আজ যে আকাশটা একটু বেশি নীল কেউ খেয়াল করেছো? কেউ কি খেয়াল করেছো যে একটা বাচ্চা কাঁদছে?? তার গায়ে রক্ত,নাভি থেকে একটা নাড়ি,বিশ্রী ভাবে ছেঁড়া।সে কিছু বলতে পারছে না,গালি দিতে পারছে না পৃথিবী কে।রাগ দেখাতে পারছে না তার বাবা মার সাথে।ভাবছে একটা চারপেয়ে প্রাণি যদি এসে তাকে তুলে নিয়ে যেত!!
কেউ কি খেয়াল করেছ আজ ঘরে একটা নোংরা গন্ধ?? সেই স্নিগ্ধ হাসি ওয়ালা বোকা মেয়েটা তার বা হাঁতের পিঠ অমানুষের মত ঘষে চলেছে।তার ঠোঁট জ্বলে যাচ্ছে।মাথা ফেটে যাচ্ছে। গলায় আর ঘাড়ে রক্ত উঁকি দিচ্ছে। সে ভাবছে অনন্তকাল ধরে যদি সে গোসল করে আসতে পারতো।ওলটপালট হওয়া চাদরের ওপরের একটা ছেঁড়া জামা,তার বাবা ঈদে দিয়েছিল।একটু পরে সে আয়না এসে দেখলো তার নগ্ন শরীর,বুঝলো না এই যা-তা দেখার জন্য সবাই এত উৎসুক কেন!! লাফ দিল ছাদ থেকে,বুকে জড়িয়ে সেই ছেঁড়া জামা।
তোমরা কি গন্ধ পেয়েছো কাঠগোলাপের?একটা অসম্ভব সুন্দর ছোট্ট মেয়ে কাঁদছে।বসে বসে কাঁদছে।তার ছোট বুকটায়,হাজারো বুকের কান্না।আজ তার জন্মদিন।তার বাবা ঘুমাচ্ছে।বমি করে ঘুমিয়েছে রাতে।পাশেই একটা বোতল খোলা,স্পিরিট এর গন্ধ আসে ওটা থেকে।দু বছর আগে তার হাত কেটে গিয়েছিল আর বাবা স্পিরিট লাগিয়ে দিয়েছিল,গন্ধটা তাই খেয়াল আছে।সে ভাবলো বাবার কিসি টা তাকে কে দেবে!অবশেষে সে চুমু খেলো তার মায়ের ছবি ভরা ফ্রেমটায়।
তোমরা একবার দেখো তো কতখানি রাত হয়েছে!ছেলেটা বসে আছে পা ঝুলিয়ে।নিচে শূন্যতা।মাথায় গান বাজছে।নচিকেতার-"কেমন আছো"।বোকা ছেলেটা ভাবছে ওকে একটা ফোন দেবে কিনা।নাহ! ঠিক করলো সে হাতের দাগ শুকানোর আগ পর্যন্ত দেবে না।প্রেমপত্রের বিশাল বাণ্ডিল থেকে একটা পাতা নিয়ে গাজা বানালা সে।সুখটান ভুলিয়ে দিল তার আপেক্ষিক কষ্ট।
তোমরা দেখো তো রাজপথে কত ধুলো!পিচ্চিটা বসে আছে আইল্যাণ্ডের ওপর।গাড়ি গুনছে।মা বলেছে ক্ষুধা লাগলে তাই করতে।সে লাল-সবুজ দেখে।বোকা মানুষগুলোর কাণ্ড দেখে।এরা ওর কষ্ট বোঝে না।তাই এরা বোকা ওর কাছে।দু ঘণ্টা কেটে গেল।মা এখনো আসে নি রমনা পার্ক থেকে।একটু পরেই ভোর হবে।
তোমরা কি জানো জোনাক এখনো জ্বলে কিনা?বাবা বসে আছেন আঁধার ঘরে।এই ঘরেই তার কলিজার টুকরাকে নিয়ে কত ঘুমিয়েছেন।কিন্তু প্রথম যেদিন রক্তবমি হয়ে চাদর নষ্ট করেছিল ছেলেটা।ঘুমাতে পারেননি তিনি।এখন আর সেই ঝামেলা নেই।ঘরের শেষ সাদা চাদরটা দিয়ে ছেলেকে ঘুম পাড়িয়ে রেখে এসেছেন।একটু পরেই রিকশা চালাতে বের হবেন তিনি।তিনি চান না ঘরের আর কেউ ক্যান্সার এ মারা যাক।
তোমরা কি জান আজ আমার প্রেয়সী কাজল দিয়েছে কিনা?মেয়েটা তাকিয়েছিল দেয়ালে।পোট্রেট টা তার খুব পছন্দ।প্রথম দেখায় দিয়েছিল ও।বাঁধিয়ে রাখতে দ্বিধা করেনি মেয়েটা।ছবিটায় একটা ছায়া পড়ে মাঝে মাঝে।সেই ছায়াটা কথা বলে ওর সাথে।কিন্তু চাঁদনি রাতে আর দেখা হয়না তাদের।ভালবাসি ভালবাসি বলে বুক চাপড়ায় অন্ধ মেয়েটা।
তোমরা কিছুই জানলেনা,তাই না?!
Comments (0)
চমৎকার, বড় ভাই!!!
সুন্দর!
ভাল লাগছে।