ব্রিটিশ মিউজিয়ামে মিশরীয় গ্যালারিতে রাখা Rosetta Stone
আমি যতবার ব্রিটিশ মিউজিয়ামে গিয়েছি কি এক অদ্ভুত কারনে সকল ভ্রমনেই আমি প্রথমেই চলে গেছি Egyptian gallery’তে। এটা যে শুধু আমার ক্ষেত্রে হয়েছে তা কিন্তু নয়। বরং ব্রিটিশ মিউজিয়াম নিয়ে ঘাঁটাঘাঁটি করতে গিয়ে যে সকল স্কলারদের বই পড়েছি সকলেই একই কথা বলেছেন। এই গ্যালারিতে রাখা হয়েছে বেশ কিছু ফেরাউনের মমি এবং কফিন। এখানেই রাখা হয়েছে আল কোরআনে উল্ল্যেখিত ফেরাউন Ramesses II এর মূর্তি যাকে কিনা আল্লাহ্ পানিতে ডুবিয়ে মেরেছিলেন। যার লাশ বর্তমানে মিসরের মিউজিয়ামে সংরক্ষিত আছে। আছে হাজার বছরের পুরাতন অসংখ্য অবজেক্ট। আছে Rosetta stone!
ব্রিটিশ মিউজিয়ামে যে কয়টি অবজেক্ট দেখার জন্যে পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্ত থেকে মানুষ ছুটে আছে Rosetta stone তার অন্যতম। শুধু যে পর্যটকরা আসেন তা কিন্তু নয় আসেন বিশ্বজোড়া সব স্কলাররাও। এটি ব্রিটিশ মিউজিয়ামের Egyptian gallery’র চার নাম্বার কক্ষে রাখা হয়েছে।
১৭৯৯ সালে নেপলিয়ান যখন আলেকজান্ডারের মিসর দখল করেন তখন স্বাভাবিক ভাবেই বেশ কিছু দুর্গ মেরামতের প্রয়োজন পড়ে। এরকম একটি দুর্গ মেরামতের সময় একজন ফরাসি সৈনিক এটি আবিষ্কার করেন। পরে তিনি এটি ভাল ভাবে লক্ষ্য করে গ্রিক ভাষা দেখতে পান। সৈনিক গ্রিক পড়তে পারতেন। তবে পাথরটিতে গ্রিকের পাশাপাশি আরও দুইটি ভাষার ব্যাবহার দেখে তিনি অবাক হন। সৈনিক পাথরটি যে জায়গায় আবিষ্কার করেছিলেন তা নীল নদের পাশের ছোট একটি গ্রাম নাম তার “আল- রাশিদ”! সেই আল-রাশিদ থেকেই এর নাম দেয়া হয় Rosetta stone।
দুর্লভ এই পাথর আবিস্কারের খবর তখন দ্রুত ইউরুপে ছড়িয়ে পড়লে হঠাৎ করেই ইংরেজরা আক্রমন করে বসে ফরাসিদের দখলকৃত মিশরে। তার পর ১৮০১ সালে ফরাসিদের কাছ থেকে ইংরেজরা অনেকটা জোর করে চিনিয়ে নিয়ে আসে Rosetta stone সহ বেশ কিছু মুল্যবান অবজেক্ট।
১৮০২ সাল থেকেই এটি ব্রিটিশ মিউজিয়ামে প্রদর্শনের জন্যে রাখা হয়। তবে প্রথম বিশ্ব যুদ্ধের সময়ে ব্রিটিশ মিউজিয়াম জার্মান বোমা হামলার শিকার হতে পারে ভেবে মিউজিয়ামের অন্যান্য অবজেক্টের সাথে এটিও মিউজিয়ামের পাশে ভূমি থেকে প্রায় ৫০ ফিট নিচে postal tube station’এ লুকিয়ে রাখা হয়েছিল। এছাড়া ১৯৭২ সালে এটি পেরিসে প্রদর্শনের জন্যে (এক মাস) নিয়ে যাওয়া হয়।
