Site maintenance is running; thus you cannot login or sign up! We'll be back soon.

কল্পদেহী সুমন

৭ বছর আগে লিখেছেন

ছদ্মবেশী

একই স্কুল এমনকি একই কলেজে পড়তো জায়েদ আর মেহরুন। স্কুল-কলেজে জায়েদ মেয়েদের সাথে কথা তো দূরের কথা একদমই মিশতো না। দেয়ালেরও কান আছে এই সূত্রে সে তার আশেপাশের অনেক মেয়েদের চিনতো, এমনকি অনেকের কাছ থেকে তাদের বিভিন্ন রকমের গল্পও শুনতো। আর মেহরুন ছিলো ঠিক জায়েদের বিপরীত একটা মানুষ, সারাদিন বন্ধু-বান্ধবীদের সাথে যেন হইহুল্লোড় করাই তার বড় নেশা ছিলো। মেহরুন স্কুল থেকেই চশমা পরতো চোখে, সব সময় হিজাব পরতো। তবে তার চেহারা সবাই দেখতো, চেহারা ঢেকে চলাটা সে কখনো পছন্দ করতো না।

 

কলেজ শেষ হয়েছে কয়েক বছর হয়ে গেছে। কলেজের বন্ধুদের সাথে জায়েদের এতোটা সখ্যতা নেই এখন বলা চলে। জায়েদ এখন ভার্সিটিতে পড়ে, এখন আর কলেজের সেই জায়েদ নেই। সে অনেক বড় হয়ে গেছে। এখন তার বান্ধবী আছে, মেয়েদের সাথেও মিশে অন্য বন্ধুদের মতোই।

 

আজ একটু আগেই বাসায় ফিরছে জায়েদ। অন্য কোনদিন ক্লাস শেষ হওয়ার পর বন্ধুদের সাথে চায়ের দোকানে বসে আড্ডা দিতো। কিন্তু আজ কি ভেবে যেন ক্লাস শেষ করেই লাপাত্তা, তার বন্ধুরা তাকে ফোন দিয়েও পাচ্ছে না। এর মধ্যেই মেহরুনের সাথে দেখা হলো জায়েদের। মেহরুন জায়েদকে দেখেই চিনে ফেললো। জায়েদও মেহরুনকে চিনতে পারলো। মেহরুন তো এমনই একটু বেশি কথা বলে আর জায়েদ বাচাল ধরনের মানুষের সাথে কথা বলতে গেলে একদম চুপ হয়ে যায়। মেহরুন কথা বলছে তো বলছেই আর বন্ধ করছে না। অনেক কথা বললো, নিজ থেকেই জায়েদের ফোন নাম্বারও নিলো। জায়েদ কিছুই বললো না, মেহরুনের সব কথায় হ্যাঁ হ্যাঁ করে গেলো।

 

এরপর কয়দিন কেটে গেল, জায়েদের সাথে মেহরুনের কথাও হচ্ছে না, দেখাও হচ্ছে না। জায়েদও খুব একটা গুরুত্ব দেয়নি মেহরুনকে, ভুলেই গেছিল মেহরুন যে জায়েদের ফোন নাম্বার নিয়েছিলো।

 

