Site maintenance is running; thus you cannot login or sign up! We'll be back soon.

রাজু আহমেদ

১০ বছর আগে

অনৈতিক অর্জন কি আত্মতৃপ্তি দিতে সক্ষম?

আমেরিকার অন্যতম সফল সাবেক প্রেসিডেন্ট আব্রাহাম লিংকন তার ছেলেকে শিক্ষকের কাছে পাঠানোর সময় শিক্ষক মহোদয় সমীপে একখান চিরকুট লিখেছিলেন, যে চিঠিখানা পরবর্তীতে ঐতিহাসিক মর্যাদাসম্পন্ন চিঠিতে পরিনত হয়েছিল । আব্রাহাম লিংকন চিঠিখানার একাংশে লিখেছিলেন, “তাকে শেখাবেন পাঁচটি ডলার কুড়িয়ে পাওয়ার চেয়ে একটি উপার্জিত ডলার অধিক মূল্যবান । .......আমার পুত্রকে আরও শেখাবেন বিদ্যালয়ে নকল করে পাশ করার চেয়ে অকৃতকার্য হওয়া অনেক বেশি সম্মান জনক” । আব্রাহাম লিংকনের মত মহান মানসিকতার মানুষ আমাদের দেশে একজনও পাওয়া যাবে কিনা সন্দেহ ? তবে আব্রাহাম লিংকনের মতে অবশ্যই পাওয়া যাবে । কেননা তিনি বলেছেন, “সব মানুষই ন্যায় পরায়ণ নয়, সব মানুষই সত্যনিষ্ঠ নয় । তাকে এও শেখাবেন প্রত্যেক বদমায়েশের মাঝেও একজন বীর থাকতে পারে । প্রত্যেক স্বার্থপর রাজনীতিকের মাঝেও একজন নিঃস্বার্থ নেতা থাকেন” । আব্রাহাম লিংকনের ভাষ্যানুযাযায়ী, আশা ছাড়া বোকামী । কোন না কোন সম্ভাবনা প্রত্যেকের মধ্যে আছে । তবে সে সম্ভাবনাকে কেউ যদি জেনে-বুঝে ধ্বংস করে দেয় তবে তার প্রতি কিইবা বলার থাকে । আমাদের সমাজ ব্যবস্থা আজ অ-নৈতিকতায় ভরপুর । রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ স্তম্ব থেকে শুরু করে নি¤œ পর্যায় পর্যন্ত সকল স্থানেই অ-নৈতিকতা বিরাজমান । এ অনৈতিকতার মাঝে যে নৈতিকতা একেবারে নাই তা কিন্তু নয় । শীতের সকালের কুয়াশায় যেমন বিশাল ক্ষমতাসম্পন্ন সূর্য্য অদৃশ্য হয়ে যায় তেমনি অনৈতিকতার বাজারে নৈতিকতা এমনভাবে লুকিয়েছে তাকে পাওয়াই যাচ্ছে না । নৈতিকতার নাগাল না পেয়ে মানুষ অ-নৈতিকতাকে নৈতিকভেবে তাকে পাওয়ার চেষ্টা করছে । অ-নৈতিকতাকে যতই নৈতিক মনে করে আঁকড়ে ধরা হউক সে কোন অবস্থায় মানব বা জীবের কোন কল্যান করে না, করতে পারে না । একজন অনৈতিক মানুষ সমাজের কোন উপকারে আসে না । অনৈতিকতা সমাজ সভ্যতার জন্য অতীতেও হুমকি ছিল, এখনও আছে আর ভবিষ্যতেও হুমকি হয়েই থাকবে । শিক্ষাকে জাতির মেরুদন্ড বলা হয়েছে । একটি জাতি যতবেশি শিক্ষিত হবে সে জাতি ততবেশি উন্নত হবে । জাতি এবং জাতীয় উন্নতির জন্য শিক্ষা একান্ত আবশ্যক । বিশ্বের অন্যান্য দেশের মত বাংলাদেশে শিক্ষিতের হার দিন দিন বেড়েই চলেছে । বাংলাদেশে এমন কয়েকটি জেলা আছে যে সকল জেলায় শিক্ষার হার প্রায় শতভাগ । অতীতে কয়েকগ্রাম ঘুরেও একজন শিক্ষিত মানুষ খুঁজে বের করা কষ্টসাধ্য ছিল কিন্তু বর্তমানে