Site maintenance is running; thus you cannot login or sign up! We'll be back soon.

উনবিংশ শতাব্দীর বাংলা নাটকের অন্যতম শ্রেষ্ঠ রূপকার দীনবন্ধু মিত্রের ১২২তম মৃত্যুবার্ষিকীতে শ্রদ্ধাঞ্জলি


উনবিংশ শতাব্দীর বাংলা নাটকের অন্যতম শ্রেষ্ঠ রূপকার দীনবন্ধু মিত্র। তিনি নাটক লিখেছেন সাধারণ মানুষের জীবন নিয়ে, বাংলা নাটকের প্রাথমিক যুগে যা ছিল অপ্রত্যাশিত। দরিদ্র কৃষক, সমাজের তথাকথিত নিম্ন স্তরের মানুষ তাঁর লেখায় জীবন্ত হয়ে ফুটে উঠেছে। কবি ঈশ্রচন্দ্র গুপ্তের দ্বারা প্রভাবিত হয়ে দীনবন্ধু মিত্র ছাত্রাবস্থা থেকেই সংবাদ প্রভাকর, সাধুরঞ্জন প্রভৃতি পত্রিকায় কবিতা লিখতে শুরু করেন। তবে তিনি খ্যাত হন নাট্য অঙ্গনের বলিষ্ঠ পদচারণায়। বাংলার আধুনিক নাট্যধারার প্রবর্তক মাইকেল মধুসূদন দত্তের সমসাময়িক দীনবন্ধু মিত্র মাইকেল প্রবর্তিত পৌরাণিক বা ঐতিহাসিক নাট্যরচনার পথে না গিয়ে বাস্তবধর্মী সামাজিক নাট্যরচনায় মনোনিবেশ করেন। এই ধারায় তিনিই হয়ে ওঠেন পরবর্তীকালের নাট্যকারদের আদর্শস্থানীয়। নীলদর্পণ (১৮৬০) তাঁর শ্রেষ্ঠ নাটক এবং শ্রেষ্ঠ রচনা। নীলকরদের অত্যাচারের দলিল হিসাবে জাতীয় চেতনা সৃষ্টিতে এই না্টকেরঐতিহাসিক ভূমিকা আছে এবং এর রচনাশৈলীতেও ছিল নতুনত্ব। দীনবন্ধু সমকালীন হিন্দুসমাজের বিভিন্ন সমস্যা নিয়ে প্রহসন রচনা করেও খ্যাতি অর্জন করেন। সমাজের সাধারণ মানুষ সম্বন্ধে বাস্তব অভিজ্ঞতা এবং তাদের প্রতি সহানুভূতিই তাঁর রচনার প্রধান প্রেরণা। চাকরিসূত্রে দেশ-বিদেশ ঘুরে বহুলোকের সঙ্গে তাঁর পরিচয় হয়। সেই অভিজ্ঞতা তাঁর নাটকের চরিত্র সৃষ্টিতে তাঁকে বিশেষভাবে সাহায্য করে। কৃত্রিমতার বিরোধী এবং সত্যের অনুসারী দীনবন্ধু ছিলেন সমাজকল্যাণনিষ্ঠ শিল্পী। জীবন সম্বন্ধে গভীর বাস্তব অভিজ্ঞতার দ্বারা তিনি কল্পনাশক্তির ন্যূনতাকে পূরণ করেছিলেন। তীক্ষ্ণ সমাজদৃষ্টি, জীবন্ত চরিত্রসৃষ্টি এবং মানবিক সহানুভূতি তাঁর সৃষ্টিকে অমর করে রেখেছে। গিরিশচন্দ্র ঘোষ উত্তরকালে ন্যাশনাল থিয়েটার স্থাপনের জন্য দীনবন্ধুর নাটককেই কৃতিত্ব দিয়েছেন, সেই অর্থে তাঁকে রঙ্গালয়স্রষ্ঠা বলেও সম্মান জানিয়েছেন। আজ এই গুণী নাট্যকারের ১২২তম মৃত্যুবার্ষিকী। ১৮৭৩ সালের আজকের দিনে তাঁর অকাল মৃত্যু ঘটে। বাংলা নাটকের অন্যতম শ্রেষ্ঠ রূপকার দীনবন্ধু মিত্রের মৃত্যুবার্ষিকীতে আমাদের শ্রদ্ধাঞ্জলি।


