Site maintenance is running; thus you cannot login or sign up! We'll be back soon.

~ মানুষ পুড়িয়ে মারার রাজনীতি ও লুটপাটতন্ত্রের বিরুদ্ধে সংগ্রাম চলবে ~

গত ০৬/১২/২০১৩ তারিখে শাহবাগে অনুষ্ঠিত "মানুষ পুড়িয়ে মারার রাজনীতি ও লুটপাটতন্ত্রের বিরুদ্ধে সংগ্রাম চলবে " নামক আয়োজনে বহু লেখক-শিল্পী-সংস্কৃতিকর্মী-শিক্ষক-শিক্ষার্থী-রাজনৈতিককর্মী-পেশাজীবীবৃন্দরা এসেছিলেন । তাদের মধ্য থেকে জোনায়েদ সাকি ভাইয়ের বক্তৃতা এইখানে দেয়ার চেষ্টা করলাম  । 


" আপনারা ইতিমধ্যেই জেনেছেন গত ৬/১২/১৯৯০ তারিখে এরশাদ সরকারের পতন হয়েছিল । তখন মনে হয়েছিল এরশাদ , জেনারেল এরশাদ যিনি স্বৈরাচারী কায়দায়
নয় বছর দেশ শাসন করেছেন , তার বোধহয় রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ শেষ হয়েছে । বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাসে , তার কবর রচিত হয়েছে । কিন্তু আমরা দেখলাম , আজকে পর্যন্ত সেই জেনারেল এরশাদ বাংলাদেশের রাজনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে । এমনকি , বর্তমান মহাজোট সরকার , তারা একটি নির্বাচন করতে চাচ্ছেন । সেই নির্বাচনের ক্রেডিবিলিটি , অর্থাৎ ন্যূনতম গ্রহণযোগ্যতা কতটুকু হবে , সেটা এখন এরশাদের উপর নির্ভরশীল । স্বৈরতন্ত্র বিরোধী লড়াই ১৯৯০ সালে করা হয়েছিল । সেইখানে এক ধরণের বিজয় অর্জিত হয়েছিল । কিন্তু ২৩ বছর ধরে সেটা প্রমাণ করছে , লড়াই কেবল করলেই হয় না । যার বিরুদ্ধে লড়াই করা হচ্ছে , কেবল তাকে পরাজিত করলেই হয় না । তাকে প্রতিস্থাপিত করে আমরা কি প্রতিষ্ঠা করতে চাইছি তা নির্ধারণ করতে হয় । এরশাদ কে সরানো হয়েছিল ঠিকই । কিন্তু এরশাদ বাংলাদেশের রাজনীতি , বাংলাদেশের অর্থনীতির , তার যে গতিপথ একে দিয়েছিলেন তা আমরা বদলাতে পারিনি । আজকে তাকিয়ে দেখুন ১৯৮৬ সালে , এরশাদ যে নির্বাচন করেছিল , বর্তমানে ঠিক সেই ধরণেরই নির্বাচনের আয়োজন করার চেষ্টা করছেন শেখ হাসিনা । পার্থক্য এইটুকুই , যে তখন সরকারে ছিল এরশাদ আর বিরোধী দলে ছিল শেখ হাসিনা । আর আজকে সরকারে আছেন শেখ হাসিনা আর বিরোধী দলে আছেন এরশাদ । এরশাদ বলছেন , " না না ১৯৮৬ সালের নির্বাচন করলে হবে না " । এখন তিনি বলছেন, " ১৯৮৮ সালেরটা করুন , কেননা খালেদা জিয়া , ১৯৯৬ সালে ১৯৮৮ সালের অনুকরণে একটা নির্বাচন করেছিলেন । আপনিও সেই পথে হাঁটুন । ষোলকলাটা পূর্ণ করুন । " অর্থাৎ বাংলাদেশের নির্বাচনের কি চেহারা