Site maintenance is running; thus you cannot login or sign up! We'll be back soon.

ইফ্ফাত রুপন

৭ বছর আগে লিখেছেন

নবনীতা

খালামণি ও খালামণি, আমাকে কার্টুন এনে দাও না।

কিভাবে এনে দেব মামণি? কারেন্ট তো চলে গেছে। এক ঘণ্টার আগে তো আসবে না।

কিন্তু আমার কার্টুন দেখতে ইচ্ছে করছে। কালও দেখতে পারি নি, আম্মু তার অনুষ্ঠান দেখেছে আমাকে দেখতে দেয় নি। আমি আজো দেখতে পারবো না।

এই বলে নবনীতা কাঁদতে শুরু করলো। কারেন্ট চলে যাওয়াতে নবনীতার যতটা না মন খারাপ হয়েছে তার চেয়েও বেশি মন খারাপ লাগছে স্বর্ণার। নবনীতা স্বর্ণার বড় বোনের মেয়ে। নিজের মেয়ে না হলেও ছোট বেলা থেকে নবনীতাকে কোলে পিঠে করে স্বর্ণাই মানুষ করেছে। তার বোন আর বোনের হাসবেন্ড দুজনেই চাকরিজীবী হওয়াতে ছোটবেলা থেকে নবনীতা বেশিরভাগ সময় স্বর্ণার কাছেই ছিল। স্বর্ণার এখনো মনে আছে নবনীতার এই পৃথিবীতে আসার দিনটার কথা। প্রচণ্ড ঝড় বৃষ্টি হচ্ছিলো সেদিন। এর মধ্যে বিকেল বেলা হঠাৎ করে বড় আপার প্রচণ্ড প্রশব বেদনা শুরু হয়। বৃষ্টিতে রাস্তা ঘাটের অবস্তা এতোটাই খারাপ হয়ে গিয়েছিল যে সেদিন একটা সিএনজি কিংবা রিক্সাও পাওয়া যাচ্ছিল না। স্বর্ণার দুলাভাই হাসান ভাইয়াও সেদিন চাকরির কাজে সিলেটে ছিলেন। ঘরে একটা পুরুষ মানুষও ছিল না তাদের সাহায্য করার মতো। অবশেষে স্বর্ণা হাঁটু পানি মাড়িয়ে বাজার থেকে সিএনজি ঠিক করে এনেছিল। হসপিটালে নিতে দেরি হওয়াতে বড় আপার অবস্থা প্রচণ্ড খারাপ হয়ে যায়। ব্যাথার প্রচণ্ড ঝাঁপটায় তার চোখ মুখ কুঁকড়ে যাচ্ছিল। সিএনজিতে তিনি স্বর্ণার হাত ধরে বলেছিলেন, “স্বর্ণা আমি যদি মারা যাই আমার বাচ্চাটিকে তুই দেখিস”। স্বর্ণা প্রচণ্ড কেঁদেছিল সেদিন তার বড় আপার কথা শুনে।

অবশেষে হসপিটালে পৌঁছাবার পর সাথে সাথে বড় আপাকে ওটিতে নিয়ে যাওয়া হয়। এর মধ্যে হাসান ভাইকেও খবর দেয়া হয়েছিল। নিজের স্ত্রীর অবস্থা শুনে ঝড় বৃষ্টির তোয়াক্কা না করেই তিনি রওনা দেন। স্বর্ণার মা তার বড় মেয়ের এই অবস্থা দেখে প্রচণ্ড ভেঙে পরেছিলেন। ঝড় বৃষ্টির কারণে তাদের কোন আত্মীয় স্বজনও হসপিটালে আসতে পারছিল না তখন। স্বর্ণা ওটির একদম দরজার কাছে দাঁড়িয়ে ছিল। প্রায় এক ঘণ্টা পর নার্স সাদা কাপড়ে জড়ানো ফুটফুটে একটি শিশুকে নিয়ে বের হয়ে আসে। স্বর্ণাকে দেখে জিজ্ঞেস করে, আপনি রোগীর কি হন?