(দীনবন্ধু মিত্রের বাংলো বাড়ি)
প্রখ্যাত নাট্যকার দীনবন্ধু মিত্র ১৮২৯ সালে (তাঁর জন্ম তারিখ নিয়ে মতবিরোধ আছে) অধুনা নদীয়া জেলার চৌবেড়িয়া গ্রামের এক দরিদ্র পরিবারে জন্ম গ্রহণ করেন। তাঁর পিতৃদত্ত নাম গন্ধর্বনারায়ণ। দীনবন্ধু মিত্রের পিতার নাম কালা চাঁদ মিত্র। পরে তিনি নিজে এই নাম পরিবর্তন করে দীনবন্ধু মিত্র রাখেন। গ্রাম্য পাঠশালা উত্তীর্ণ হওয়ার পর ১৮৪০ সালে পিতা- কালা চাঁদ মিত্রের তদবিরে স্থানীয় জমিদারের সেরেস্তায় মাসিক ৮ টাকা বেতনে চাকুরী লাভ করেন। লেখাপড়ার প্রতি ছিল তার গভীর মনোযোগ। তাই পাঁচ বছর চাকরী করার পর পিতার অমতে তা ছেড়ে দিয়ে উচ্চ শিক্ষার জন্য গমন করেন কলকাতায়। সেখানে পিতৃব্য নীলমণি মিত্রের আশ্রয়ে শুরু হয় তাঁর উচ্চশিক্ষা লাভের প্রাণান্ত সংগ্রাম। সেখানে জীবন ধারণ ও পড়ালেখার জন্য মনোবলকে পুজি করে গৃহভৃত্যের কাজ করেন। তিনি কৃতিত্বের সাথে লং সাহেবের অবৈতনিক স্কুলে, পরে কলুটোলা ব্রাঞ্চ স্কুলে শেষ পরীক্ষায় বৃত্তি লাভ করেন। তারপর ১৮৫০ সালে ভর্তি হন হিন্দু কলেজে এবং কলেজের সব পরীক্ষায় বৃত্তি লাভ করেন। আবার তাঁর টান পড়ে অভাবের শিকলে। ১৮৫০ সালে কলেজের চূড়ান্ত পরীক্ষা না দিয়েই চলে যান পাটনায় আর পোস্টমাস্টার পদে চাকরী নেন ১৫০ টাকা বেতনে। কাজের দক্ষতার বলে দেড় বছর পর ইন্সপেক্টর পদে উন্নীত হন। একই সাথে নদীয়া ও ঢাকা জেলার দায়িত্ব পালন করেন।


কবির প্রধান গুণ, সৃষ্টি-কৌশল। দীনবন্ধুর এ শক্তি অতি প্রচুর পরিমাণে ছিল। মানুষের সঙ্গে মিশবার অসাধারণ শক্তি ছিল দিনবন্ধু মিত্রের। তিনি আহ্লাদপূর্বক সকল শ্রেণীর লোকের সঙ্গে মিশিতেন। জীবনের শেষ দশায় ব্যক্তিগত জীবন দর্শণ ও নানা অভিজ্ঞতায় ভর করে বাংলাসাহিত্যে হাত দেন কবিতা দিয়ে। দীনবন্ধুর প্রথম রচনা “মানব-চরিত্র” নামক একটি কবিতা। ঈশ্বর গুপ্ত কর্তৃক সম্পাদিত “সাধুরঞ্জন” নামক সাপ্তাহিক পত্রে এটি প্রকাশিত হয়। অতি অল্প বয়সের লেখা, এজন্য ঐ কবিতায় অনুপ্রাসের অত্যন্ত আড়ম্বর। বোধ হয় এটিও ঈশ্বর গুপ্তের প্রদত্ত শিক্ষার ফল। দীনবন্ধু মধ্যে মধ্যে প্রভাকরে কবিতা লিখতেন। তাঁর প্রণীত কবিতা সকল পাঠক সমাজে আদৃত হয়। তিনি সেই তরুণ বয়সে যে কবিত্বের পরিচয় দিয়েছিলেন, তাঁর অসাধারণ “সুরধুনী” কাব্য এবং “দ্বাদশ কবিতা” সেই পরিচয়ানুরূপ হয় নাই। তিনি দুই বৎসর, জামাই-ষষ্টীর সময়ে, “জামাই-ষষ্টী” নামে দু'টি কবিতা লেখেন। এই কবিতা দু'টি বিশেষ প্রশংসিত এবং আগ্রহাতিশয্যের সাথে পঠিত হয়েছিলো। দ্বিতীয় বৎসরের “জামাই-ষষ্টী” যে সংখ্যক প্রভাকরে প্রকাশিত হয়,তা পুনর্মুদ্রিত করতে হয়েছিলো।