Rosetta stone পৃথিবীর প্রাচীনতম ভাষার নিদর্শন। এটি তৈরি করা হয়েছিল ১৯৬ খ্রিষ্টপূর্বে তৎকালীন মিসরের ফেরাউন Ptolemy V এর শাসনকালের প্রথম বর্ষ পূর্তি উপলক্ষ্যে। এটিতে দুটি ভাষার মোট তিন ধরনের বর্ণমালা ব্যাবহার করে Ptolemy V রাজ্যের সকল পজা ও ধর্ম যাজকদের জন্যে যেসকল ভাল কাজ করেছেন তার গুণকীর্তন করা হয়েছে।
যদিও পাথরটি সম্পূর্ণ পাওয়া যায়নি, তবুও গবেষকরা নিশ্চিত করেছেন পাথরটিতে প্রথমে hieroglyphs ব্যাবহার করে লিখা হয়েছে। তৎকালীন মিশরে গুরুত্বপূর্ণ দলিল বা ধর্মীয় কোন কিছু লিপিবদ্ধ করতে এটি ব্যাবহার করা হত। এর পরে ব্যাবহার করা হয়েছে demotic যা তৎকালীন সময়ে সাধারণ মানুষ ব্যবহার করত এবং সব শেষে ব্যাবহার করা হয়েছে Greek যেটি তৎকালীন মিসরের শাসক শ্রেণীর ভাষা ছিল। Rosetta stone’এ এই তিন ধরনের ভাষা ব্যাবহার করা হয়েছিল কারন তৎকালীন মিশরে এই তিন ধরনের ভাষার ব্যাবহার ছিল। তবে দুটি ভাষার তিনটি স্ক্রিপ্ট ব্যাবহার করা হলেও ভিন্ন স্ক্রিপ্টে একই কথাই লিপিবদ্ধ করা হয়েছে।
ব্রিটিশ মিউজিয়ামের কিংস লাইব্রেরিতে রাখা রেপ্লিকা
ইতিহাস ঘাঁটলে জানা যায় শুরুর দিকে বিশেষ ব্যাবস্থায় পাথরটি পর্যটকদের জন্যে ছুয়ে দেখার ব্যাবস্থা রাখা ছিল। তবে বর্তমানে মূল পাথরটি গ্লাসের ভিতরে সংরক্ষন করে রাখা হয়েছে। পাশাপাশি পর্যটকদের ছুঁয়ে দেখার জন্যে রাখা হয়েছে একটি রেপ্লিকা।
এছাড়া ২০০৩ সালে ব্রিটিশ মিউজিয়ামের ২৫০ বছর পূর্তি উপলক্ষ্যে মিশর সরকার পাথরটি মিসরের কাছে ফিরিয়ে দেবার আমন্ত্রণ জানায়। আমন্ত্রণ পত্রে লিখা হয়, "If the British want to be remembered, if they want to restore their reputation, they should volunteer to return the Rosetta Stone because it is the icon of our Egyptian identity"। একই ভাবে মিশর সরকার বেশ কয়েকবার বিভিন্ন মেয়াদে এটি লোণ চেয়েও আবেদন করে।
তবে ২০০৫ সালে ব্রিটিশ সরকার মিশর সরকারকে একটি রেপ্লিকা প্রদান করে যা বর্তমানে আল- রাশিদ’এ জাদুঘরের সামনে প্রদর্শনের জন্যে রাখা হয়েছে।
আমি যতবার ব্রিটিশ মিউজিয়ামে গিয়েছি কি এক অদ্ভুত কারনে সকল ভ্রমনেই আমি প্রথমেই চলে গেছি Egyptian gallery’তে। এটা যে শুধু আমার ক্ষেত্রে হয়েছে তা কিন্তু নয়। বরং ব্রিটিশ মিউজিয়াম নিয়ে ঘাঁটাঘাঁটি করতে গিয়ে যে সকল স্কলারদের বই পড়েছি সকলেই একই কথা বলেছেন। এই গ্যালারিতে রাখা হয়েছে বেশ কিছু ফেরাউনের মমি এবং কফিন। এখানেই রাখা হয়েছে আল কোরআনে উল্ল্যেখিত ফেরাউন Ramesses II এর মূর্তি যাকে কিনা আল্লাহ্ পানিতে ডুবিয়ে মেরেছিলেন। যার লাশ বর্তমানে মিসরের মিউজিয়ামে সংরক্ষিত আছে। আছে হাজার বছরের পুরাতন অসংখ্য অবজেক্ট। আছে Rosetta stone!
