Site maintenance is running; thus you cannot login or sign up! We'll be back soon.

অতঃপর মিসির আলী

তৃতীয় পরিচ্ছেদ

কাব্যের যখন জ্ঞান ফিরল তখন রাত প্রায় আটটা।এই পুরোটা সময় সে অচেতন অবস্থায় ছিল।তাকে তার নিজের ঘরে শায়িত রাখা হয়েছে।একই প্লানের আটরুম বিশিষ্ট দ্বিতল ভবনের ফ্ল্যাট বাড়ি কাব্যদের।নীচতলার একটি ঘর তার ও তার বৃদ্ধ দাদীর জন্য।অন্য দুটি ঘরে যথাক্রমে তার মা-বাবা ও ছোট ভাই থাকে।একটি ঘর রাখা হয়েছে আগত অতিথিদের জন্য।উপরের তলা থাকে তালাবদ্ধ।
বাড়ির সামনে প্রশস্ত উঠান আর পাশে একটি ছোট্ট ফুলবাগান ও পুকুর।গ্রামাঞ্চলে সাধারণত এরকম বাড়ির দেখা মেলা ভার।কাব্যের বাবা জনাব নিজাম উদ্দীন সাহেব পার্শ্ববর্তী গ্রামের মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের  প্রধান শিক্ষক।ছেলে কিংবা মেয়ে কাউকেই তিনি নিজের স্কুলে ভর্তি করেননি,করেছেন নিজের গ্রামের স্কুলে।সমাজের আর দশজন অভিভাবকের মত ইনি নন।ভদ্রলোকের ধারণা প্রতিষ্ঠানের কর্ণধার হিসবে বাবাকে পেলে ছেলে মেয়ের পড়ালেখা ব্যহত হবে।অবশ্য তার ধারণা পুরোপুরি ফলপ্রসু হয়নি।
কাব্যের বড় চাচা জনাব ফরহাদ উদ্দীন সাহেব তার স্ত্রী ও দুই মেয়েকে নিয়ে ঢাকাতে থাকেন।সেখানে তার বড় ব্যবসা ও বাড়ি আছে।বছরে দুই একবার পরিবারসহ বাড়িতে আসেন।এই বাড়ির উপরের তলার উপর তার অধিকার।বছরে যে সময়টাতে তিনি বাড়িতে আসেন শুধুমাত্র তখনই সচল হয় উপর তলা।কাব্যের দাদা মারা গেছেন দশ বছর হতে চলল।
দুপুর থেকে এই বাড়িতে উৎসুক জনতার উপচে পড়া ভীড় লেগে আছে।সন্ধ্যার পর ভীড় কিছুটা কমলেও কাব্যের জ্ঞান ফেরার কথা ছড়িয়ে পড়ার সাথে সাথে ভীড় আবারো বাড়তে শুরু করেছে।কাব্যের বান্ধবীরা ঘটনাস্থলে যারা তার সাথে ছিল তারা এখন আর নেই।মেয়ে হয়ে এরকম বিপদের মুখে নিজেদেরকে ঠেলে দেওয়ার জন্য তাদেরকে দিনভর অনেক ভর্ৎসনা শুনতে হয়েছে।কাব্যের এই বিপর্যয়ের জন্য যে তারাই দায়ী এ ব্যাপারে সকলে একমত হয়ে তাদের উপর খড়গহস্ত হয়েছে আজ।এমনকি গ্রামের একেবারে নিম্নশ্রেণীর মানুষ যাদের চিরদিন অন্যের রক্তচক্ষুতে তটস্থ থাকতে হয় তারাও এই মেয়েদের ধমক দিতে ছাড়েনি।অনেকটা নিরুপায় হয়ে তাই আক্রান্ত বান্ধবীর শয্যাপাশে বেশিক্ষণ আর থাকা হয়নি ওদের।
জ্ঞান ফেরার পরও কাব্যের অবস্থা স্বাভাবিক হল না।চোখ মেলে নিজের আশপাশে এত লোকের সমাগম দেখে সে দ্রুত উঠে বসল।সবথেকে কাছে তার মাকে দেখতে পেয়ে তাকে খালা বলে সম্বোধন করল।তার বাবা তার দিকে এগিয়ে গেলে সে তাকে চিনতেই পারল না।তার দাদীকে ঘরের এককোণে বসে দোয়া-দুরূদ পড়তে দেখে সে তাকে গালি দিতে আরম্ভ করল।
