Site maintenance is running; thus you cannot login or sign up! We'll be back soon.

সুলতানা সাদিয়া

১০ বছর আগে

আরশির গোপন কথা

সকাল থেকেই খুব চিন্তায় আছে আরশি। চিন্তা বলে চিন্তা! চিন্তার সাথে সাথে পেটের ভেতর কেমন করছে। আবার গলার ভেতরটাও কেমন করছে। সব নষ্টের গোড়া হচ্ছে দাদী। দাদীর অদ্ভুত সব কথা। দাদী যদি কথাটা না বলত তাহলে তো আরশির মাথায় এত সব চিন্তা ঢোকে না। দাদীর সাথে আরশির আড়ি আবার মহা ভাবও। এখন রাতে আরশি দাদীর সাথেই ঘুমায়। দাদীর একটা আলাদা ঘর আছে আরশিদের বাসায়। রাতের বেলা ঘুমোতে আসলেই দাদীর রাজ্যের গল্প। রোজ রোজ এত নতুন গল্প দাদী কোথা থেকে যে পায়! শুধু কী গল্প? দাদী অনেক ধাঁধাও বলে। আরশি অনেক ধাঁধা শিখে ফেলেছে। সেসব ধাঁধা যেমন মজার তেমন আজগুবি। তাও আবার বিশ্বাসও করতে হয়। দাদীতো আর মিথ্যে বলে না।

আরশ ভাইয়াকে বলবে নাকি কথাটা? যদি হাসে? ভাইয়ার তো সব কিছুতেই হাসি পায়। সবকিছুতে না। আরশি যেসব কাজ করে বা যেসব প্রশ্ন করে সেই সবে হাসি পায়। আরশ ওর চেয়ে চার বছরের বড়। ক্লাস ফোরে পড়ে। তাই জানেও বেশি। কিন্তু আরশির কাজে হাসার কি হল? আর আরশ ভাইয়ার আরেকটা সমস্যা হল, সে কোনো কথাই গোপন রাখতে পারে না। সবাইকে বলে বেড়াবে। গোপন কথা শুধু মা গোপন রাখতে পারে। মা সমাধানও করে দেয় সব গোপন সমস্যার।

মা রান্নাঘরে। দুপুরের রান্না করছে। একবার মায়ের কাছে গেলে কেমন হয়? নাকি আবার দাদীর কাছে যাবে? দাদীই তো সমস্যা তৈরি করেছে। দাদীর কাছেই সমাধান থাকতে পারে। কিন্তু দাদীর সাথে তো এখন আড়ি। দাদী ওকে নিয়ে হেসেছে যে! নাহ্ তাহলে কাল স্কুলে শম্পাকে কথাটা বললেই হবে। শম্পার মাথায় অনেক বুদ্ধি। শম্পা আরশির চেয়ে লম্বায় আধা হাত লম্বা বেশি। তাই আরশির মনে হয় শম্পার বুদ্ধিও বেশি।

তাছাড়া শম্পাদের বাড়ির ছাদে অনেক বড় বাগান আছে। ও গাছ সম্পর্কে অনেক জানে। একবার আরশি গিয়েছিল শম্পার বাসায় মায়ের সাথে। আঙুর, পেয়ারা, বড়ই, করমচা, টমেটো, শাক সবজি সব রকম গাছই আছে শম্পাদের ছাদের বাগানে। বড় বড় ড্রামের ভেতর গাছ। ওদের নিজেদের বাড়িতো। তাই ওর বাবা আর মালি মিলে বাগান করেছে। আরশিরা ভাড়া বাসায় থাকে। ছাদে কাপড় দেওয়া থেকে শুরু করে ঈদের চাঁদ দেখতে ছাদে যেতে হলেও বাড়িওয়ালা নানুর কাছ থেকে চাবি নিতে হয়। বাড়িওয়ালা নানু অবশ্য অনেক ভাল। আরশিকে খুব আদর করে। এই সেদিনও আরশিকে নিজের হাতে বানানো আমচুর আর আমসত্ব দিয়েছে। আরশির দাদীতো বেশি বুড়ো। কিছু বানাতে পারে না। দাঁত নেই, দাদীর তাই খেতেই কষ্ট!

আচ্ছা শম্পাকে একবার ফোন করে জিজ্ঞাসা করবে কী, কমলা গাছ দেখতে কেমন? তাহলে তো মাকেই বলতে হবে ফোন করে দাও। থাক তবে কাল সকালেই শম্পাকে জিজ্ঞাসা করবে। কিন্তু সকালের ভেতর যদি গাছ বের হয়ে যায়? ঘটনাটা খুব অবাক করা। সকালে নাস্তা খাওয়ার পর আরশি দাদীর সাথে বসে কমলা খাচ্ছিল আর দাদীকে নন্টে-ফন্টের গল্প শোনাচ্ছিল। দাদী যেমন আরশিকে গল্প শোনায়। আরশিও দাদীকে গল্প শোনায়। টম এ্যান্ড জেরি, নন্টে ফন্টে, বাটুলদা আর কেল্টুদার গল্প। বাবা অবশ্য অফিসে যাবার আগে একবার বলে গেল, মামণি খাওয়ার সময় কথা বলো না। কিন্তু দাদীর আগ্রহে কেল্টুদার গুপ্তধনের গল্পটা বলছিল। বড়দের কী এক পরীক্ষার জন্য আজ স্কুল ছুটি। কমলা খেতে খেতে গল্পটা বলতে বেশ মজা লাগছিল।  

