Site maintenance is running; thus you cannot login or sign up! We'll be back soon.

M Jahirul Islam

৯ বছর আগে

ইসলামের দৃষ্টিতে উত্তরাধিকার সম্পদের সুষম বণ্টন

ইসলাম ধর্মের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ একটি বিধান হচ্ছে- মিরাছ বা উত্তরাধিকার সম্পদের সুষম বণ্টন। এই বিধানের গুরুত্ব ও তাৎপর্যের প্রধান দিক হচ্ছে- এটি আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের দেওয়া অকাট্য বিধান ও সর্বশ্রেষ্ঠ ইনসাফপূর্ণ নীতিমালা, উত্তরাধিকার সম্পদে নারী-পুরুষ প্রত্যেকের ন্যায্য অধিকার লাভের একটি অলঙ্ঘনীয় প্রামাণ্য দলিল। তাই মৃত ব্যক্তির পরিত্যক্ত সম্পদ তার জীবিত হকদার ওয়ারিশ বা আত্মীয়দের মাঝে আল্লাহর নাজিলকৃত বিধানমত সুষমরূপে বণ্টন করা ফরজ। যে কোনো ধরনের এই বিধানের সামান্যতম বিরোধিতা বা পরিবর্তন-পরিবর্ধন সরাসরি কোরআনি বিধানের লঙ্ঘন এবং খোদাদ্রোহিতার শামিল।

আল্লাহ তায়ালা নারী-পুরুষ উভয়ের স্রষ্টা। উভয়ের জন্য তিনি সর্বশ্রেষ্ঠ ইনসাফকারী, বিচারক এবং সবচেয়ে বেশি মেহেরবান-দয়ালু। সুতরাং উত্তরাধিকার সম্পদে কে কতটুকু হকদার, কে কার চেয়ে অধিকযোগ্য, কে কার চেয়ে অগ্রাধিকার লাভের অধিকারী—এ ব্যাপারে তিনিই সবচেয়ে বেশি অবগত। অতীত-ভবিষ্যত্, প্রকাশ্য-অপ্রকাশ্য, যা কিছু রয়েছে সে সবই তিনি জানেন। মিরাছের খোদায়ী বিধানেও কম-বেশি হিস্যা নির্ধারণ করার রহস্য ও অন্তর্নিহিত তাৎপর্য একমাত্র আল্লাহ তায়ালাই ভালো জানেন। তাই প্রত্যেক নর-নারীর প্রধান কর্তব্য হলো বিনাবাক্যে, বিনয়চিত্তে আল্লাহর বিধানের প্রতি সমর্পিত হওয়া। কারণ আল্লাহ রাব্বুল আলামীন কোরআনে কারিমে উত্তরাধিকার বিধান নাজিল করার পর আনুগত্যকারী ও অবাধ্যতাকারীদের পরিণাম সম্পর্কে সুস্পষ্টভাবে ঘোষণা করেছেন, ‘এসব আল্লাহর নির্ধারিত সীমা। যে আল্লাহ ও তার রাসুলের আনুগত্য করবে, আল্লাহ তাকে জান্নাতে প্রবেশ করাবেন, যার তলদেশে নদী প্রবাহিত, সেখানে তারা স্থায়ী হবে। আর এটাই মহা সাফল্য। আর যে আল্লাহ ও তার রাসুলের অবাধ্য হবে এবং তার নির্ধারিত সীমা লঙ্ঘন করবে, তিনি তাকে আগুনে প্রবেশ করাবেন, সেখানে সে স্থায়ী হবে। আর তার জন্য রয়েছে অপমানজনক শাস্তি।’ (সুরা নিসা, আয়াত : ১৩-১৪)