দীনবন্ধু মিত্রের রচিত কাব্যঃ ১। সুরধুনী প্রথম ভাগ (১৮৭১), ২। সুরধুনী দ্বিতীয় ভাগ (১৮৭৬), ৩। দ্বাদশ কবিতা (১৮৭২) এবং ৪। নানা কবিতা। দিনবন্ধু মিত্র রোমান্টিক কবি ও সাহিত্যিক হিসেবে সফল না হলেও নাটক ও প্রহসন লিখেই তিনি সর্বাধিক খ্যাতি অর্জন করেন। বাংলা ভাষার প্রথম আর্থসামাজিক ও রাজনৈতিক বিষয়ের নাটক নীল দর্পনের (১৮৬০) মাধ্যমে আত্মপ্রকাশ করেন দীনবন্ধু মিত্র। নাটকটি তৎকালীন সমাজে বিশেষ আলোড়ন সৃষ্টি করে এবং কৃষকদের নীলবিদ্রোহে ইন্ধন জোগায়। নাটকটি ১৮৬০ সালের সেপ্টেম্বর মাসে রামচন্দ্র ভৌমিক কর্তৃক মুদ্রিত হয়েছিল বাংলাবাজারের বাঙ্গালাযন্ত্রে। এটি ১৮৬১ সালে মে/জুন মাসের প্রথম দিকে ঢাকার পূর্বভূমির উদ্যোগে প্রথম মঞ্চায়িত হয়। নাটকটিতে স্থান পায় ঊনবিংশ শতাব্দির মধ্যভাগে নীলকরদের অত্যাচারে পীড়িত নিম্ন শ্রেণী তথা সাধারণ কৃষক শ্রেণির মর্মান্তিক চিত্র। এ নাটকের গোপী চরিত্র তার একটি জলন্ত উদাহরণঃ “এরা সব দোরস্ত হয়েছে। এই ন্যাড়ে ব্যাটা ভারী হারামজাদা, বলে নিমোক হারামী করিতে পারিবনা।” নাটকটি দেখতে এসে ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর মঞ্চে জুতা ছুড়ে মেরেছিলেন। দায়িত্ববান সরকারি পদে থাকার জন্যই নীলদর্পণ নাটক প্রথমে প্রকাশিত হয় কস্যচিৎ পথিকস্য ছদ্মনামে। নাটকটি সরকারের পক্ষে এতই চিন্তার কারণ ছিল যে এর ইংরেজি অনুবাদ প্রকাশের জন্য পাদরি জেমস লঙ-এর এক মাস কারাবাস হয়। ঘটনাক্রমে, এটিই প্রথম বিদেশি ভাষায় অনূদিত বাংলা নাটক।


দীনবন্ধু মিত্রের কয়েকটি উল্লেখযোগ্য নাটক ও প্রহসন হলোঃ ১। নীলদর্পণ (১৮৬০), ২। নবীন তপস্বিনী (১৮৬৩), ৩। বিয়ে পাগলা বুড়ো (১৮৬৬), ৪। সধবার একাদশী (১৮৬৬), ৫। লীলাবতী (১৮৬৭), ৬। জামাই বারিক (১৮৭২), ৭। কমলে কামিনী নাটক (১৮৭৩), ৮। কুড়ে গরুর ভিন্ন গোঠ প্রভৃতি। সধবার একাদশী ও লীলাবতী উচ্চাঙ্গের সামাজিক নাটক। বিয়ে পাগলা বুড়ো ও জামাই বারিক দুটি প্রহসন। দীনবন্ধু মিত্র রচিত নাটক ও প্রহসন সহজে মনে রাখার উপায়ঃ নবীন জামাই কমল সধবার একাদশীতে লীলাবতীকে নিয়ে নীলদর্পণ নাটক দেখলে একবুড়ো তাকে বিয়ে করার জন্য পাগল হয়ে যায়। দিনবন্ধু মিত্রের সধবার একাদশী একটি প্রহসন। উনবিংশ শতাব্দীর মধ্যভাগে সুরা পান ও বেশ্যা বৃত্তি যুবকদের জীবনে বিপর্যয় সৃষ্টি করেছিল। এই সামজিক বিপর্যয়ের কাহিনী অবলম্বনে প্রহসনটি রচিত। তাছাড়া রয়েছে বিয়ে পাগলা বুড়ো। এ প্রহসনটি মাইকেল মধুসূদনের একেই কি বলে সভ্যতা অনুসরণে রচিত। কমলে-কামিনীঃ দীনবন্ধু মিত্রের দ্বিতীয় রোম্যান্টিক নাটক যা তাঁর জীবনের শেষ নাট্যকীর্তিও বটে। এই নাটক রচনার অব্যবহিত পূর্বে কর্মসূত্রে দীনবন্ধু কাছাড়-মণিপুর অঞ্চলে কিছুদিন অতিবাহিত করেন। সেই অঞ্চলের পটভূমিকায় এক কাল্পনিক কাহিনির আধারে কমলে-কামিনী রচিত। কাছাড়ের রাজসিংহাসনে ব্রহ্মরাজের শ্যালক অধিষ্ঠিত হলে মণিপুররাজের সহিত ব্রহ্মরাজের যুদ্ধ আরম্ভ হয়। এই সময়ে মণিপুররাজ শিখণ্ডীবাহনের প্রেমে পড়েন ব্রহ্মরাজকুমারী রণকল্যানী। এই প্রেমকাহিনিই মূল নাটকের উপজীব্য। এই নাটকে এমন কিছু নাট্যদৃশ্য আছে যা মঞ্চে অভিনয় করা দুরূহ। আবার হাস্যরস সৃষ্টিতেও দীনবন্ধুর ব্যর্থতা এই নাটকের নাট্যরস অনেকাংশে ক্ষুন্ন করেছে।


