Site maintenance is running; thus you cannot login or sign up! We'll be back soon.

প্রীতি রাহা

১০ বছর আগে

আন্তর্জাতিক নারী দিবস এবং আমরা

৮ মার্চ। আন্তর্জাতিক নারী দিবস। এবছর দিবসটির ১০৪তম বার্ষিকী। সমগ্র পৃ্থিবীতে এই দিনটিকে ব্যাপক উৎসাহ-উদ্দীপনার সাথে পালন করা হয়ে থাকে।

সেদিন ছিল ১৮৫৭ সালের ৮ মার্চ। যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কের একটি সূচ কারখানার নারী শ্রমিকরাদৈনিক শ্রম ১২ ঘন্টা থেকে কমিয়ে ৮ ঘন্টা করা, ন্যায্য মজুরি এবং কর্মক্ষেত্রে সুস্থ ওস্বাস্থ্যকর পরিবেশ নিশ্চিত করার দাবিতে সোচ্চার হয়েছিলেন। এতে একরক্তক্ষয়ী সংগ্রামের সূচনা হয়। এই আন্দোলনের করার অপরাধে গ্রেফতার হন বহু নারী। কারাগারে নির্যাতিত হন অনেকেই। তিন বছর পরে১৮৬০ সালের একই দিনে গঠন করা হয় 'নারী শ্রমিক ইউনিয়ন'। যুক্তরাষ্ট্রে ১৯০৮ সালে পোশাক ওবস্ত্রশিল্পের কারখানার প্রায় দেড় হাজার নারী শ্রমিক একই দাবিতে আন্দোলনকরেন। অবশেষে আদায় করে নেন দৈনিক আট ঘণ্টা কাজ করার অধিকার। ১৯১০ সালের এইদিনে ডেনমার্কের কোপেনহেগেনে অনুষ্ঠিত আন্তর্জাতিক সমাজতান্ত্রিক সম্মেলনেজার্মানির নেত্রী ক্লারা জেটকিন ৮ মার্চকে আন্তর্জাতিক নারী দিবস হিসেবেঘোষণা করেন। এরপর থেকেই সারা বিশ্বে দিবসটি আন্তর্জাতিক নারী দিবস হিসেবেপালিত হয়ে আসছে। জাতিসংঘ ১৯৭৫ সালে আন্তর্জাতিক নারীবর্ষে ৮ মার্চকেআন্তর্জাতিক নারী দিবস হিসেবে পালন করা শুরু করে। এর দু'বছর পর ১৯৭৭ সালেজাতিসংঘ দিনটিকে আনুষ্ঠানিকভাবে আন্তর্জাতিক নারী দিবস হিসেবে স্বীকৃতিদেয়।

পৃ্থিবীর অন্যান্য দেশের মত বাংলাদেশেও এই দিবসটি পালন করা হয়ে থাকে। কিন্তু শুধুই কি এটি মিটিং, মিছিলের মাঝে সীমাবদ্ধ রয়ে যাচ্ছে? সময়ের সাথে সাথে ইতিবাচক পরিবর্তন কি আসছে?

 

যুগ বদলেছে, দিন অনেকটা এগিয়েছে। কিন্তু নারীদের ভাগ্য পরিবর্তনের চাকাটা যেন বেশ মন্থর গতিতে চলছে। আজও নারীরা নারী থেকে মানুষ হতে পারেনি। অর্ধক মানুষ হয়েই রয়ে গেল, দিনবদল কি তবে শুধুই মুখের কথা? পৃথিবী সামনের দিকে এগোচ্ছে। আমরাও এগোতে চাই। কিন্তু নারীকে পেছনে ফেলে কি সামনে এগোনো সম্ভব? অন্ধকার যুগ থেকে বিজ্ঞানের হাত ধরে পৃথিবী এখন সভ্য হয়েছে। সভ্য সমাজ তৈরি হয়েছে, সেখাঙ্কার সামাজিক জীবেরাও সভ্য। আমরা সামাজিক জীব। আমরাও একটি সভ্য সমাজে বসবাস করি, কিন্তু আদৌ নিজেরা সভ্য কি? প্রশ্ন রয়ে যায়!