সেটা আমরা এইসব ঘটনার মধ্য থেকেই দেখছি । এরশাদ , বাংলাদেশের সম্পর্ক কি হবে পার্শ্ববর্তী ভারত থেকে শুরু করে বিশ্বের সমস্ত মাতব্বর সাথে , সেটা নির্ধারণ করেছিলেন । আজকে তার চেহারা কি দেখুন !!! ভারতের পররাষ্ট্র সচিব বাংলাদেশে এসেছেন । বাংলাদেশে তার কি ইজ্জত । বাংলাদেশে তিনি প্রধানমন্ত্রী , বিরোধী দলের নেত্রী এমনকি এরশাদের সাথে বৈঠক করেন । সিভিল সোসাইটি , সাংবাদিকদের সাথে বৈঠক করেন । এমনভাবে তিনি গুরুত্ব পান যেন বাংলাদেশের মালিক এসেছেন । হ্যাঁ , বর্তমানে আমাদের শাসক গোষ্ঠীরা , যেখানে দিল্লী থেকে বাংলাদেশ স্বাধীন হয়েছে , সেখানে প্রতিনিয়ত দিল্লীর গোঁড়ামিতেই আমাদের ঢুকিয়ে দেয়া হচ্ছে ।এইটা আমরা পরিষ্কার বুঝতে পারি । আর সেইখানে ভারতের পররাষ্ট্র সচিব এসে এইখানে বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ কি হবে তার নির্দেশনা দেন । 
এরশাদ ঠিক করেছিলেন , চুরি দুর্নীতি ছাড়া এইদেশে আর কিছু থাকবেনা । যারা ক্ষমতায় যাবে তারা চুরি দুর্নীতি করবে এমন আগের ইতিহাস আছে । কিন্তু বাংলাদেশে যা কিছু করেন না কেন , পার পেয়ে যাওয়া যাবে । এই খেলায় প্রতিষ্ঠা করেছিলেন জেনারেল এরশাদ । এবং আজকের রাজনীতি দেখুন , যারা ক্ষমতায় যায় চুরি , দুর্নীতি লুটপাট ছাড়া আর কিছু তাদের মাথায় থাকে না । যেই কারণে ক্ষমতাই তারা ছাড়তে চান না । ক্ষমতায় গেলে সেইটা চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত হিসেবে , তার প্রতিষ্ঠা করে ।
এই সব কাজই আমাদের দেশে চলছে । কাজেই আজকে আমরা যারা লড়াই করব , এই লড়াই আবারো হাতছাড়া হয়ে যাবে কিনা !!! আমরা যদি এই দুই জোটের শাসন থেকে মুক্ত হতে চাই , সেই মুক্ত হতে চাওয়া দিয়েই সব কছু নির্ধারিত হবে না । টেলিভিশনে টকশোতে যারা ঐ দুই জোটের সুবুদ্ধি উদয় হওয়ার জন্য আকুতি জানাচ্ছেন , ওদের স্বদিচ্ছার জন্য আকুতি জানাচ্ছেন , ওদের( দুই জোটের) মানসিকতা পরিবর্তনের জন্য আকুতি জানাচ্ছেন , তারা আসলে ঐ দুই দলের , ঐ দুই জোটের ফ্যাসিবাদের মধ্যেই আমাদের বেধে রাখতে চাচ্ছেন সেইটা অত্যন্ত পরিষ্কার ।