১৮৬৯ বা ১৮৭০ খ্রিষ্টাব্দের সুপরনিউমররি ইনস্পেকটিং পোস্টমাস্টার হয়ে কলকাতা আসেন দীনবন্ধু মিত্র। ১৮৭১ খ্রিষ্টাব্দে লুসাই যুদ্ধের সময় ইনি ইংরেজদের বিপর্যস্ত যোগাযোগ ব্যবস্থা পুনর্গঠিত করেন। ১৮৭১ খ্রিষ্টাব্দে তাঁর সার্বিক কাজের সাফল্য বিবেচনা করে ইংরেজ সরকার রায়বাহাদুর উপাধি প্রদান করে। এরপর ডাক বিভাগের ডিরেক্টর জেনারেল হগের অপ্রীতিভাজন হওয়ায় সুপরনিউমররি ইনস্পেকটিং পদ থেকে তাঁকে অপসারিত করা হয়।১৮৭২ খ্রিষ্টাব্দের দিকে তাঁকে ইস্ট-ইন্ডিয়ান রেলওয়েতে ইন্সপেক্টর পদে বদলি কর হয়। এর কিছুদিন পর তাঁকে ইন্সপেক্টিং পোস্টামাস্টার পদে অবনমিত করা হয়। এই সময় বহুমুত্ররোগে আক্রান্ত হন দীনবন্ধু মিত্র। কর্তৃপক্ষের নিষ্ঠুর আচরণের কারণে ইনি আরও বেশি অসুস্থ হয়ে পড়েন। পরবর্তীতে ১৮৭৩ সালের ১ নভেম্বর ইহলোক ত্যাগ করেন বাংলা নাটকের অন্যতম শ্রেষ্ঠ রূপকার দীনবন্ধু মিত্র। আজ তাঁর ১২২তম মৃত্যুবার্ষিকী। প্রখ্যাত নাট্যকার দীনবন্ধু মিত্রের মৃত্যুবার্ষিকীতে শ্রদ্ধাঞ্জলি।
০ Likes ০ Comments ০ Share ৯২৬ Views

Comments (0)

  • - আলমগীর সরকার লিটন

    সুন্দর লাগল কবিতা

    • - রচনা পারভিন

      ধন্যবাদ আপনাকে। emoticons

    - মাসুম বাদল

    প্রথম থেকে মাঝ অবধি খুব খুব ভাল লেগেছে।

    সমাপ্তিও দারুন; তবে আরো একটু স্বচ্ছতা থাকলে ভালো হতো খুব... 

     

    সর্বোপরি গ্রেট স্যাল্যুট টু ইয়্যু... emoticons

     

    • - প্রলয় সাহা

      ভালো লাগলো দিভাই emoticons

    • Load more relies...
    - মাইদুল আলম সিদ্দিকী

    চমৎকার! emoticons

    • - রচনা পারভিন

      ধন্যবাদ emoticons