Site maintenance is running; thus you cannot login or sign up! We'll be back soon.

ইসলামিক স্টেট কি মুসলিম বিশ্বের ত্রাতা?

ইসলামিক স্টেটকে যতটুকু খারাপ ভাবে তুলে ধরা হচ্ছে, তারা কি এতটাই খারাপ? তারা কি আসলে মুসলিমদের প্রতি অন্যায়ের দাতভাঙ্গা জবাব দিচ্ছে না? তারা কি ইসলাম ধর্মের প্রসারতায় নিয়োজিত নয়?

ইসলামিক স্টেটের জঙ্গিরা যদি এতই খারাপ হবে, তাহলে কেন মধ্যপ্রাচ্য থেকে হাজার হাজার তরুণ এবং মধ্যবয়সী মানুষ তাদের সাথে যোগ দিচ্ছে? তাদের ভাবাদর্শ যদি ভয়াবহই হবে, তাহলে কেন অস্ট্রেলিয়া, ইউরোপ এবং এশিয়ার এত মানুষ সিরিয়া ও ইরাকে যাচ্ছে সেখানকার সরকারবাহিনীর বিরুদ্ধে লড়াই করতে? ইসলামিক স্টেটের জঙ্গিদের উদ্দেশ্য যদি খারাপই হয়, তাহলে ইউটিউবে তাদের প্রকাশিত ভিডিওগুলো লাখ লাখ মানুষ দেখে কেন? ইসলামিক স্টেট যদি কোন কার্যকরী বাহিনী না হয়ে থাকে, তাহলে সারা পৃথিবী থেকে দাতারা কেন তাদের লক্ষ লক্ষ ডলার দিয়ে সহায়তা করছে? ইসলামিক স্টেটের জঙ্গিরা যদি এত বেশি খারাপ কাজই করে থাকে, তাহলে কেন পশ্চিমা বিশ্বের যুবতী মেয়ে এবং মধ্যবয়সী মহিলারা তাদের বিয়ে করতে চাইবে?

এই প্রশ্নগুলোর সরল ও স্পষ্ট উত্তর হলো – ইসলামিক স্টেটের জঙ্গিরা জনসম্মুখে তাদের যে ভাবমূর্তি উপস্থাপন করতে সক্ষম হয়েছে সেটি বেশ চিত্তাকর্ষক এবং মর্মস্পর্শী। আর সূক্ষ্মভাবে বিশ্লেষণ করলে - ইসলামিক স্টেটের জঙ্গিরা ধর্মের আড়ালে নিজেদের কুকর্ম করছে। যাদের কোন হিতাহিত জ্ঞান নেই এবং যারা জগত সংসারের তেমন কিছু জানে না বোঝে না, যে কোন অশুভ বিষয়ে খুব সহজেই তাদের মনোযোগ আকর্ষণ করা যায়। বর্তমানে ইসলামিক স্টেটের জঙ্গিরা এটিই করছে।

ইসলাম, একটি ধর্ম হিসেবে, যা শিক্ষা দেয়; ইসলামিক স্টেটের জঙ্গিদের কার্যক্রম ঠিক তার বিপরীত। কিন্তু মধ্যপ্রাচ্য এবং পৃথিবীর অন্যান্য অংশের অসাড় মস্তিস্কের মানুষগুলোর এই বিষয়টি অনুধাবন করার ক্ষমতা নেই। তাই তারা দল বেঁধে সিরিয়া ও ইরাকের দিকে যাচ্ছে। আর মানুষের সহজাত প্রবৃত্তি গুলোর অন্যতম পছন্দনীয় হলো ধ্বংসলীলা এবং সহিংসতা। মানুষের এই সহজাত প্রবৃত্তিকেই ইসলামিক স্টেট খুব সফলভাবে কাজে লাগাচ্ছে। এবং ধর্ষণ হলো নব্য যোদ্ধাদের উপরি পাওনা। ইসলামিক স্টেটের যোদ্ধাদের বলা হয়েছে যে, বন্দিনীদের সাথে যৌনক্রিয়ায় লিপ্ত হতে বা ধর্ষণ করতে তাদের কোন বাধা নেই। এজন্যই কিছুদিন আগে ইয়াজিদি এবং খ্রিস্টান বসতিগুলো থেকে তারা প্রায় ৪৫০ জন নারী ও কিশোরীকে অপহরণ করে সিরিয়ায় পাঠিয়ে দেয়। এদের মধ্যে কিছু সংখ্যক নারী ও কিশোরীদের আইএসআইএলের নেতৃস্থানীয়দের হাতে পুরস্কার হিসেবে তুলে দিয়ে বাকীদের যৌনদাসী হিসেবে বিক্রি করা হয়েছে। এই সব করা হয়েছে ধর্মের দোহাই দিয়ে, ইসলামের নামে।