গীতা রানী পরিষ্কার করে বলে দিতে পারেন , " আপনারা অসুস্থ সরকার চাইতে পারেন , আমরা অসুস্থ সরকার চাই না । " শফিকুলের বাব পরিষ্কার করে বলে দিতে পারেন , " যখন আমার ছেলে হাসপাতালে আগুনে পুড়ে কাতরায় তখন শিক্ষিত ভদ্রলোকেরা টেলিভিশন টকশোতে দলবাজির পক্ষে কথা বলে যান । এই জায়গায় আমাদের বুঝতে হবে , লক্ষ্য ছাড়া কোন কিছু অর্জন করা যায় না । ১৯৭২ সাল থেকে ৪২ বছর গেছে , শাসকরা আমাদের সামনে কোন লক্ষ্য রাখতে পারেন নি । এইটা দুর্ভাগ্য যে আমাদের প্রগতিশীল গণতান্ত্রিক রাজনীতিও আমদের সামনে কোন লক্ষ্য তৈরি করতে পারেন নি । আমাদের মূল সমস্যা এই যে সংবিধান , এই সংবিধান একটা অগণতান্ত্রিক সংবিধান , একটা স্বৈরতান্ত্রিক সংবিধান , এইটা আমরা চিহ্নিত করতে পারিনি ।রোগ চিনতে না পারলে কেবল রোগের লক্ষণের বিরুদ্ধে লড়াই করে বিজয় অর্জন করা যায় না, রোগ সারানো যায় না । বাংলাদেশ রাষ্ট্রের মূল রোগ , বাংলাদেশের এই ১৯৭২ সালের তৈরি সংবিধান , যার মধ্যে মুক্তিযুদ্ধের আকাঙ্ক্ষা প্রতিফলিত হয় নি । আজকের তরুণরা , আজকের এদেশের শিক্ষার্থী , বুদ্ধিজীবী , সাংবাদিক ও রাজনৈতিক কর্মী , তারা যখন প্রশ্ন তুলেছেন , যে নতুন গণতান্ত্রিক সংবিধান চাই , সম্ভবত এই লক্ষ্যকে আমরা আমাদের প্রধান লক্ষ্যে পরিণত করতে পারি । আমরা এই লক্ষ্যকে কেন্দ্র করে যদি ঐক্যবদ্ধ হতে পারি , তবেই হয়ত আমাদের সামনে মুক্তি আসবে । এই শাসকেরা যেই ভাবে চক্রাকারে আসছে আর যাচ্ছে আর মানুষকে আগুনে পুড়িয়ে মারছে তাদের বিরুদ্ধে আমাদের দাঁড়ানো দরকার । কিন্তু দাঁড়ানোর জায়গায় আমদের এই লক্ষ্যকে স্থাপন করা দরকার । প্রথমবারের মত বাংলাদেশে , স্বাধীন বাংলাদেশে একটা সত্যিকার জনগণের পক্ষে একটা রাজনৈতিক লক্ষ্য তৈরি হয়েছে , যে আমরা গণতান্ত্রিক সংবিধান চাই , গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র চাই । এই লড়াইকে আমদের এগিয়ে নিতে হবে এবং এই লড়াইয়ের জন্য তরুণদেরকে নতুন করে সংগঠিত হতে হবে । শাহবাগের এই মঞ্চ , শাহবাগের এই স্থান , এইটা তরুণরা নিজেদের জায়গা হিসেবে নির্দিষ্ট করেছেন । যুদ্ধাপরাধীদের বিচার ছাড়া , যুদ্ধাপরাধীদের সর্বোচ্চ শাস্তি চাওয়া, কেবল এর মধ্যেই আমাদের নিজেদের সীমাবদ্ধ থাকলে চলবেনা । যেই দেশে চুরি দুর্নীতি লুটপাট হয় ,... মুক্তিযুদ্ধের চ্যাম্পিয়ন তথা স্বাধীনতার ঘোষক দাবি করে সাধারণ মানুষকে যেই দেশে আগুনে পুড়িয়ে মারা হয়, সেই দেশে কেবল যুদ্ধাপরাধীদের বিচার চাইলেই হবে না । ৪২ বছর ধরে জনগণের বিরুদ্ধে যারা কাজ করেছে সেই গণশত্রুদেরও বিচার চাইতে হবে । আজকে সেই লড়াই চাই । আমাদের দায়িত্ব দাঁড়িয়েছে যে আজকের এই লড়াই , এই সমাবেশ আরও এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার । " 

০ Likes ০ Comments ০ Share ৩৮৯ Views