ধান বেচে বাড়িতে কিছু টাকা আসায়,বাড়ি সবাই ছেলে বিয়ে জন্য টাকা জমাচ্ছে এই ভেবেই কেউই রহিমের কাছে টাকা চায়নি,আর রহিম ও চিন্তা করবে বলে এগুলো বাবা মার কাছে চেপে গেছে।

আজ বেতন হওয়ার কথা,কিন্তু রহিম এসে দেখে কারখানার গেট বন্ধ,সামনে শত শত শ্রমিক মিছিল করছে, আরো একটু এগিয়ে গেটের কাছে যেতেই দেখে গেটের কাছে লেখা আছে "কারখানা অনিদিষ্ট কালের জন্য বন্ধ"। এরকম পরিস্থিতি সে কখনো দেখেনি, তাই সেখানে বেশিক্ষণ না দাড়িয়ে সে কাকার কাছে ছুটে যায়। কাকা বলে বুঝলা বাবা এটা কারখানা এখানে এমন মাঝে মধ্যেই হয়,তুমি বরং আর একটা চাকরি খোঁজ। রহিম কি করবে বুঝতে পারে না,হঠাৎ তার মনে পড়ে একদিন উর্ধতন কর্মকর্তা না থাকায় একটা কাজে সে স্যারের বাসায় গেছিল,সেদিন স্যার তার সঙ্গে অনেক ভালো আচরণ করেছে,তাই তার ধারণা স্যারের সাথে একবার দেখা করে তার বর্তমান অবস্থা ব্যখা করতে পারলে স্যার হয়ত বুঝবে। সে কালকে সকালেই স্যারের বাসায় যাবে বলে সিধান্ত নেয়। ঠিক তার পরদিন থেকেই স্যারের বাসার সামনের এই চায়ের দোকানের বেঞ্চির সাথে তার সখ্যতা।প্রতিদিন খুব সকালে বাড্ডার থেকে হাটতে হাটতে সে এখানে চলে আসে আর গভীর রাতে ফিরে যায়। দুইবার প্রবেশের চেষ্টা করে ব্যার্থ হয়েও তার মনে হয় স্যার তাকে দেখলে ঠিকই চিনবেন।

একটা কালো গ্লাসের গাড়ি স্যারের বাসার দিয়ে বের হচ্ছে,রহিম জানে এটা স্যারের গাড়ি, সে উঠে দাড়ায়। গাড়ির স্পিড বাড়তে থাকে, সে স্যার স্যার বলে গাড়ির পেছনে দৌঁড়াতে থাকে।গাড়ি এক্স রোড ছেড়ে মূল রোডে ওঠে, সে চিৎকার করতে করতে পেছনে দৌড়ায়,ঠিক তখনই একটা দ্রুত গতির গাড়ি পেছন থেকে রহিমকে ধাক্কা দিলে সে ফুটপাতে আছড়ে পড়ে। বেশ কিছুক্ষণ পর কিছু পথচারী জমা হয়ে চেচামেচি শুরু করে,কিন্তু কেউই এগিয়ে হাসপাতালে নেয় না। শব্দ শুনে সেই চায়ের দোকানদার উৎস খুজতে এসে দেখে সেই ছেলেটা মুখ থুবড়ে পড়ে আছে,রক্তে ফুটপাত ভেসে যাচ্ছে। বহু চেষ্টায় সে ছেলেটিকে হাসপাতালে নেয়।কিন্তু ততক্ষণে সব শেষ।

ঢাকা মেডিকেলের লাশ ঘরের সামনে চিৎকার করে মূচ্ছা যাচ্ছে একজন বৃদ্ধ,বৃদ্ধা। সদ্য কৈশর পেরোনো সেই শিউলি নামক তরুণীটিও চলে এসেছেন,কিন্তু তার চোখের কোথার জলের চিহ্ন নেই। যা আছে তা হয়ত স্বপ্ন ভঙ্গের তীব্র বিষন্নতা।আর তাই হয়ত আজ আকাশই হয়ত তার প্রতিনিধিত্ব করছে,বৃষ্টির জলে ধূঁয়ে দিচ্ছে ফুটপাতে ধূলা মিশ্রিত রহিমের শেষ রক্তের চিহ্ন।

১ Likes ০ Comments ০ Share ৩৫৮ Views

Comments (0)

  • - ওয়াহিদ মামুন

    কথাগুলো অনেক সুন্দর।

    emoticons

    • - মাসুম বাদল

      অনেক অনেক শুভকামনা... !!! 

    • Load more relies...
    - আলমগীর সরকার লিটন

    হু সুন্দর দাদা

    • - মাসুম বাদল

      সালাম, লিটন ভাই!!! 

      emoticonsemoticons

    - চারু মান্নান

    আহা, রোদ শুধু আজ

    চিত্তে

    মনে

    আসমা’য় শুধুই

    রোদ্দুরের মাতামাতি... 

    emoticons বাহ দারুন কবি,,,,,,,,,,,,,,

    • - মাসুম বাদল

      সালাম, বড় ভাই...!!