Site maintenance is running; thus you cannot login or sign up! We'll be back soon.

আমার বাচ্চাবেলা

আমি যখন সাড়ে ৭ বছর বয়সে কেজি ২ এর ছাত্র ছিলাম চট্টগ্রামের ইস্পাহানী পাবলিক স্কুল এন্ড কলেজে তখন আমি আর আম্মা নানা নানুর সাথে থাকতাম। আব্বা চাকরি সুত্রে ছিলেন টেকনাফে, আমার ছোট ভাই তখনও পয়দা হয়নি। 

 

তখন আমার খালার ছেলে হল, আমার ছোট ভাই টাই তখন ছিল না বলে ওকে খুব আদর করতাম[ আরে ওই সময় বুঝতে পারি নাই যে ছোটরা কত্ত ভয়ানক]।

ত  তাইছির[আমার খালাত ভাই] এর জন্মের পর পুরা বাসা জুড়ে এক রমরমা অবস্থা। আত্মীয়স্বজন, পাড়াপ্রতিবেশী সবাই ওকে দেখতে আসছে আর আসলেই কিছু না কিছু সঙ্গে আনছে। আমার কাছে সেগুল ছিল নতুন অভিজ্ঞতা।

 

কিছুদিন পর খেয়াল করলাম খালা ওকে কার্টুন আঁকা একটা সাদা প্লাস্টিকের বোতলে দুধ খাওয়াচ্ছে। আমি জিজ্ঞেস করলাম, "খালামনি, এটা কি জিনিসে করে দুধ খাওয়াচ্ছ?"। 

প্রথমবারের মত জানতে পারলাম ঐটার নাম ফিডার, বাচ্চাদের দুধ খাওয়াই ওটা দিয়ে। সেই সাথে আরও জানলাম যে বাচ্চা থাকতে আমাকে ফিডারে করে দুধ খাওয়ানো হয় নাই[ কেন হয় নাই আজও জানি না, আমার জন্মের পরের অনেক ইতিহাসই আমি জানি না]।

শুনে তো আমার মেজাজ খারাপ হয়ে গেল। ঐ বয়সে আমি খুবই জ্বালাইতাম সবাইকে। কান্নাকাটি শুরু করে দিলাম যে আমিও ফিডারে করে দুধ খাবো নাহলে বাবু[খালাত ভাই] কেউ খাওয়াতে দিব না। যেই বলা সেই কাজ, আমি ওর বোতল লুকিয়ে রাখতে শুরু করলাম। ওদিকে বাবু কান্নাকাটিতে অস্থির। অবশেষ সমস্যার সমাধান হল। আমি আম্মার সাথে শপিং মলে গেলাম নিজের জন্য ফিডার কিনতে। সেলসম্যান জিজ্ঞেস করল বাচ্চার বয়স কত? আম্মা তো লজ্জায় মরে যাচ্ছেন আমি বললাম আমার জন্য। সেলসম্যানের চেহারা তখন দেখার মত হল। আম্মা জলদি করে একটা ফিডার কিনে বের হয়ে এলেন দোকান থেকে। এরপর থেকে শুরু হল আমার নতুন রুটিন। প্রতিদিন সকালে স্কুলে যাওয়ার আগে ফিডারে করে এক বোতল দুধ খেতাম। অভিনয় করতাম একদম “দুধের শিশু”র মত করে মায়ের কোলে শুয়ে শুয়ে। আমার এই কান্ডে বাসায় ধুম পরে গেল হাসাহাসির। এভাবেই চলতে লাগলো বেশ কিছুদিন। ১৫-২০ দিন পর আমি অসুস্থ হয়ে পরলাম, পেট খারাপ হল। পেটে ব্যাথার বেশ কষ্টে কান্না করতে লাগলাম। আমাকে তখন সবাই শুনিয়ে শুনিয়ে বলতে লাগলো “বুড়া বয়সে ফিডার খেলে পেট তো খারাপ করবেই”। কথাটা কেন যেন আমার মাথায় ঢুকে গেল। এরপর থেকেই ফিডার দেখলেই ভয় পেতে শুরু করলাম, ফিডার খাওয়াতও দূরে থাক।

যায় হোক বেশ কিছুদিন আমার মধ্যে “ফিডারভীতি” কাজ করেছিল। অনেক পরে জানতে পেরেছিলাম যে আসলে ঐটা ছিল একটা “চক্রান্ত”। ফিডারের কোন দোষ ছিল না আমার অসুস্থতায়। মা খালাদের উপর খুব রাগ হয়েছিল কিন্তু ফিডারের উপর নিজের আগ্রহও হারিয়ে ফেলেছিলাম। এভাবেই শেষ হয়ে গিয়েছিল “একটি ৮ বছরের শিশুর ফিডার প্রেমের কাহিনি”।

০ Likes ৩ Comments ০ Share ৭১০ Views