ইসলামিক স্টেটের জঙ্গিরা দোহাই দিচ্ছে যে তারা আসলে পৃথিবী জুড়ে মুসলিম জাতির উপর চলতে থাকা নিপীড়নের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানাচ্ছে কিন্তু মূলতঃ তারা মুসলিমদের বিরুদ্ধে অমুসলিম নীতিনির্ধারকদের অবস্থানকে আরও দৃঢ় করে তুলছে। জুলাইয়ে প্রকাশিত একটি অডিও বার্তায় সংগঠনটির নেতা আবু বকর আল-বাগদাদী বলেছে যে, সারা বিশ্ব জুড়ে মুসলিম জাতির উপর চলতে থাকা নির্যাতনের ঘটনাগুলোই তাদের বাহিনীকে এই আগ্রাসী অবস্থান নিতে বাধ্য করেছে। সে দাবী করে যে, ইসলামিক স্টেট হলো সেই শক্তি যা মুসলিম জাতিকে তার হারিয়ে যাওয়া গৌরব, শক্তি, নেতৃত্ব এবং অধিকারসমূহ ফিরিয়ে দিবে। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে হত্যা, ধ্বংস, লুট ও ধর্ষণের মাধ্যমে মুসলিম বিশ্বের অবশিষ্ট গৌরব, শক্তি, ভাবমূর্তি ইসলামিক স্টেট নষ্ট করছে। ইসলামিক স্টেটের কর্মকানগুলোকে জিহাদ হিসেবে গণ্য করার কোন অবকাশ নেই, এগুলো অপরাধ কর্মকাণ্ড মাত্র।

কিছুদিন আগে ১২০ জন ইসলামিক পণ্ডিত ও বুদ্ধিজীবী ইসলামিক স্টেটের নেতা আবু বকর আল-বাগদাদীর কাছে লিখিত একটি চিঠিতে স্বাক্ষর করে জানিয়ে দেন যে, কর্মকাণ্ডগুলোকে বৈধ প্রমাণ করতে সংগঠনটি যেভাবে কুরআন ও হাদিসের ব্যাখ্যা করে, সেটিকে তারা স্পষ্টভাবে প্রত্যাখ্যান করছেন এবং এইসকল ব্যাখ্যা সম্পূর্ণ ভুল। ইসলামিক পণ্ডিতগণ ইসলামিক স্টেট কর্তৃক যুদ্ধবন্দিদের হত্যা করার বিষয়টিকে জঘন্য একটি যুদ্ধাপরাধ হিসেবে এবং ইরাকের ইয়াজিদির অধিবাসীদের উপর নির্যাতন চালানোকে ন্যাক্কারজনক একটি কাজ হিসেবে বর্ণনা করেন। তারা বন্দি হত্যা করার প্রতি নিন্দা জানান এবং ইসলামিক স্টেটকে এধরনের কর্মকাণ্ড থেকে বিরত থাকতে বলেন। এছাড়া ইসলামিক পণ্ডিতগণ চিঠিতে আরও উল্লেখ করেন যে, এই সংগঠনটি ইসলামিক জ্ঞানতত্ত্বের চর্চাকারীদের দাসপ্রথা বিরোধী ঐক্যমতকে অবজ্ঞা করছে। কিন্তু কথা হলো বাগদাদী কি এই চিঠিকে গ্রাহ্য করে? না, মোটেই গ্রাহ্য করে না। সে এবং তার কমান্ডারগণ এখনো তাদের নিষ্ঠুরতা এবং অপরাধগুলোকে বৈধতা দিতে ইসলামকে ব্যবহার করে চলেছে।

