Site maintenance is running; thus you cannot login or sign up! We'll be back soon.

আগ্রাসনের শিকার নির্দোষী শিশুদের স্মরণে আন্তর্জাতিক দিবস আজ


বিশ্বের বিভিন্ন আগ্রাসন এবং পীড়ণের শিকার শিশুদের স্মরণে জাতিসংঘের ঘোষিত আন্তর্জাতিক দিবস (International Day of Children Victims of Aggression) আজ। এই দিনে সারা পৃথিবীতে যত শিশু কিশোর যুদ্ধ ও সন্ত্রাসবাদীদের আগ্রাসনের শিকার হয়েছে তাদের সকলকেই স্মরণ করা হয়। শিশুদের ঘিরে নানা আগ্রাসন এবং তা থেকে সংঘটিত জঘন্যমত অপরাধ ও মৃত্যুর ঘটনাকে স্মরণ ও প্রতিরোধ করতেই বিশ্ব জুড়ে ৪ জুন পালন করা হয় আগ্রাসনের শিকার আন্তর্জাতিক শিশু দিবস। আশা করা হয়, বিশেষ এই দিবসকে কেন্দ্র করে সকল দেশের সরকার ও বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংগঠনগুলো এগিয়ে আসবে। ১৯৮২ সালে লিবিয়ার যুদ্ধে বেইরুটে ইজরায়েলের হানাদার বিমান আক্রমণে লিবিয়া ও প্যালেস্টাইনের ৬০ টি নির্দোষ শিশুর নিহত হওয়ার ঘটনার স্মরণে রাষ্ট্রসংঘের সাধারন সভা এই দিনটি কে আন্তর্জাতিক ভাবে পালনের সিদ্ধান্ত নিয়েছিল। লিবিয়া ও প্যালেস্টাইনের ঘটনার পর আরেকটি মর্মান্তিক ঘটনা সারা পৃথিবীকে নড়িয়ে দিয়েছিল। ২০০৪ সালের ১ সেপ্টেম্বরে বেসলানে সন্ত্রসবাদীদের বন্দী হয়েছিল একটি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রী, শিক্ষক ও অবিভাবকরা। সন্ত্রসবাদীরা সেখানে বর্বর হত্যাকান্ড চালায়। ফলে মৃত্যু হয়েছিল কম করে হলেও ৩৩০ জন মানুষের। যাদের মধ্যে ছিল ১৭২ জন ছাত্র-ছাত্রী।

সম্প্রতি নাইজেরিয়ার তাকফিরি সন্ত্রাসী গোষ্ঠী বোকো হারামের হাতে অপহৃত হয় প্রায় ৩০০
ছাত্রী যার প্রায় সকলেই বোকো হারামের নির্মমতার শিকার।
গত ১৪ এপ্রিল উত্তর নাইজেরিয়ার একটি বোর্ডিং থেকে তাদের অপহরণ করে বোকো হারামের সশস্ত্র জঙ্গিরা। নাইজেরিয়ার জেলে বন্দি তাদের নেতাদের মুক্তি না দেওয়া পর্যন্ত অপহৃত ছাত্রীদের ছাড়া হবে না বলে জানিয়েছে কুখ্যাত এই জঙ্গি সংগঠনটি। এর মধ্যে ৫৩ জন পালাতে পারলেও এখনো নিখোঁজ রয়েছে ২২৩ ছাত্রী। এ অবস্থায় ওই একই রাজ্য থেকে গত ১৬ এপ্রিল দ্বিতীয় দফায় ১১ কিশোরীকে অপহরণ করে বোকো হারাম। সন্ত্রাসী গোষ্ঠী বোকো হারামের হাত থেকে পালিয়ে এসেছে আমিনা তাউর নামে অপহৃত এক স্কুলছাত্রী। তাকে বোকো হারামের কবল থেকে মুক্ত হওয়ার পথ করে দিয়েছে বোকো হারামেরই এক সদস্য। আমিনা তাউর (১৭) নামে ওই ছাত্রী তাদের ওপর চালানো নির্মমতার বর্ণনা দিয়েছে। বলেছে, অপহরণ করার পর তার বান্ধবীদের ধর্ষণ করা হয়েছে, নির্যাতন করা হয়েছে। তাদেরকে বানানো হয়েছে দাসী। বোকো হারামের সদস্যদের নির্দেশ না মানলে তাদেরকে হত্যার হুমকি দেয়া হয়। এর জের ধরে গত ৫ মে নাইজেরিয়ায় অপহৃত ছাত্রীদের উদ্ধারে সহায়ক তথ্য দেওয়ার জন্য আর্থিক পুরস্কার ঘোষণার পর গণহত্যা চালিয়েছে বোকো হারাম। কট্টর ইসলামপন্থী এ জঙ্গি সংগঠনের হামলায় ৩০০ জনের মৃত্যুর খবর নিশ্চিত করেছে কর্তৃপক্ষ। ক্যামেরুনের সীমান্ত লাগোয় গাববোরু এনগালা এলাকায় ভয়াবহ ওই হামলার ঘটনা ঘটে। ওই দিনই বোকো হারামের হাতে জিম্মি দুই শতাধিক ছাত্রী সম্পর্কে তথ্য দেওয়ার জন্য তিন লাখ ডলার পুরস্কার ঘোষণা করে পুলিশ। ধারণা করা হচ্ছে, পুরস্কার ঘোষণাসহ অপহৃত ছাত্রীদের উদ্ধারে আন্তর্জাতিক তৎপরতা শুরু হওয়ার জেরে ক্ষুব্ধ হয়ে তারা ওই হত্যাযজ্ঞ চালিয়েছে।