হঠাৎ জায়েদের ফোনে একটা মেসেজ এলো, মেসেজটি মেহরুন পাঠিয়েছে।

"আমি মেহরুন। তুমি আজ কখন ফ্রি আছ? আমাকে একটু জানাবে" ।

জায়েদ সকাল থেকেই ক্লাসে ব্যস্ত থাকার কারণে মেসেজটা দেখতে পারেনি। দুপুরের দিকে ফোনটি হাতে নিলো । মেসেজটি দেখার পর জায়েদের মুখে একটা ভয়ের ছাপ ভেসে উঠলো। জায়েদ মনে মনে বলছে "না জানি এই বাচাল মেয়েটা আবার কোন প্যারায় ফেলে দেয় আমাকে।" ফর্মালিটিজ রক্ষার্থে জায়েদ মেসেজের উত্তর এমনভাবে দিলো যেন সে কোনভাবেই দেখা করার কথা না বলতে পারে। "সরি, ক্লাস আজ সারাদিন। এরপর টিউশনি। আমি রাত ১০টা পর্যন্ত ব্যস্ত। " জায়েদের এরকম মেসেজের পর মেহরুন যখন তখনই মেসেজ করলো, "ধন্যবাদ, আমি ১০টার পরই তোমাকে ফোন দিবো। " জায়েদের চেহারার বিরক্তির ছাপটা লাল থেকে কালো হয়ে গেলো। মনে মনে বলছিল, " কেন যে মেহরুনকে নাম্বারটা দিলাম, এখন বুঝাচ্ছে ঠেলা! "

 

রাত ঠিক ১০টায় জায়েদকে মেহরুনের ফোন দিলো। জায়েদ তখন বাহিরেই ছিলো। ফোন প্রথমবার ধরলোনা, ভাবলো মেয়ে মানুষ ইগোর জন্য হলেও পরে আর ফোন দিবেনা। নাহ, জায়েদের ভাবনাটাই ভেস্তে গেলো মেহরুনের বারবার ফোন করা দেখে। পরে বাধ্য হয়েই ফোন ধরলো জায়েদ।

 

-হ্যালো, জায়েদ। তোমার পড়ানো শেষ হইছে?

-হ্যাঁ শেষ।

-আমি তোমার বাসার সামনেই আছি।

-ও তাই! আমিতো বাসায়। (যদিও জায়েদ বাহিরেই ছিলো তখন)

-আচ্ছা জায়েদ

-বলো

-আমার না তোমার সাথে দেখা করা দরকার খুব

-কেন? (জায়েদ পারলে ফোনটা যেন কেটে দেয় এমন ভাব)

-আমি কিছু কিছু জিনিস বুঝতেছিনা, তুমি তো ভালো ছাত্র। আমাকে যদি একটু হেল্প করতে।

-তোমার সাথে আমার পড়া মিলবেনা। আমি কি করে বুঝাবো?

-মিলে। যে যে কোর্সগুলো মিলে সেগুলোই বোঝিয়ে দিও।

জায়েদের এমনিতেই নিজের পড়া পড়তে ইচ্ছে করেনা। এর উপর আরেকজনের পড়া। জায়েদের খুব রাগ উঠে গেল। দাঁত কিড়মিড় করে জায়েদ মেহরুনকে বললো, "দেখা যাক "।

 