বর্তমান সময়ে ধর্মীয় বিবেচনায় আমাদের সমাজের সবচেয়ে বড় একটি সমস্যা বা চরম অন্যায়মূলক বিষয় হলো- মিরাছ বা উত্তরাধিকার সম্পদ বণ্টন না করা। মাশাআল্লাহ কিছু সচেতন দ্বীনদার লোক ছাড়া শিক্ষিত-অশিক্ষিত, দ্বীনদার-বেদ্বীনদার সর্বশ্রেণীর লোকই এই কঠিন ব্যাধিতে আক্রান্ত। কেউ তো এই ফরজ কর্তব্য সম্পর্কে সঠিক জ্ঞান না থাকার কারণে আবার কেউ জেনে-বুঝে ধন-সম্পদের মোহে মোহগ্রস্ত হয়ে শরিয়তের বিধানরূপে উত্তরাধিকার সম্পদ ওয়ারিশদের মাঝে বণ্টন করে না।

একদিকে, প্রচলিত সমাজ ব্যবস্থায় মিরাছ বণ্টন করা হয় না, উত্তরাধিকারীদের ন্যায্য অধিকার প্রদান করা হয় না। বিশেষত নারী ওয়ারিশদের তাদের প্রাপ্য হিস্যা থেকে বঞ্চিত করা হয়। অন্যদিকে, সরকার ‘উত্তরাধিকারে নারী-পুরুষের সমানাধিকার’ বা ‘সম্পদে নারীকে সমান সুযোগ ও অংশীদারী দেওয়া’র নীতিমালা প্রণয়ন করেছে।

মিরাছ বণ্টন না করা এবং কোরআন বিরোধী মিরাছি নীতিমালা প্রণয়ন করা উভয়টি কোরআনের বিধান তথা আল্লাহর হুকুমের সুষ্পষ্ট লঙ্ঘন। যারা এসব করছে, তারা যদি অন্যায় ও গুনাহের কাজ জানা-বুঝার পরও তা করে, তাহলে তারা ফাসেকি ও কবিরা গুনাহে লিপ্ত। তওবা ছাড়া যার ক্ষমা নেই।

আর যদি কোরআনি বিধানের প্রতি অশ্রদ্ধা, বেপরোয়া মনোভাব ও অস্বীকারের কারণে হয় তাহলে তো তা সুষ্পষ্ট কুফরি। কারণ কোরআনের উত্তরাধিকার বিধানকে আল্লাহ তায়ালা সরাসরি ফরজ কর্তব্য অর্থাৎ আল্লাহর পক্ষ থেকে নির্ধারিত হিস্যা (অংশ) ও অবধারিত দায়িত্ব ও কর্তব্য বলে ঘোষণা দিয়েছেন।

যখন কোনো ব্যক্তি মৃত্যুবরণ করে, মৃত্যুর সঙ্গে সঙ্গে তার আত্মীয়-স্বজনের ওপর কোরআন-হাদিসের আলোকে চারটি হক শরিয়তের পক্ষ থেকে আরোপিত হয়। মৃত ব্যক্তির পরিত্যক্ত সম্পদের সঙ্গে পর্যায়ক্রমে ধারাবাহিকভাবে এ চারটি হক সম্পৃক্ত হবে এবং ক্রমানুসারে আদায় করা হবে।

প্রথমত, মৃত ব্যক্তির সম্পত্তি থেকে শরিয়তানুযায়ী তার কাফন-দাফনের ব্যয় নির্বাহ করা হবে। এ ক্ষেত্রে অপব্যয় ও কৃপণতা উভয়টি নিষিদ্ধ।

দ্বিতীয়ত, তার ঋণ পরিশোধ করা হবে। যদি ঋণ সম্পত্তির সমপরিমাণ কিংবা তার চেয়ে বেশি হয়, তবে কেউ ওয়ারিশি স্বত্ব পাবে না।