বিশ্বের নানা দেশে বাচ্চারা নানা রকম ভাবে আগ্রাসনের শিকার।এশিয়া ও আফ্রিকার বহু দেশেই নিরীহ শিশুরা অনাহার, এইডস রোগ, অশিক্ষা ও যুদ্ধের শিকার বিশ্বের গড় পড়তা শিশু মৃত্যুর হারের চেয়ে সবচেয়ে কম উন্নত দেশ গুলিতে হার প্রায় দ্বিগুণ বেশী।দারিদ্র্য ও রোগ শিশুদের স্বাভাবিক বিকাশ ব্যহত করছে । জাতিসংঘের প্রকাশিত এক তথ্য থেকে দেখা গেছে, উন্নয়নমুখী দেশগুলোতে প্রতিদিন প্রায় ৪০ হাজার শিশু অনাহারে মারা যাচ্ছে । তাছাড়া এইডজ রোগের বিস্তারও অসংখ্য শিশুর ক্ষতি করছে। জাতিসংঘের দেয়া বিভিন্ন জরিপে জানানো সারা বিশ্বে প্রায় ৫ কোটি শিশু যুদ্ধ ও সন্ত্রাসবাদীদের আগ্রাসনের শিকার । তারা শুধু গৃহহীনই নয় তারা বসবাস করছে অন্য আরেকটি দেশে। নিজ দেশ তাদের জন্য নিরাপদ নয়।এই সব শিশুদের কোন না কোন সময় নির্যাতন করা হয়েছে যে কোন ভাবে।তাদের মধ্যে ১ কোটির বেশী শিশু রয়েছে যাদের বয়স ১৮ বছরের নীচে। এরা অন্যত্র বাস করছে এবং এর মূল কারণ হল যুদ্ধ। এসব বিভিন্ন যুদ্ধে মারা গেছে আরো ২ কোটি শিশু। ৬০ লক্ষ শিশু গুরুতর আহত হয়েছে এবং প্রায় ১০ লক্ষ হয়েছে বাবা-মা হারা।