জায়েদ মেহরুনকে বিরক্ত লাগার আরেকটা বড় কারণ ছিলো মেহরুনের চলাফেরা, কথা বলার ধরণ এসব ওর খুবই বিরক্ত লাগতো। আর জায়েদও কাউকে সাহায্য করতে বললে না করে পারে না। এরপর মেহরুনকে বুঝানো শুরু করে নিয়মিত। কোনদিন পার্কে, কোনদিন বাসে, কোনদিন রেস্টুরেন্টে বসে বসে বুঝাতো। পড়া বুঝাতে বুঝাতে কখনো রাস্তা পাল্টিয়ে পড়া থেকে নিজেদের ব্যক্তিগত জীবন নিয়েও কথা বলা শুরু করে। মেহরুনকে জায়েদ যেমন ভেবেছিল, সে আসলেই এমন না।ধীরে ধীরে সে মেহরুনকে চিনতে শুরু করে । ঠিক যেমন মেহরুনকে সে ভাবতো ঠিক সেরকম কিন্তু সে না । অনেক অন্য রকম ।মেহরুনের সাথে মিশতে মিশতে সে মেহরুনের পরিবার সম্পর্কে অনেক ধারনা পেতে শুরু করলো । মেহরুন তার একান্ত কিছু গোপন কথাও জায়েদের সাথে বলতে শুরু করে । জায়েদও বিশ্বাস করে যায় মেহরুনের সব কথা । প্রায় সারাদিনই তাদের কথা হতো । মেহরুন যেন জায়েদকে ছাড়া কিছুই বুঝতোনা এমন অবস্থা । মাঝেমধ্যে তো জায়েদ খুব অস্বাভাবিক পরিস্থিতির স্বীকার হতো মেহরুনের জন্য । ঘন্টার পর ঘন্টা ফোনে কথা বলতো আর বলতো ফোন না কাটতে, তার খুব ভয় লাগছে । শপিংয়ে যাওয়া, কলেজে যাওয়া সবকিছুতেই জায়েদকে তার সাথে থাকা চাই । জায়েদও সাথে থাকতো শুধু পড়াশোনাই না, এর বাহিরের নানান কাজেও মেহরুনকে সাহায্য করা শুরু করে । তবে একদিন মেহুরুন জায়েদের সাথে কথা বলতে যেয়ে এমন কিছু কথা বলে ফেলেছে যে তা শোনে জায়েদেরই লজ্জা করছিলো । যেহেতু জায়েদ আর মেহরুনের মধ্যে সেই অর্থে কোন সম্পর্ক নেই যে একান্ত ব্যক্তিগত কথাগুলোও মেহরুন জায়েদের সাথে শেয়ার করবে । জায়েদের মনে তখন একটা বিষয় খুব বেজে গেলো । মেয়েটা তো খুব ধার্মিক ভাবধারার দেখায় কিন্তু একটা পরপুরুষের সাথে তাহলে এসব কথাই বা কেন শেয়ার করতে যাবে ।জায়েদ এরকম যত মেয়ের সাথে দেখা হইছে আজ পর্যন্ত তাদের সবাইকে দেখেছে ছেলেদের সাথে মিশলেও অন্য সাধারণ মেয়েদের থেকে একটু আলাদা হয় তারা । কারণ ধার্মিক মানুষগুলো সাধারণত সাধারণ মানুষ থেকে একটু ভিন্ন হয় । শুধু ধার্মিকই নয়, সাধারণ কোন মেয়েও এভাবে করে একান্ত ব্যক্তিগত কথাগুলো তার বন্ধুদের সাথে শেয়ার করেনা কখনো । তারপরও জায়েদ স্বাভাবিক ভাবে নেওয়া শুরু করছিলো এসব বিষয়গুলো মেহরুনের ।জায়েদের মনে কখনো অন্য কোন ভাবনা আসছিলোনা মেহুরুনেকে নিয়ে । শুধু কথা বলে যেত আর সাহায্য করে যাচ্ছিলো মেহুরুনকে । মেহুরনের কোন বিষয়ে নিজের অধিকারও ফলাও করতে যায় নি সে ।মেহরুনই বিভিন্ন ভাবে তাকে বলতো মেহরুনকে যে অধিকার সে দিয়েছে তা যেন আর অন্য কাউকে সে না দেয় ।মেহরুনকে যতটা অধিকার জায়েদ দিয়েছে তা যদি অন্য কাউকে জায়েদ দেয় তাহলে সে খুব কষ্ট পাবে এমন সব বলতো । মেহরুন জায়েদের সাথে সব সময় বলতো সে বিয়ে করবেনা কখনো । তার বিয়ের দিন সে হয় আত্মহত্যা করবে না হয় পালিয়ে যাবে । কারণ বিয়ের বিষয়ে সে খুবই ভয় পায়, কারণ মেহরুনের বৈবাহিক জীবনে যে জৈবিক সম্পর্কের সূত্রপাত হয় সে বিষয়ে খুবই ভয় আছে তার ।সে জায়েদকে বলতো তার যে মাসিক মেয়েলী অসুখটা হয় সেটাতেও তার অনেক সমস্যা আছে । তার মতে জৈবিক কোন সম্পর্কের জন্য প্রস্তুত নয় । যাই হোক এসব অনেক কথাই জায়েদকে সে বলতো । জায়েদও তার এসব কথায় , তার কষ্ট দেখে বিশেষ করে তার ভয় দেখে তাকে অভয় দেওয়ার চেষ্টা করতো । যদিও জায়েদের এসব বিষয়ে কোন অধিকার নেই মেহরুণের উপর ।