স্বর্ণা কাঁপা কাঁপা গলায় বলেছিল, আমি ওনার ছোট বোন।                   

নার্স স্বর্ণার কোলে বাচ্চাটাকে দিতে দিতে বলল, মেয়ে হয়েছে। আর চিন্তার কোন কারণ নেই। মা মেয়ে দুজনেই সুস্থ আছে।

স্বর্ণা সেদিন বুঝেছিল এই পৃথিবীতে এমন কিছু অনুভুতি আছে যা কখনো ভাষায় প্রকাশ করা যায় না, এসব অনুভুতি জীবনে দুবারও আসে না। মাত্র একবার আসে। নবনীতাকে কোলে নিয়ে স্বর্ণার সেরকমই এক ধরণের অনুভুতি হয়েছিল সেদিন। কি সুন্দর ফুটফুটে একটা বাচ্চা। ধবধবে সাদা তার গায়ের রঙ। কি মসৃণ তার ত্বক। নবনীতাকে কোলে নিয়ে স্বর্ণার মনে সেদিন প্রথমবারের মতো ইচ্ছা করেছিল, “ইস, আমার যদি এমন একটা বাচ্চা থাকতো”।  

সৃষ্টিকর্তা স্বর্ণার ইচ্ছা পূরণ করেছিলেন। ঐদিনের পর থেকে স্বর্ণা পাকাপাকিভাবে তার বড় আপার বাসায় থাকতে শুরু করে। নবনীতা আর তার বড় আপাকে দেখা শুনা করার জন্য একজন মানুষের খুব দরকার ছিল। স্বর্ণার মার বয়স হওয়াতে তিনি এতো ধকল সহ্য করতে পারবেন না বিধায় স্বর্ণা তার আপার বাসায় পাকাপাকিভাবে চলে আসে। এতে অবশ্য তার পড়াশুনার অনেক ক্ষতি হয়। কিন্তু তারপরও স্বর্ণার মনে কোন দুঃখ ছিল না। নবনীতাকে কাছে পাবে এই ভেবেই সে আত্মহারা ছিল। 

দেখতে দেখতে প্রায় পাঁচ বছর কেটে গেছে। নবনীতাও এই কয়েক বছরে বেশ বড় হয়ে উঠেছে। নবনীতাকে রীতিমতো এখন ছোট্ট একটা ডানা কাটা পরীর মতো লাগে স্বর্ণার কাছে। ঈশ্বর নিজ হাতে নবনীতাকে বানিয়েছেন। কেমন যেন একটা শুভ্র শুভ্র ভাব আছে এই মেয়েটির মধ্যে। স্বর্ণার বোন কিংবা দুলাভাই কেউই ওতোটা সুন্দর না। কিন্তু নবনীতা কিভাবে এতোটা সুন্দর হোল তা স্বর্ণা কখনো ভেবে পায় না।

নবনীতা প্রতিদিন সন্ধ্যায় কিছুটা সময় কার্টুন দেখে। সে একা একা দেখতে চায় না বিধায় স্বর্ণাকেও তার সাথে বসে কার্টুন দেখতে হয়। রাতে বড় আপা এসে নবনীতাকে পড়াতে বসেন আর সারাদিন স্কুলে থাকার কারণে নবনীতা এই কিছুটা সময়ই পায় কার্টুন দেখার জন্য। কিন্তু কিছুদিন ধরে নিয়মিত লোড শেডিং হবার কারণে নবনীতা কার্টুন দেখতে পারছে না। টিভি না দেখতে পারলে প্রচণ্ড মন খারাপ করে এই মেয়েটা। গতকাল কারেন্ট ছিল কিন্তু বড়আপা তার এক বান্ধবীর বিয়ের অনুষ্ঠানের ডিভিডি দেখায় নবনীতা তার কার্টুন আর দেখতে পারে নি। আজ অনেক আশা নিয়ে বসেছিল সে। কিন্তু কারেন্ট আবারো চলে গেলো। স্বর্ণারও প্রচণ্ড খারাপ লাগছে নবনীতার জন্য। কোন একটা কারণে এই মেয়েটিকে হাসি খুশি দেখতে অনেক ভালো লাগে তার।

খালামণি কি করবো আমি এখন? কারেন্ট এনে দাও না।

খালামণি তো কারেন্ট এনে দিতে পারবো না মামণি।

আমি তাহলে কিভাবে কার্টুন দেখব এখন? আমি কালও দেখতে পারি নি।

এই বলে নবনীতা নিঃশব্দে কাঁদতে শুরু করে। প্রচণ্ড অভিমানী হয়েছে এই মেয়েটা। অভিমানী মানুষেরাই নিঃশব্দে কাঁদে। স্বর্ণা কোন কিছু চিন্তা না করেই হঠাৎ বলে বসলো, মামণি চল ছাদে যাই। যাবে?

