Site maintenance is running; thus you cannot login or sign up! We'll be back soon.

শেখ আব্দুল্লাহ্ আল-কাফী

৮ বছর আগে লিখেছেন

অতঃপর মিসির আলী

 
                                                (দ্বিতীয় সংখ্যা)
হাফেজ সাহেব- এটা তোমরা ঠিক কর নি।এই সময়ে এদিক দিয়ে যাওয়াটা তোমাদের জন্য যথেষ্ট ঝুঁকিপূর্ণ।একটু কষ্ট হলেও চলাচলের জন্য তোমরা সবসময় স্বাভাবিক রাস্তাটা ব্যবহার করবে।
মিতা- আপনি চিন্তা করবেন না,চাচা।আমরা ঠিকই যেতে পারব।
হাফেজ সাহেব- না,না আমি বলছি তোমরা ফিরে যাও।
বয়োবৃদ্ধ কোন ধার্মিক লোকের তরফ থেকে এরকম বিধি নিষেধ আরোপের পর আর কোন কথা চলে না তবুও এতক্ষণে মুখ খুলল কাব্য।
কাব্য- অনেক আলোচনার পর আমরা এরকম একটি সাহসী সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছি।এখন আপনি দয়া করে আমাদের প্রতিজ্ঞা ভঙ্গ হতে দিবেন না।
প্রতিউত্তরে আর কিছু না বলে আব্দুর রউফ সাহেব অত্যন্ত গম্ভীর ভাব ধারণ করে সামনে এগিয়ে চললেন।বালিকারা পুনরায় তাদের কাজে প্রবৃত্ত হল।তারা স্বাভাবিক গতিতে এগিয়ে চলল ভয়ংকর রাস্তা ধরে।কবরস্থান পর্যন্ত পৌছানোর পরও তাদের মধ্যে কোন ভীতিবোধ কাজ করল না।বরং সেদিকে ভ্রুক্ষেপ না করেই তারা চলতে লাগল।আরো কিছুদূর এগিয়ে যাওয়ার পর কবিতা আবিষ্কার করল কাব্য তাদের সাথে নেই।এমন সময় হঠাৎ পেছন থেকে কাব্যের হাসির শব্দ শুনতে পাওয়া গেল।চমকে উঠে পেছনের দিকে তাকালো সবাই।ঠিক যেখানটাতে কবরস্থান তার পাশে দাড়িয়ে অদ্ভুতভাবে হাসছে সে।সে হাসি যেন কিছুতেই থামতে চায় না।আরো একটি লক্ষণীয় ব্যাপার হল তার কণ্ঠস্বর পরিবর্তিত হয়ে অনেকটা পুরুষের ভাব ধারণ করেছে।
ঘটনার আকস্মিকতায় তার অপর চারজন বান্ধবী হকচকিয়ে গেল।তাদের মধ্য থেকে মিতা ভয়ে ভয়ে জিজ্ঞেস করল- কিরে ওখানে দাড়িয়ে গেলি কেন?আর ওমনভাবে পাগলের মত হাসছিসই বা কেন?
প্রশ্ন শুনে কাব্য যেন কিছুটা বিচলিত হল।হাসি থামিয়ে এবার ভয়ানকভাবে  কাঁদতে লাগল সে।কাব্য চরিত্রের এই অস্বাভাবিক উত্থান-পতনে সঙ্গিনীদের কারোরই বুঝতে বাকী রইল না কী এখানে ঘটতে চলেছে।সীমা চিৎকার করে বলে উঠল- তোদের আমি প্রথমেই বারবার করে নিষেধ করেছিলাম এদিকে আসিস না,তোরা সে কথা শুনলি না।আমার কথা না হয় বাদ দিলাম প্রবেশ পথে হাফেজ চাচার কথাও অমান্য করলি,এজন্যইতো এখন এই অনাকাঙ্খিত বিপদে পড়তে হল।
ওর কথা শুনে ঋতু রেগে উঠে বলল- দ্যাখ সীমা,আগে কী হয়েছে না হয়েছে সেটা ছাড় এখন কী করা উচিত সেটাই করতে হবে।
ওদিকে কাব্য আপন মনে একবার হাসে তো কিছুক্ষণ পর আবার কাঁদে আর একবার প্রলাপ বকে।কাব্যের এই অবস্থা দেখে কবিতা,মিতা ও ঋতু তাকে সাহায্যের জন্য এগিয়ে চলল।সীমা ধীর পদক্ষেপে ওদের পিছু পিছু চলল।ওদেরকে এগিয়ে আসতে দেখে কাব্য এবার চিৎকার করে উঠল- দ্যাখ,আমার দিকে কেউ এগিয়ে আসবি না।আমি তোদের কাউকেই চিনি না।তোরা সবাই আমার শত্রু,সে শুধু একাই আমার বন্ধু,আমি তার বাঁধনে বাঁধা পড়েছি,সেই আমার প্রকৃত বন্ধু।কাব্যের এই তীব্র কণ্ঠস্বরে  সকলে থমকে গেল।আবারো অট্ট হাসি হেসে কাব্য বলতে লাগল- এখন থেকে এই পথ শুধুই আমার।