Site maintenance is running; thus you cannot login or sign up! We'll be back soon.

আজ ১৬ অক্টোবর, ৩৪তম বিশ্ব খাদ্য দিবসঃ ‘পারিবারিক কৃষি: প্রকৃতির সুরক্ষা, সবার জন্য খাদ্য’ এবারের প্রতিপাদ্য


আজ ১৬ অক্টোবর, ৩৪তম বিশ্ব খাদ্য দিবস। একটি দেশের নাগরিকগণের মৌলিক চাহিদাগুলোর মধ্যে খাদ্য অন্যতম। সারা বিশ্বের মানুষের প্রয়োজনীয় খাদ্যের নিরাপত্তা, দরিদ্রতা ও পুষ্টিহীনতা দূর করে ক্ষুধামুক্ত পৃথিবী গড়ার অঙ্গিকার নিয়ে ১৯৪৫ সনের ১৬ অক্টোবর জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থা প্রতিষ্ঠিত হয়। ১৯৭৯ সালে বিশ্ব খাদ্য ও কৃষি সংস্থার (FAO) ২০তম সাধারণ সভায় হাঙ্গেরির তৎকালীন খাদ্য ও কৃষি মন্ত্রী ড. প্যাল রোমানী বিশ্বব্যাপী এই দিনটি উদযাপনের প্রস্তাব উত্থাপন করেন। এরপর ১৯৮১ সনে প্রথম আনুষ্ঠানিকতা আর প্রতিপাদ্যভিত্তিক বিশ্ব খাদ্য দিবসের উদযাপন শুরু হয়। বিশ্ব খাদ্য দিবস উপলক্ষে ১৯৮১ সালের ৩১ ডিসেম্বর বাংলাদেশ ডাক বিভাগ ৫০ পয়সা মূল্যমানের একটি ডাকটিকেট অবমুক্ত করে। টিকিটটির নকশাকার ছিলেন আহমেদ এফ করিম। ১৯৮১ সাল থেকে বিশ্ব খাদ্য ও কৃষি সংস্থার প্রতিষ্ঠার দিনটিতে (১৬ অক্টোবর, ১৯৪৫) বিশ্বের ১৫০টিরও বেশি দেশে এই দিনটি গুরুত্ত্বের সাথে পালিত হয়ে আসছে। বিশ্ব খাদ্য দিবসে এ বছরের প্রতিপাদ্য ‘পারিবারিক কৃষি: প্রকৃতির সুরক্ষা, সবার জন্য খাদ্য’।

খাদ্য নিরাপত্তা বলতে জমিতে বীজ বপন ও পর্যাপ্ত ফসল ফলাতে বিশ্বব্যাপী কৃষকদের ক্ষমতায়ন, পশুসম্পদের কার্যকর পরিচর্যা ও মৎস্য আহরণপূর্বক তাদের উৎপাদিত এ খাদ্য যেসব মানুষের সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন তাদের কাছে পৌঁছানোর বিষয়টি নিশ্চিত করা। বিশ্ব খাদ্য সম্মেলন (১৯৯৬) অনুযায়ী খাদ্য নিরাপত্তা তখনই আছে বলে মনে করা হয় যখন সকল নাগরিকের সব সময়ের জন্যে যথেষ্ট পরিমাণে, নিরাপদ ও পুষ্টিকর খাদ্য প্রাপ্তির প্রত্যক্ষ ও অর্থনৈতিক নিশ্চয়তা থাকে যা তাঁদের সক্রিয় ও সুস্থ জীবন নিশ্চিতকরণের জন্যে সঠিক পরিমাণ খাদ্যের চাহিদা পূরণ করে। জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থার মতে, সব মানুষের কর্মক্ষম ও সুস্থ জীবন যাপনের জন্য প্রয়োজনীয় খাদ্য চাহিদার বিপরীতে পছন্দমতো পর্যাপ্ত নিরাপদ এবং পুষ্টিকর খাদ্য প্রাপ্তির বাস্তব ও আর্থিক ক্রয় ক্ষমতা থাকাই হচ্ছে খাদ্য নিরাপত্তা৷ খাদ্য নিরাপত্তা অর্জিত হয়েছে কিনা বোঝার উপায় হচ্ছে- জাতীয় পর্যায়ে পর্যাপ্ত খাদ্য সরবরাহ থাকবে, সময় ও অঞ্চলভেদে সরবরাহ স্থিতিশীল থাকবে ৷ অর্থাৎ খাদ্য নিরাপত্তার মূল বিষয় তিনটি যথাঃ (১) খাদ্যের সহজ প্রাপ্যতা (২) খাদ্যের সহজলভ্যতা (৩) স্বাস্থ্যকর ও পুষ্টিকর খাদ্য। অথচ বিশ্বে ১০০ কোটিরও বেশি মানুষের খাদ্য নিরাপত্তা নেই। তারা দিন কাটায় অর্ধাহার-অনাহারে। এক জরিপে দেখা যায়, ২০০৭ সাল থেকে এ পর্যন্ত ৬০টিরও বেশি দেশে খাদ্য নিয়ে দাঙ্গা হয়েছে। ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যা অধ্যুষিত এ পৃথিবীর ৬ বিলিয়ন মানুষের মধ্যে এখন ৮৫০ মিলিয়ন মানুষ খাদ্যের অভাবে দরিদ্রতার কষাঘাতে ধুঁকে মরছে।