নবনীতা মাথা নিচু করে কাঁদছিল। সে অবস্থায়ই বলল, ঠিকাছে চল।

ছাদে বেশ ভালো লাগছে স্বর্ণার। প্রায় আসে সে এই ছাদে। বিশেষ করে তখন যখন তার মন বেশ খারাপ থাকে। সারাদিন স্বর্ণা বাসায় এই ছোট্ট মেয়েটিকে নিয়ে একা থাকে। নবনীতার স্কুল থেকে শুরু করে যাবতীয় কাজ সব তার করতে হয় এমনকি ঘরের কাজগুলো পর্যন্ত। তার বোন দুলাভাই এতো ব্যস্ত থাকে যে নিজের মেয়েকে সময় দেবার মতো সময়ও তাদের হাতে নেই। সারাদিনে নবনীতার সাথে তাদের শুধুমাত্র রাতে কিছু সময়ের জন্য দেখা হয়। এই নিয়ে তার বোন দুলাভাইয়ের প্রতি স্বর্ণার কিছুটা অভিমানও রয়েছে। কিন্তু সে কখনো তা প্রকাশ করে না। তার এক মাত্র কারণ নবনীতা। প্রচণ্ড ভালোবাসে সে নবনীতাকে।

খালামণি কি ভাবছ?

কিছুনা মামণি।

জানো আজকে স্কুলে কি হয়েছে?

কি হয়েছে মামণি?

নবনীতা তার স্কুলের বিভিন্ন ঘটনা বলতে শুরু করলো। স্কুল থেকে এসে প্রতিদিন সে স্বর্ণার কাছে বলে আজকে সে স্কুলে কি কি করেছে। স্বর্ণা প্রতিদিন বেশ মন দিয়ে শুনে। শুনতে বেশ ভালোই লাগে তার কাছে।

এমন সময় স্বর্ণার মোবাইল ফোনটা বেজে উঠলো। রাকিব ফোন করেছে। রাকিবের সাথে স্বর্ণার সম্পর্ক আজ প্রায় তিন বছর হতে চলল। রাকিবের গ্রেজুয়েশান শেষ হবে এ বছরই। তারা চিন্তা করছে এই বছরের শেষে তারা তাদের সম্পর্কের কথা সবাইকে জানাবে। রাকিবকে বেশ ভালো লাগে তার কিন্তু বিয়ে হয়ে গেলে নবনীতার কাছ থেকে সে দূরে চলে যাবে এই কথা চিন্তা করলে মাঝে মাঝে অনেক মন খারাপ হয়ে যায় স্বর্ণার। বিয়ের পর নবনীতাকে যদি সে তার কাছে নিয়ে যেতে পারতো.........

মামণি তুমি এখানে দাঁড়াও, ছাদের কিনারে যেও না। আমি একটু কথা বলে আসছি। তুমি এখানে খেলা করো। ঠিকাছে?

ঠিকাছে খালামণি।

প্রচণ্ড বাতাস বইছে আজ ছাদে। কারেন্ট না থাকাতে চারপাশটা বেশ নীরব আর অন্ধকার। নবনীতা ছাদের মাঝখানে বসে বালি দিয়ে খেলছে। স্বর্ণা ছাদের একপাশে চলে গেলো কথা বলার জন্য। বেশ খানিকটা সময় নিয়ে কথা বলল সে। রাকিবের মন আজ খুব ভালো। খুব ভালো একটা কোম্পানিতে ইন্টার্ন হিসেবে জয়েন করার সুযোগ পেয়েছে সে। অনেকক্ষণ ধরে কথা বলল তারা দুজনে। কথা শেষ হবার পর স্বর্ণা তার ফোনটার দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে রইলো। এই কাজটা সে সবসময়ই করে। রাকিব যখন লাইন কেটে দেয় তখন সে তার ফোনটার দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থাকে। কথা শেষ করে স্বর্ণা নবনীতার কাছে যাওয়ার জন্য ফিরল।

কিন্তু একি!!! নবনীতা কোথায়?












