ব্রিটিশ কবিতায় বিশ শতকের একজন অন্যতম শক্তিশালী কবি এডওয়ার্ড জেমস টেড হিউজেস ১৯৩০ সালে ১৭ আগস্ট ইয়র্কশায়ার পশ্চিম রাইডিং জেলার, মাইথোমোরয়েড এ জন্মগ্রহণ করেন। তার শৈশব ছিল শান্ত এবং গ্রামীণ পরিবেশ বেষ্টিত। তাঁর বয়স যখন সাত বছর তখন তার পরিবার পশ্চিম ইয়র্কশায়ারের একটি ছোট্ট শহর ম্যাক্সবোর্গ এ স্থানান্তরিত হয়, যে স্থানের ভূদৃশ্য তার কবিতার মধ্যে গভীর ভাবে প্রতিফলিত হয়।
উচ্চবিদ্যালয়ের পাঠ শেষে হিউজেস রয়্যাল এয়ার ফোর্সে যোগদান করেন এবং স্থল বেতার মেকানিক হিসেবে দুই বৎসর সেবা প্রদান করেন। তারপর একটি একাডেমিক স্কলারশিপের মাধ্যমে পেমবোর্ক কলেজে অধ্যয়নের জন্য কেমব্রিজ যান। কলেজে পড়া অবস্থায় কিছু কবিতা প্রকাশ করেন যা মূলত পুরাতত্ত্ব ও নৃতত্ত্ব এর উপর ভিত্তি করে রচিত ছিল। তিনি কাল্পনিক এবং পৌরাণিক বিষয়ের উপর চর্চা করেন।
১৯৫৪ সালে কেমব্রিজ থেকে গ্রাজুয়েট সম্পন্ন করেন। বছর দু’য়েক পর ১৯৫৬ সালে তিনি কয়েক জন সম্পাদকের সাথে নিয়ে সাহিত্য পত্রিকা ‘সেন্ট বিটপ’স রিভিউ’স’ প্রতিষ্ঠা করেন। পত্রিকার একটি মধ্যাহ্ন ভোজন অনুষ্ঠানে সিলভিয়া প্লাথের সাথে তাঁর পরিচয় হয়। অল্প কয়েক মাসে পর, ১৯৫৬ সালের ১৬ জুন তারা বিবাহ সূত্রে আবদ্ধ হন। প্লাথ ‘দি পোয়েট্রি সেন্টার’কর্তৃক পরিচালিত প্রথম বই প্রতিযোগিতায় তার পাণ্ডুলিপি জমা দেয়ার জন্য তাঁকে উৎসাহ যুগিয়েছিলেন। বিচারক ম্যারিয়ান মুর, ডব্লিউ.এইচ. অডেন এবং স্টেফেন স্পেনডার তাকে প্রথম পুরস্কারে ভূষিত করেন। ‘দি হাওক ইন দি রেইন (১৯৫৭)’ আন্তর্জাতিক অঙ্গনে কবি হিসেবে তাঁকে অধিষ্ঠিত করে।
তাঁর সময়ের স্টেরিওটিপিক্যাল কবিতা কিছুটা নিজস্বতা নিয়ে এর বিষয়বস্তু, অনুধাবন এবং হালকা বিদ্রূপাত্মক গঠনে নির্মিত হত, তবে বেশি ঝুঁকি বহন করত না। বৈসাদৃশ্যর মাধ্যমে, হিউজেস শেক্সপীয়ারীয় কাছাকাছি অনুকরণে একটি ভাষার উদ্ভব করেন যা কাল্পনিক এবং আধিদৈবিক ছিল। তাঁর দীর্ঘ কর্মজীবনে যুক্ত ছিল আয়রন ম্যান, বহু শিশুতোষ বই সহ অভূতপূর্ব সর্বশ্রেষ্ঠ বিক্রয় কর্ম যেমন ‘লুপারক্যাল (১৯৬০), ক্রো (১৯৭০), সিলেক্টেড পয়েম’স ১৯৫৭-১৯৮১ (১৯৮২) এবং দি বার্থডে লেটারস (১৯৯৮)। সিম্যান হেনে এর সাথে তিনি জনপ্রিয় সাহিত্য সংকলন ‘দি র্যা টেল ব্যাগ (১৯৮২)’ এবং ‘দি স্কুল ব্যাগ (১৯৯৭) সম্পাদনা করেন। সিলভিয়া প্লাথের সাহিত্য সম্পাদক হয়ে তিনি তাঁর অনেক সাহিত্য কর্ম সম্পাদনা করেন। তিনি ‘ওভিড’ এবং ‘ইসকালেস’সহ ক্লাসিক্যাল লেখক দের অনেক লেখা অনুবাদ করেন। অবিশ্বাস্য ভাবে বহু প্রতিভাধর কবি, অনুবাদক, সম্পাদক ও শিশুদের বই লেখক, হিউজেস ছিলেন ‘কবিশ্রেষ্ঠ’ এবং এ খেতাব তিনি ১৯৮৪ সাল হতে মৃত্যুর পূর্ব পর্যন্ত ধরে রেখে ছিলেন। তার অনেক পুরষ্কারের মধ্যে অন্যতম ছিল ব্রিটেনের সর্ব্বোচ্চ সম্মান ‘অর্ডার অব মেরিট’।