ব্রিটিশ মিউজিয়ামে যে কয়টি অবজেক্ট দেখার জন্যে পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্ত থেকে মানুষ ছুটে আছে Rosetta stone তার অন্যতম। শুধু যে পর্যটকরা আসেন তা কিন্তু নয় আসেন বিশ্বজোড়া সব স্কলাররাও। এটি ব্রিটিশ মিউজিয়ামের Egyptian gallery’র চার নাম্বার কক্ষে রাখা হয়েছে।
১৭৯৯ সালে নেপলিয়ান যখন আলেকজান্ডারের মিসর দখল করেন তখন স্বাভাবিক ভাবেই বেশ কিছু দুর্গ মেরামতের প্রয়োজন পড়ে। এরকম একটি দুর্গ মেরামতের সময় একজন ফরাসি সৈনিক এটি আবিষ্কার করেন। পরে তিনি এটি ভাল ভাবে লক্ষ্য করে গ্রিক ভাষা দেখতে পান। সৈনিক গ্রিক পড়তে পারতেন। তবে পাথরটিতে গ্রিকের পাশাপাশি আরও দুইটি ভাষার ব্যাবহার দেখে তিনি অবাক হন। সৈনিক পাথরটি যে জায়গায় আবিষ্কার করেছিলেন তা নীল নদের পাশের ছোট একটি গ্রাম নাম তার “আল- রাশিদ”! সেই আল-রাশিদ থেকেই এর নাম দেয়া হয় Rosetta stone।
দুর্লভ এই পাথর আবিস্কারের খবর তখন দ্রুত ইউরুপে ছড়িয়ে পড়লে হঠাৎ করেই ইংরেজরা আক্রমন করে বসে ফরাসিদের দখলকৃত মিশরে। তার পর ১৮০১ সালে ফরাসিদের কাছ থেকে ইংরেজরা অনেকটা জোর করে চিনিয়ে নিয়ে আসে Rosetta stone সহ বেশ কিছু মুল্যবান অবজেক্ট।
১৮০২ সাল থেকেই এটি ব্রিটিশ মিউজিয়ামে প্রদর্শনের জন্যে রাখা হয়। তবে প্রথম বিশ্ব যুদ্ধের সময়ে ব্রিটিশ মিউজিয়াম জার্মান বোমা হামলার শিকার হতে পারে ভেবে মিউজিয়ামের অন্যান্য অবজেক্টের সাথে এটিও মিউজিয়ামের পাশে ভূমি থেকে প্রায় ৫০ ফিট নিচে postal tube station’এ লুকিয়ে রাখা হয়েছিল। এছাড়া ১৯৭২ সালে এটি পেরিসে প্রদর্শনের জন্যে (এক মাস) নিয়ে যাওয়া হয়।
Rosetta stone পৃথিবীর প্রাচীনতম ভাষার নিদর্শন। এটি তৈরি করা হয়েছিল ১৯৬ খ্রিষ্টপূর্বে তৎকালীন মিসরের ফেরাউন Ptolemy V এর শাসনকালের প্রথম বর্ষ পূর্তি উপলক্ষ্যে। এটিতে দুটি ভাষার মোট তিন ধরনের বর্ণমালা ব্যাবহার করে Ptolemy V রাজ্যের সকল পজা ও ধর্ম যাজকদের জন্যে যেসকল ভাল কাজ করেছেন তার গুণকীর্তন করা হয়েছে।
যদিও পাথরটি সম্পূর্ণ পাওয়া যায়নি, তবুও গবেষকরা নিশ্চিত করেছেন পাথরটিতে প্রথমে hieroglyphs ব্যাবহার করে লিখা হয়েছে। তৎকালীন মিশরে গুরুত্বপূর্ণ দলিল বা ধর্মীয় কোন কিছু লিপিবদ্ধ করতে এটি ব্যাবহার করা হত। এর পরে ব্যাবহার করা হয়েছে demotic যা তৎকালীন সময়ে সাধারণ মানুষ ব্যবহার করত এবং সব শেষে ব্যাবহার করা হয়েছে Greek যেটি তৎকালীন মিসরের শাসক শ্রেণীর ভাষা ছিল। Rosetta stone’এ এই তিন ধরনের ভাষা ব্যাবহার করা হয়েছিল কারন তৎকালীন মিশরে এই তিন ধরনের ভাষার ব্যাবহার ছিল। তবে দুটি ভাষার তিনটি স্ক্রিপ্ট ব্যাবহার করা হলেও ভিন্ন স্ক্রিপ্টে একই কথাই লিপিবদ্ধ করা হয়েছে।
ব্রিটিশ মিউজিয়ামের কিংস লাইব্রেরিতে রাখা রেপ্লিকা
ইতিহাস ঘাঁটলে জানা যায় শুরুর দিকে বিশেষ ব্যাবস্থায় পাথরটি পর্যটকদের জন্যে ছুয়ে দেখার ব্যাবস্থা রাখা ছিল। তবে বর্তমানে মূল পাথরটি গ্লাসের ভিতরে সংরক্ষন করে রাখা হয়েছে। পাশাপাশি পর্যটকদের ছুঁয়ে দেখার জন্যে রাখা হয়েছে একটি রেপ্লিকা।
এছাড়া ২০০৩ সালে ব্রিটিশ মিউজিয়ামের ২৫০ বছর পূর্তি উপলক্ষ্যে মিশর সরকার পাথরটি মিসরের কাছে ফিরিয়ে দেবার আমন্ত্রণ জানায়। আমন্ত্রণ পত্রে লিখা হয়, "If the British want to be remembered, if they want to restore their reputation, they should volunteer to return the Rosetta Stone because it is the icon of our Egyptian identity"। একই ভাবে মিশর সরকার বেশ কয়েকবার বিভিন্ন মেয়াদে এটি লোণ চেয়েও আবেদন করে।
তবে ২০০৫ সালে ব্রিটিশ সরকার মিশর সরকারকে একটি রেপ্লিকা প্রদান করে যা বর্তমানে আল- রাশিদ’এ জাদুঘরের সামনে প্রদর্শনের জন্যে রাখা হয়েছে।
Comments (4)
খুব ভালো করে সাজিয়েছেন পোস্টটা। তাতে সবারই উপকার হবে।