তৃতীয়ত, ঋণ পরিশোধের পর এক-তৃতীয়াংশ সম্পত্তিতে অছিয়ত কার্যকর করা হবে। বিষয়টি আরেকটু স্পষ্ট করে বলছি। যদি ঋণ পরিশোধের পর সম্পত্তি অবশিষ্ট থাকে কিংবা ঋণ একেবারেই না থাকে, তখন মৃত ব্যক্তি কোনো অছিয়ত করে থাকলে এবং তা গুনাহের অছিয়ত না হলে, তবে অবশিষ্ট সম্পত্তির এক-তৃতীয়াংশ থেকে তা কার্যকর করা হবে। যদি সে তার সব সম্পত্তি অছিয়ত করে যায়, তবুও এক-তৃতীয়াংশের অধিক অছিয়ত কার্যকর হবে না।

চতুর্থত, ঋণ পরিশোধের পর অছিয়ত না থাকলে সব সম্পত্তি শরিয়তের বিধান অনুযায়ী ওয়ারিশদের মধ্যে বণ্টন করতে হবে। মিরাছি সম্পত্তি যেমন ওয়ারিশদের মাঝে বণ্টন করা ফরজ তেমনি তা সহীহ শুদ্ধরূপে শরিয়ত সম্মত নিয়মে বণ্টন করা ও বণ্টনের নিয়ম পদ্ধতি জানাও ফরজ। যদি কেউ বণ্টন পদ্ধতি না জানে, তবে ফারায়েজ সম্পর্কে অভিজ্ঞ আলেম বিশেষত অভিজ্ঞ মুফতিদের মাধ্যমে তা বণ্টন করে নিতে হবে।

বর্তমান যুগে কোরআনের এই ফরজ বিধানের প্রতি ঘরে চরম অবহেলা ও উদাসীনতা প্রদর্শন করা হচ্ছে। মৃত ব্যক্তির মৃত্যুর পর তার পরিত্যক্ত সম্পত্তি যার কব্জায় বা মালিকানায় থাকে, সে এককভাবে সেই সম্পত্তি ভোগ করে, নিজের আয়ত্তে জবরদখল করে রাখে এবং অন্যান্য হকদার ওয়ারিশদের বঞ্চিত করে রাখে। সে মৃত ব্যক্তির বাবা হোক বা বড় ছেলে বা স্ত্রী কিংবা অন্য কেউ। তারা কেউ একটু ভেবে চিন্তেও দেখে না। সে মৃত ব্যক্তির সম্পত্তি বণ্টন করা ফরজ। ওয়ারিশদের তাদের প্রাপ্য হক না দেওয়া বড় জুলুম ও কবিরা গুনাহ।

মিরাছের ক্ষেত্রে শরিয়তের বিধান লঙ্ঘন করার একটি ঘৃণ্য দিক হচ্ছে, নারীদের তাদের ন্যায্য অধিকার থেকে বঞ্চিত করা। অনেক জায়গায় অনেক ধরনের কু-প্রথা ও নানা অনৈসলামিক অজুহাতে তাদের প্রাপ্য হক থেকে বঞ্চিত করা হয়। এই অপরাধের সবচেয়ে বড় শিকার হচ্ছে মেয়েরা। মৃত ব্যক্তির মেয়ে বা বোনদের বঞ্চিত করা। অথচ আল্লাহ পাক কোরআনে কারিমে নারীদের মিরাছে তাদের ন্যায্য হিস্যা প্রদান করেছেন। বিশেষত মেয়েদের তাদের অংশ দেওয়ার প্রতি এতটুকু গুরুত্ব আরোপ করেছেন, মেয়েদের অংশকে মিরাছের আসল সাব্যস্ত করেছেন। এর অনুপাতে ছেলেদের অংশ নির্ণয় করেছেন। এ প্রসঙ্গে বলা হয়েছে, এক ছেলের অংশ দুই মেয়ের অংশের সমপরিমাণ। এ কথা বলা হয়নি, দুই মেয়ের অংশ এক ছেলের অংশের সমপরিমাণ। এটা কত জঘন্য অপরাধ যে আল্লাহ তায়ালা যাদের মিরাছের মৌলিক ভিত্তি বানিয়েছেন, তাদেরই মিরাছ থেকে বঞ্চিত করা হয়।

