Site maintenance is running; thus you cannot login or sign up! We'll be back soon.

সুলতানা সাদিয়া

১০ বছর আগে

ইচ্ছে বেলুন

ফায়জা আধা ঘন্টা ধরে কান্না চেপে রাখার চেষ্টা করছে। কান্না চেপে রাখতে রাখতে ওর ছোট বুকের ভেতরটা ব্যথা করছে। ফায়জার মন খুব খারাপ। মা আজ ফায়জাকে মেরেছে। ফায়জার পিঠে চড় দিয়েছে মা। খুব জোরে চড় দেয়নি। ফায়জা তাতে ব্যথাও পায়নি। তবু ফায়জার বুক ব্যথা করছে। ঘটনাটি ঘটবার পর থেকেই ফায়জার মা বালিশে মুখ গুঁজে আছে। কোথায় চড় খেয়ে ফায়জার কাঁদবার কথা তা না, মা’ই জোরে জোরে কাঁদছে। রাইসা চুপচাপ খাটে বসে টিভি দেখছে। যেন কিছু হয়নি। রাইসা ফায়জার তিন বছরের বড় কিন্তু রাইসার কর্মকাণ্ড দেখলে মনে হয় ও ত্রিশ বছরের বড়। বড় আপি হলে যে বড় ভাব করার সাথে সাথে কিছু কাজও করতে হয় তা রাইসা বোঝে না। এই যে মা যখন ওকে মারল রাইসা এগিয়েই এল না। উল্টো একবার মিটিমিটি হাসল! আর ঠিক তখন শিলার মা এগিয়ে এসে ফায়জাকে কোলে তুলে না নিয়ে গেলে ফায়জার কান্না আর ঠেকানোই যেত না।


শিলার মা ফায়জাদের বাসায় কাজ করে। শিলা ফায়জার সমান, তাই শিলার মা ফায়জাকে খুব আদর করে। কিন্তু শিলার মার কোনো নাম নেই। শিলার মার নাম ‘শিলার মা’। ফায়জার অবাক লাগে, কারো নাম শিলার মা হয় নাকি! মাও ডাকে শিলার মা, বাবাও। রাইসা, ফায়জাও। প্রথম দিন যেদিন শিলার মা ওদের বাসায় কাজ করতে এল ফায়জা শিলার মাকে জিজ্ঞাসা করেছিল, তোমার নাম কি? শিলার মা খুব হেসেছিল আর বলেছিল, আমার নাম শিলার মা। শিলার মা কখনই নাম বলেনি।


ফায়জার এখন অনেক কষ্টের কথা মনে পড়ছে। একবার কষ্ট শুরু হলে আর থামতেই চায় না। এই যেমন ফায়জা বুঝতে পারছে রাইসা পরীক্ষায় ঠিকই ফার্স্ট হবে আর ফায়জার কপালে বরাদ্দ হবে বকুনি। ফায়জার মায়ের নাম সোনালী। যেমন নাম তেমনই সোনার মত সুন্দর মা ফায়জার। মাকে জ্বালালে মা রাগ হয় ঠিকই কিন্তু মারে না। দু’দিন আগেই ফায়জা ডায়নিং টেবিলে রাখা পানির ফ্লাক্সটা ভেঙে ফেলল তা দেখেও মা কিছু বলেনি। বকেও নি। আবার বাংলা পরীক্ষার দিন গোটা পেন্সিল বক্সটাই ও যে স্কুলে ফেলে এলো তার জন্য বকুনি খেল বাবা। এরকম আরও কত শত যে কাণ্ড আছে যা দেখে মা কিছুই বলে না পর্যন্ত। শুধু আজ মা কেন রাগ হল ফায়জা ধরতে পারছে না।
শিলার মা ফায়জাকে কোলে নিয়ে ঘুরছে আর বকবক করছে।
-আপুনি, স্কুলের জামাখান খুইলা দেই?
-না...
-মায়ের উপর রাগ করছেন নি?
-হুমম।
-আরে দুর, বোকানি! মায়ের উপর রাগ নাই। আপনার পরীক্ষা শেষ দেইখা মা কত্ত নাস্তা বানায় রাখছে। আসেন খাওয়াই দেই।
-নাহ, খাব না।


