Site maintenance is running; thus you cannot login or sign up! We'll be back soon.

আশরাফুল কবীর

১০ বছর আগে

আশ্বিনের শেষ বিকেল

এক.

 

দেখতে দেখতে কিভাবে যেন হলের দিনগুলো পার হয়ে যাচ্ছিল কিন্তু কোনভাবেই কোন কিছু ম্যানেজ হচ্ছিলনা আফজালের, না হচ্ছিল সিমুর সাথে বোঝাপড়ার বিষয়টি, না হচ্ছিল প্রজেক্টের প্রতি পূর্ণ মনযোগ দেয়া। বরাবরই অস্থিরচিত্ত মনের হওয়ায় তার ছটফটানো মনোভাবটি কখনোই কেউ ভালভাবে বুঝতে পারতোনা। এটা ভেবে ভেবে নিজের প্রতি নিজের রাগ আরো বেড়ে যেত আফজালের। অথচ রাব্বির কথা মনে হলেই তার কেমন কেমন লাগতে শুরু শুরু করে, বছরখানেকের মধ্যেই তার প্রিয় বন্ধুটি কিভাবে কিভাবে যেন সবকিছু সামলে সুমলে এখন পুরো কোট-প্যান্ট পড়া ভদ্রলোক সেজে বসেছে। সকালসন্ধ্যা অফিসের কাজ, অফিসের কাজ বলে চারপাশ সরগরম করে রাখা আর সপ্তাহান্তে বেড়াতে যাওয়া, শ্বশুড়বাড়ির লোকদের সামনে পড়লেই একেবারে বিনয়ের অবতার হওয়া আর দেখা হওয়া মাত্রই বলে ওঠা গা জ্বলানো কথাবার্তা:

 

“কিরে কি খবর তোর? আর কতো দিন একা একা থাকবি? বিয়েথা করে ফেল এবার, আমিতো প্রচণ্ড ব্যস্ত থাকি তাই তোর কথা ঠিকমতো স্মরণ করতে পারিনা, এ সকল প্রেমের ব্যাপার স্যাপার বাদ দে, ফালতু সময় নষ্ট”

 

এটা মনে হওয়া মাত্রই নিজের অজান্তেই বালিশের উপর আরো একটু জোরে মুচড়ে দেয় সে। কি করবে সে ভাবতে পারছেনা, হেরে যাওয়ার ছেলে সে কোনকালেই ছিলনা। স্কুল বেলার কথাটিই সবার প্রথমে মনে আসে তার, ক্যাপ্টেন না থাকাতে ইংরেজী ম্যাডাম তাকে বললেন শপথ করানোর জন্য, সুন্দর মতোন শপথ শেষ করলো সে, কিন্তু ম্যাডাম তাকে থামিয়ে দিয়ে বললেন, আরো জোড় গলায় বলার জন্য, এটুকু শোনামাত্রই সে ম্যাডামের মুখের উপর বলে দিয়েছিল “জোড়েইতো বললাম, শুনতে পাননা নাকি?” সাথে সাথেই সকলেই হাসাহাসি শুরু করেছিলো আর ম্যাডামের মুখখানা হয়েছিল দেখার মতো!

 

রাব্বি ক্লাস এইটে বৃত্তি পরীক্ষার জন্য টেস্ট পেপার কিনতে পারেনি বলে অনেক দূর থেকে এসে আফজালের সাথে বসে বসে ভাগাভাগি করতো, পরীক্ষার রেজাল্ট দেয়ার পর সাধারন গ্রেডে বৃত্তি পেয়ে ভাবখানা হয়েছিল দেখার মতো, কোন কিছুকেই আর আমলে নিচ্ছিলনা সে। সেই রাব্বি কোনরকমভাবে ভার্সিটিতে ভর্তি হবার পর শুরু করেছিলো তার সকল নূতন ইনিংস, অজানা সব অধ্যায়।

 

 

দুই.

 

মোবাইল ফোনটি বেজে উঠতেই আফজাল দেখলো রাব্বির কল, দেখেই বিরক্তিতে মন ভরে উঠলো তার। নিশ্চয়ই এখন তার কোনো বিশেষ প্রয়োজন কারন প্রয়োজন ব্যতীত সে কখনো ফোন করেনা বা খোঁজখবর নেয়না। প্রথম শ্রেণীর সুবিধাবাদী ছেলে যে সে, বন্ধুত্বের খাতিরে ইতিমধ্যেই সে খুব মুখস্ত করে ফেলেছে।

 

-হ্যালো, আফজাল কি খবর?

-কোন খবর নেই, তোর কি খবর?

-আরে, অনেক খবর আছে, আমি তোর কাছে এসে সব বলবো, বন্ধু। ঘন্টা খানেকের মধ্যেই পৌছাচ্ছি তোর নিকট।

-ঠিকাছে, আমি আছি।

 

রাব্বি খুশিতে ডগমগ করতে করতে এসে রুমে ঢুকলো, জড়িয়ে ধরে বললো “অনেক গল্প আছে, আছে তার ডালপালার বিস্তার, তাড়াতাড়ি রেডি হয়ে নে, আমরা এক্ষুনি বের হবো মিলিদের বাসার উদ্দেশ্যে”

 

-মিলি কে?

-বুঝে নে।

-বুঝতে পারছিনা দেখেইতো বলছি।

-আরে নূতন একজন, আপাতত এটুকুই।

-আমি কি মিলিদের বাড়িতে যাওয়ার জন্যই বসে আছি নাকি?

