Site maintenance is running; thus you cannot login or sign up! We'll be back soon.

তানিম হক

৮ বছর আগে

অসময়ের প্রেম এলোমেলো (প্রতিযোগিতা ২০১৬ - ক্যাটাগরি-০২, গল্প, পর্ব-২)


মাঝে মাঝে তব দেখা পাই, চিরদিন কেন পাই না, রবিন্দ্র সাহেব এই গানটা আজ মনের ভিতর কিছুটা অশান্ত করেছে, সিনথিয়ার কথা বলছি, খুব আদুরে গলায় প্রায়ই বলতো, তোমাকে একদিন না দেখে হয়ত বাঁচা যায় না, খুব সকালে চাচা দোকান খুলতে পারেন না তাই, সকাল বেলা উঠে আমিই খুলি, একের পর এক কর্মচারীরা আসে অনেকটা নওয়াবী হালে, তবে নওয়াবী বলা যায় না, ওদের ডিউটি যেন ওদের রোবট করে ফেলেছে , সকাল ৯টা থেকে শুরু সেই রাত দশটায় ফিরে ওরা, সকাল বেলা আমি একাই খুলি, ফটোকপিয়ার গুলো চালু দিয়ে গরম করি, মোবাইল গুলো সচল করি, এক কাপ চা এনে পত্রিকা খুলে বসি, কম্পিউটারে হয়ত সকালের আমেঝ অনুযায়ী ঠান্ডা গান বাজে।

এইভাবে শুরু হয়, চাচাও সকাল সকাল আসেন দু’জনে পাশাপাশি বসে টুকটাক আলাপ হয় ব্যবসা সক্রান্ত , সকাল দশটার কিছু আগে আমি বেড়িয়ে যাবো আবার বিকাল চারটায় এসে ঢুকবো । আমাদের ভিত খুব মিল, মানে খুব ফ্রী টাইপের এডালল্ট জোক থেকে আর কোন কিছুই বাকি থাকে না । কাজ করার পরিবেশটা সবসময় এমনই রক্তচক্ষুহীন রাখতে আমরা উভয়েই পছন্দ করি ।

প্রতিদিনের মত আজকের সকালটা একটু ভিন্ন , সকাল বেলা একজন ভদ্র মহিলা ও তার কণ্যা একসাথে প্রবেশ করেছেন, ভদ্র মহিলা স্বাভাবিক পোষাক পড়ে আসলেও , মেয়েটি পড়েছে একটা সফেদ র্স্কাট এই সকালে আবার ম্যাচ করে সাদা জুতোও পড়ে এসেছেন, এমনিতেই দুধে আলতা কালার তার উপর সফেদ পোষাক, সকালের শুভ্রতাটাকে একটু বাড়িয়ে দিলেন, ওনারা একটা মোবাইল নিয়ে এসেছেন যা কল লক হয়ে গিয়েছে, এটার সমাধান দিতে বেশিক্ষণ লাগার কথা নয়, কিন্তু এই মেয়েটা ও ভদ্র মহিলাকে আরও কিছুক্ষণ বসিয়ে রাখতে ইচ্ছে হলো, ঠিক করে দিলাম , এই ফাঁকে ওনাদের একটা মটরোলা হ্যান্ডসেট পছন্দ করেছেন , পাশ্ববর্তী সরকারী কোয়াটারে থাকেন বলে জানালেন, ভদ্র মহিলা বললেন সিনথিয়া তুমি বসো, আমি তোমার আব্বুকে সেটটা দেখিয়ে নিয়ে আসি, আসলে মেয়েটিকে সিকিউরিটি স্বরূপ বসি রেখে যেতে চেয়েছিলেন, আমি বললাম আপনার স্বামীর নাম ? উনি একজন পুলিশ কর্মকর্তার নাম বললেন , যাকে আমি চিনি ।

আমি বললাম আপনি নিয়ে যান, পিচ্চিকে বসতে হবে না, আপনার স্বামীকে চিনি , তবে যতসম্ভব তাড়াতাড়ি দেখিয়ে ফেরত দিয়ে যাবেন । মেয়েটি বললো ‘ আম্মু তুমি যাও, বারবার আসা যাওয়া করতে ইচ্ছে হচ্ছে না , এবার ভদ্র মহিলা চলে গেলেন, আমি আবার পত্রিকার চোখ বুলালাম, শুভ্র মেয়েটি নিজেই বললেন, ভাইয়া গরম লাগছে একটু এসিটা চালু করবেন, বিদ্যু বিল এর কারণে খুব প্রয়োজন না হলে এটা অন করি না, কিন্তু এমন একটা মেয়ের আবদার না রেখে কি পাড়া যায়, আমি সুইচ অন করে চুপচাপ বসে রইলাম, এবার মেয়েটি বললো আমার ভাইয়াকে চিনেন , আমি বললাম কে তোমার ভাই ?