আমাদের সমাজে অনেকেই বোনদের অংশ দেয় না এবং তারা বোনদের কাছে ক্ষমা চেয়ে মিরাছের হিস্যা মাফ করিয়ে নেয়। আর বোনরাও একথা চিন্তা করে পাওয়া যখন যাবেই না, উপরন্তু ভাইয়েরা অসন্তুষ্ট হবে, তখন চাওয়ার দরকার কি! ফলে তারা অনিচ্ছা সত্ত্বেও চক্ষুলজ্জার খাতিরে ক্ষমা করে দেয়।

মনে রাখতে হবে, এরূপ ক্ষমা শরিয়তের আইনে ক্ষমাই নয়, বরং এটা জাহেলি কু-প্রথা। এ ক্ষেত্রে বোনদের কর্তব্য হলো—নিজেদের মিরাছি হক দাবি করা। তাদের প্রাপ্য অধিকার চেয়ে নেওয়া। তারা কারও অসন্তুষ্টি ও নিন্দার পরোয়া করবে না। নিজেরা সচ্ছল বলে কোরআনি হিস্যা দাবি করা থেকে বিরত থাকবে না। বরং প্রয়োজন না থাকলেও নিজেদের হক আদায় করে নেবে। যাতে সমাজ থেকে এই ইসলামবিরোধী কু-প্রথা বিলুপ্ত হয় এবং আল্লাহর বিধান প্রতিষ্ঠিত হয়।

আমাদের সমাজে নারীদের মিরাছ থেকে বঞ্চিত করার জাহেলি নীতি নানা অজুহাত ও বিভিন্ন উপায়ে প্রয়োগ করা হয়। বিশেষত মেয়ের বিয়েতে আসবাবপত্র ও অন্যান্য সামগ্রী যৌতুক হিসেবে প্রদানের কারণে কিংবা ভাইয়েরা বোনদের বিভিন্ন উপলক্ষে নানা উপহার সামগ্রী প্রদানের অজুহাতে মেয়েদের মিরাছি সম্পত্তি দেওয়া হয় না। এরপর বোনরা মিরাছ দাবি করলে বা মিরাছের হিস্যা নিয়ে গেলে তাদের জন্য বাপের বাড়ির দরজা বন্ধ হয়ে যায়। আত্মীয়তার বন্ধন ছিন্ন করা হয়। ভাইবোনের মুখ দেখাদেখি বন্ধ হয়ে যায়। ইসলামের দৃষ্টিতে এ ধরনের আচরণ চরম অন্যায়, অমানবিক ও কঠিন গুনাহের কাজ।

মনে রাখতে হবে বিয়েতে বা বিয়ের পরে কন্যাকে যতভাবে যত অঢেল সম্পদই প্রদান করা হোক, তা উপহার বা হাদিয়া রূপে গণ্য। যাকে আত্মীয়তার হক বলা যেতে পারে। মিরাছের হিস্যার সঙ্গে এর কোনো সম্পর্ক নেই। এ কারণে কোনো ভাবেই মিরাছের হক থেকে বঞ্চিত করা যাবে না। তাদের মিরাছি হক আদায় না করা পর্যন্ত তাদের অধিকার কখনও শেষ হবে না। যৌতুক বা উপহার প্রদানের অজুহাতে মিরাছ না দেয়া বড় জুলুম এবং সম্পূর্ণ হারাম কাজ।

 

১ Likes ১ Comments ০ Share ১৩৭০ Views

Comments (1)

  • - লুৎফুর রহমান পাশা

    স্বাগতম

    - মাসুম বাদল

    নক্ষত্র ব্লগ -এ স্বাগত জানাই...

    - আদম সন্তান

     সু-স্বাগতম