রাত বাড়ার সাথে সাথে উৎসুক জনতার আধিক্য একেবারেই কমে এল।জ্ঞান ফেরার পর থেকেই কাব্যের অস্বাভাবিক আচরণ অব্যহত রয়েছে।কাউকেই ঠিকমত চিনতে পারছে না।এসব কিছু তার পরিবারের লোকজনকে অনেক বিমর্ষ করে তুলল।লেখাপড়ায় খুব একটা উন্নতি করতে না পারায় বাবা মেয়ের বিয়ের জন্য তোড়জোড় শুরু করেছেন।এরইমধ্যে বরপক্ষ মেয়েকে দেখে গেছে।আজ সকালে তাদের তরফ থেকে মোবাইলে সবুজ সংকেতও পাওয়া গেছে।এখন বিয়ের তারিখ ও আনুষ্ঠানিকতাই শুধু বাকী।উচ্চশিক্ষিত চাকুরীজীবী ছেলে,ভাল বংশ।এমতাবস্থায় এই ঘটনায় নিজাম উদ্দীন সাহেব অনেকটাই ভেঙ্গে পড়লেন।সারাদিন তাকে আজ এমনিতেই অনেক ধকল সইতে হয়েছে।স্কুলের কাজে সকালে জেলা শিক্ষা অফিসে গিয়েছিলেন।সেখান থেকে কাজ শেষে গিয়েছেন সোজা শিক্ষা বোর্ডে।বাংলাদেশের সরকারী অফিসের কর্মকর্তাদের কাজের কচ্ছপ গতির ছোঁয়া এখানে বেশ ভালমতোই লেগেছে।নিজাম উদ্দীন সাহেবের আধাঘণ্টার কাজ পাঁচ ঘণ্টাতেও হয়নি।বোর্ডে অবস্থানরত অবস্থায় বাসা থেকে ফোনে মেয়ের দুঃসংবাদের কথা জানতে পেরেছেন।এরপর অসমাপ্ত কাজের দায়ভার সাথে থাকা কেরানীর কাঁধে অর্পন করে সেখান থেকে বাড়ি ফিরেছেন।মেয়ের অবস্থার উন্নতির জন্য গ্রামের ডাক্তারের কাছে গেছেন,মসজিদের ইমাম সাহেবের কাছে গেছেন।ডাক্তার সাহেব ঘুমন্ত মেয়েকে কিছুক্ষণ পরীক্ষা-নীরিক্ষা করার পর কোন রোগের লক্ষণ দেখতে না পেয়ে ফিরে গেছেন।মসজিদের ইমাম সাহেব আসতেই চাননি।কিছু সময় পূর্বে জেলা প্রেসক্লাব থেকে একদল সাংবাদিক এসে কাব্যের অবস্থা ভালভাবে পর্যবেক্ষণ করে তার কিছু ছবি তুলে নিয়ে গেল।যাবার আগে পরিবারের সবাইকে প্রশ্নবানে জর্জরিতও করে গেল।কে জানে কীভাবে তারা খবর পেল?ঘটনার পর থেকে প্রায় ছয় ঘণ্টা কাব্য ঘুমন্ত অবস্থায় ছিল।এই সময়ের মধ্যে সাংবাদিক আসলেতো আর এতটা বেইজ্জত হতে হয় না।সাংবাদিক এল ঠিক কাব্যের জ্ঞান ফেরার পর যখন সে পুনরায় পাগলামি শুরু করেছে।না জানি কীভাবে তারা পত্রিকায় এই খবর প্রকাশ করে?বিপদ যখন আসে তখন আট ঘাঁট বেধেই আসে।এখন আলোচনারত বিয়েটাতো ভাঙবেই সম্ভবত কাব্যের আর কোনদিন বিয়েই হবে না।অনবরত নিজাম উদ্দীন সাহেবের মাথায় এসব চিন্তায় ঘুরপাক খাচ্ছে।সপ্তম শ্রেণীতে পড়ুয়া ছেলেকে সাথে নিয়ে তিনি ডাইনিংয়ে বসে নীরবে চিন্তা করছেন।তার ছেলে সাইফ কাব্যের তুলনায় লেখাপড়ায় ভাল।এই অঙ্গনে তার উন্নতি লক্ষ্যণীয়।তাই ছেলেকে নিয়েই বাবার ভবিষ্যৎ যত স্বপ্ন।
কাব্যের অদ্ভুত আচরণ তখনো থামেনি,বৃদ্ধ দাদী তখন থেকে বিরামহীনভাবে দোয়া-দুরূদ পড়েই চলেছেন।
