এমন কোন মানুষ কি আছে যার জীবনে কোন ভৌতিক অভিজ্ঞতা নেই? উত্তর হলো.. না। মানুষের জীবনে ভৌতিক অভিজ্ঞতা থাকবে এটা আর্কিমিডিসের সূত্রের মতোই ধ্রুব। নিজেকে মানুষ প্রজাতিতে ফেলতে হলে আমার জীবনেও কোন না কোন ভৌতিক অভিজ্ঞতা থাকতেই হবে। দুঃস্বপ্ন কোঠাটা বাদ দিলে আমার জীবনেও দু একটি ভৌতিক ঘটনা ঘটেছে। একটি উল্লেখ করার লোভ সামলাতে পারছি না।
আরো অনেকের মতো আমার সেই ভৌতিক ঘটনাটি ঘটেছিলো গ্রামে। প্রচন্ড শীত। সময় মধ্যরাত। চার পাঁচটা মোটা কাঁথা গায়ে দিয়ে ঘুমুচ্ছিলাম। পাশে ছিলো ফুপাতো এক ভাই। সেও ঘুমুচ্ছিলো। তার ঘুম গভীর।
হঠাৎ আমার ঘুম ভেঙে যায়। ঘুম ভাঙার কারণ হচ্ছে জলবিয়োগের চাপ। প্রচন্ড সেই চাপের কাজটি করতে হলে আমাকে বাইরে যেতে হবে। বাইরে যাওয়ার কথা মনে পড়তেই ভয়ে গলা শুকিয়ে এলো এবং চাপ বেড়ে গেলো। বিচ্ছিরি অবস্থা। আমি ফুপাতো ভাইয়ের ঘুম ভাঙাতে রীতিমত যুদ্ধ শুরু করে দিলাম। ঘুম ভাঙে না। ভাই কোনমতে অস্পষ্ট গলায় বললেন... বেড়ার ওইপাশে গিয়া মোত!
ভূতের ভয়ে বিছানা ভিজানোর কোন মানে হয় না। আমি এক বুক সাহস সঞ্চয় করে বিছানা থেকে নামলাম। গুটিগুটি পায়ে হেঁটে দরজা পর্যন্ত গেলাম। ভয়াবহ অন্ধকার। কলজে শুকিয়ে কাঠ। বেড়ার ওপাশে গিয়ে চোখ বন্ধ করে কাজ শুরু করলাম।
আমি যখন জলবিয়োগের মাঝপথে তখনই ঝনঝন করে শব্দ হলো! শীতের নীরব রাত। এর মাঝে ঝনঝন শব্দটা পৃথিবী কাঁপিয়ে দিলো। আমি দিলাম দৌড়। এক দৌড়ে কাঁথার নিচে। দোয়াদরূদ যা মনে আছে তাই বিরবির করে পড়ছি। পড়ার গতিবেগ ঘণ্টায় একশো মাইলের মতো।
সকালে ঘুম ভাঙলো। উঠে দেখি ভাই নাক কুঁচকে বসে আছে। কাঁথা থেকে বিচ্ছিরি গন্ধ আসছে। আমারো নাক কুঁচকে উঠলো। কেউ কাউকে দোষ দিতে পারছি না। দুই ভাইয়ের জামা এবং কাঁথা থেকেই গন্ধ আসছে। আমি উঠে বাইরে চলে আসি। গোসল করতে হবে। শীতের দিনে সকালে পুকুরে গোসল করাটাও একটা সমস্যা। সামান্য একটা ঝনঝন শব্দ কি পরিমাণ সমস্যার সৃষ্টি করতে পারে সেদিনই বুঝলাম।
ঝনঝন শব্দের রহস্য নিজে নিজেই বের করে ফেলি। বাড়ির একটু দূরেই চাপকল। চাপকলের চারপাশ বাঁধানো। আমার দাদাজান তখন অজু করতে এসেছিলেন। তার পিতলের বদনা হাত থেকে পড়ে গিয়েছিলো। সেই শব্দেই যত সমস্যা। দাদাজান এখন নিশ্চয়ই বেহেশতে আছেন। আমার বেহেশতে যাওয়ার সম্ভাবনা প্রায় শূন্যের কোঠায়। তবুও যদি যেতে পারি তাহলে দাদাকে ঘটনাটা খুলে বলবো এবং একটি ধন্যবাদ দেবো। অন্তত তার পিতলের একটি বদনার কারণে আমি একটি সুন্দর(!) ভৌতিক অভিজ্ঞতা অর্জন করেছি। মন্দ কি!
Comments (13)
ভালো লাগলো। ধন্যবাদ, ভাই এবিএম সোহেল রশিদ।
প্রীত হলাম