বাবার কথাই ঠিক। খাওয়ার সময় কথা বলতে নেই। আরশি কমলা খাওয়ার সময় বকবক করছিল বলেই তো কমলার বিচি টপ করে পেটের ভেতর চলে গেল। দাদী তো মাথায় হাত দিয়ে বসল।

-কি হবে রে আরশি? বিচি তো পেটের ভেতর গেল। এখন তো গলা দিয়ে কমলা গাছ বের হবে।

-দুর দুর... তোমার সব মিথ্যে কথা।

-মিথ্যা নারে। ছোট বেলায় আমার পেটে একবার জলপাই এর বিচি ঢুকে গিয়েছিল। এরপর মুখ দিয়ে জলপাই গাছ বের হয়েছিল।

-ধ্যাত! সেইগাছ কোথায় গেল?

-আমার বাবা টেনে তুলে ফেলল তো।

দাদী ফোকলা দাঁতে মিট মিট করে হাসছিল আরশির বিপদ দেখে। তখন আরশি পাত্তা দেয়নি দাদীর কথা। কিন্তু সময় যাচ্ছে আর ওর চিন্তা বাড়ছে। গোপন কথা বেশিক্ষণ চেপে রাখতে পারে না আরশি। তার উপর আবার চিন্তার কথা!

 

দুপুরে ভাত খাওয়ার পর আরশি মায়ের সাথে শুয়ে আছে। মায়ের গায়ে কেমন দুধ দুধ গন্ধ। আরশি মায়ের বুকে মুখ গুঁজে দিয়ে চুপ করে আছে। মা চুল নেড়ে দিচ্ছে। মায়ের আঙ্গুলের আদরে ওর ঘুম পাচ্ছে। আস্তে আস্তে সব টেনশন পালিয়ে যাচ্ছে। মাকে সব বলা যায়। আরশি আর থাকতে পারে না। মাকে কথাটা বলেই ফেলে,

-মা একটা গোপন কথা বলি?

মা আরশিকে আরও কাছে টেনে নেয়,

-কী গোপন কথা মা?

আরশি ফিসফিস করে বলে,

-মা... কমলার বিচি গিলে ফেললে কি হয়? পেটের ভেতর গাছ হয়? সেই গাছ মুখ দিয়ে বের হয়?

মা আরশির চিন্তিত মুখ দেখে হেসে ফেলে।

-কে বলেছে? দাদী?

-হুম!

-তবে যে বাবা সেদিন খেজুর বিচি গিলে ফেলল? এতদিনে তো আমাদের খেজুরের অভাব হতো না! বাবার মুখের সামনে যেয়ে হাত পাততাম আর টুপ করে খেজুর পেড়ে খেয়ে ফেলতাম। আমার বোকা মেয়ে!

ইস্ আরশি তো সত্যিই বোকা। মার গলা শক্ত করে জড়িয়ে ধরে আবদার করে আরশি,

-মা এই গোপন কথাটা কাউকে বলোনা কিন্তু! ভাইয়াকেও না!

মা আরশিকে আদর করে বলে,

-আচ্ছা বুড়ি। এখন ঘুমো।

মায়ের আঙুল আরশির চুলে খেলা করতে থাকে আর আবেশে আরশির দু’চোখের পাতা বন্ধ হয়ে যায়।

(আমার মেয়েটা ঠিক এমন টেনশনেই ছিল সেদিন!!!)

০ Likes ২৫ Comments ০ Share ৭৮৯ Views

Comments (25)

  • - তাহমিদুর রহমান

    বিটিবি = বিটিভি

    • - কে,এইচ, মাহা বুব

      এখন ওটা বই তিবি হয়ে গেছে ।আশা করি নিয়মিত দেখবেন , মন্তব্য করার জন্য ধন্যবাদ , ভালো থাকবেন ।

    - চারু মান্নান

    কবি, পৌষ শীতে শুভেচ্ছা!!

    • - কে,এইচ, মাহা বুব

      আপনাকে ও শীতের সুভেচ্ছে । আশা করি নিয়মিত দেখবেন , মন্তব্য করার জন্য ধন্যবাদ , ভালো থাকবেন ।

    - সনাতন পাঠক

    সুন্দর লিখেছেন, শুভেচ্ছা

    • - কে,এইচ, মাহা বুব

      আপনাকে ও শুভেচ্ছা । আশা করি নিয়মিত দেখবেন , মন্তব্য করার জন্য ধন্যবাদ , ভালো থাকবেন ।

    Load more comments...