মুসলমানদের ভাবমূর্তি অন্য কোন দল মনেহয় না গত দুই দশকে এতো বেশী নষ্ট করতে পেরেছে। ইসলামিক স্টেট বর্তমানে আল-কায়দার চেয়েও বড় হুমকি হয়ে দেখা দিয়েছে। এই সংগঠন আল-কায়দার চেয়ে অধিক সম্পদশালী, এর আধুনিক এবং কার্যকর মিডিয়া আল-কায়দার চেয়ে অনেক বেশী কার্যকর এবং এটি আল-কায়দার চেয়ে অনেক বেশি আয়তনের জায়গা নিজেদের অয়ত্তে নিয়ে নিয়েছে। আল-কায়দা বিভিন্ন রাষ্ট্রে বিকেন্দ্রীকরনের মাধ্যমে তাদের ছোট ছোট সেলগুলোকে পরিচালনা করত, কিন্তু এখন পর্যন্ত ইসলামিক স্টেট একটি কেন্দ্রীভূত সেল হিসেবে পরিচালিত হচ্ছে। ইসলামিক স্টেট এখন একটি অর্ধেক মাফিয়া স্টাইলের একটি বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান হিসেবে এবং বাকি অর্ধেক ‘একটি আন্তর্জাতিক ধর্মীয় চ্যারিটি’ হিসেবে পরিচালিত হচ্ছে। উপসাগরীয় দেশগুলোর ধনকুবেরগণ সহ সারা বিশ্বের অন্যান্য স্থানের মানুষের নিকট থেকে অনুদান পাওয়া তাদের জন্য খুব সহজ। এছাড়া তারা তেলক্ষেত্রসহ নানা ধরনের সম্পদ দখল করে ফেলেছে। ২০০৩ সালে ইরাক আক্রমণের পরে মার্কিন কর্তৃপক্ষ ইরাকের ৪৫৩০টি রাসায়নিক অস্ত্রভাণ্ডার ধ্বংস করলেও কমপক্ষে ৪টি ধ্বংস করতে পারে নি। গত জুন মাসে আবু বকর আল-বাগদাদীর দল সেগুলোর একটি দখল করেছে। বর্তমানে তারা পূর্ব সিরিয়ায় তাদের নিয়ন্ত্রিত তেলক্ষেত্রগুলো থেকে বিশাল অঙ্কের অর্থ উপার্জন করছে। এই উত্তোলিত তেলের কিছু পরিমাণ তারা আবার সিরিয়া সরকারের কাছেই বিক্রি করছে। আর পদাতিক যোদ্ধারা ঐতিহাসিক স্থানসমূহ থেকে লুট করা মালামাল বিক্রি করে নগদ অর্থ উপার্জন করে চলেছে।

দুঃখের বিষয় হলো ইসলামিক স্টেট ইসলাম ধর্মকে সুকৌশলে তাদের অপরাধমূলক কার্যক্রমে ব্যবহার করে যাচ্ছে। এর চেয়েও দুঃখজনক বিষয় হল যে, সাধারন মানুষ তাদের ফাঁদে পা দিচ্ছে। অবশ্য ফ্যানাটিকদের হাতে ধর্মের এমন ব্যবহার সব সময়ই হয়ে এসেছে। একটা ৪ বছর বয়সী একটি শিশুর কাছে ওষুধের বোতলের সাথে থাকা ম্যানুয়ালটি যেমন, ইসলাম কিংবা কুরআনের শিক্ষা মুসলিম বিশ্বের কুসংস্কারাচ্ছন্ন মানুষের কাছে ঠিক তেমন দুর্বোধ্য । শিশুটি ম্যানুয়ালের গায়ে লেখা A B C D অক্ষরগুলোকে চিনে পড়তে পারে, কিন্তু মুল বাণী ও তার মর্ম সে উদ্ধার করতে পারে না। তাই সে ওষুধটি খেয়ে নেয় কারণ এর বোতলটি দেখতে সুন্দর এবং ওষুধটিও খেতে মিষ্টি লাগে।

হ্যাঁ, আমি ‘সুন্দর বোতল’ এবং ‘খেতে মিষ্টি’কথা দুইটিকে ধ্বংসযজ্ঞ ও ধর্ষণের রূপক হিসেবে ব্যবহার করেছি। আর এই প্রবন্ধের শিরোনামে যে প্রশ্নটি আছে, তার উত্তর ‘না’।
০ Likes ১ Comments ০ Share ১৩৯৬ Views