Site maintenance is running; thus you cannot login or sign up! We'll be back soon.

চারু মান্নান

৮ বছর আগে

আহা মরি মরি কহু যন্ত্রণা-(প্রতিযোগিতা-২০১৬-৪র্থ পর্বঃ-ক্যাটাগরী-২)

আহা মরি মরি কহু যন্ত্রণা

সিপ্রা, বনেদি চৌধুরী বাড়ির বৌ। উপজেলা টাউনে বাসা। আট দশ মাইল দূরের গ্রামের বাড়ি। সেখানেও বেশ বড় দালান বাড়ি। চৌধুরী বাড়ি এক নামে চিনে। গ্রামের বাড়িতে শুধু চৌধুরী সাহেব, আর সিপ্রার শাশুরী থাকে। চৌধুরী সাহেবের দুই ছেলে। বড় ছেলে কানাডিয়ান প্রবাসি। ছোট ছেলে মোছাব্বের চৌধুরি উপজেলা হাইস্কু্লের হেড মাষ্টার। দুই ছেলে সিপ্রা আর মিলুর সংসার। মিলু সিপ্রার দেয়া ডাক নাম, মোছাব্বের চৌধুরীর। সিপ্রার বড় ছেলে কুহক এবার ঢাকায় প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ে কম্পিউটার সাইন্সে পড়ে। ছোট ছেলে দ্বীপ এবার হাইস্কুলে। সিপ্রা এখন পুরোদস্ত গৃহিনী। শুশুর, শাশুড়ীর দেখা শোনা, এ দিকে মিলুর সংসার সামলানো। সব দিকে তার সুশ্রী নজর।

অথচ এই সিপ্রা হাইস্কুলে, তখনই তার বিয়ে হয়। কত স্বপ্ন ছিল। বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়বে। তা আর হয়ে উঠেনি। বাবা, মা হারা এতিম সিপ্রা। মামা মামীর কাছেই মানুষ। মামারাও ছিল বেশ প্রভাশালী। ভাত কাপড়ের কোন কস্ট হয়নি কোন কালেই। তয় মনে গভিরে স্বপ্ন আঁকা যে বিশ্ব দেখতে চেয়ে ছিল, তা তার পাওয়া হয়নি মোটেও। পুরোদস্ত কুনো ব্যঙ এর ঘর সংসার যেন। কথাটি সিপ্রার মুখে বহু বার প্রতিধ্বনী হয়েছে তারই বসবাসের ঘরে। ছেলে দুটো বড় হয়েছে। সিপ্রা এখন ছিমছাম থাকে। ঘর দোর সামলানো। বাজার সদাই সব দিকেই তার নজর। তবুও বাসাটা ফাঁকা হলেই মনে তার খচ খচ করে, যন্ত্রণা অনুভত হয়। পঁত্রিশ পেরুলো সবে। তয় ডা. চেক আপ। প্রেসার নাই। এই সময় মেয়ে থাকলে ভালই হত। সময় কাটাতে পারত। তাই ছেলেকে ফোন করা, খোঁজ খবর রাখা।

কি রে সখি না, শীত শেষ হয়ে গেল নাকি। সকিনা সিপ্রার কাজের মেয়ে। উপজেলা শহর। তাও একটু একটু শীত লাগে ভোরের দিকে। হ' খালাম্মা ফালগুন মাস পরেছে। ক্যান ঢিভি দ্যাখেন না। ফেব্রয়ারী ভাষার মাস খালাম্মা। ঢাকায় এখন বই মেলা হইতাছে। ভাষার সারা মাসে বই মেলা হয়। জানি তো, কহুক গত শুক্রবার বই মেলায় গেছিল। আমার জন্য নাকি কয়েক খান বই কিনেছে। পাগলা ছেলেটার কান্ড দেখেছিস! কয়েকটা উপন্যাস, আর কয়েক টা কবিতার বই। কহুক বলে কি জানিস, বই পড়লে নাকি আমার সময় কাটবে।

এদিকে বাসার উত্তরের বাড়ান্দায় শীতের জন্য পর্দা টাঙানো ছিল। এই সকিনা এই দিকে আয় তো, বারান্দায় পর্দাগুলে সব খুলে ফেল। শীত তো চলে গেল। ধুলো ঝাড়ু দিয়ে পরিস্কার করতো? পূবের বাড়ান্দায় ঘিঁসে মস্ত বড় আম গাছ। বারান্দা এখ আমের বোলের মৌ মৌ বাসনা সিপ্রা বাড়ি যেন মৌ মৌ করছে। হটাৎ পাশের গাছ হতে একটা কালো কোকিল এই গাছটায় বসল। আর থেমে থেমে ডাকেতে থাকল কুহু কুহু কুহ,,,,,ডাকতে ডাকতে চড়া গলায় শেষ করে। কখন যে দুপুর গরিয়ে বিকেল, সিপ্রা পুব বারান্দায় চুপটি করে চেয়ারে বসে। বিকেলের আলোয় পুব আকাশের মেঘগুলো লালচে রঙ ধরে। আকাশের নীল যেন একটু ধসর, দূর আকাশে গ্রামের ছায়াপথে দিগন্ত এঁকে দ্বাড়িয়ে আছে। সিপ্রার স্মৃতির পট এখন কাঁড়ি কাঁড়ি কবিতার আখড়া হয়ে উঠে। তাই তো কেই জানে না, যে সিপ্রা অল্প শিক্ষিতা কবি। যে কবির কবিতা কেই পড়েনি। জানে না সে কি সত্যই কবি। তাই বোধ হয় সিপ্রার ছেলে কহুক সত্যই টের পেল নাকি, মা তার এক জন কবি। কিছু হয় না এমন গদ্য, পদ্য সেই লজ্জায়, ডাইরি তার স্বপ্ন আঁকা কল্পনা আশ্রয়।

আনমনা সিপ্রা। বিকেল ঘনিয়ে আসে। ফাগুনের সাঁঝ। কোকিলের ডাকের সুমধর যন্ত্রণা। যৌবনের স্মৃতির ডালি যে ঢলে পরে। পাকপাখালির ঘরে ফের চারিদক বসন্তের সাঁঝ লালিমা ছুঁয়ে যায়। আনমনা সিপ্রার আধেক কবিতায়, আর শব্দ জোটে না। স্বপ্ন ঘোন সাঁঝ আঁধার। যাপিত জীবনে রং ছড়ায়।

১৪২২/০৬, ফাল্গুন/বসন্তকাল।


০ Likes ১ Comments ০ Share ২৯৭ Views

Comments (1)

  • - মাসুম বাদল

    emoticonsemoticonsemoticons