ইয়র্কশায়ারে গ্রামীণ দৃশ্যপট তার যৌবনের দিনগুলোতে একটি দীর্ঘস্থায়ী প্রভাব ফেলে। তার কবিতা গুলো পাঠ করলে এমন একটি বিশ্বে প্রবেশ করা হবে যা প্রকৃতি দ্বারা প্রভাবিত, বিশেষ করে প্রাণী দ্বারা প্রভাবিত হয়ে আছে। দি হাওক ইন দি রেইন টু ওলফ ওয়াচিং (১৯৮৯) এবং মুরটাউন ডাইরি (১৯৮৯) হতে শুরু করে তার প্রায় সব বই গুলোতে এর সত্যতা পাওয়া যায়। পশুর প্রতি তার ভালবাসা কবি হওয়ার সিদ্ধান্তের অনুঘটক ছিল।
তিনি ম্যাসাচুসেটস এ প্লাথকে নিয়ে বসবাস করেন এবং ম্যাসাচুসেটস আমহার্স্ট বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াতেন। তারা ১৯৫৯ সালে ইংল্যান্ডে ফিরে আসেন এবং সেখানে তাঁদের প্রথম সন্তান ফ্রিডার সে বছরে জন্ম হয়। তাঁদের দ্বিতীয় পুত্র, নিকোলাস তার দুই বছর পর জন্ম গ্রহণ করে।
১৯৬২ সালে তিনি আসিয়া গুটমান ওয়েভিল এর কারণে প্লাথকে ত্যাগ করেন। এর এক বছরের কিছু কম হবে মধ্যে প্লাথ আত্মহত্যা করেন। হিউজেস প্রায় এক বছর কোন লেখালেখি করেন নি। সে সময়ে তিনি তাঁর সব সময় ও শ্রম ব্যয় করেন প্লাথের কবিতা সম্পাদনা এবং প্রচারের জন্য। তিনি জনগণের দ্বারা কঠোর ভাবে তিরস্কৃত হন, যারা তাকে তাঁর স্ত্রীর আত্মহত্যার জন্য দায়ী সাব্যস্ত করেছেন। প্লাথের কবিতা এবং দিনলিপি নিয়ে তাঁর সম্পাদকীয় নীতি নিয়েও চারিদিকে বিতর্কের সৃষ্টি হয়।
যদিও তাঁকে দ্ব্যর্থ হীন ভাবে বিশ শতকের একজন মহান কবি হিসেবে চিহ্নিত করা হয়ে থাকে তবু তাঁর জীবদ্দশায় কবি খ্যাতি মূলত দুটি ঘটনা দ্বারা প্রভাবিত হয়। ১৯৬৩ সালে প্লাথের আত্মহত্যা এবং ১৯৬৯ সালে আত্মহত্যাকারী মহিলা যার জন্য প্লাথকে ত্যাগ করেছিলেন সেই আসিয়া ওয়েভিল যে কিনা তাঁদের তরুণী কন্যা, শুরা’র জীবন নেন। প্লাথের নির্বাহক হিসেবে টেড হিউজের তাঁর চূড়ান্ত দিনলিপি নষ্ট দেয়ার সিদ্ধান্ত এবং কবিতা প্রকাশনা সত্ত্বের প্রত্যাখ্যান সাহিত্য মহলে তাঁকে অনেক সমালোচিত করে। প্লাথের আত্মহত্যার পর সে দশকে তাঁকে চাপা স্বভাবের মহিলা প্রতিভাধরের প্রতীক হিসেবে গণ্য করা হয় এবং সেই সাথে টেড হিউজেসকে প্রায় খলনায়ক হিসাবে গণ্য হয়। ১৯৭৯ সালে হিউজেস ক্যারল অর্চার্ডকে বিয়ে করেন এবং তাঁকে সঙ্গী করেই বাকি জীবন অতিবাহিত করেন।