রাতে কাব্যকে কিছু খাওয়ানো গেল না।রান্না থেকে শুরু করে বাড়ির সমস্ত কাজ নিজাম সাহেবের স্ত্রী একক হাতে করেন বিধায় কোন কাজের মেয়ে রাখা হয়নি।মাঝে মধ্যে নিজের মেয়ের কাছ থেকেই তিনি কিছু সহযোগিতা পেয়ে থাকেন।আকস্মিক এই ঘটনার কারণে আজ আর রান্না হয়নি।কিছু হালকা খাবার খেয়ে সকলকেই চিন্তিত রাত কাটাতে হল।প্রায় সারা রাতই কাব্য প্রলাপ বকে কাটাল।
খুব ভোরে নিজাম উদ্দীন সাহেব নিজস্ব মোটরবাইক যোগে তার গ্রাম থেকে প্রায় দশ কিলোমিটার দূরের একটি গ্রামে ইনসানের সন্ধানে বের হলেন।আশপাশের আট-দশটি গ্রামের মধ্যে জ্বীনে পাওয়া রোগীকে সুস্থ করার ক্ষেত্রে ইনসানের প্রসিদ্ধি সবচেয়ে বেশি।বিগত প্রায় ত্রিশ বৎসর যাবৎ এই অঞ্চলে যতগুলো মানুষ জ্বীনের দ্বারা আক্রান্ত হয়েছে হোক না সে নারী বা পুরুষ সবাইকেই আপন দক্ষতাগুণে জ্বীন-পরীর সেসব ভয়াবহ কবল থেকে ইনসান উদ্ধার করেছে বলে লোকে দেখে আসছে।তাইতো এলাকার সকল ডাক্তার আর মওলানা সাহেবগণ যেখানে হাল ছাড়েন,অপারগতা প্রকাশ করেন সেই সমস্যা নিরসনে ইনসানকেই ডাকা হয়ে থাকে।ছেলেবেলায় ইনসান অন্য দশজন ছেলের মত থাকলেও বয়স বৃদ্ধির সাথে সাথে তার মধ্যে ধীরে ধীরে পরিবর্তন শুরু হয়।সবশেষে স্বপ্নে পাওয়া ক্ষমতাবলে সে অসীম সাহসীকতার সাথে এই কাজ শুরু করেছিল বলে জনশ্রুতি রয়েছে।অবশ্য সপ্নে সে ঠিক কী ক্ষমতা লাভ করেছিল তা স্ববিস্তারে না বললেও এখনো পর্যন্ত সে যে প্রায় শতভাগ সফল তা বলার অপেক্ষা রাখে না।আর এজন্যই বিগত ত্রিশ বৎসর ধরে এলাকাবাসীর সন্দেহের পরিবর্তে বিশ্বাসের জায়গাটাই ইনসান দখল করে আছে।প্রথম দিকে এই কাজের জন্য সে কোন অর্থ গ্রহন করত না।কিন্তু পরবর্তীতে এক হাজার থেকে শুরু করে বর্তমানে প্রতিটি জ্বীনে পাওয়া রোগীর চিকিৎসার জন্য দশ হাজার টাকা করে নিয়ে থাকে।খুব স্পর্শকাতর এবং বিপজ্জনক বিষয় হওয়ায় যখন থেকে ইনসান এই কাজে অর্থ গ্রহন শুরু করেছে তখন থেকেই কেউ তা দিতে আপত্তি করেনি বরং কাজ শেষে সকলেই তা আনন্দের সাথে দিয়েছে।
আজ সকালে নিজাম উদ্দীন সাহেব যখন ইনসানের বাড়িতে পৌছুলেন তখন সবেমাত্র সূর্য উঠেছে।ইনসানকে বাড়িতেই পাওয়া গেল।মোটরসাইকেল থেকে নেমেই নিজাম উদ্দীন সাহেব অত্যন্ত বিচলিত কণ্ঠে উঠানে দাড়ানো ইনসানের দুহাত জড়িয়ে ধরে বললেন- ভাই,আমার এতদিনের অর্জিত সম্মান,আমার বাড়ির ঐতিহ্য আর পারিবারিক সুখ-শান্তি সবকিছুই ভূলুণ্ঠিত হতে চলেছে।আপনি কিছু একটা করুন।
ভদ্রলোকের এরকম আচরণে মোটেও অপ্রস্তুত না হয়ে খুব স্বাভাবিকভাবেই ইনসান তার কথার উত্তরে বলল- সমাজের একজন শিক্ষিত ভদ্রশ্রেণীর মানুষ হিসেবে আমি আপনাকে অনেকদিন থেকেই খুব ভালভাবে চিনি এবং জানি।আপনার পরিবারে ঘটে যাওয়া গতকালের ঘটনাও আমার কানে এসেছে।আজ আপনি আমার এখানে আসবেন ঠিক এটিই আমার ধারণাতে ছিল।বলতে পারেন এর জন্য আমি প্রস্তুত ছিলাম।