 

জায়েদ মেহরুনকে তার ভীত সন্ত্রস্ত পরিস্থিতি থেকে মুক্ত করার জন্য নানান ধরনের গল্প শুনাতো । মেহরুনকে নানান ভাবে কল্পনার জগতে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করতো যেন সে ভুলে যায় তার ভয়ের কারণগুলো সহজেই । এক ধরণের মায়া জন্মে গেছিলো জায়েদের মনে মেহরুনের জন্য । মেহুরুন জায়েদকে অনেক কিছু বোঝানোর চেষ্টা করতো যে সে জায়েদের সাথে যেসব কথা শেয়ার করে তা অন্য কারও সাথে সে করেনা ।জায়েদও ভাবতো একটা মেয়ে তার এসব কথা কেনইবা অন্য ছেলেদের সাথে শেয়ার করবে? মেহরুন জায়েদকে নিজের খুব আপন কেউ করে নিছিলো । এই যুগে যেটাকে বয়ফ্রেন্ড বলে চালিয়ে দেয়া যেতে পারে ।এমন যখন সম্পর্কের পরিস্থিতি তখন সেটাকে জায়েদ ঠিক কোন ধাচেই নিতে পারছিলোনা । মেহরুনের মুখ থেকে শুধু ভালোবাসি শোনাটাই বাকি আছে কিন্তু ভালোবাসার চেয়েও বড় কিছু যদিও সে বলেও দিয়েছে জায়েদকে । আজকাল জায়েদেরও মেহরুনকে দেখতে ইচ্ছে করে । একবারের জন্য হলেও প্রতিদিন তার মেহুরনের সাথে দেখা করা চাই । মেহরুনও দেখা করতো, যত রাতই হোক জায়েদের সাথে এক নজর দেখা করতো সে । জায়েদ কোন প্রয়োজনে কোথাও গেলে মেহরুন কেঁদে অবস্থা খারাপ করে দিতো । এমনকি ফোন অফ রাখলে জায়েদ, মেহরুন মরে যাবে এমন সব কথাও বলতো ।জায়েদ তাও বুঝতে চাইতো না মেহরুন তাকে কোন অবস্থায় ভাবা শুরু করে দিয়েছে । এভাবেই চলছে তাদের মধ্যে সম্পর্ক । যদিও সেটাকে কখনো কোন সম্পর্ক বলেনি জায়েদ ।

 

মেহরুন আজকাল তার বিয়ের বিষয়ে কথা বলে বেশি বেশি । তার কাছে আজ এসব নিয়ে কথা বলাটা খুব মজার বিষয় আর গুরুত্বপূর্ণ হয়ে দাঁড়িয়েছে ।জায়েদের মাথা তখন ঘুরে গেল, যেই মেয়েটাই একদিন বিয়ে করার কথা শুনলে আত্মহত্যার চিন্তা করতো সেই আজ বিয়ে কথা বলছে ।জায়েদ ভাবছে হয়তো তার ভয়টা কমে গেছে এখন ।জায়েদের সাথে মেহরুন বলতো বিয়ের পর সে কি করবে না করবে এসব । সে তার স্বামীর হাতে রান্না খাবে সব সময় , নিজে রান্না করতে পারবেনা ।বাসায় শর্ট শর্ট ড্রেসগুলো পরবে । জায়েদ ভাবতো মেয়েটা এসব কি বলে, সে কি পাগল হয়ে গেছে নাকি । তবে একটা কথা তার খুব মনে লেগেছে সেটা হলো সে কখনো শুশুড় বাড়িতে সবার সাথে মিশে থাকবেনা ।একা স্বামীকে নিয়ে আলাদা বাসায় থাকবে । আলাদা যাওয়ার কারণ নাকি তার পর্দা । যাই হোক জায়েদ এসব নিয়ে কখনো মেহরুনের সাথে বাকবিতন্ডায় যেতো না ।সে ভাবতো মেহরুনের সাথে বাকবিতন্ডায় যাওয়া আর সময়গুলো নষ্ট করা একই কথা ।যেহেতু জায়েদের মেহরুনের সাথে এরকম কোনই সম্পর্ক নেই তাই মেহরুনের এমন কথায় তাকে কোন প্রতিক্রিয়া দেওয়ার প্রয়োজনও বোধ করেনি ।

