Site maintenance is running; thus you cannot login or sign up! We'll be back soon.

কল্পদেহী সুমন

৭ বছর আগে লিখেছেন

ভাগ্যের ডায়েরি

রুহি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিবিএ এর একজন ছাত্রী। রূপে-গুনে একদম মানানসই একটা মেয়ে। তার চোখগুলোতে একটা অদ্ভুত মায়া আছে, যেই মায়ায় শত শত যুবক প্রেমে গড়াগড়ি খায়। এ পর্যন্ত অসংখ্য ছেলে তাকে প্রেম প্রস্তাব দিয়ে প্রত্যাখ্যাত হয়েছে। কেউ কেউ গোপণে জানতে পারছিলো রুহি দুই বছরের সিনিয়র একজনের সাথে গত এক বছর ধরেই প্রেমের সম্পর্কে জড়িয়ে আছে। তার নাম সাদ আন্দালিব। সে বিবিএ, এমবিএ করে ইতিমধ্যে ভালো একটা বিজনেস ফার্ম খুলেছেন। মোটামুটি বেশ ভালোই উপার্জন হতে তা থেকে। সাদ আন্দালিবও ছিলেন এমনই একজন যার জন্য ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অসংখ্য মেয়ের দেওয়ানা হয়ে যেত। কিন্তু তার এক কথা নিজের পছন্দ ছাড়া আর কারও ভালোবাসায় তিনি পা ফেলবেন না। এর মধ্যেই রুহির সাথে পরিচয়, এরপর ভালো লাগা, ভালোবাসা। রুহিও বিবিএ শেষ করে এমবিএ ফাইনাল পরীক্ষা দিচ্ছে এখন। সাদ আন্দালিবের মা তখন তার বিয়ের জন্য চাপ দিচ্ছিলেন খুব। কি আর করার মায়ের জোরাজুরিতে বলেই দিলেন রুহি নামে একটা মেয়েকে সে ভালোবাসে। এ নিয়ে কয়দিন ঝামেলা হলেও পরে সবকিছু ঠিক হয়ে যায়। অবশেষে রুহিকেই বিয়ে করে সংসার শুরু করে সাদ আন্দালিব।

প্রথম একটি বছর বেশ ভালোই কেটে যাচ্ছিল তাদের সংসার। কিন্তু হঠাৎ করেই ঘটলো বিপত্তি। স্কুল জীবনে রুহির সাথে একটা ছেলের অনেক দিনের সম্পর্ক ছিলো। তখন তাদের মা-বাবার চোখে ধরা পরায় সম্পর্কটা সেখানেই শেষ হয়ে গেছিল। সেই ছেলেটি আজ বহু বছর পর রুহির খোঁজ পেল। রুহির সাথে যোগাযোগ করার চেষ্টা করছিল। ছেলেটির নাম তন্ময়। সে রুহির জন্য অপেক্ষা করে আছে এতদিন ধরে। এখন পর্যন্ত রুহির জন্যই সে কোন মেয়েকে বিয়ে করেনি। রুহিও বহুদিন পর তন্ময়কে পেয়ে আগের সেই ভালোবাসা পাওয়ার জন্য মরিয়া হয়ে উঠলো। একদিন রুহি সাদ আন্দালিবকে বিশাল এক চিঠিতে তার সব কথা ও সাথে একটা ডিভোর্স লেটার দিয়ে চিরদিনের জন্য তন্ময়ের কাছে চলে গেল। এমন কিছু সাদ আন্দালিবের মতো একজন মানুষের সাথে ঘটবে তা সে কখনো ভাবেনি।

রুহি চলে যাওয়ার পর সাদ আন্দালিব একদম চুপচাপ হয়ে গেল। ইদানিং সে আগের থেকে বেশি নামাজ, রোজায় মনযোগ দিলো। মুখে চাপ দাড়ি রাখলো। প্রতিদিন সকালে কোরআন তেলাওয়াত করে। আগের থেকে অনেক উন্নতি হলো তার এখন।

সাদ আন্দালিবের এলাকাতেই আয়াত নামে একটা মেয়ে থাকতো। আয়াত খুব ভালো একটা মেয়ে।সে জীবনে হয়তো খুব কমই নামাজ কাযা করেছে। পর্দা করা, ভালো ব্যবহার করা এসবের জন্য সে এলাকায় সুপরিচিত। তার এলাকার সবার মা-বাবা তাদের মেয়েদের আয়াতের মতো হওয়ার জন্য বলে সব সময়। আয়াত ইসলামের বাহিরের কোন কাজ কখনো করতোনা। সেও মনে মনে সেই স্কুল জীবন থেকে একটা ছেলেকে খুব পছন্দ করতো। প্রতিদিন বারান্দায় দাঁড়িয়ে সেই ছেলেটাকে দেখতো। তার ভালো লাগার কথাটা সে আর সেই ছেলেটার কানে পৌঁছাতে পারেনি। তার আগেই সে শুনেছিলো কোন একটা মেয়েকে সে ভালোবাসে। এরপরও আয়াত সেই ছেলেটাকে প্রতিদিন বারান্দায় দাঁড়িয়ে দেখতো। হয়তো ছেলেটাকে দেখে তাকে আজীবনের জন্য না পাওয়ার কষ্টটা তখন একটু কমতো। কিন্তু তার কোনকিছু করার ছিলোনা। ধর্মে প্রেম নিষেধ তাই আরও আগে সে ছেলেটাকে বলতে পারেনি তার মনের কথা। শুধু অপেক্ষা করতো, বিয়ের সময় হলেই পছন্দের কথা বলে সেই ছেলেটাকে বিয়ে করে ফেলবে। কিন্তু কপালে যে তা লেখা ছিলোনা। এর আগেই ছেলেটি রিলেশন নামক জটিল বাস্তবতায় গা ভাসিয়ে দিয়েছিল।

এদিকে সাদ আন্দালিব আয়াতের নাম শোনে তার খোঁজখবর নিতে গেল একদিন। আয়াতের সবকিছু জেনে নিজের বউ করার জন্য তার মাকে বললো। তার মাও ছেলের পছন্দ দেখে খুশি হলো আর বিয়ের ব্যবস্থা করলো।

চার বছর পর, এখন আয়াত আর সাদ আন্দালিবের সংসারে ফুটফুটে দুইটি কন্যা সন্তান। সুখের একটা সংসার তাদের। তারা দুইজন দুইজনকে খুব ভালোবাসে। সাদ আন্দালিব বিয়ের আগে আয়াতকে ভালো করে দেখেনি। বিয়ের পর যখন আয়াতের রূপ দেখলো সম্পূর্ণ নিজের করে তখন তার কাছে মনে হতো মহাবিশ্বের সব সৌন্দর্য তার হয়ে গেছে।

রচনাকাল: ১৯ নভেম্বর, ২০১৬

Likes Comments
০ Share