 

শিক্ষাই জাতীর মেরুদন্ড। শিক্ষা ছাড়া সত্যিই জীবন বৃথা। তবে কথায় আছে, ‘দুর্জন জ্ঞানী হলেও পরিত্যাজ্য’। ‘শিক্ষিত’ শব্দটির সাথে আট থেকে আশি সবাই পরিচিত। শিক্ষার আবার প্রকার আছে, যেমনঃ স্বল্পশিক্ষিত, উচ্চ শিক্ষিত ইত্যাদি। এখন কথা হল ‘শিক্ষিত’ এবং ‘স্বশিক্ষিত’ এই দুইয়ের মাঝে পার্থক্য কি? প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা থাকলেই একজন মানুষকে মুখস্থভাবে শিক্ষিত বলে উল্লেখ করা যায়। কিন্তু তার আচার-ব্যবহার এবং কাজে-কর্মে কোথাও যদি শিক্ষিতের ছাপ না থাকে তবে তাকে ‘অশিক্ষিত’ বলা যায়। অতএব, ‘শিক্ষাক্ষেত্রে প্রাতিষ্ঠানিক সনদপ্রাপ্ত সকল ব্যাক্তিই শিক্ষিত হতে পারে, কিন্তু সকল শিক্ষিতই স্বশিক্ষিত নয়’।

 

বেশ কয়েক বছর আগের ঘটনা। শিক্ষিত পরিবারের এক পুত্রবধূ যৌতুকের বলি হয়েছেন। তার শ্বাশুড়ি একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের উর্ধ্বতন কর্মকর্তা। সামাজিক মর্যাদার কথা যদি বলেন তবে সেখানেও উচ্চশ্রেণীর মানুষ তারা। এই মেয়েটিকে হত্যার পেছনে স্বামী, শ্বাশুড়ি, ননদ সবারই হাত ছিল। বিচার হয়নি, ধামা-চাপা পড়েছে সেই কবে।

 

নারীর ওপর নির্যাতন তো এখনই নতুন নয়। এখন টিভিতে আর পত্রিকায় দেখে এগুলো মানুষের কাছে নিত্যনৈমেত্তিক একটি ঘটনা হয়ে দাঁড়িয়েছে। বাংলাদেশে নারী নির্যাতনের পরিস্থিতি কি খুব একটা উন্নত হয়েছে? স্বাধীন দেশের একজন মানুষ হয়েও আজ নারীদের নিরাপত্তা খুঁজতে হয়। ঘর থেকে বাইয়ে, কোথায় নিরাপত্তা আছে নারীদের? ধর্ষণের জঘন্য হাত থেকে রেহাই মেলে না তিন বছরের শিশুর? সেদিন আরেকটি চাঞ্চল্যকর তথ্য জানতে পারলাম । ভারতীয় একটি এনজিও জরিপ করে দেখেছে, ৩ বছরের শিশু থেকে ৯৩ বছরের বৃদ্ধা পর্যন্ত ধর্ষণের শিকার হয়েছেন। এই তথ্যটি আমি জানলাম, ভারতের একটি চ্যানেলে প্রচারিত হওয়া অনুষ্ঠান থেকে। এই অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করছেন আমির খান, অনুষ্ঠানটির নাম ‘সত্যামেভ জয়তে’। এখান থেকে বোঝা যাচ্ছে, একজন শিশু যখন মেয়ে হয়ে জন্মগ্রহণ করছে তখন থেকেই তার নিরাপত্তাহীনতা শুরু। হায় দুনিয়া! হায় মানবজীবন!

 

 

বাংলাদেশেনারীনির্যাতনপরিস্থিতি বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, সময়ের সাথে সাথে নারী নির্যাতনের মাত্রা বেড়েছে।

বাংলাদেশের নারী নির্যাতনপরিস্থিতি বিষয়ে গবেষণা প্রতিবেদন-২০১২ প্রকাশ করেছে বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ। ১৫১পৃষ্ঠার এই বইটির প্রকাশকাল নভেম্বর’১৩।

 