 

এভাবেই চলে যাচ্ছে তারা বেশ ভালোই ।হঠাতই একদিন মেহরুন জায়েদকে ফোন দিয়ে যা বললো একটা মেয়ের মুখ থেকে এসব কথা শোনার জন্য জায়েদ কখনো প্রস্তুত ছিলোনা ।

 

-আমার না খারাপ হয়ে যেতে ইচ্ছে করছে খুব ।(মেহরুন)

-কেন? (জায়েদ)

-জানি না, হওয়া উচিত ।আমার কারও সাথে থাকা উচিত এখনই ।(মেহরুন)

-মানে? (জায়েদ)

-একটা রুম ভাড়া করো, কিভাবে করবে আমি জানি না কিছু ? (মেহরুন)

-কেন? কি করবে? (জায়েদ)

-তোমাকে আমার সবকিছু দিয়ে দিবো । নিজের সতীত্ব ।(মেহরুন)

-কেন? হঠাত এসব বলছো কেন? (জায়েদ)

-আমি অন্য কারও হওয়ার আগে তোমার হতে চাই একবারের জন্য হলেও ।(মেহরুন)

-দেখো এসব বলেনা । পরে এসব বলার জন্য নিজেই লজ্জা পাবে নিজের কাছে ।(জায়েদ)

 

জায়েদ কোন ভাবেই মেহরুনকে থামাতে পারছেনা । এমন পরিস্থিতিতে কি করবে কিছু বুঝতেছে না জায়েদ ।মেহরুন বলছিলো জায়েদ যদি রাজি না হয় অন্য কারও সাথে এসব কিছু করবে সে । জায়েদ ভাবলো মেয়েটা কি না কি করে বসে আজ । জায়েদ শেষ পর্যন্ত রাজি হলো ।

 

কয়দিন পর জায়েদ মেহরুনের সাথে দেখা করতে গেলো ।মেহরুন বললো সে খুব লজ্জিত ঐদিনের ব্যবহারের জন্য । জায়েদও বললো “ঠিক আছে , আমি কিছু মনে করিনি ।সেদিন আমি যদি তোমাকে সিনেমা দেখতে না নিয়ে সত্যিই কোন রুমে নিয়ে যেতাম তাহলে কি হতো চিন্তা করছো কখনো ।“ মেহরুন জায়েদকে কিছু না বলে চুপ হয়ে বসে ছিলো । জায়েদ ভাবছিলো এতো ধার্মিক একটা মেয়ে মেহরুন সে কেন এমন ব্যবহার করছে তার সাথে । স্কুল-কলেজের সেই চেনা মেহরুন বাস্তবে কতো অন্য রকম । সত্যিই মানুষগুলো খুব অন্য রকম । বিশেষ করে তাদের আসল চেহারা বোঝাই বড় মুশকিলের বিষয় আজকাল ।যেই মেহরুনকে ভাবতো খুব ভদ্র আর ধার্মিক একটা মেয়ে সেই যে রূপে জায়েদের সামনে নিজেকে পেশ করছে তা সত্যিই অবাক করার মতো বিষয় ।সেই বিষয়টা জায়েদ তাও মেনে নিয়েছিলো, ভেবেছিলো হয়তো জায়েদই এক মাত্র ব্যক্তি যার সাথে মেহরুন এমন করছে ।এ ভেবেই জায়েদ চুপ থাকতো একটা অজানা কারণেই ।

 