প্রতি ঘরে ঘরে, ফ্লাটে ফ্লাটে শিক্ষিত মানুষ । যেন শিক্ষিতের মেলা। একেকজন এমন সব ডিগ্রিধারী যে সকল ডিগ্রির নাম একযুগ আগেও মানুষ জানত না । এত শিক্ষিতের ভীড়ে প্রকৃত পক্ষে শিক্ষার মান কি মোটেও বেড়েছে ? নাকি কমেছে ? বাংলাদেশে প্রথম শ্রেণীর চাকরি পাওয়ার জন্য সর্বোচ্চ প্রতিযোগীতামূলক পরীক্ষা দিতে হয় বিসিএস । বর্তমানে লাখ লাখ টাকার বিনিময়ে বিসিএসের প্রশ্নপত্র বিক্রি হচ্ছে । একজন ভাল ছাত্রকে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হতে হলে দীর্ঘ ১২ বছর লেখাপড়ার পড়েও তাকে কোচিংয়ের পানে ছুটতে হবে । শুধু কোচিং করলেই হবে না । রাজনৈতিক লবিং থাকতে হবে সাথে টাকাও । একজন কোমলমতি শিশু জীবনের প্রথম পাবলিক পরীক্ষায় অবতীর্ন হয় প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনীর মাধ্যমে । এই সমাপনীর প্রশ্ন পরীক্ষার দু’ই দিন আগে বিভিন্ন ওয়েবসাইটে পাওয়া যায় এমনটি বাংলাদেশের জাতীয় পত্রিকায় ছেপে দেয়ার পরেও পরীক্ষকরা ফাঁস হওয়া সেই প্রশ্নপত্রেই পরীক্ষা নেন । পাবলিক বা স্থানীয় পরীক্ষার এমন কোন স্টেজ নাই যেখানে নকলের ভয়ঙ্কর থাবা প্রবেশ করেনি অথচ প্রশাসন নির্বিকার । তারা দেখেও দেখছে না, শুনেও শুনছে না । নকলের বিরুদ্ধে কঠোর আইন থাকলেও বাস্তবায়ন কর্রা কোথাও কেউ নেই । ছাত্ররা বরাবরই সুযোগবাদী । শিক্ষকদের তাদের পিছনে মোতায়েন করা হয় যেন ছাত্রদেরকে নৈতিকতা শিখাতে পারে । ছাত্র অনৈতিক কিছু করলে তাকে আদর্শের পথ দেখিয়ে দিতে পারে । সেই শিক্ষক যদি ছাত্রের ভবিষ্যত জীবন ধ্বংস করে দেয়ার জন্য উঠে পড়ে লাগেন তাহলে আগামী প্রজন্মের কতটা করুণ দশা হতে পারে তা অবশ্যই নির্ণিমেয় । ছাত্রদের নির্দিষ্ট একটা বয়স পর্যন্ত তার ভাল মন্দ বুঝতে পারার ক্ষমতা হয় না কিন্তু যখন একজন ছাত্র তার কিসে ভাল হবে কিসে মন্দ হবে সেটা বুঝতে পারে তখন নিজের ভবিষ্যতকে জলাঞ্জলি দিয়ে অ-নৈতিক পথ অবলম্বন করে তাতে তার কতটুকু মঙ্গল হবে সেটা ভাবা দরকার । কোন ভাবনাই অ-নৈতিক পন্থায় তাকে লাভবান করতে পারবে না । অনৈতিক অর্জনের মধ্যে আদৌ কোন পরিতৃপ্তি আছে কিনা সেটা নৈতিক পথে এবং অ-নৈতিক পথে যারা চলেন সবাই জানেন । কাজেই নিজেদের আগামীর জন্য অ-নৈতিক শিক্ষা অর্জন বর্জন করে নৈতিক শিক্ষা অর্জনের দিকে মনোযোগী হওয়া উচিত । তাতে প্রকৃত শিক্ষার মান যেমন বজায় থাকবে তেমনি লাঞ্ছনা-গঞ্জনার হাত থেকে শিক্ষিতরা রক্ষা পাবে । ঘুষ এবং দূর্নীতিতে সমাজ ছেয়ে গেছে । রাষ্ট্রের এমন কোন প্রতিষ্ঠান নাই যেটাকে ঘুষ মুক্ত দূর্নীতি মুক্ত বলা চলে । দেবালয় থেকে বেশ্যালয় পর্যন্ত সর্বত্র ঘুষ ব্যবস্থা বিদ্যমান । দিনে দিনে