ভাই মিজান , আমি বললাম চিনি, আচ্ছা তোমার নাম কি ? কিসে পড় ? মেয়েটি এবার আমার প্রশ্নের উত্তর দিতে লাগলো, এখান থেকেই জানলাম এর নাম নুর ই সিনথিয়া ডাক নাম অবশ্য আরেকটা আছে, আমি বলালম থাক ডাক নাম দরকার নেই, তুমি করে বলি, তোমার ভাই যেহেতু আমার পরিচিত, সে বললো অবশ্যই, আচ্ছা সিনথিয়া কি খাবে ? সকাল সকাল এসেছো, তাছাড়া তুমি আজকে আমার প্রথম কাষ্টমার, একটা বিশেষ ছাড় থাকে, আমি অবশ্য আমার প্রথম কাষ্টমারের সাথে সকাল বেলা এক কাপ চা আর সিগারেট খেতে পছন্দ করি, তুমি মেয়ে মানুষ সিগেরট নিশ্চই খাও না , মেয়েটি হেসে ফেললো । দুই কাপ চা আনালাম এরই মাঝে ভদ্র মহিলা চলে এলেন , আমাদের আর কথা হলো না । এবার শুরু হলো কাষ্টমার আর দোকানীর মোবাইল সেট বিক্রি পর্ব, মোবাইল কিনে নিয়ে গেলেন সাথে একটা সিম কার্ড, যেহেতু ছবি নাই তাই আবার এসে ছবি আর ফরম ফিলাপ করে যেতে বললাম ।বিদায় হলো এরা, সকাল সকালে একটা ভালো লাভ হয়ে গেলো ।

এটা আমাদের প্রথম দেখার গল্প,তার ভাইয়ের সাথে ইদানিং সর্ম্পকটা একটু বেশি রকমের মাখামাখি করে ফেলেছি, খুব সুর্দশন ছেলে কিন্তু বড় ভীতু, সেও আরেক কাহিনী বড় মগবাজারের এক মেয়েকে পড়াতে গিয়ে সে প্রেমে পড়েছে, ওখানকার স্থানীয় ছেলেদের সাথে একটা ঝগড়া ফেদে এসেছে, এখন সে ওখানে গেলে হাড্ডি ভেঙ্গে দিবে বলে আমাকে জানালো, আমি বললাম দোস্ত খামাখা তুমি পুলিশের পোলা হইছো, চল কবে যাবি বড় মগবাজার আমি যাবো তোর সাথে, সে ভাবলো খাইছে এই বিপদ আর হয় না, সে বললো দোস্ত এই শরীর নিয়ে মারামারি করে ওদের সাথে পারবি না, তাছাড়া ওটা ওদের এলাক , একটা স্পেশাল পাওয়া ওদের আছে, আমি বলালম ওদের ফোন দিয়ে বলল আমরা আসছি, ব্যাটা দোস্তকে বলা হয় নাই, ঐ এলাকার ষান্ডাপান্ডা সব গুলোই আমার খুব কাছের সার্কেল এর ছিলো, ওর অগোচরেই আমি সব মিট করে, আসামীদের ধরার ব্যবস্থা করে রেখেছি ।

যথা সময়ে দুজনে রওনা দিবো, মিজান বললো আমি মায়ের দোয়া নিয়ে এসেছি, সাবধান ওরা বেশি থাকলে আমাদের কিন্তু পালাতে হবে । যাক সন্ধ্যার দিকে বড় মগবাজারে গিয়ে এক হোটেলে বসলাম, ফোন দিলাম , বন্ধুরা চলে এলো, কিছুক্ষণ এখানে আড্ডা দিলাম , মিজান টের পাচ্ছে যে , এখানে আমার গ্যাং আছে, এরপর আসামীদের হাজির করা হলো, বড় ভাইদের সাথে বেয়াদবীর সাধারণ শিক্ষা শেষে, মিজানকে কথিত পালোয়ান বানিয়ে দিয়ে আসলাম । মিজান ফেরার সময় বললো , আচ্ছা তানিম তুই এত কিছু কেন করছিস আমার জন্য, তুই অনেক ভালো, আমি বললাম “ আমি উদ্দেশ্য ছাড়া কোন কাজ করি না, সময় হলে টের পাবি । সে তখন কথাটা হাসির ছলে নিয়েছিলো ।

