পৃথিবীর সবাই স্বার্থপর। কথাটা মা'কে একটু ঘুরিয়ে ফিরিয়ে বলতেই তিনি আমার দিকে সন্দেহের দৃষ্টিতে তাকালেন এবং ব্যাপারটা ঝারি মেরে উড়িয়ে দিলেন। অথচ ব্যাপারটা সত্যি। আজ থেকে ঠিক তিনদিন আগে একটি দিন ছিলো এবং সেই দিনটির শেষের দিকে আমার এক মামা একটি হাঁস নিয়ে আমাদের বাসায় হাসিমুখে উপস্থিত হলেন। রাত বেশি হয়ে যাওয়ায় হাঁসটির প্রাণদণ্ড স্থগিত করা হলো। পরের দিন সকালে তাকে জবাই করা হবে এরকম ধারণা নিয়ে আমি ঘুমুতে গেলাম। হাঁসটি ঘুমুলো না। সে সারারাত কোন এক বিদগ্ধ প্রেমিকার মত জেগে থাকলো এবং ধরে নেই তার প্রেমিককে ডাকা ডাকি করলো।
পরদিন দুপুরে ঘুম ভাঙতেই শুনলাম হাঁসটি আমাদের একটি ডিম উপহার দিয়েছে। ডিমটি বড়ো এবং সুন্দর। বড়ো এবং সুন্দর এই ডিমটি উপহার দেয়ার কারণে সেদিন তাকে জবাই করা হলো না। তাকে খেতে দেয়া হলো। সে গম্ভীর ভাবে সারা বারান্দায় পায়চারি করে। ভাত খায়।
রাতে ঘুমুতে যাওয়ার সময় আমি তার ডাক শুনি। ছোট ভাই এবং আমার কাজিন ভবিষ্যৎ ডিমটির সাইজ নিয়ে আলোচনা করে। আমার চোখ ছলছল করে। যেদিন সকালে ডিম দেবেনা সম্ভবত সেদিনই তাকে জবাই করা হবে। প্রতিদিন একটি ডিম পাড়ার উপর তার জীবন নির্ভর করছে। মানুষ কতটা নিষ্ঠুর এবং স্বার্থপর হতে পারে আমি সেই চিন্তা করতে করতে ঘুমানোর চেষ্টা করি।
রাতে ঠিকমত ঘুমুতে পারিনা। ভয়াবহ দুঃস্বপ্ন দেখি। এইতো আজ দেখলাম এক মেয়ে আত্মহত্যা করেছে। মেয়েটি যেই ঘরে আত্মহত্যা করেছে সেই ঘরটিতে আমাকে থাকতে দেয়া হয়েছে। ক্যানো দেয়া হয়েছে আমি জানি না। সেই ঘরে মেয়েটির আত্মা ঘুরঘুর করে। আত্মা সাদা রঙের শাড়ি পরা। সে বিচিত্র ভঙ্গিমায় আমাকে ভয় দেখায়। আমি ভয় পাই। চিৎকার দিয়ে বিছানায় উঠে বসি। আমার চিৎকার শুনে বারান্দায় থাকা হাঁস ব্যাকুল স্বরে ডাকাডাকি করে। আমার ভয় বেড়ে যায়। গলা শুকিয়ে আসে। পানি খেতে গেলে মাঝে একটা ঘর পার হয়ে যেতে হবে। পানি খেতে পারি না। কাঁদতে ইচ্ছে হয়।
স্বার্থপর মানুষের ভীরে বাঁচতে ইচ্ছে হয় না। মরতেও ইচ্ছে হয় না। মৃত্যু ভয় পাই। শুধুমাত্র বেঁচে থাকার জন্যে স্বার্থপর মানুষের ভীরে বেঁচে আছি। যেহেতু কোন একটা কারণে বেঁচে আছি তাই আমিও স্বার্থপর। ক্যামন যেন লাগে। ইচ্ছে হয় কেউ একজন হাত ধরে বলুক... 'আমাকে ভালোবাসবে? তাহলে আমিও তোমাকে ভালোবাসবো। আমিও স্বার্থপর।' দুজন স্বার্থপর মানুষ মিলে বেঁচে থাকবো। দুঃস্বপ্ন দেখে চিৎকার করে উঠলে সেই মানুষটা এক গ্লাস পানি এনে দেবে। সেই পানিটা এক ঢোকে খেয়ে ফেলে বাকী রাত জেগে কাটিয়ে দেবো। এমন হলে স্বার্থপর পৃথিবীটাকে এতোটা মন্দ লাগবে না। মনে হবে, স্বার্থপর পৃথিবীটা এতো সুন্দর! এতোটা সুন্দর হয় কি করে!
Comments (12)
তখন না হয় বেকার ছিলাম
এখন করি কর্ম
তবে কেন রাজী হবি না
এ কেমন তোর ধর্ম?
বেকার বলে ভালোবাসা
শুঁকিয়ে কি যায়?
বেকার বলে ভালোবাসার
সময় পাওয়া যায়।
শুভকামনা সবসময় বৈশাখী ঝড়।
ধন্যবাদ
ছড়ার ভুবনে স্বাগতম ঝড়। যেহেতু এই ভুবনে ঢুকে পড়েছেন, তাই হয়তো একটু শ্রম দিলে ঠিকই আপনি ভালো করবেন।
*ছড়ার প্রথম স্তবকে আপনি দ্বিতীয় লাইন এবং তৃতীয় লাইনে অন্ত্যমিল রেখেছেন।
*দ্বিতীয় স্তবকে আপনি চার লাইনের জায়গায় পাঁচ লাইন করেছেন। এটা ঠিক হয় নাই। ছড়ার প্রতি স্তবকে সমান সংখ্যক লাইন থাকতে হবে। অন্তমিলেই তাই ভুলটা রয়ে গেছে।
*চতুর্থ স্তবকে কোন অন্ত্যমিল নাই
*পঞ্চম এবং ষষ্ঠতেও একই হয়েছে।
*পুরো ছড়ার মধ্যে মাত্রা বিভ্রাট আছে।
ছড়ায় প্রথম স্তবক যেভাবে সাজাবেন, পরবর্তী সবগুলো স্তবক সে ভাবেই সাজাতে হবে। সাথে মাত্রা, অন্ত্যমিল ঠিক রাখতে হবে।
অনেক অনেক শুভ কামনা রইলো ঝড়। ছড়া লেখার ব্যাপারে আপনি ইচ্ছা করলে শাহিদুল হক ভাইয়ের কাছ থেকে টিপস নিতে পারেন। উনি এই ব্যাপারে মাস্টার। এতো সব যন্ত্রণা পোহাতে হয় বলে আমি ছড়া লেখা ছেড়েই দিয়েছি। প্রথম ভেবেছিলাম পানির মতো সহজ। কিন্তু লিখতে গিয়ে বুঝলাম এটা আসলে সহজ নয়। তবে মাত্রা জ্ঞান থাকলে আসলেই মোটামুটি সহজ।
এতো কঠিন এটা তো ভাবি নাই। ধন্যবাদ আপনার সুন্দর মন্তব্যর জন্য