উৎকোচ ব্যবস্থা যেন সামাজিক রীতিতে পরিনত হচ্ছে । ঘুষ দাতা যেমনি অবলীলায় ঘুষ দিচ্ছেন তেমনি ঘুষ গ্রহীতা নিঃসংকোচে ঘুষ গ্রহন করছেন । কারো মধ্যে কোন দংশন নেই । ভিতরের মানুষটি যেন মরে গেছে । ঘুষ দাতা এবং গ্রহীতারা আপাত দৃষ্টিতে লাভবান হলেও এর প্রভাব পোহাতে হচ্ছে পরবর্তী প্রজন্মকে । অন্যায় ভাবে উপার্জিত টাকায় চলা সংসারে সূখ আসে না । সন্তানরা বাবা মায়ের বাধ্য থাকে না । স্বামী স্ত্রীর মধ্যে আন্তরিকতা থাকে না । রোগব্যাধি লেগেই থাকে । সন্তানেরা বিপথে চলে যায় । একজনের প্রতি অন্যজনের বিশ্বাস নষ্ট হয়ে যায় । একজন ঘুষ গ্রহীতার যখন আত্মউপলব্ধি আসে তখন তার পিছনে ফেরার, অন্যায়ের প্রায়শ্চিত্ত করার সুযোগ থাকে না । মনে প্রায়শ্চিত করার স্পৃহা জাগ্রত হওয়ার পর আরও বেশি হতাশা আঁকড়ে ধরে । সবময়েই স্মৃতিতে উঁকি দিতে থাকে অতীত জীবনের কর্মের স্মৃতি । অনুশোচনার মাত্রা এতটাই তীব্রতর হয় যা অন্যায়কারীকে ধীরে ধীরে মৃত্যুর মূখে নিক্ষেপ করে । পৃথিবীতে সত্য মিথ্যার দ্বন্দ চিরন্তন । এ লড়াইয়ে কখনো সত্য আবার কখনো মিথ্যা জয়ী হয় । সত্যের মধ্যে প্রশান্তি ভরা । জগৎ দুঃখময় । তাইতো সত্যের জয় কম হয় । মিথ্যার জয়ের পাল্লাটা সত্যের চেয়ে অনেক বেশি ঝুঁকে থাকে । যারা মিথ্যা বলে তার সূখে নাই, থাকতে পারে না । মিথ্যা কোন যুগেই মানুষ ও মানবতাকে মুক্তি দিতে পারে নি । জগৎ জুড়িয়া সর্বস্থানেই যুগে যুগে মিথ্যা বিতাড়িত হয়েছে । তবে মিথ্যা যেখানো যতটুকু সময় মাথা উঁচু করিয়া থাকিতে পেরেছে ততটুকু সময়ের মধ্যেই ধ্বংসের ধ্বনি বাজাতে সক্ষম হয়েছে । সমাজে জরিপ করলে মিথ্যাবদীর তুলনায় সত্যবাদী খুব সামান্যই হবে । যে মিথ্যার জন্য পারিবারিক, সামাজিক এবং রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থা স্থবির হয়ে আছে সেই মিথ্যাকেই মানুষ বন্ধু রুপে গ্রহন করিতে দ্বিধা বোধ করছে না । সর্বক্ষেত্রে যেমন মিথ্যার জয়জয়কার তেমনি অশান্তিরও পাহাড় । মিথ্যা যেখানে মাথা উঁচু করিতে পেরেছে সেখানেই ধ্বংসের দামামা বাজিয়ে দিয়েছে । মিথ্যাবাদীরাও স্বীকার করে তারা অন্যায় করছে, ভূল করছে তারপরেও অবলীলায় তারা মিথ্যার উপর অবস্থান করিয়া নাকি মিথ্যা তাহাদের উপর অবস্থান করিয়া রাজত্ব করিতেছে তাহা কে জানে ? সত্য সুন্দর ও মঙ্গল চিরকাল জয়ী ছিল আছে, থাকবে । তবে এর গতি বড়ই শীথিল । মিথ্যাকে অপসারিত করে যতক্ষনে সত্য জয়ী হয় তার পূর্বেই মিথ্যা সমাজের বারোটা বাজাইয়া দেয় । মানুষ বিভ্রান্ত হয়ে পরে । সত্যকেও তাদের কাছে মিথ্যা মনে হয় । সত্যকে আপন করিতেও ভয় পায় । না জানি সত্যও তাদেরকে ধ্বংস করে দেয় । তবুও