ফায়জা এইবার কেঁদেই ফেলবে। কিন্তু কাঁদলে আপি ঠিক কোথা থেকে উড়ে এসে ওকে ক্ষেপাবে, ফ্যাঁচকাঁদুনে। ছয় বছরের ফায়জার বুকের ভেতরটা অভিমানের তীব্রতায় ভারি হয়ে যায় তবু ও কান্না আটকে রাখে। ফায়জা মায়ের উপর খুবই রাগ করেছে। মারবার কারণটা মায়ের জন্য বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ হয়তো। কিন্তু ফায়জা বোঝে না। ওর আজ অংকন আর হস্তলিপি পরীক্ষা ছিল। মোমবাতি, বেলুন আর জাতীয় পতাকা অংকন এসেছে। ফায়জা বেলুন আঁকেনি। পরীক্ষার হলে ওর বেলুন আঁকতেই ইচ্ছে করল না। ফায়জা জানে, বেলুন আঁকতে হয় বার্থডে কার্ড এ। গতকাল টিভিতে যে দেখল ওর মত একটা মেয়ে মোমবাতি নিয়ে জাতীয় পতাকার সামনে কি সুন্দর করে গাইছে, মুক্তির মন্দির সোপান তলে, কত প্রাণ হলো বলিদান, লেখা আছে অশ্রুজলে...। গানটা একটু কঠিন লেগেছে কিন্তু প্রথম লাইন দু’টো কি যে ভাল লেগেছে ফায়জার! মুখস্থই হয়ে গেছে। সেই সব ভাবতে ভাবতে আজ পরীক্ষার খাতায় ও দুইটা জাতীয় পতাকা আঁকল। এটাই ফায়জার দোষ?


ফায়জার প্রাণের বন্ধু প্রিয়ন্তী। প্রিয়ন্তী আর ফায়জা একই বেঞ্চে বসে। প্রিয়ন্তীই ওকে বলেছে, তোর পতাকাটা বেস্ট হয় রে! তাইতো ও দুইটা পতাকা আঁকল! আর মা বলল, ও নাকি পাঁচ নাম্বার ছেড়ে এসেছে। পাঁচ নাম্বার ছেড়ে আসার মানে ফায়জার মাথায় ঢোকে না। ফায়জা জানে ওর পতাকা সবচেয়ে সুন্দর হয়। ক্লাস থেকে বের হয়ে বাবাকে ও যখন বলল, ও দুইটা পতাকা এঁকেছে বাবা তো হেসেই খুন। ফায়জাকে বলল বেশ করেছিস। বাবা ওকে বাসায় নামিয়ে দিয়ে অফিসে চলে গেছে। বাবা বাসায় থাকলে ব্যাপারটা হতই না।
-রাগ কইরেন না। মা আপনারে মাইরা নিজেই কেমুন কষ্ট পাইতাছে দেখছেন? মা মেলাক্ষণ কানতেছে। যান মায়ের গলা জড়ায় ধরেন। দেখবেন মায়ের রাগ গইলা পানি।


ফায়জা শিলার মায়ের ঘাড়ে মুখ গুঁজে দেয়। কান্না দুই চোখের আড়াল ভেদ করে বাইরে চলে আসে এবার। যাবেই না ফায়জা। আর বেলুনও আঁকবে না। কাল রাতে ভেবেছিল মামণির বার্থ ডে’তে বেলুন কার্ড বানাবে। প্রিয়ন্তী ফায়জাকে বেলুন কার্ড বানানো শিখিয়েছে। নাহ্ কিছুই বানাবে না।


শিলার মা ফায়জাকে কোল থেকে নামিয়ে দেয়। ফায়জা বারান্দায় ঝোলানো বেতের দোলনাতে যেয়ে বসে। আস্তে আস্তে দোল করতে করতে ওর ঘুম ঘুম পায়। এটা ওর খুব প্রিয় জায়গা। রাইসা আগে এই দোলনা নিয়ে ঝগড়া বাধাঁতো কিন্তু এখন তা কমে এসেছে রাইসার গান শেখার কল্যাণে। কিন্তু ফায়জা মাকে বলেছে, ও গান শিখবে না। ও শিখবে অংকন।  ছবি আঁকতে ফায়জা খুব পছন্দ করে। ও গানও পছন্দ করে। তবে গান গাইবার চেয়ে শুনতে বেশি ভাল লাগে ওর।


মা এসে কখন পাশে দাঁড়িয়েছে ফায়জা দেখেনি। কাছে এসে ফায়জাকে কোলে তুলে নেয় মা। বুকের সাথে ওকে মিশিয়ে নিয়ে বলে, মামণি আমাকে একটা পতাকা এঁকে দিবি।

মায়ের বুকের ওমে ফায়জার মন উষ্ণ হতে থাকে আর সেই সাথে ওর ইচ্ছে বেলুন বারান্দার গ্রিল ফাঁকি দিয়ে উড়ে যায় আকাশ পানে।


(সময়কাল: ডিসেম্বর, ২০১৩ খ্রিঃ)

০ Likes ১৪ Comments ০ Share ৪৯১ Views

Comments (14)

  • - মেজদা

    দারুণ প্রেমের কবিতা। ভাল লাগা জানাইলাম। 

    • - আহমেদ ইশতিয়াক

      আমিও অনেক ধন্যবাদ দিলাম মেজদা ...

    - তাহমিদুর রহমান

    শাড়ির এলোমেলো ভাঁজ
    ভালোবাসি ভালোবাসি।

     

    • - আহমেদ ইশতিয়াক

      আমিও ...

    - ইকবাল মাহমুদ ইকু

    ভালো লাগলো... সুন্দর 

    • - আহমেদ ইশতিয়াক

      ধন্যবাদ ইকু ভাই...

    Load more comments...