এলাকায় ইদানিং দুই বন্ধুর খাতির সবাই টের পাচ্ছে, সেও একদিন জোর করে বাসায় নিয়ে গেলো, আবার নতুন করে পরিচয় করিয়ে দিলো, সিনথিয়ার সাথে । আবার দেখা পেলাম সে এক নতুন সিনথিয়াকে । তবে খুব অবাক লাগলো ওদের ফ্যামেলির সবাই খুবই একে অপরের কাছে অনেকটা বন্ধু সুলভ । ওদের বাসায় আড্ডা হলো । এরপর থেকে প্রায়ই যাতায়ত হয় । একদিন হঠ্যাৎ মিজানের ফোন, রাত তখন ৯ টার কাছাকাছি, কিন্তু ফোন করে সে বললো তোর সাথে সিনথিয়া কথা বলবে, আমি ভাবলাম কি কথা থাকতে পারে ?

সে বললো ভাইয়া একটা কথা বললে কি রাগ করবেন ? আমি বললাম কি ? আপনার কাছে আমাদের স্কুলের প্রশ্ন আছে তাই না ? আমি বললাম তুমি জানো কি করে ? ভাইয়া প্রশ্ন গুলো আপনাদের ওখানে কম্পোজ হয় এটা নিশ্চয়ই মিথ্যা নয়, আমি বললাম এটা ঠিক আছে তবে আমি দু:খিত আমি এ ব্যপারে তোমাকে সাহায্য করতে পারছি না, মন দিয়ে পড়াশুনা করো বলেই লাইন কেটে দিলাম ।

এসব ঘটনার পিছনে একটু বিধাতার ছল থাকে, এদিন ভর দুপুরে প্রাইভেট পড়ে ফিরছিলো, জুতার ফিতা ছিড়বি তো ছিড়ে যা, তাও আবার আমার দোকানের সামনের পথে, সে একটু পা টেনে টেনে এসে বললো ভাইয়া জুতো ছিড়ে গেছে, আপনাদের দোকানের পাশে রেখে যাই, মিনু ( কাজের মেয়ে) এসে নিয়ে যাবে , আমি হাসলাম, হয়তো সাথে টাকা নেই, কারণ সামনেই মুচি ব্যাটা বসে আছে কারো জুতো ছেড়ার অপেক্ষায়, আমি বললাম সিনথিয়া ভিতরে বসো, দেকানের ছেলেটাকে দিয়ে মুচি ব্যাটারে ডেকে এনে জুতো গুলো খুলে দিতে বলাল আর বলাল ভেতরে বসো, একটা কোল্ড ডিঙকস আনালাম , বলালম এটা তোমার জন্য, দোকানের কর্মচারীটাকে ব্যাস্ত করার জন্য বললাম অমুক দোকান থেকে এই টাকা গুলো ভাঙ্গিয়ে নিয়ে আয়, একটা পাইপ দিয়ে ঠান্ডা পানীয় খাচ্ছে সিনথিয়া, একটু সাহসের উপর ভর করে বললাম , সিনথিয়া তুমি অনেক সুন্দর, সে হেসে ফেলল, বলালম তুমি কি জানো তোমার চোখের দিকে তাকালে কারো কারো মরে যেতে ইচ্ছে হয়, তোমার মুখে একটা তিল আছে যা ইরানের গোলাপের চেয়ে সুন্দর লাগে, সে বললো ভাইয়া আমাকে এসব কি বলছেন , আমি বললাম আমি খুব ঠান্ডা মানুষ, ঠান্ডার ভিতরেই বলছি, বাকিটুকু বোঝার যথেষ্ট বয়স তোমার হয়েছে । বেরসিক মুচী বেটা ডোর ঠেলে জুতো নিয়ে হাজির , টাকা দিয়ে ওকে বিদায় করালাম , সিনথিয়া বললো ধন্যবাদ ভাইয়া, মনে থাকবে এই দুপুরটাকে । আমি আর কোন প্রশ্ন করলাম না ।