বইতে ২০১২সালের ১৪টিজাতীয় দৈনিক পত্রিকায় প্রকাশিত নারী নির্যাতন বিষয়ক ঘটনাগুলোর তথ্যসংগ্রহ ও বিশ্লেষণ করা হয়েছে। বিশ্লেষণে নির্যাতনের ধরন, নির্যাতনের শিকার নারীর বয়স, পেশা, শিক্ষাগতযোগ্যতা, নির্যাতনকারীর পরিচয়, নির্যাতনের প্রভাব, জনসমাজে নির্যাতনের প্রতিক্রিয়া, আইনের অবস্থানসহ বিভিন্ন দিক বিশ্লেষণ করা হয়েছে। তিনটি অধ্যায়ে ভাগ করে কয়েকটি পরিচ্ছেদে উপস্থাপিত হয়েছে বিভিন্ন বিষয়। এই গবেষণায় নির্যাতনকে দশ ভাগে ভাগ করা হয়েছে। এর মধ্যে নির্যাতনের অন্যতম ধরন যৌনহয়রানিকে পাঁচভাগে ভাগ করা হয়েছে। সর্বমোট ১৫ ধরনের নারীনির্যাতন বিষয়ে তথ্য উপস্থাপন ও বিশ্লেষণ করা হয়েছে।

দ্বিতীয় অধ্যায় তথ্য উপস্থাপনে দেখা গেছে২ ০১২ সালে নারীনির্যাতনের ঘটনা ঘটেছে মোট২৫১৩টি, যেখানে পারিবারিক নির্যাতনের ঘটনা ১২%, যৌনহয়রানি, নিপীড়ন ও নির্যাতনের ঘটনা ঘটেছে প্রায় ৪৭%, বিভিন্ন কারণে নারীকে হত্যার ঘটনা ঘটেছে ৮.৩১%, এসিড নিক্ষেপের ঘটনা ৪.৬৫%, ফতোয়ার ঘটনা১.৬৯%, অপহরণের ঘটনা ৪.৩৭৫% পাচারের ঘটনা ঘটেছে ৩.৩৯%। নারীনির্যাতনের যত ঘটনা ঘটেছে তার প্রায় অর্ধেক হচ্ছে শিশু অর্থাৎ ১৮বছরের কম। সংরক্ষিত তথ্য টেবিল, ছক, পাইচার্টবালাইনের মাধ্যমে উপস্থাপন করা হয়েছে। প্রতিটি বিষয়ে বেশ কিছু কেসস্টাডি দেওয়া হয়েছে। তৃতীয় অধ্যায়ে তথ্যবিশ্লেষণও ফলাফলে বলাহয়, পিতৃতান্ত্রিক দৃষ্টিভঙ্গির চরমবহিঃপ্রকাশ ঘটেনারীর প্রতিসহিংস তার ঘটনার মধ্যদিয়ে। এই নির্যাতন প্রতিরোধে বেশ কিছু সুপারিশ উল্লেখ করা হয়।

 

জরিপ দেখলে আতকে ওঠে মন। নারী কি মানুষ হবে না! নারী কি অর্ধ মানুষ হয়েই রয়ে যাবে? দুঃখের বিষয় নারীরাও নারীদের শত্রু হয়ে দাঁড়ায় কখনো কখনো। নারী নির্যাতনের কেস স্টাডি করলে লক্ষ করা যাবে, শ্বাশুড়ি ও ননদ দায়ী থাকবেনই। সর্বপ্রথম একজন নারীকে অপর আরেকজন নারীর পাশে দাঁড়াতে হবে। একের দুঃখ অপরকে বুঝতে হবে। হোক সে বউমা কিনবা ভাইয়ের বউ। চিন্তাগুলো প্রশস্ত করতে হবে, মনটাকে করতে হবে বিশাল। সমাধানের পথ খুঁজতে হবে, ভালবাসতে জানতে হবে। তবেই না সকলেরই মুক্তি মিলবে এই শৃঙখল থেকে।

 

১ Likes ৬ Comments ০ Share ৫১০ Views

Comments (6)

  • - সুলতানা সাদিয়া

    ঘটনার আরেকটু ব্যাপ্তি পাঠকমনে তৃপ্তি দিতো। শুভকামনা।

    • - ইকবাল মাহমুদ ইকু

       ধন্যবাদ আপনার মুল্যবান মন্তব্যের জন্য :) শুভকামনা রইলো । ভালো থাকবেন 

    - সকাল রয়

    আরেকটু খোলতাই হলো কিন্তু সার্থক হতো

    • - ইকবাল মাহমুদ ইকু

       ধন্যবাদ পরবর্তী তে চেষ্টা করব :) শুভকামনা রইলো । ভালো থাকবেন 

    - মোঃসরোয়ার জাহান

    khub valo laglo

    • - ইকবাল মাহমুদ ইকু

       ধন্যবাদ আপনাকে :) 

    Load more comments...