এরপর কয়েক মাস কেটে গেলো । মাঝে মেহরুন তার নানার বাড়িতে ঘুরতে গেলো । কয়দিন কাটানোর পরই বলছে সে ঢাকা ফিরে আসবে । সেখানে তার ভালো লাগছেনা । ঠিক সেই কথা চলেই আসলো ঢাকা । যাই হোক ঢাকা এসেই জায়েদের সাথে তার দেখা করার কথা হলো । কিন্তু মাঝে আচমকা কি ভেবে যেন মেহরুন বললো তার এক বন্ধুর সাথে সে আগে দেখা করবে । এতোদিন ধরে সব সময় জায়েদকে গুরুত্ব দিতো দেখা গেছে আজ হঠাতই সে অন্য কাউকে গুরুত্ব দিচ্ছে যেটা জায়েদকে রীতিমতো অপমান করার মতো । যাই হোক দুপুর থেকে রাত হয়ে গেলো জায়েদের সাথে সেই কখনই দেখা করার কথা । জায়েদ এই প্রথম মেহরুনের জন্য এভাবে নিজে থেকেই অপেক্ষা করছে ।এক সময় অপেক্ষার পাল্লা খুব ভারী হয়ে যায় । জায়েদও খুব ক্ষিপ্ত হয়ে উঠে । ফোন দিয়েই মেহরুনকে ধমক দেয় কয়েকটা ।মেহরুন শুধু হাসে তখন । যদিও দেখা করার পর বলে দেয় “তোমার সাথে আমার আজই শেষ দেখা, এরপর আর দেখা হবেনা তোমার সাথে ।“ জায়েদ ধমক দেওয়ার জন্য মেহরুনের কাছে দুঃখ প্রকাশ করছে তারপর কয়েকবারই । তাও মেহরুনের রাগ সেদিন আর কমেনি ।হঠাত করেই মেহরুন পাল্টে গেলো । আর আগের মতো জায়েদের সাথে কথা বলছে না, এমনকি সারাদিনও একবারের জন্য জায়েদকে ফোন দেয় না মেহরুন । যাই হোক জায়েদও মেহরুনের এই কথাগুলো মেহুরুনের এক বন্ধুর সাথে শেয়ার করে । তখন মেহরুনের সেই বন্ধু জায়েদকে বললো মেহরুন এমন অনেক ছেলের সাথেই করে । এমনকি জায়েদের সাথে যেসব কথা বলে তার থেকেও আরও বেশি কিছু সে অন্য ছেলেদের সাথে বলে ।স্বামী-স্ত্রীর মতো অনেকের সাথেই কথা বলে, মিশে সে । এমনকি এই কথাটা মেহরুনকে জিজ্ঞেস করে জায়েদ আরও পরিস্কার হয় যে সে আসলেই অন্য ছেলেদের সাথেও এমন করে মিশে ।জায়েদের এই কথা শোনার পর আর কিছু শুনতে ইচ্ছে করলোনা ।এতদিন যে বিশ্বাসটা ছিলো মেহরুনের উপর সেটা এক নিমিষেই ভেস্তে গেলো ।

 

মেহরুন ধার্মিক মুখোশের আড়ালে একটা অভদ্র, অশ্লীল রূপকে ধারণ করে আছে। এমনকি মেহরুনের পরিবারও জানে মেহরুন খুব ভদ্র আর ধার্মিক একটা মেয়ে ।এই কথাটা সে জায়েদকেও বলতো যে সে বাহিরে এক রকম কিন্তু বাসায় ঠিক তার উল্টো রকম । কেউ কল্পনাও করতে পারবেনা সে এরকম । যাই হোক সেদিনের পর জায়েদের সাথে মেহরুনের আর কোন যোগাযোগ রইলোনা । সব ধরনের যোগাযোগ জায়েদ বন্ধ করে দেয় মেহরুনের সাথে । যদিও একটা আঘাত পেয়েছে জায়েদ এই ছদ্মবেশী মেহরুনের কাছ থেকে যেটার পুরুত্বও কম বলে দিয়ে পাড় পাওয়া যাবেনা ।

Likes Comments
০ Share