প্রায় দুই ঘণ্টা হয়ে গেছে নবনীতাকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। এরই মধ্যে বড়আপা আর দুলাভাই চলে এসেছে। এলাকার প্রায় সব লোকজন মিলে নবনীতাকে খোঁজা শুরু করেছে। স্বর্ণা কিছুই বুঝতে পারছে না। নবনীতা তো খেলা করছিলো। সে মাত্র পাঁচ মিনিটের মতো রাকিবের সাথে কথা বলেছে। এরই মধ্যে কোন শব্দ ছাড়া কে নবনীতাকে নিয়ে যাবে? আর নবনীতাই বা নিজে থেকে কোথায় যাবে? নবনীতা অনেক লক্ষ্মী একটা মেয়ে। স্বর্ণাকে বলা ছাড়া সে এক কদমও সামনে এগোয় না। আর আজ কিনা সেই মেয়েকেই খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না।

বড়আপা এর মধ্যে চিৎকার করে কান্নাকাটি করা শুরু করেছেন। শত হলেও তার মেয়ে। দুলাভাই পুলিশে খবর দিয়েছেন। পুলিশ এসে স্বর্ণাকে বেশ কিছুক্ষণ জিজ্ঞাসাবাদ করলো। স্বর্ণার মাথা কোনভাবেই কাজ করছে না। নবনীতা... তার নবনীতাকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না......... তার ভেতরের সবকিছু চিরে চিৎকার আসছে কিন্তু সে চিৎকার করতে পারছে না।

নবনীতাকে আশপাশের প্রত্যেকটা এলাকা এমনকি সবার বাসায় বাসায়ও খোঁজা হোল। কিন্তু তার কোন সন্ধান পাওয়া গেলো না। কারেন্ট না থাকাতে খুঁজতে বেশ সমস্যা হচ্ছিলো সবার। কিন্তু কেউই চেষ্টার কোন কমতি রাখল না। অনেকে আবার বলাবলি করতে লাগলো ছেলেধরায় নিয়ে গেলো নাতো?

স্বর্ণা ছাদে দাঁড়িয়ে আছে। বার বার সে ছাদের চারপাশে ঘুরে ফিরে দেখছে। সে কি দেখছে তা সে নিজেও জানে না। তার শুধু খালি মনে হচ্ছে নবনীতা এখানেই আছে। কোথায় যাবে সে?

রাত এগারটার দিকে স্বর্ণাকে বিকারগ্রস্থ অবস্থায় সবাই ধরাধরি করে ছাদ থেকে নিচে নামাল। তখন স্বর্ণার কথা বলার শক্তিটুকু পর্যন্ত ছিল না।











কারেন্ট এলো রাত একটায়।

ততক্ষণে সবাই প্রায় হাল ছেড়ে দিয়েছে। হিমেলের বাবা থানায় ডায়েরি করেছেন তার কন্যা সন্তান হারিয়ে যাবার। পুরো ব্যাপারটা কেউই স্বাভাবিকভাবে নিতে পারছে না। একটা জলজ্যান্ত মেয়ে কিভাবে পাঁচ মিনিটের মাথায় এভাবে উধাও হয়ে গেল।

কারেন্ট আসার পর স্বর্ণাদের বাসার দারোয়ান সবার কাছে প্রস্তাব রাখল আরেকবার মেয়েটিকে খুঁজে দেখার। সবাই আশা তখন প্রায় ছেড়েই দিয়েছিল। কিন্তু বুড়ো দারোয়ানের কথায় সবাই আবার একসাথে হয়ে খুঁজতে শুরু করলো।