আজ সিনথিয়ার জন্মদিন, কিন্তু আশ্চর্য এ দিনে আমারও জন্ম দিন, এটা কি করে সম্ভব , ওর পরিবার থেকে সন্ধ্যায় জন্মদিন পার্টির দাওয়াত পেলাম রাতে, সাকলে নাকি আমার সাথে দেখা করতে চান ওর মা, ফোনে জানিয়ে দিলো বন্ধুটি । সকালে কিছু কাজ শেষ করে ওদের বাসায় গেলাম, কিন্তু সিনথিয়াকে দেখতে পেলাম না, সিনথিয়ার মা একটি কফি কালারের শার্ট উপহার দিলেন । অনকটা আপ্লুত হয়ে গেলাম , ওদের পরিবারের প্রায় সবাই আমার দখলে ভেবে ।বাহিরে এসে একটা চার পাউন্ডের কেক এর অর্ডার দিলাম, সেটা সিনথিয়ার নামে, ব্যাপারটা গোপন রাখলাম, মাঝ দুপুরে হঠাৎ সিনিথিয়া ছোট ভাইয়ের ফোন, ভাইয়া কেক কিনতে এসে দেখি আপনি কেক এর অর্ডার করে গেছেন, আমি বললাম হ্যাঁ, দোকানের মালিক কে ফোনটা দাও আর কেকটা বাসায় নিয়ে যাও ।

সেদিনের সন্ধ্যায়টা বেশ ভালো কাটলো, সিনথিয়া আর ওর বান্ধবীদের মাঝে আমাকে বসিয়ে রেখে কাজের ছুতোয় বেড়িয়ে গেল আমার বন্ধুটি । আমি যা বুঝার বুঝে নিয়েছি, সিনথিয়া বাকিটুকু ঠিকিই বুঝে নিয়েছে। রাতের খাবার শেষে করে ওদের বাসা থেকে নিজের বাসায় ফিরলাম। রাত তখন তখন ১২টার কাটা ছুই ছুই, একটা ফোন এলো, বন্ধুর নাম্বার, ভাবলাম আবার কি হলো, সারাদিন তো ওদের সাথে কাটিয়ে এসেছি, আবার কেন ফোন? খানিকটা বিরক্তি নিয়ে ফোন ধরলাম, হ্যালো শব্দটা কতটুকু শীতল হতে পারে তা সেদিন অনুভব করলাম, সিনথিয়ার ফোন, ফোন করেই বলোল ভাইয়া শোন তোমার উদ্দেশ্য আমি বুঝে গেছি, আপনি খুব ভীতুর ডিম , এমন সাধারণ কথাটা বলতে এত কষ্ট হলো, আচ্ছা আমি কি ঠিক ধরতে পেড়েছি ? বুকের ভিতরটা ধড়ফড় করে উঠলো, খাইছে মেয়ে বলে কি ? এরপর আরও ১৫ মিনিট ত্যানা প্যাচানোর মত কথাবার্তা হলো, ভাবতেই পারছি না এভাবে স্বপ্নের মত মিশন সফল হবে ? সারারাত ছটফট করে কাটলো, ঘুম হয়নি, ওহ পাঠক বলা হয়নি আগামীকাল আমার আর সিনথিয়ার ফাস্ট অন্য চোখে দেখা হবে । যে চোখে সাহসী স্বপ্ন থাকবে, যে চোখে থাকবে স্বর্গীয় আনন্দ ।

একটু আগে সিনথিয়ার কে পেলাম, কে যেন গোলাপী খামে করে পাঠিয়েছে, পার্কে বসে প্রেম করার মত ইচ্ছে না থাকায় , ওকে বললাম চলো রেষ্ট্ররেন্ট এ বসে গিয়ে কিছু খাই, গল্প স্বল্প করি, মাথা নাড়িয়ে সায় দিলো, উত্তরা KFC তে বসে কাঁটা চামুচ নেড়েচেড়ে কাটালাম প্রায় ঘন্টা খানেক, স্বভাব চঞ্চল মেয়েটির মুখে কে যেনো কুলপ এঁটে দিয়েছে, বেশির ভাগ কথাই অপ্রাসিঙ্গিক প্রশ্ন ছোড়ার বিনিময়ে উত্তর দেওয়া, এরপর শপিং মলে গেলাম ওর জন্য টুকটাক গিফট কিনে ফেরার সময় লক্ষ করলাম , সে আমার হাত চেপে ধরে বসে আছে, মনে হচ্ছে এই বুঝি কোন গাড়ী এসে আমাদের রিকশাটা ধাক্কা দিবে,না ভুল ভেঙ্গে গেলো আমার দেখি সিনথিয়ার চোখে পানি ? একি সিনথিয়ার চোখে পানি, জিজ্ঞাসা করলাম , কি হয়েছে মিনথিয়া তুমি কাঁদছো কেন ? উত্তরে সে বললো আজ আমাদের প্রথম দিন অশ্রু দিয়ে শুরু হউক যেন আনন্দ দিয়ে শেষ হয় ।

