ইতুর বিয়েটা হয়তো এবার হয়েই যাবে । কথা যা ঠিকমতো চলছিলো তা দেখে মনে হচ্ছে এবার আর কে ঠেকাবে তার বিয়ে । এবার বিয়েটা হয়েই ছাড়বে তার । একদিকে মরিয়া তার বাবা তার বিয়ে দেওয়ার জন্য, অন্যদিকে পাড়ার ছেলেদের অতিষ্ঠ যন্ত্রণায় বিয়ে দেওয়াটা এক রকম বাধ্যতামূলক হয়ে পড়েছে । বর্তমান যুগের কিছু উঠতি যুবক অল্প বয়সে এতো অশৃঙ্খল হয়ে যায় যে যার জন্য সমাজের কিছু মেয়েরা ঠিকমতো বাহিরে যেতে পারেনা । বের হলেই এসব অভদ্র, নিম্ন মনের ছেলেদের মুখোমুখি হতে হয় । কখনো কখনো এসব ছেলেদের ভয়ে মেয়েরা থুবড়ে পড়ে মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে ফেলে নতুবা পড়াশোনা বন্ধ করে দিয়ে বিয়ের পিড়িতে করে পাড়ি দিতে হয় অচেনা দেশে । ঠিক এমনাটাই ঘটতে চলছে আজ ইতুর সাথে । ছেলে পক্ষ খুব নামকরা । ছেলে পক্ষের পরিবারের সবাই শিক্ষিত খুব । ইতুর বাবাও ভাবলো ভালোই হবে বিয়েটা হয়ে গেলে । কিন্তু ইতু সে কি মেনে নিবে এসব । সবেমাত্র এইচএসসি শেষ করা মেয়েটা স্বপ্ন দেখছিলো স্নাতক পাশ করবে, শিক্ষিত হবে । আর এমন স্বপ্নের মাঝে এ কি ফাটল ধরছিলো ! আর তার স্বপ্ন জুড়ে ছিলো আরেকজন মানুষ, যে তার জীবনে না আসলে তার জীবন সেই কবেই ব্যর্থতার সাগরে তলিয়ে যেত । ইতু যখন বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তিযুদ্ধে পরাজিত সৈনিক, ঠিক সেই মুহুর্তে ইতুর পাশে দাঁড়ানোর মতো কেউ ছিলোনা । আর তখনই ফেরেশতার মতো হাজির হলো ইমন নামের একজন । সে ইতুর মনে বেঁচে থাকার নতুন আশা দিয়েছে আর সর্বদা পাশে থাকার আশ্বাসও । আর পাশে থাকতে থাকতে তারা যে কি করে এতোটা গভীর প্রণয়ে জড়িয়ে যাবে তা কে জানতো । কিন্তু তাদের পথে বাঁধ সাধলো ইতুর বাবা । সে ইতুর বিয়ে দেওয়ার জন্য মরিয়া হয়ে গিয়েছিলো। যেন মেয়েটাকে কোন রকম গুছিয়ে কারো কাধে ঘুচে দিতে পারলেই তার শান্তি । মেয়েটার সুখ নিয়ে তার যেন বিন্দুমাত্র চিন্তা নেই । হয়তো পারিপার্শ্বিক পরিবেশ ও সামাজিক প্রেক্ষাপটে ইতুর বাবার এমন করাটা স্বাভাবিকই ছিলো, তবুও মেয়ের ইচ্ছে, স্বপ্নগুলোকে ধ্বংস করার আগে একটু ভাবাও দরকার ছিলো তার। এই একবিংশ শতাব্দীর মানুষগুলোই যেন এমন, ভাবনার গভীরতায় তারা যেন পৌঁছতেই পারেনা। সব সময় কিসের যেন একটা তাড়ায় থাকে, স্থির হতে পারেনা কোন ভাবেই।
ইতুকে পাত্রপক্ষ দেখে খুব পছন্দ করে ফেলেছে, এমনকি তারা একটি আংটিও দিয়ে দিলো। ইতুর বাবাও খুব খুশি হয়ে গেল। কিন্তু ইতু সে কি খুশি? নাহ, সে একটুও খুশি হতে পারছেনা। পুরো আকাশটা যেন ভেঙে গেল। সে কোন ভাবেই দাঁড়াতে পারছিলোনা। ইতু খুব চিৎকার দিলো তখন, পুরো পাড়ার মানুষ ছুটে এলো তার চিৎকার শুনে। পাত্রপক্ষ তখন একটু নড়েচড়ে বসলো। পাত্রের মা কিছু একটা আঁচ করতে পেরে ইতুর কাছে আসলো। ইতুকে সে পরম স্নেহ দিয়ে বুঝানোর চেষ্টা করলো যে তাদের কাছে ইতু খুব ভালো থাকবে, ইতু তাদের কাছে থাকলে আরও ভালো করে পড়াশোনা চালিয়ে যেতে পারবে। ইতু শুধু চুপ হয়ে অশ্রু ঝরাচ্ছিলো! পাত্রের মায়ের কথার সাথে তাল মিলিয়ে কথা বলছে সবাই। ইতুর মা-বাবা, চাচা-চাচী সবাই, এমনকি ইতুকে অপছন্দ করে এমন মানুষগুলো যেন আজ ইতুর ভালো ছাড়া আর কিছুই বুঝেনা। পুরো পৃথিবী আজ ইতুর সুখ নিয়ে ব্যস্ত! শুধু ইতুই বুঝতে পারছেনা সুখটুকু কোথায়!
যে ছেলেটার জন্য তার জীবন এতোটা সুন্দর হয়ে উঠছিলো, সে আজ তাকে খুব ভালোবাসে। তার ভালোবাসা ছাড়া একদিনও চলতে পারেনা। এই ছেলেটাকে ইতু দুঃখের সাগরে ছেড়ে দিয়ে কি করে থাকবে। নিয়তি কি সহ্য করবে এই অবিচার। দূর কন্ঠে ইমনের কন্ঠ শোনা যাচ্ছে আর অপর প্রান্তে ইতুর কান্নার শব্দ।
-কি হয়েছে ইতু? তুমি কাঁদছো কেন?
-আমার বিয়ে হয়ে যাচ্ছে আজ। আমি কিছুই বুঝতে পারছিনা।
-কি বলো এসব! আমার সাথে তুমি এমনটা করতে পারলে!
-আমার কিছুই করার ছিলোনা, আমি কিছু বুঝে উঠার আগেই সব শেষ।
-মানে কি?
-তুমি কি বুঝোনা এখনো, কি শেষ হওয়ার বাকি আমার।
ইতুর কান্নার শব্দ। অতঃপর দূরালাপ বিচ্ছিন্ন হয়ে গেল।