-দোস্ত, আমি এখন তাদের বাড়ি যাওয়া ব্যতীত অন্য কিছুই চিন্তা করতে পারছিনা।

-আমার সময় নেই, তাছাড়া স্টুডেন্টদের পরীক্ষা চলছে, এ মুহূর্তে ঢাকা ছাড়া যাবেনা।

-মাত্র দুই দিনের জন্য, খুব বেশী না।

-“What is sport to you is death to me”, থাকতে না পেরে বলেই ফেললাম।

 

খানিকবাদে আবারো পূর্ণ শক্তিতে বলীয়ান হয়ে জানালো আমি তাদের কথা দিয়েছি, বলেছি প্রিয় বন্ধুকে নিয়ে তাদের বাড়ীতে যাব এখন তুই যদি না যাস তাহলে আমার যাওয়া হবেনা। আমার ছয় মাসের প্রেম সবকিছু নষ্ট হয়ে যাবে।

 

- তুই তাহলে ঐতীকে ছেড়ে দিয়েছিস? বললো রাব্বি।

-আরে ধূর! কোথায় ঐতী আর কোথায় মিলি!..ঐতী ছিল একটি ফালতু মেয়ে, অনেকগুলো ছেলেকে ঘুরিয়েছে কিন্ত মিলিকে দেখলেই তুই সব ভুলে যাবি, একদম নিষ্পাপ মেয়ে, দেখতেও ভীষন কিউট।

-কেন,ঐতী কি কিউট ছিলনা?

-এই তোর এক বাজে অভ্যাস, সবসময় পেছনের জিনিস নিয়ে ঘাঁটাঘাঁটি করা, আমার একদম পছন্দ নয়, সামনের দিকে এগোতে হবেনা?

-ভাল করে জেনে শুনে নিয়েছিসতো?

-জানাশোনা মানে?

-মানে তোর মতোই কিনা?

-আমার মতো বলতে কি বোঝাতে চাচ্ছিস?

-তুই যেরকমভাবে বেশ কয়েকজনের সাথে ইতিহাস গড়েছিস, সেও কি.......?

 

বিকেলের দিকেই অনিচ্ছা সত্বেও আফজাল বের হলো রাব্বির সাথে মিলিদের বাড়িতে যাবে বলে। পুরো রাস্তাই রাব্বি ঝিম মেরে পড়ে ছিলো। কিছুক্ষণ পর পর মিলির সাথে ফোনে কথা বলছিলো আর নানান দিকনির্দেশনা দিচ্ছিল। এসকল কর্মকাণ্ড শান্তভাবে সহ্য করা মুশকিল হয়ে পড়েছিলো আফজালের জন্য। তবুও মুখ ফুটে কিছু বলছিলনা।

 

অবশ্য নানান ঝক্কি ঝামেলা শেষ করে তারা বাসস্ট্যান্ডে গিয়ে পৌছাল। মিলি তার দুয়েকজন চাচাত ভাইবোন নিয়ে অপেক্ষা করছিলো। দেখা হওয়া মাত্রই রাব্বি আফজালের কথা বেমালুম ভুলে গেল। এ যেন এক সম্পূর্ন নূতন রাব্বি! কিসের বন্ধু আর কিসের প্রেম!...বাগাড়ম্বরপূর্ণ কথাবার্তাগুলো সহ্য করা মুশকিল হয়ে গেল।

 

-আমি কিন্তু সকালে উঠে আর এক সেকেণ্ড ও দেরী করবোনা।

-মাত্রইতো আসলাম, নূতন জায়গা, সকলের সাথে পরিচিত হয়ে নেই, ঘোরাফেরা করি তারপর না হয়..

-দেখ রাব্বি, আমরা এখানে সম্পূর্ন অপরিচিত জায়গায় বেড়াতে এসেছি তার উপর চেনা নেই, জানা নেই একটি মেয়ের বাড়িতে এভাবে হুট করে উঠে আসা..

-আসলে এখনো তুই অনেক ছেলেমানুষ রয়েছিস, এগুলো কোন ব্যাপার নয়।

রাব্বির কথামতো আফজাল সত্যিই ছেলে মানুষ প্রমানিত হয়েছিলো আরো অনেক দিন পর যখন জানতে পেরেছিলো বিয়ের নামে, নিজের ইঞ্জিনিয়ার পরিচয়ের আড়ালে সে কতো টাকা মানুষদের নিকট থেকে হাতিয়ে নিয়েছে। বেকুব বনে গিয়েছিল সে যখন শুনলো বেশ কিছুদিন যাবত ঐতী তাকে খুঁজে চলেছে....

 

 (চলবে)

 

 

 

**********

৩০ শে আশ্বিন, ১৪২০

মতিঝিল, ঢাকা।

০ Likes ২ Comments ০ Share ৯৩৬ Views

Comments (2)

  • - নীল সাধু

    ক্লাসিক চিঠি দেখি

    দারুণ আবেগী - ভালোবাসাময় লেখা।

    আমি মুগ্ধ - 

    ধন্যবাদ কবি সাব।

    • - নীল সাধু

      লজ্জা পাবেন কেন?

      সত্যি সুন্দর একটি চিঠি।

    • Load more relies...
    - আলভিনা চৌধুরী

      অনেক ধইন্যবাদ নীল দা ! 

    ক্লাসিক শুইনা লজ্জা পাইতেছি ! 

    - ইকবাল মাহমুদ ইকু

    দারুন লাগলো 

    • - আলভিনা চৌধুরী

      thanku !  

    Load more comments...