ইনসানের কথায় নিজাম উদ্দীন সাহেবের কষ্ট আরো বেড়ে গেল।যত দ্রুত সম্ভব তিনি উদ্ভুত সমস্যা সমাধানের জন্য চেষ্টা করছেন আর সমাধান না হয়ে উল্টো ব্যাপারটি যেন তত দ্রুত চতুর্দিকে ছড়িয়ে পড়ছে।এই বিষয়টির সঙ্গে তার নিজের সম্মান,তার পরিবারের সম্মান,তার মেয়ের বিয়ে হওয়া না হওয়ার সম্ভাবনা জড়িত।এরই সবই বোধহয় এবার খারাপের একেবারে তলানীতে গিয়ে ঠেকবে।তার জন্য ভাল আর কিছুই হয়ত অবশিষ্ট থাকবে না।সাংবাদিকরা গতকাল খবর ও ছবি সংগ্রহ করে নিয়ে গেছে।আজকের স্থানীয় ও জাতীয় সমস্ত পত্রিকাগুলোতে নিশ্চয় এ সংক্রান্ত খবর প্রকাশ করা হবে।সবশেষে "বিশিষ্ট শিক্ষানুরাগী ব্যক্তিত্ব জনাব নিজাম উদ্দীন সাহেবের মেয়েকে জ্বীনে পেয়েছে"এই শিরোনামে আন্তর্জাতিক মিডিয়াতে সংবাদ পরিবেশিত হবে!কিছু সময় সত্য-মিথ্যার সংমিশ্রণে এরকম কিছু চিন্তা তার মস্তিষ্কে ঘুরপাক খেতে লাগল।এক পর্যায়ে কাঁদ কাঁদ স্বরে তিনি আবারো ইনসানকে বললেন- ভাই আপনি আমার মেয়ের জন্য কিছু একটা করুন।প্রতিউত্তরে ইনসান তাকে সান্তনা দিতে দিতে বলল- আপনি শিক্ষিত সচেতন অভিভাবক,আপনাকে এভাবে ভেঙ্গে পড়লে চলবে না।কী ঘটনা আপনার মেয়ের সাথে ঘটেছে আর কীভাবে তা ঘটেছে এর একটি পরিশুদ্ধ বর্ণনা আমার জানা দরকার।আপনার কাছ থেকেই আমি তা জানতে চাই।অসুস্থ মেয়েকে সুস্থ করে তোলার জন্য এটি জানা আমার খুবই প্রয়োজন।এরকম একটি ঘটনা ঘটে যাওয়ার পর নিশ্চয় আপনার বাড়িতে এখন উত্তাল অবস্থা,চতুর্দিকে লোকজনের ভীড়,কোলাহল লেগেই আছে।আর তাই সেখানে গিয়ে শান্তিপূর্ণ পরিবেশে এটি শোনার সুযোগ হবে না।
এতদূর বলার পর ইনসান নিজাম সাহেবকে নিয়ে তার গৃহ অভ্যন্তরে ঢুকল।জনাব নিজাম উদ্দীন সাহেব ইনসানের কাছে ঘটে যাওয়া ঘটনা শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত বিস্তারিতভাবে বর্ণনা করলেন।ঘটনা বলার সময় ইনসান মাঝে মাঝে কিছু আনুসঙ্গিক প্রশ্ন করল।নিজাম সাহেব সেগুলিরও যথার্থ উত্তর দিলেন।ঘটনা বর্ণনার পর নির্দিষ্ট গন্তব্যস্থলে যাত্রার উদ্দেশ্যে দুজনেই উঠলেন।ইনসানের স্ত্রী এরই মধ্যে খাবারের আয়োজন করলেও নিজাম সাহেবের অনীহার কারণে দুজনের কারোরই খাওয়া হল না।যাত্রা শুরুর পূর্বে জ্বীনে পাওয়া মেয়ের শরীর থেকে জ্বীন তাড়ানোর উদ্দেশ্যে ইনসান প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র হিসেবে একটি ছোট কৌটায় কিছু সরিষা,একটি ছোট বোতলে কিছু সরিষার তেল,একটি বাশের ছোট লাঠি এবং একটি ছোট আকৃতির ঝাড়ু তার সাথে নিল।সে যে পদ্ধতিতে জ্বীনের কবল থেকে মানুষকে উদ্ধার করে তাতে এই জিনিসগুলো সর্বাপেক্ষা প্রয়োজন।এজন্যই এসব জিনিস তার ঘরে সবসময় মজুদ থাকে।