আমি একা এপথে চলব।এখানে থাকব।আর কেউ তা করতে পারবে না।এখান থেকে আমাকে কেউ নিয়ে যেতেও পারবে না।সে আমার চতুর্পাশে দাগ কেটে একটা বৃত্ত এঁকে দিয়েছে।এই বৃত্ত থেকে কেউ আমাকে বের করতে পারবে না।কাব্যের এসব দুর্বোধ্য সংলাপে ওরা আরো ভয় পেয়ে গেল তবুও বান্ধবীর সাহায্যার্থে এগিয়ে চলল।ওদের আবার এগিয়ে আসতে দেখে দ্বিগুণ স্বরে চিৎকার করে উঠল কাব্য।কাব্যের চিৎকারে এবার আর কর্ণপাত না করে ওকে গিয়ে ধরল কবিতা ও মিতা।ওদের সাথে যোগ দিল ঋতু।সীমা আর এগুলোনা।বাকী তিনজন প্রাণপনে কাব্যকে তার কথিত বৃত্ত থেকে বের করার চেষ্টা করল কিন্তু কাব্যও ততোধিক  বেগে হাত-পা ছুড়তে লাগল।কাব্যের শরীরী শক্তি আশ্চর্যজনকভাবে বৃদ্ধি পেয়ে যেন দ্বিগুন হয়ে গেছে।অনেক চেষ্টার পর কিছুতেই সফলতা না পেয়ে ঋতু ও মিতা হাল ছেড়ে বৃত্তের বাইরে বেরিয়ে এল আর কবিতাকে এক ধাক্কায় মাটিতে ফেলে দিয়ে কাব্য আবারো ভয়ানকভাবে হাসতে লাগল।হঠাৎ যেন তার শরীরে কেউ একটা তীব্র ঝাঁকুনি দিয়ে গেল।হাসি থামিয়ে এবার সে অস্বাভাবিকভাবে কাঁপতে শুরু করল।কম্পিত কণ্ঠে সে বলল- তোরা কী ভেবেছিস এত সহজে তার ছায়া থেকে আমাকে বের করতে পারবি?কখনো নয়।ভাল চাসতো ফিরে যা।
অনোন্যপায় হয়ে চার সহপাঠী গ্রামবাসীর সহায়তা কামনায় চিৎকার করতে করতে লোকালয়ের দিকে দ্রুতবেগে ছুটতে লাগল।ওদের চিৎকারে বিপরীত দিক থেকে প্রথমে ওদেরই বন্ধু শফিক আর তানভির ছুটে এল।অন্য দিক থেকে নিকটস্থ কিছু গ্রামবাসীও এগিয়ে এল।লোকজনকে এগিয়ে আসতে দেখে সকলের উদ্দেশ্যে কবিতা বলে উঠল- কাব্যকে জ্বীনে পেয়েছে,আপনারা সকলে একটু এগিয়ে আসুন।
আক্রান্ত কাব্য তখনো কাঁপছে।গ্রামের লোকজনকে নিজের দিকে এগিয়ে আসতে দেখে তাদেরকে সে অশ্রাব্য ভাষায় গালি দিতো লাগল।পরিচিত গ্রামবাসীদের কাউকেই সে চিনতে পারল না।
তোর কী হয়েছে রে কাব্য, এরকম করছিস কেন?
একথা বলে পেছন থেকে শফিক এগিয়ে এল।শফিককে দেখে কাব্য আরো উত্তেজিত হয়ে বলল- দ্যাখ শফিক,আমার দিকে আসবিনা।খবরদার বলছি।
পেছন থেকে গ্রামবাসীর সহায়তায় ঋতু ও মিতা তাকে ধরতে গেলে সে পুনরায় হাত-পা ছুড়তে ছুড়তে জ্ঞান হারিয়ে মাটিতে পড়ে গেল।সংগাহীন কাব্যকে মাটি থেকে তুলতে তার বান্ধবীদের বেশ বেগ পেতে হল।কাব্যের শারীরিক শক্তির সাথে তার ওজন ও যেন কয়েকগুণ বেড়ে গেছে।উপস্থিত জনসাধারণের সহায়তায় কবিতা ও ঋতু তাকে জঙ্গল থেকে বাইরে বের করে নিয়ে এল।এরপর কাব্যকে নিয়ে তার বাড়ির দিকে ফিরতে লাগল।পথে আসতে আসতে উৎসুক জনতার ভীড় ক্রমেই বেড়ে চলল।একেবারে বাড়ির দ্বারপ্রান্তে পৌছানোর পর কাব্য হঠাৎ  চিৎকার করে ওদের নিয়ন্ত্রণ থেকে বেরিয়ে আবারো ঘটনাস্থলের দিকে ছুটতে শুরু করল কিন্তু জনসংখ্যার প্রাচুর্যের কারণে সে আর তা করতে পারল না।সকলে মিলে তাকে আটকে দিলে প্রলাপ বকতে বকতে পুনরায় জ্ঞান হারালো।(কারিগরি সমস্যার কারণে দ্বিতীয় সংখ্যাটি পুনরায় upload দেয়া হল)
Likes Comments
০ Share

Comments (1)

  • - মাসুম বাদল

    emoticons

    • - গোখরা নাগ

      ব্যাপক গবেষণা ... emoticons