কিছুদিন আগে (সম্ভবত ১৯ নভেম্বর-২০১৪) অফিসের একটা বিশেষ প্রয়োজনে ঢাকা গেলাম। কাজ শেষ করে সেদিন ফেরা হয়নি। পরদিন সকালে অফিস (আশুলিয়া) ধরতে সকালে ঘুম থেকে উঠেই রওনা হলাম। আব্দুল্লাহপুর এসে আশুলিয়ার গাড়িতে (মিনিবাস) উঠলাম। আমার সামনের সিটে ২৪-২৫ বছরের দুটি ছেলে-মেয়ে একসাথে ডাবল(টু) সিটে বসা। কথা শুনে যা বোঝা গেল, তাতে তারা ইউনিভার্সিটিতে একই সাথে পড়ালেখা করে, হয়তো খুব ভাল বন্ধুও হতে পারে কিংবা তার চেয়েও বেশিকিছু ! প্রথম দিকে খুব ভালই মনে হল দু’জনকে। কিছুদূর যেতেই তাদের কথাবার্তা ও আচরণ কিছুটা দৃষ্টিকটু মনে হতে লাগলো। গাড়িতে যে আরো মানুষজন আছে সেটা যেন মনেই হচ্ছিল না তাদের কাছে। একজন আরেকজনের হাতে হাত রেখে কথা বলছে, হাসাহাসি করছে। গাড়ির অনেকেই হয়তো সেটা লক্ষ্য করছিল।কিন্তু কিছুক্ষণ পর সেটা আরেকটু মাত্রা ছাড়িয়ে গেল। মেয়েটি প্রথম ছেলেটির কাঁধে মাথা রাখল। কিছুক্ষণ পর বিপরীতজনের একই কায়দায় দীর্ঘ সময় অতিবাহিত করা। ঘটনাগুলি গাড়ির অনেকেরই দৃষ্টিগোচর হয়েছে, অনেকে স্ত্রী বা সন্তানের সাথে বোধ করেছেন অস্বস্তি !!
না, এ ব্যাপারে আমার মত অনেকেই চোখের মধ্যে মেজাজের ঝালটা সীমাবদ্ধ রাখলেও কেউ কিছু বলেনি। কারণ, সবাই চাইলেই যেমন সভ্য হতে পারে না, তেমনি অনেকের পক্ষে চাইলেই অসভ্য আচরণ করা সম্ভব হয় না। এই কথায় মনে করতে পারেন আমি সভ্য সেটা প্রমাণ করতে চাচ্ছি। মোটেই না ! আমি সভ্য হওয়ার কারণে কিছু বলিনি এমনটা নয়, আমি আসলে পথে-ঘাঁটে ঝামেলা এড়িয়ে চলতেই একটু বেশি স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করি। আর তাই হয়তো কিছু বলতে গিয়েও কিছু বলা হয়ে উঠেনি।
অনেকের মনেই প্রশ্ন জাগতে পারে আমি এমন একটা বিষয় নিয়ে কেন লিখছি ?
সত্যিকার অর্থে কে কি করল, করছে বা করবে এটা যেমন তার ব্যক্তিস্বাধীনতা দ্বারা স্বীকৃত, তেমনি অন্যদের ব্যক্তিস্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ না করাটাও তার দায়িত্ব। গাড়িতে শুধু প্রাপ্তবয়স্ক ব্যক্তিরাই চড়ে না, গাড়িতে শিশু-কিশোররাও চড়ে, স্কুলের ছেলেমেয়ারাও চড়ে। তাছাড়া পাবলিক প্লেসে যেখানে সিগারেট খাওয়ার জন্য জরিমানার বিধান রাখা হয়েছে, সেখানে এ ধরনের আচরণ কতটা গ্রহণযোগ্য ? আজকের ছোট ছোট ছেলেমেয়েরা আমাদেরই ভাই-বোন। তাদের বেড়ে উঠার জন্য একটা নিরাপদ ও সভ্য পরিবেশ প্রয়োজন। কিন্তু পার্কের মত কিংবা বোটানিক্যাল গার্ডেনের মত যদি আমরা শিশুদের দৈনন্দিন ব্যবহার করার মত স্থানগুলোতেও অসামাজিক কথা বলি বা আচরণ করি তবে আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্মের কাছে আমরা আমেরিকার চেয়ে ভাল কোন সংস্কৃতির আশা করতে পারি কি ???
ছেলে-মেয়ে বন্ধুত্ব হতেই পারে ! এতে দোষের কিছু নেই ! কিন্তু এই বন্ধুত্ব কি আমার আপনার শিক্ষা, নৈতিকতা, মূল্যবোধ, চরিত্র সব কিছুকে ধুলোয় মিশিয়ে দেয়ার জন্য ? সামাজিক থেকে অসামাজিক তকমা গায়ে মাখার জন্য ?
নিশ্চয় নয় ! তবে আজ থেকে বন্ধুত্ব হোক বন্ধুত্বের মত, যেখানে বন্ধুত্বের রঙ থাকবে, ভালবাসা থাকবে, দুঃখ-কষ্টের ভাগাভাগি থাকবে। শুধু থাকবেনা নোংরামি কিংবা চরিত্রের কলুষতা! আর যদি বিশ্বাসের বলে সেরকম কিছুও থেকে থাকে সেটা যেন অন্তত অন্যের অস্বস্তির কারণ না হয় !
Comments (6)
মিষ্টির মতো সুন্দর লাগল আপনার স্মৃতিচরণ
অনেক শুভ কামনা আপু
ভাল লাগলো