হাতের আঙ্গুল দিয়ে ওর চোখের পানি মুছে দিলাম, বললাম আনন্দ কি অশ্রু দিয়ে শেষ হয় আমাদের প্রেম সেতো ভাগ্য বিধাতা ভালো জানেন, তবে চোখের আড়াল হলেও কখনও তোমাকে ভুলে যাবো না, পৃথিবীর প্রত্যাকটি প্রেম ভালবাসার মাঝেই আমি তোমাকে নিয়ে বেঁচে থাকার চেষ্টা করবো ।ততক্ষণে রিকশা ওদের এলাকায় চলে এসেছে, ওর সাথে আমাকে কেউ দেখে ফেললে অত বড় কোন ক্ষতি হবে না, এলাকার বেশির ভাগই আমাকে ওদের পরিবারের একজন ভাবে, তবুও সমাজ বলে কথা, বিদায় নিয়ে রিকশা থেকে নেমে পড়লাম । শেষ হয়ে গেলো আমাদের প্রথম প্রেমের প্রথম মিলন । এখন আর নিজেকে তেমন বেহায়া মনে হয় না, দীর্ঘ এক বছর আগে করা প্ল্যান স্বার্থক হয়েছে বলে মনে আনন্দ ধরে রাখা দায় হয়ে পড়েছে ।রাতের একটা অংশ ওর সাথে কথা বলি বিভিন্ন বিষয় নিয়ে, সুযোগ পেলে বাসায় গিয়ে দেখা করে আসি, চোখে চোখ পড়ে যায় পরিবারের অন্যদের সামনে, মুচকি হাসির রেখা টোল পড়া গালে একটা ছবি এঁকে যায় ।

দিন গুলো ভালই যাচ্ছিলো, সিনথিয়া ওর দাদু বাড়ী বেড়াতে গিয়েছে, সময়টা বর্ষাকাল । বৃষ্টিমুখর এ দিনে প্রায়ই সুযোগ পেলে সিনথিয়া ফোন করে, কথা হয় । কিন্তু গত রাতে বন্ধু আমাকে কি যেন বলবে বলে ফোন করেছিলো, আমি তাকে বলতে বললাম, সে সরাসরি বলবে বলে আমাকে থামিয়ে রেখেছে, আজ দুদিন হলো বন্ধুটি লাপাত্তা । ওকে ফোনে পাচ্ছি না । ভীষণ টেনশন হচ্ছে কি জানি কি ঘটছে চর্মচক্ষুর অন্তরালে । রাত দশটা বাসায় ঢুকতেই বন্ধুর ফোন, সে বললো নির্জন কাঠপট্টিতে যাওয়ার জন্য, বিষয়টি কিছুটা ভাবিয়ে তুলেছে, এই রাতে নির্জন কাঠপট্টিতে কি দরকার, ওর কোন বিপদ হলো না তো ? সাত পাঁচ ভেবে রওনা দিলাম, গিয়ে দেখি বন্ধুটি স মিলের কাঠের গুড়িতে বসে একা একা সিগারেট ফুকছে, আশেপাশে কেউ নেই, সে তেমন সিগারেট খায় না, হঠাৎ কি হলো ।

রিকশা বিদায় দিয়ে ওর কাছে গেলাম, ও আমাকে গম্ভীর গলায় বসতে দিয়ে সিগারেট এর প্যাক এগিয়ে দিলো , আমি প্যাকেট হাতে নিয়ে এক শলকা সিগারেট ঠোঁটে লটকে জিজ্ঞাসা করলাম , কি রে কি হয়েছে বল ? সে শুরু করলো, আচ্ছা তানিম তুই আমাকে প্রায়ই বলতি “ তুই কোন উদ্দেশ্য ছাড়া কোন কাজ করিস না , আমার সাথে বন্ধুত্ব করার কারণ নিশ্চয়ই কোন উদ্দেশ্য ছিলো ? সিগারেটা ঠোটেই ছিলো, আগুন দিলাম তাতে এবং উত্তর দিলাম হ্যাঁ, তখন সে বললো তাহলে আমি যেটা ভাবছি সেটা সত্যি ? আমি বললাম তুই কি সিনথিয়ার ব্যাপারে ভাবছিস ? সে বললো হ্যা, আমি বললাম ধরেনে এটাই । সে পিছনের কোমর থেকে একটা নাইন এমএম রিভলবার বের করলো, বললো কিরে এটা চিনিস, আমি ধোয়া ছেড়ে বললাম হ্যাঁ, কেন গুলি করবি আমাকে ? সে বললো কেন ? ভয় পাচ্ছিস, আমি বললাম লক্ষ বুলেটে যদি এই বুক ঝাঝড়া করে দিস তাতে কি সিনথিয়ার নাম এই হৃদয় থেকে মুছে যাবে ?