সত্য সমাগত মিথ্যা প্রতারিত । সত্য মানুষকে মুক্তি দিতে পারে, মিথ্যা পারে ধ্বংস করতে । দেশব্যাপী প্রতিবছরই কোন না কোন নির্বাচনের মাধ্যমে জনপ্রতিনিধি বাছাইয়ের কাজ চলে । একটা কথা প্রায় প্রচলিত হয়ে গেছে, নৈতিক নিয়মে ভোট চাহিয়া কেহ নির্বাচিত হইতে পারে না । তাই প্রার্থীরা টাকা পয়সা কিংবা বাহুর জোড় খাটাইয়া জনগনের নেতা হইতেছে । ভোটারের ভোট না পাইলেও নির্বাচিত হওয়া যায় । কোথাও কোথাও ভোটারদের অস্ত্রের মূখে জিম্মি করে ভোট দিতে বাধ্য করা হয় আবার কোথায় ভোটার ভোট কেন্দ্রে পৌঁছিবার পূর্বেই তার ভোট কার্যের সমাধা হইয়া যায় । দেশটি বড়ই আজবভাবে চলিতেছে তাহাতে কোন সন্দেহের অবকাশ নাই । ভোট শুরু হওয়ার কথা ভোর আটটায় কিন্তু পূর্বের রাত্রেই ভোটের মামলা খালাস । ব্যালট বাক্স ভর্তি । কে বা কাহারা ভোট দিয়াছে তাহা ঈশ্বরও জানেন কিনা সন্দেহ ? যে গণতন্ত্রে জনগণকে সর্বোচ্চ ক্ষমতার অধিকারী বলিয়া স্বীকার করা হয় সেই জনগণের পছন্দের প্রার্থীকে ভোট প্রদান করিবার অধিকার গণতন্ত্রই হরণ করিয়া লইলে দেশের শাসকদের আঙুল চোষা ছাড়া অন্য কোন কর্ম থাকার কথা নয় । তারপরেও দেশের হর্তা-কর্তারা যে মারাত্মক ভূমিকা পালন করেন তাহা অবশ্যই প্রশংসার যোগ্য । ভোটের কার্যক্রম দেখিয়া অন্যজগতের জীবগুলি ঠোঁট চাপিয়া খটখট করিয়া হাসিয়া ফেলে । দুধের শিশু যদি দশ বিশ খানা ভোট প্রদান করিতে না পারেন তাহলে দেশের মান ইজ্জত ভারত মহাসাগরের তলদেশে নিঁখোজ বিমানটির ধ্বংসাবশেষ খুঁজিতে না যাইয়া আর কি উপায় থাকে ? বড়ই আশ্চার্য দেশ আমাদের । সক্রেটিস, এরিস্টটল কিংবা প্লেটো বাঁচিয়া থাকিলে তাদের সকল গবেষনা ত্যাগ করিয় কেবল বাঙালি ও বাংলাদেশ নিয়ে গবেষণায় মনোনিবেশ করিতেন না এ কথা কে জোড় দিয়া বলিতে পারে ? ভোটারের ভোট ছাড়া নির্বাচিত হয়ে এক একজন মহান নেতা হুঙ্কার শুনলে মনে হয় তারা নেতৃত্বের গুনাবলীতে শেরে বাংলা, সোহরাওয়ার্দী, মুজিব কিংবা জিয়াকেও ছাড়িয়ে গেছেন । তাদের নেতৃত্বের মাত্রা ক্রমান্বয়ে জার্মানীর হিটলার পাণে ছুটিতেছে । কবে না জানি হিটলারকেও অতিক্রম করিয়া এলিয়েনদের রাজ্যে প্রবেশ করিতে শুরু করে । ভোটার বিহীন নির্বাচন কিংবা টাকা বা বাহুর জোড়ে নির্বাচিত হইয়া ফুলের মত পবিত্র চরিত্রের জনপ্রতিনিধিরা কি আত্মতৃপ্তিতে ভূগিতেছেন ? উত্তর জানিতে খুবই ইচ্ছা হয় । বাঙালী তো ?? আত্মতৃপ্তি পাইয়াও থাকিতে পারেন । কে কখন সূখ পায় সে কথা সূখ এবং সূখ পাওয়া ব্যক্তিটি ছাড়া গর্দভদের কি নিশ্চয়তা দেয়ার ক্ষমতা আছে ? রাজু আহমেদ । কলাম লেখক । raju69mathbari@gmail.com
০ Likes ৩ Comments ০ Share ৪১২ Views