Site maintenance is running; thus you cannot login or sign up! We'll be back soon.

আগুনে ফুলের গল্প



ঘুম ভাঙতেই পেটের ভেতরটা মোচড় দিয়ে উঠল সাঈদের । মোবাইলের স্ক্রিনে চোখ পড়তেই তড়াক করে লাফিয়ে উঠল সে । সর্বনাশ, আটটা বাজতে মাত্র পনেরো মিনিট বাকী ! হাতে একদম সময় নেই । ভার্সিটির বাস ধরতে গেলে এক্ষুনি বেরোনো দরকার । কোনমতে মুখে পানির ঝামটা দিয়ে, দুই মিনিটের মধ্যে ব্যাগ নিয়ে বাসা থেকে বেরিয়ে পড়ল সে ।

রাস্তা দিয়ে কিছুটা আসতেই মাথাটা যেন ঘুরে উঠল তার । একী, ভয়ানক কান্ড ! গাছের মাথায় তো যেন আগুন ধরে গেছে ! পুরো লালচে আভায় যেন ভরে গেছে গাছের মাথাটা । এই দৃশ্যের প্রতি অদ্ভুত এক দূর্বলতা সাঈদের জন্মগত । তার পা যেন কিছুতেই সরতে চাইছে না । ওদিকে বাস মিস হয়ে যাওয়ার প্রবল সম্ভাবনা উঁকি দিচ্ছে মনে ।

ভাবুক মনটাকে আপাতত মাটি চাপা দিয়ে দ্রুত পায়ে হাঁটতে থাকে সাঈদ । অনেকটা দৌড়ে এসে হাঁপাতে হাঁপাতে বাসটা কোনমতে ধরতে পারে সে ।

 



বাসে উঠে শান্তিমতো একটু যে বসবে সে সুযোগও যেন নেই । সিট নিয়ে একজনের সাথে লেগে গেল মহা-ক্যাচাল । এমনিতেই ক্ষুধার যাতনায় মেজাজ তিরিক্ষি হয়ে আছে, সেখানে আবার এইসব ক্যাচাল ভাল লাগে ! বাসের সিটে পিঠটা একটু এলিয়ে দিয়ে ঘুমানোর চেষ্টা করে সাঈদ । কিন্তু হঠাৎ একটা দৃশ্যে চোখ পড়তেই ঘুম-টুম যেন উধাও হয়ে গেল কোথায় ।

সেই গাছের মাথায় ঘন লালচে আভা ! ওহ, অদ্ভুত সুন্দর । ধুম করে জ্যামটা ছুটে গেল । ভোঁ করে বাসটাও পেরিয়ে এল সেই জায়গাটা । ভীষণ তৃষ্ণার্তের মতো সাঈদ তাকিয়ে থাকে, আবার কবে রাস্তার পাশে অমন গাছের দেখা পাবে । তাকিয়েই থাকে, কখনো একটু দেখা পায় আবার হারিয়ে যায় । অসহ্য... অদ্ভুত... সুন্দর । ইশ, অমন একটা গাছের পাশে যদি বিশাল একটা জ্যাম লেগে যেত !

 



কবে যে বাস ভার্সিটি চলে আসে ঠিক টের পায় না, অন্যমনস্ক সাঈদ । পেটের ভেতর শুরু হয়েছে নরক-ডাক । নাহ, কিছু একটা না পড়লে সে ডাক থামবে বলে মনে হয় না । হল-এ খিচুড়ি হয়, খেতে নাকি ভালই । আজ খেলে মন্দ হয় না । যেই ভাবা সেই কাজ । বাস রেল বিট ক্রস করতেই বাস থেকে নেমে পড়ে সাঈদ । ক্ষুধার যন্ত্রণা, বড় কঠিন যন্ত্রণা । কবি সুকান্ত নিশ্চয় এমনি এমনি বলেননি, ‘ক্ষুধার রাজ্যে পৃথিবী গদ্যময়, পূর্ণিমা চাঁদ যেন ঝলসানো রুটি’ । তিনিও নিশ্চয় এমন অবস্থায় পড়েছিলেন, তখন হয়তো পূর্ণিমা-চন্দ্রকে রুটি ভেবে কচকচ করে খেয়ে তৃপ্তি মিটিয়েছিলেন ।

এতসব ভাবতে ভাবতে সাঈদ হল-ক্যান্টিনে গিয়ে দেখে সেখানে খিচূড়ি নেই । শেষ । ইয়া আল্লাহ, কপালে কি আজকে কিছু নাই ! হতাশায়-ক্ষুধায় ধীরে সুস্থে হাঁটতে থাকে সাঈদ । লাইব্রেরীর কাছাকাছি আসতেই যেন ক্ষুধা টুধা সব উবে গেল ।

গাছের মাথায় সেই লালচে আভা ! আহা, কি সুন্দর ! ওদিকে আবার ক্লাস আছে, বেশীক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকার সুযোগ নেই । ইশ, তার কবে যে অনেক টাকা হবে ! সে একটা বাড়ি করবে । আর বাড়ির সামনে অবশ্যই অবশ্যই কৃষ্ণচূড়া গাছ লাগাবে ।

সেই গাছের নীচে দাঁড়িয়ে সে, গাছের মাথায় আগুনের মতো লালচে আভা ছড়ানো ফুলের সৌন্দর্য্য দেখবে ! লাল লাল ফুলগুলোর ফাঁক দিয়ে নীলাভ আকাশ দেখবে । বাস ধরার তাড়া থাকবে না, ক্লাসে যাওয়ার ঝক্কি থাকবে না । আহা, কি মজাটাই না হবে !

 

________

১ Likes ০ Comments ০ Share ৪৬৬ Views