বিশ্বের প্রায় ৮৭ টি দেশের শিশুরা বসবাস করছে ৬ কোটি স্থল মাইনের মধ্যে এবং প্রতি বছর অন্তত ১০ হাজার শিশু শিকার হচ্ছে এসব স্থল মাইনের। ৩ লক্ষ মেয়ে যাদের বয়স ১০ বছরের নীচে তাদের জোর করে শিশু সৈন্য হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে। বয়স একটু বাড়লেই তাদের জোর করে পাঠানো হচ্ছে পতিতালয়ে। এইডসের মতো প্রাণঘাতী রোগও শিশুদের অপূরণীয় ক্ষতির মুখে ঠেলে দিচ্ছে। এটা সেই ধরণের সমস্যাগুলি অন্যতম যার জন্য শিশুরা কোন ভাবেই দায়ী নয়। সারা বিশ্বে এইডসে আক্রান্ত হয়ে এ পর্যন্ত মারা গেছে প্রায় ৪০ লক্ষ শিশু। অন্তত ১৫ লক্ষ শিশু বাবা-মা হারিয়েছে । অশঙ্কা করা হচ্ছে, সারা বিশ্বে যুদ্ধ বিধ্বস্ত দেশগুলিতে যত শিশু রয়েছে তার অর্ধেকই ১৫ বছর বয়স পার হওয়ার আগেই মারা যাবে এইডস রোগে আক্রান্ত হয়ে। আধুনিক বিশ্বের শিশু পরিস্থিতিও খুব ভাল তা বলা যাচ্ছে না। পশ্চিম ইউরোপের অন্তত ২০ হাজার শিশু প্রতি বছর একাই বেড়ে ওঠে। তাদের আশে পাশে থাকে না তাদের বাবা কিংবা মা। অবিভাবকহীনতাও শিশুদের ভবিষ্যত অনিশ্চয়তার মুখে ঠেলে দেওয়ার একটি জটিল সমস্যা হিসেবে আবির্ভূত হয়ে চলছে। উন্নয়নশীল বিশ্বে এই সমস্যা আরো প্রকট আকার ধারণ করেছে। রাষ্ট্রসংঘ, সরকার ও বিভিন্ন মানবাধিকার সংঘঠনগুলো এ সমস্যার মুখোমুখি হতে গিয়ে বিব্রতকর পরিস্থিতির মুখোমুখি হচ্ছে। তবে কিছু প্রশংসনীয় কাজও তারা করে চলছে নানা প্রতিবন্ধকতার মাঝেও। আফ্রিকার গ্রেট লেকস অঞ্চলে ১৯৯৪ সাল থেকে ২০০০ সাল পর্যন্ত প্রায় ৬৭ হাজার শিশুকে তাদের পরিবারের কাছে ফিরিয়ে দেয়া সম্ভব হয়েছে। বিভিন্ন মানবাধিকার সংগঠনগুলো এই দূরহ কাজটি করে প্রশংসীত হয়েছে।

তার পরেও ধর্ষণ থেকে শুরু করে শিশু শ্রম, গৃহ কর্মী হিসাবে নির্যাতন, খুন, অপহরণ, পাচার ইত্যাদি চলছেই আমাদের দেশে। আশা করা হয়, বিশেষ এই দিবসকে কেন্দ্র করে সকল দেশের সরকার ও বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংগঠনগুলো এগিয়ে আসবে। শিশুদের সকল অধিকার বাস্তবায়নের জন্য সন্মিলিত পদক্ষেপের কোনো বিকল্প নেই। আর এজন্য আন্তর্জাতিক শিশু অধিকার সনদে স্বাক্ষরকারী দেশগুলোকে তাদের প্রতিশ্রুতী রক্ষা করতে হবে। শিশু শ্রম, শিশু নির্যাতন, শিশু পাচার এবং যুদ্ধকালীন সময়ে শিশুদের অপব্যবহারের পথ বন্ধ করে দিতে হবে চিরতরে।

আজকের শিশু আগামী দিনের ভবিষ্যৎ। তাদের প্রতি আমাদের সকলের যত্নশীল হতে হবে। আগ্রাসনের শিকার নিরীহ শিশু বিষয়ক আন্তর্জাতিক দিবসে আশা করি, শিশুদের সকল অধিকার বাস্তবায়নের জন্য বিশ্বের সকল দেশের সরকার ও বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংগঠন এগিয়ে আসবে। সাথে আমরা প্রত্যেকে নিজ নিজ অবস্থান থেকে শিশুদের জন্য নিরাপদ পৃথিবী গড়ে তুলতে চেষ্টা করি।

০ Likes ৭ Comments ০ Share ১১৮৯ Views

Comments (7)

  • - মাসুম বাদল

    স্মরণ করছি গভীর শ্রদ্ধায়...