আমি ঠিকিই বেঁচে যাবো, আমার কাছে সিনিথিয়ার প্রেম আছে, সে বলল থাম, তোকে আর বলতে হবে না, আমাকেও গুলি করতে হবে না , তুই এমনিতেই মরে যাবি বিনিময়ে তোকে শুধু একটা কাজ করতে হবে ? আমি বললাম কি ভুলে যেতে হবে সিনথিয়াকে ? সে বললো না, শোন গত রাতে হঠাৎ করে বাবা সিনথিয়ার বিয়ে দিয়ে দিয়েছেন, মা আমার আর সিনিথিয়ার কারোই মত ছিলো না তাতে, তোদের ব্যাপরটা আমরা সবাই জানি, একটা মাত্র বোন, ওকে দুঃখ দিতে চাইনি, নিরুপায় ছিলাম বাবার কাছে আমরা সরি বন্ধু , আমি তোর আর আমার বোনের স্বপ্নটাকে সফল করতে পারিনি, আচ্ছা তুই অস্ত্র চালাতে জানিস ?

এই নে এটা ধর আমাকে গুলি কর, আকাশ ভেঙ্গে পড়লো মাথায়, আরেকটা সিগারেট মুখে পুড়ে নিলাম তাতে আগুন দিলাম, ওর কাছ থেকে পিস্তলটা নিলাম, এক মিনিট দুই মিনিট এভাবে ১৫ মিনিট পার করলাম, বন্ধুর শেষ ইচ্ছে পুরুণ করতে গিয়ে ওকে গুলি করবো না নিয়তির নির্মম পরিহাস মেনে নিয়ে নিজের মাথায় গুলি করবো ভেবে পাচ্ছি না, নিরবতা সেই ভাঙ্গলো কি রে তোর হাতে মরবো এর চেয়ে সুখের কি আছে গুলি কর, ফিরে এলাম নিজের ভুবনে একটু সামনে হেটেঁ গিয়ে সামনের পুকুরে ছুড়ে ফেলে দিলাম পিস্তলটা, ওর হাত ধরে টেনে উঠালাম, বললাম তোর বোনের বিয়ে এটা আনন্দের লেট সেলিব্রেট, এটা ভাগ্যের ব্যাপার আমার কাছে তেমন কিছু মনে হচ্ছে না, চল আমার সাথে ।


পুরো থমথমে পরিবেশটা পাল্টে দিলাম, পাড়া মোড়ে একটা সস্তা হোটেল খোলা, বললাম ক্ষুধা পেয়েছে চল কিছু খাই, এত দুঃখ রাখিস না, পৃথিবীতে যা ঘটে সব মঙ্গলের জন্যই ঘটে । হোটেলে খেয়েদেয়ে দুই বন্ধু বেড়িয়ে এলাম, এখন রাত প্রায় একটা, বাসায় ফেরা প্রয়োজন । দুই বন্ধু এখন আবার রাতের আঁধারে হারিয়ে গেলাম, আমাদের মাঝ থেকে হারিয়ে গেলো সিনথিয়া নামের এক নক্ষত্র, মরে গেলো অল্প বয়সী প্রেমিক । দুই বছরে প্ল্যান ধ্বংস হয়ে গেলো চিরদিনের মত ।

প্রেম মানুষই করে, প্রেম মানুষের জীবন থেকেই হারায়, তাতে কষ্ট নয় বরং প্রেমের বার্তা পৃথিবীতে আরও শান্তি নিয়ে আসে। নিয়ে আসে মঙ্গল । সকল প্রেমিকের আত্মার মঙ্গল কামনা করছি ।

১ Likes ৩ Comments ০ Share ৮৩৮ Views

Comments (3)

  • - গোখরা নাগ

    স্বাগত জানাই...emoticons