তাঁর দীর্ঘ কর্মজীবনে ‘দি আয়রন ম্যান (১৯৯৮) এর মতো বিখ্যাত ডজনের ওপর কবিতার বই, অনুবাদ, নন ফিকশন এবং শিশুতোষ বই যুক্ত ছিল। তাঁর কবিতার বই গুলো ছিল ‘ওল্ফ ওয়াচিং (১৯৯০), ফ্লাওয়ার্স এন্ড ইনসেক্টস (১৯৮৬), সিলেক্টেড পয়েম’স ১৯৫৭-১৯৮১ (১৯৮২), মুরটাউন (১৯৮০), কেভ বার্ডস (১৯৭৯), ক্রো (১৯৭১) এবং লুপারক্যাল (১৯৬০)। তাঁর অন্য বই যেমন দি বার্থডে লেটারস (ফারার, স্টাউস এন্ড জিরক্স, ১৯৯৮) তিনি যে বছরে মৃত্যু বরণ করেন সে বছরে প্রকাশিত হয় এবং যা প্লাথের সাথে তাঁর সম্পর্কের বিষয়ে সম্পর্কিত ছিল।
তাঁর কাজকে চিহ্নিত করা হয় কাল্পনিক কাঠামো দ্বারা বেষ্টিত যা কিনা বিষয়বস্তুকে তীব্র ভাবে চিত্রিত করতে গীতধর্মী এবং নাটকীয় মনলগের ব্যবহার করা হয়েছে। রূপক, চরিত্র এবং আইকন হিসাবে তিনি প্রাণী দের এমন ভাবে তাঁর কর্মে প্রদর্শন করেছেন যা দেবতাতূল্য ছিল তাঁর কাছে। তাঁর বহুল ব্যবহৃত বিষয় ছিল ‘কাক’ যা ছিল ঈশ্বর, পাখি এবং মানুষ এ তিনের সংমিশ্রণ।
তিনি ইউরোপের অনেক সাহিত্য সম্মাননা অর্জন করেন এবং মৃত্যুর পূর্ব পর্যন্ত ইংল্যান্ডে (১৯৮৪) ‘কবিশ্রেষ্ঠ’ উপাধিতে ভূষিত ছিলেন। তিনি ১৯৯৮ সালে ২৮ অক্টোবর ডেভনশায়ারে মৃত্যু বরণ করেন।
[আন্তর্জালের বিভিন্ন ইংরেজি উৎস থেকে অনুবাদকৃত]
টেড হিউজেস- এর তিনটি কবিতা
সেক্রেটারি
যদি আমি তাকে স্পর্শ করি সে চিৎকার করে কেঁদে উঠবে
হামাগুড়ি দিয়ে চলে যাবে ভয়ঙ্কর ক্ষতগুলো শুশ্রূষা করতে:
সমস্ত দিন ষাঁড়ের পেটের নিচে স্টারলিং পাখিদের মতো
সে প্রবেশ করে পুরুষগুলোর মধ্যে মাথা নামিয়ে, উঁকি মেরে মেরে
শিংয়ের প্রথম সঞ্চালনেই সে দ্রুত আবর্তন করে চলে যায়।
গোধূলিতে দ্রুত সে পালায় কামনার হস্তাবরণ ভেদ করে
যন্ত্রইঁদুর যেন। অবশেষে নিরাপদে বাড়ি ফিরে
সে গর্ত সমেত মোজা সারাতে বসে, ছিঁড়ে যাওয়া শার্ট।
বাবা এবং ভাইয়ের জন্য উপাদেয় রাতের খাবার সে রেঁধে
তাড়াতাড়ি ঘুমোতে যায়, নিভিয়ে দিয়ে বাতি
তার তিরিশটি বছর, শুয়ে থাকে আঁটসাঁট নিতম্বে,
ঢেকে তার সুন্দর দুটি চোখ যতক্ষণ না দিবসের মৌনতা ভাঙ্গে।
-----------------------------------------------------
Secretary
If I should touch her she would shriek and weeping
Crawl off to nurse the terrible wound: all
Day like a starling under the bellies of bulls
She hurries among men, ducking, peeping,
Off in a whirl at the first move of a horn.
At dusk she scuttles down the gauntlet of lust
Like a clockwork mouse. Safe home at last
She mends socks with holes, shirts that are torn,
For father and brother, and a delicate supper cooks:
Goes to bed early, shuts out with the light
Her thirty years, and lies with buttocks tight,
Hiding her lovely eyes until day break.