নিজাম উদ্দীন সাহেব এবং ইনসান যখন বাড়িতে পৌছালো ততক্ষণে বাড়িতে পুনরায় বেশ ভীড় জমে গেছে।ইনসানের আসার খবর ছড়িয়ে পড়লে বিভিন্ন শ্রেণী-পেশার মানুষের চাপ আরো বাড়তে থাকল।ইনসানকে বাড়ির উঠানে একটি কাঠের চেয়ার এনে বসতে দেওয়া হল।তার সামনের জায়গাটা পরিষ্কার করে সেখানে মাদুর পেতে তার উপরে বসানো হল কাব্যকে।মূর্ছিতপ্রায় কাব্যের পাশে তার মা বসল কিছুটা দূরত্ব বজায় রেখে।ইনসানের সিলেবাসে জ্বীন ছাড়ানোর যে নিয়ম তাতে এসময় আক্রান্ত মানুষের সংস্পর্শে কারো থাকা সম্পূর্ণ নিষেধ।চারদিকে গ্রামবাসীর ভীড় আরো বেড়ে গেল।উৎসুক জনতার দৃষ্টি ইনসান ও কাব্যের দিকে নিবদ্ধ। এপর্যায়ে ইনসান তার কার্যক্রম শুরু করল।একে একে সে তার সমস্ত পদ্ধতি প্রয়োগ করতে লাগল কিন্তু বিপরীত দিক থেকে আশাব্যঞ্জক কোন সাড়া পাওয়া গেল না।ধীরে ধীরে কাব্যের অবস্থা আরো খারাপ হতে আরম্ভ করল।বেলা বারটা পর্যন্ত ইনসানের চেষ্টা বিভিন্নভাবে অব্যহত থাকলেও কাব্যের অবস্থার কোন উন্নতি হল না বরং জ্বীন তাড়ানোর নিষ্ঠুর পদ্ধতি তাকে আরো অসহায় ও মানসিকভাবে বিপর্যস্ত করে তুলল।দুপুরবেলা স্নানাহারের জন্য এই কার্যক্রম সাময়িকভাবে বন্ধ রইল।অবশ্য এসময় কাব্যকে কিছু খাওয়ানো গেলেও তার প্রলাপ থামল না।খাওয়ার মাঝে ও শেষে সে একাধিকবার নানারকম অসম্ভব বুলি আউড়ালো।দুপুর তিনটা থেকে আবারো  ইনসানের কার্যলীলা শুরু হল।এবার আর তা বাইরে নয়,গৃহাভ্যন্তরে।
প্রায় সন্ধ্যা অবধি চেষ্টার পর সকল প্রকার ইতিবাচক ফললাভে ব্যর্থ হয়ে অবশেষে ইনসান তার কাজে ইস্তফা দিল।বিদায় নেওয়ার পূর্বে নিজাম উদ্দীন সাহেবের পরিবারের উদ্দেশ্যে শুধু একটি কথায় সে বলে গেল- এই মেয়েকে নিয়ে আপনাদের অনেক ভুগতে হবে।আমার ত্রিশ বৎসরের অভিজ্ঞতা অন্তত তাই বলে।
নিজাম উদ্দীন সাহেব ইনসানকে আর আটকানোর চেষ্টা করলেন না। বিমর্ষ মুখে তার প্রস্থানপথের দিকে কিছুক্ষণ চেয়ে রইলেন,তারপর ঘরে প্রবেশ করে নিভৃতে বসে তার আসন্ন দুঃখের দিনগুলির কথা নীরবে চিন্তা করতে লাগলেন।এদিকে সারাদিনের ধকল এবং তিক্তকর অভিজ্ঞতায়  অসহায় কাব্য পুরোপুরি দুর্বল হয়ে পড়ায় তার মা তাকে তার বিছানায় শুইয়ে দিল।ইনসানের প্রস্থানের পর থেকে কাব্য যতক্ষণে ঘুমিয়ে পড়ল ততক্ষণে তাদের বাড়ির আঙিনায় উৎসুক জনতার স্রোত একেবারে শূন্যে নেমে এসেছে।

০ Likes ০ Comments ০ Share ৫১২ Views

Comments (0)

  • - মেঘা নওশীন

    ভাললাগা জানালাম...!!! 

    • - ওয়াহিদ মামুন

      অর্থবহ সুন্দর লেখা।

       

    - ওয়াহিদ মামুন

    অর্থবহ সুন্দর লেখা।

    - তামান্না তাবাসসুম

    সুন্দর লেখনী