বিশ্ব খাদ্য ও কৃষি সংস্থার মতে, বর্তমানে পৃথিবীর ২২টি দেশ খাদ্য নিরাপত্তা ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে। সাম্প্রতিককালে জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে সৃষ্ট খরা ও বন্যায় অনেক দেশের খাদ্য নিরাপত্তা হুমকির মুখে। বাংলাদেশ খাদ্য নিরাপত্তা ঝুঁকির দেশগুলোর মধ্যে অন্যতম।
খাদ্যনিরাপত্তায় বাংলাদেশের অবস্থান বেশ দুর্বল। এমনকি পিছিয়ে রয়েছে নেপাল ও মিয়ানমারের চেয়ে। খাদ্যনিরাপত্তায় বাংলাদেশের এ অবস্থান উঠে এসেছে যুক্তরাজ্যভিত্তিক দি ইকোনমিস্ট ইন্টেলিজেন্স ইউনিটের (ইআইইউ) সম্প্রতি প্রকাশিত ‘গ্লোবাল ফুড সিকিউরিটি ইনডেক্স ২০১৪’তে। প্রতিবেদনের তথ্যমতে, খাদ্যনিরাপত্তায় ১০৯ দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান ৮৮তম। ১০০-এর মধ্যে স্কোর ৩৬ দশমিক ৩। গত বছর ১০৭টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান ছিল ৮১ আর স্কোর ৩৭ দশমিক ৩। অর্থাৎ সূচকে অবস্থান পেছানোর পাশাপাশি স্কোরও কমেছে। এছাড়া এশিয়া-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের ২২টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান ২১তম। এমনকি নিম্ন আয়ের দেশগুলোর তুলনায়ও খাদ্যনিরাপত্তায় পিছিয়ে পড়ছে বাংলাদেশ। গত বছর নিম্ন আয়ের ২৪টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশ ছিল চতুর্থ। কিন্তু এবার সপ্তম স্থানে নেমে গেছে। খাদ্যনিরাপত্তায় উগান্ডা, কেনিয়া, তাজিকিস্তান, বেনিন, নেপাল ও মিয়ানমারেরও পরে বাংলাদেশ। বাংলাদেশে চালের ঘাটতি নেই। তবে অন্য সব খাদ্যশস্যই কমবেশি আমদানি করতে হয়। এছাড়া খাদ্য নিরাপত্তার অন্যান্য বিষয় যেমন সার্বজনীন খাদ্যসরবরাহ, পুষ্টিগুণ, ভেজালসহ সব সূচকেই অবস্থান বেশ খারাপ। এজন্য খাদ্যনিরাপত্তা সূচকে বাংলাদেশ পিছিয়ে পড়ছে। খাদ্যশস্যে বাংলাদেশের প্রবৃদ্ধিও ক্রমে কমছে। এটাও এর অন্যতম কারণ।

বাংলাদেশের আয়তন ১,৪৫,৫৭০ ব.কি. (৫৬,৯৭৭ ব.মা.) এবং বর্তমান জনসংখ্যা প্রায় ১৫.৮৫ কোটিরও বেশি। জনসংখ্যার ঘনত্ব প্রতি বর্গ কিলোমিটারে ১০৭৪.৫৪ জন! মাথাপিছু আয় মাত্র ৬৩৮ ডলার। মানব উন্নয়ন সূচক ০.৪৬৯ (HDI )। দেশের ৪০% মানুষ দারিদ্র সীমার নিচে অবস্থান করছে এবং ৪৬% শিশু অপুষ্টিতে ভুগছে । অর্থাৎ পরিমিত এবং পুষ্টিকর খাদ্য সরবরাহে আমরা চরমভাবে ব্যার্থ। বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচির ২০০৯ সালে পরিচালিত 'বাংলাদেশের খাদ্য নিরাপত্তা পরিস্থিতি\\' শীর্ষক এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, একজন মানুষকে সুস্থভাবে বেঁচে থাকতে ২ হাজার ২২২ ক্যালরি গ্রহণ করতে হয়। এর চেয়ে কম গ্রহণ করে জনগোষ্ঠীর সংখ্যা দেশে ৬ কোটি ১ লাখ। ১ হাজার ৮০০ ক্যালরির কম গ্রহণ করে এমন 'হতদরিদ্র'র (আলট্রাপুওর) সংখ্যা ১ কোটি ২০ লাখ। এমনকি ১ হাজার ৬০০ ক্যালরির কম গ্রহণ করে এমন 'চরম দরিদ্র'র (হার্ডকোর পুওর) সংখ্যা ৩ কোটি ১০ লাখ। এর বিপরীতে আছে আরেক চিত্র। কোন কোন ক্ষেত্রে দারিদ্র্য সামান্য কমলেও বাড়ছে শ্রেণী ও অঞ্চল বৈষম্য। সেখানে লাখ লাখ টন খাদ্য অপচয় করা হয়। সাগরে ফেলে দেয়া হয় উদ্বৃত্ত খাদ্য। কুকুর বিড়াল বানর শূকরের জন্য সরবরাহ করা হয় উন্নতমানের খাবার।