-----------------------------------------------------
শহর হতে
তোমার কবিতা গুলো একটি অন্ধকার শহরের কেন্দ্রের মত।
তোমার উপন্যাস, গল্প, দিনলিপি, তোমার চিঠি,
যেন এই মস্ত শহরের ভেতরে আরেকটি শহর।
হোটেল গুলো সব রাতে অফিস পাড়ার মতো মাতাল হয়
পণ্ডিত, পুরোহিত, তীর্থযাত্রীদের সঙ্গে। যেন এর ভেতরে
কখনও কখনও আমাকে চালিত করি। আমাকে পাই
এর ভেতরে ভ্রমণরত, ধীরে যাচ্ছি,
ঘুরে ফিরে আসি নিজস্ব অন্ধকারের ভেতরে, ভাবো
তুমি কী করেছো। কাছাকাছি সব সময়
আমি তোমাকে এক ঝলক দেখি- পার হতে হতে,
অনিমেষনেত্রে হয়ে উর্ধ্বমুখী, হারিয়ে গেছে ষাট বছর।
-----------------------------------------------------
From The City
Your poems are like a dark city centre.
Your novel, your stories, your journals, your letters, are suburbs
Of this big city.
The hotels are lit like office blocks all night
With scholars, priests, pilgrims. It's at night
Sometimes I drive through. I just find
Myself driving through, going slow, simply
Roaming in my own darkness, pondering
What you did. Nearly always
I glimpse you - at some crossing,
Staring upwards, lost, sixty year old.
-----------------------------------------------------
ধর্মতত্ত্ব
না, সাপ প্রলুব্ধ করেনি
ইভকে আপেলের প্রতি
সবকিছুই খুব সাধারণ
বিষয়ের জালিয়াতি।
আদম আপেল খেয়েছিল
আর ইভ খেয়েছে আদমকে।
লোভ খেয়েছিল ইভকে।
যা অন্ধকারের অস্ত্র হয়েছিল।
ইতোমধ্যে সাপ
তার নৈশভোজের পর স্বর্গে ঘুমিয়ে পড়েছিল-
হাসি শুনতে পেয়ে দেখে
ঈশ্বরের অনুযোগকারীরা ডাকছে।
-----------------------------------------------------
Theology
No, the serpent did not
Seduce Eve to the apple.
All that's simply
Corruption of the facts.
Adam ate the apple.
Eve ate Adam.
The serpent ate Eve.
This is the dark intestine.
The serpent, meanwhile,
Sleeps his meal off in Paradise -
Smiling to hear
God`s querulous calling.
-----------------------------------------------------
পাদটীকা: টেড হিউজেস-এর সাহিত্য কর্ম এতো বিস্তৃত যে স্বল্প পরিসরে অন্তর্ভুক্ত করা সম্ভব নয়। তাই পোস্টে যোগ করলাম না।
Comments (27)
ভাইয়া আপনার দৃষ্টি আকর্ষণ করছি (আমার পোষ্টে আপনার করা মন্তব্য প্রসঙ্গে)
ভাইয়া,আমি অনেক কবিতা লিখেছি।
কিন্তু তা কোথাও প্রকাশ করিনি। এই
ব্লগে ক্রমানুসারে প্রকাশ করব বলে ঠিক
করেছি। তাই আমার ভুল গুলো ও কেউ
ধরিয়ে দেয়নি। আর কবিতা লিখার উপর আমার
প্রাতিষ্ঠানিক কোন জ্ঞান নেই। তাই মাত্রা ও
ছন্দ সম্পর্কে আমি খুব একটা ভালো বুঝি না।
মনের আবেগে যা আসে লাইনের সাথে লাইন
মিলিয়ে তাই লিখে ফেলি। তাই আমার কবিতায়
ছন্দ ও মাত্রা গত ভুল থাকা খুবই সাভাবিক।
কবিতার পাশাপাশি আমি একটি উপন্যাস ও
লিখছি। আমার দৃঢ় বিশ্বাস আমি একদিন অনেক
বড় লেখক হব! তাই ভাইয়া আপনার কাছে ছোট
ভাই হিসেবে একটি অনুরোধ যদি আপনার
জানা মতো ছন্দ ও মাত্রার উপর লেখা কোন
বই থাকে তাহলে আমাকে জানাবেন
তাহলে আমি সেই বইটি সংগ্রহ
করে কবিতা লেখার নিয়ম কানুন
সম্পর্কে শিখতে পারবো।
এবং ভবিষ্যতে আপনাদেরকে আরো সুন্দর
লেখা উপহার দিতে পারৰো।মতামতের জন্য
অনেক ধন্যবাদ। আপনার পরামর্শের অপেক্ষায়
থাকলাম।
ছন্দ_ আব্দুল মান্নান সইয়দ _বাংলা একাডেমী
ইকবাল ভাই আপনাকে অনেক ধন্যবাদ। আপনার প্রতি কৃতজ্ঞতা রইল!
কবিতার ক্লাস নীরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী
উপন্যাসের অংশবিশেষ পড়ে ভালো লাগলো। আশা করি, পুরো উপন্যাসটি উপভোগ্য হবে। ধন্যবাদ, ভাই তাহমিদুর রহমান।
ধন্যবাদ আবু হেনা ভাই