Site maintenance is running; thus you cannot login or sign up! We'll be back soon.

ইতুর বিয়ে



 

কেউ জানেনা ইমনের মনে ও শরীরের উপর দিয়ে যে কতোটাই ঝড় বয়ে যাচ্ছে। কারণ ইমনের পরিবারের কেউ তো জানেইনা ইমন, ইতু নামে কোন মেয়ের সাথে সম্পর্কে জড়িয়েছে। যদি সব জানতো তাহলে হয়তো এমন অবস্থায় তাকে পড়তেও হতোনা। একটা সুষ্ঠু সমাধান নিশ্চয়ই হয়ে যেত। কিন্তু ভাগ্যের কি নির্মম পরিহাস, ইমন কিছু জানানোর সুযোগটিও পেলনা। এর আগেই তার সব আশা-আকাঙ্ক্ষা ধূলোয় মিশে গেল। কত পরিকল্পনা ছিলো তার, কত সুন্দর একটা চিন্তা-ভাবনা ছিলো তার। কিন্তু সমাজের ঐ অসঙ্গতি আজ তাদের সব পরিকল্পনা, চিন্তা-ভাবনা, স্বপ্নকে ভেঙে চুরমার করে দিয়েছে। মানুষ কেন শান্তি বুঝেনা, কেন তারা সুন্দর কোন কিছুকে টিকিয়ে রাখতে চায়না? কেন তাদের মাঝে এতো পাওয়ার ইচ্ছে, কেন তারা সবকিছুই ভোগ করতে চায়? এই ভোগবাদী নীতি যতদিন পৃথিবীতে থাকবে ততদিন হয়তো এমন হাজারও ইমন-ইতুর সুন্দর জীবন গড়ার স্বপ্ন ভেঙে যেতে থাকবে।

ইতু অন্য কারও অধিকারে চলে যাবে এ বিষয়টি ইমন কোনদিনই ভাবেনি। কখনো ভাবেনি ইতু ছাড়া তাকে বাকিটা জীবন পার করতে হবে। কিন্তু ভাগ্যের নির্মম পরিহাসে অভাবনীয় বিষয়গুলোই ঘটে চলছে।

ইমনের মা ইমনকে নিয়ে খুব দুশ্চিন্তায় পড়ে গেল। অনেকক্ষণ হলো তার ঘুম ভাঙছেনা। ডাকলেও সাড়া দিচ্ছেনা। অনেক ডাকা ডাকির পরও কাজ হলোনা। হঠাৎই তার ডায়রীটা চোখে পড়লো তার। রাত আড়াইটায় ইমন এই চিঠিটি লেখেছিলো, ডায়রী অনুযায়ী। ইমনের ডায়রীতে যা লেখা ছিলো-

"প্রিয় মা-বাবা,
প্রথমেই তোমাদের এই অধম সন্তানের ভুলত্রুটি মার্জনা করে নিয়ে তার পক্ষ হতে স্বশ্রদ্ধ সালাম গ্রহণ করো। আমি বেশি কথা লেখতে পারবোনা এখন। হয়তো লেখতে লেখতেই ঘুমিয়ে যেতে পারি, কারণ এ পর্যন্ত কয়েকটি মস্তিষ্ক প্রশান্তিকারক ঔষধ সেবন করে ফেলেছি। তবে চিন্তা করোনা আমাকে নিয়ে, আমি আত্মহত্যা করিনি। শুধু কষ্টগুলোকে ঘুমের মধ্য দিয়ে আরও গভীরভাবে অনুভব করতে চাই। জানি মা, তুমি খুব কাঁদছো এখন। হয়তো আমার কাছ থেকে এমন একটি চিঠির প্রত্যাশা তুমি কখনো করোনি। কিন্তু আমার কিছু করার ছিলোনা। পরিস্থিতিটা যে এতোটাই প্রতিকুলে চলে যাবে তা আমি কখনো ভাবিনি। খুব ঘুম পাচ্ছে আমার, এর আগেই যে সব বলতে হবে আমাকে। আমার একটা কথা রাখবে তোমারা? শুধু একটি কথাই। আমি একটা মেয়েকে ভালোবাসি, সত্যিই খুব ভালোবাসি। আমার ভালোবাসায় কোন অবৈধ অজুহাত নেই। আজ এই ভালোবাসাটা আমার হারিয়ে যাচ্ছে। হয়তো তার জন্য আমি কিংবা সে কেউই দায়ী নয়। দায়ী এই সমাজের কিছু নষ্ট মনের মানুষগুলো, যারা প্রতিনিয়ত মানুষের স্বপ্ন ভাঙে। সে অনেক ভালো একজন, আমাকে খুব ভালোবাসে। আমি এটুকু নিশ্চয়তা তোমায় দিতে পারি যে তাকে পাশে পেলে তোমাদের ছেলে কোনদিন অসুখী হবেনা। কিন্তু আমি পারলামনা, তাকে তোমাদের পুত্রবধূ করতে। তোমাদের পায়ের ধূলোয় তার সংসারের সূচনা করাতে। সে যে অন্য কারও হয়ে যাচ্ছে! খুব কষ্ট হচ্ছে আমার। আমার একটা ইচ্ছে পূরণ করবে? যদি ঘুমের দেশ থেকে কষ্টগুলো অনুভব করে ফিরে আসতে পারি তাহলে তখন তাকে তোমাদের পাশে, ভাবী বধূর বেশে যেন দেখতে পারি। বলোনা তোমরা তাকে আমার করে দিবে। ও যাই! তার নামটিই তো বলতে ভুলে গেছি। তার নামটি হলো ইতু। যদি সবকিছু বুঝে আমার সাথে তোমরা একমত হতে পারো তাহলে ইতুকে ফোন দিও। ইতুর ফোন নাম্বার ও বাড়ির ঠিকানা আমার ড্রয়ারে একটা নীল খামে লেখা আছে। আর মনে হয় কিছু বলতে পারছিনা। আমি ঘুমালাম। "

ইমনের মা কি করবে কিছু না বুঝতে পেরে তার বাবাকে ডেকে আনলো। সব খুলে বলার পর তাকে, সে ইমনকে হাসপাতালে নেওয়ার জন্য এ্যাম্বুলেন্স ঠিক করে আনলো। এদিকে তার মা সেই নীল খামটি সাথে করে নিয়ে নিলো। ইমনকে আইসিইউতে নিয়ে গেল ডাক্তার সরাসরি। এদিকে ইমনের মা কেঁদে কেঁদে পুরো হাসপাতাল মাতিয়ে তুললো। এসময় হঠাৎ ইমনের বাবার ফোনে ইতুর কল আসলো। বুঝতে পেরে সে ইমনের মাকে দিলো। সে ইতুকে সব কিছু বলার পর, ইতু কি বলবে কিছুই বুঝতে পারলোনা।

-মা, আমার বিয়েটা হয়নি। আমি এটাই ওকে বারবার জানাতে রাতে অনেক ফোন দিছিলাম ও ধরেনি। কথা হচ্ছিলো বিয়ে হবে, কিন্তু আমি ওদের সবার সামনে বলে দিয়ে আসছি ইমন ছাড়া আর কারও ঘরে আমি অধিকার নিয়ে যাবোনা।
-তাহলে ও সব না শুনেই এমন করলো কেন?
-জানিনা মা। আমি আসছি আপনাদের কাছে এখনই।

১ Likes ০ Comments ০ Share ৪০৮ Views