দারিদ্র্য হ্রাসের কথাটি খুব জোরেসোরে বলা হলেও আসল সত্যি হলো, দিন দিন দারিদ্র্যে হার বাড়ছে বৈ কমছে না। এই প্রেক্ষাপট বিবেচনা করে FAO প্রাণান্তর চেষ্টা চালাচ্ছে ২০১৫ সালের মধ্যে দরিদ্র মানুষের সংখ্যা অর্ধেকে নামিয়ে আনা। এই নীতিগুলোর মূল উদ্দেশ্য হলো-
• যথেষ্ট পরিমাণ পুষ্টিকর খাদ্যের স্থায়ী সরবরাহ নিশ্চিতকরণ
• সর্বসাধারণের ক্রয় ক্ষমতা বৃদ্ধি ও খাদ্যের সহজলভ্যতা নিশ্চিতকরণ
• সবার জন্যে, বিশেষ করে নারী ও শিশুদের যথেষ্ট পরিমাণ পুষ্টি সরবরাহ নিশ্চিতকরণ।
ক্ষুধা ও দারিদ্র্য মুক্ত বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্যে বর্তমান সরকার ২০২১ সালের মধ্যে ১৫% দারিদ্র্য হ্রাস করার প্রত্যয় ব্যক্ত করেছে। এ লক্ষ্য বাস্তবায়ন করতে হলে কৃষি সেক্টর উন্নয়নে বিশেষভাবে নজর দিয়ে রাষ্ট্রীয় বিনিয়োগ বাড়াতে হবে এবং কৃষি বিষয়ে কৃষকদেরকে উন্নত প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করতে হবে; এক ফসলি জমিকে দুই-তিন ফসলি জমিতে পরিণত করে খাদ্য উৎপাদন বৃদ্ধি করতে হবে; দেশীয় উদ্যোগে খরা ও লবণাক্ততা সহিষ্ণু জাতের ধানের প্রসার ঘটিয়ে খরাপ্রবণ এবং উপকূলীয় এলাকায় ফসল উৎপাদন বৃদ্ধি করতে হবে; কৃষি ভূর্তকি বৃদ্ধি করে কৃষকদেরকে সহজ শর্তে ঋণ প্রদানের ব্যবস্থা করতে হবে; কৃষকদের লাভজনক মূল্য নিশ্চিত করার জন্য উৎপাদিত পণ্যের সর্বনিম্ম বাজারমূল্য নির্ধারণ করে দিতে হবে; সরকারি উদ্যোগে প্রতিটি জেলা ও উপজেলায় প্রয়োজন অনুযায়ী খাদ্যভাণ্ডার গড়ে তুলতে হবে; কৃষি উৎপাদনের জন্য প্রয়োজনীয় উপকরণ যেমন- সার, কীটনাশক, তৈল, উন্নত বীজ ও কৃষি যন্ত্রাংশ সহজলভ্য করতে হবে। সেই সাথে জলবায়ু অভিযোজন ও প্রশমনের পরিকল্পনা ও বাস্তবায়নে গ্রামীণ নারীদের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে হবে। তা হলে FAO এর ২০১৫ সালের মধ্যে দরিদ্র মানুষের সংখ্যা অর্ধেকে নামিয়ে আনা কর্মসূচী এবং ২০২১ সালের মধ্যে বাংলাদেশের দারিদ্র্য ১৫% হ্রাস করার প্রত্যয় বাস্তবায়নে সহায়ক এবং "পারিবারিক কৃষি: প্রকৃতির সুরক্ষা, সবার জন্য খাদ্য" নিশ্চিত হবে।

০ Likes ০ Comments ০ Share ৪৫৮ Views

Comments (0)

  • - Azimul Haque

    জ্ঞাণময় পোষ্ট।

    অনেক ধন্যবাদ পোষ্টকারীকে।