পরবর্তী এক ঘণ্টায় রীতিমতো চিরুনি অভিযান চালানো হোল পুরো এলাকা জুড়ে। এবার পুলিশও তাদের সহযোগিতা করলো। নিজেদের এলাকা তো তারা খুঁজলই সেই সাথে আশপাশের এলাকা গুলোও তারা খুঁজে দেখতে শুরু করলো। সবাই যখন নবনীতাকে খোঁজার কাজে ব্যাস্ত তখন হঠাৎ কার যেন প্রচণ্ড চিৎকারে সবার বুক কেঁপে উঠলো। একজন মহিলা কণ্ঠে কে যেন চিৎকার করছে। সবাই চিৎকারের শব্দ লক্ষ্য করে ছুটে গেলো। মহিলার চিৎকার পুরোপুরি শোনা যাচ্ছিল না। তবে কিছুটা সবাই শুনতে পেল। আর সেটা হোল, “ও মাগো......... এটা কার মাইয়া গো?”

নবনীতাকে উদ্ধার করা হোল একটি নর্দমার ভেতর থেকে। নর্দমাটা বেশ গভীর ছিল। উদ্ধার করার সময় নবনীতার নাক মুখ দিয়ে রক্ত ঝরছিল। সবচেয়ে বেশি রক্ত ঝরছিল তার বাম কান বেয়ে। নিথর হয়ে পরে ছিল সেদিন নবনীতা।











আজ স্বর্ণা আর রাকিবের সপ্তম বিবাহ বার্ষিকী।

বরাবরের মতো আজো স্বর্ণা তার আত্মীয় স্বজন সবাইকে দাওয়াত করেছে। কিছুক্ষণের মাঝেই তারা সবাই এসে পরবে। স্বর্ণা অপেক্ষা করছে এখন কলিংবেল বাজার। রাকিব এখনো আসে নি। তবে কিছুক্ষণের মধ্যেই এসে পরবে। রাকিব অনেক ভালো আর সুখী রেখেছে স্বর্ণাকে। যতটা না সে ভেবেছিল তার চেয়েও বেশি সুখী আছে এখন সে।

দরজা খুলতেই সবাই এক এক ঘরে ঢুকতে শুরু করলো। বড়আপা ঢুকল কিছুক্ষণ পরেই। বড়আপাকে দেখে বুকটা ধক করে উঠলো স্বর্ণার। নিশ্চয়ই এখন নবনীতাও ঢুকবে। বড়আপা আর দুলাভাইয়ের পরেই নবনীতা ঢুকল ঘরে।

খালামণির দিকে তাকিয়ে বেশ সুন্দর করে একটা হাসি দিল সে। নবনীতাকে দেখে স্বর্ণার চোখে পানি এসে গেলো। সেদিনের সেই ঘটনার পর থেকে যতবারই সে নবনীতার মুখোমুখি হয়েছে ততবারই সে তার নিজেকে কখনো আর ধরে রাখতে পারে নি।

নবনীতা আজ খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে হাঁটে। তার বাম পাটা দুর্ঘটনার সময় কিছুটা প্যারালাইজড হয়ে গিয়েছিল। আজো সেই পা ঠিক হয় নি। নবনীতা এখন তার বাম কানে শুনতে পায় না। মাথায় প্রচণ্ড আঘাত পাওয়ার কারণে ব্রেইন হেমার‍্যাজ হয়ে গিয়েছিল তার। এখন আর নবনীতা ঠিক মতো কথাও বলতে পারে না, অন্য সবার মতো করে চিন্তা করতে পারে না। মাথায় আঘাত পাওয়ার প্রভাব তার শরীরের উপরও পরেছিল। তার হাত পা কেমন শুকিয়ে গেছে এখন। কিন্তু এতো কিছু বদলে যাবার পরও তার একটা জিনিস বদলে যায় নি। আর সেটা হচ্ছে তার হাসি। স্বর্ণার ধারণা নবনীতা এখনো তার সেই ছোটবেলার মতো করেই হাসে।

সবার খাওয়া দাওয়া শেষ হতে হতে বেশ রাত হয়ে গেলো। রাকিব অনেক সাহায্য করলো স্বর্ণাকে। সবাই যখন যে যার মতো ঘুমুতে যাচ্ছিল তখন নবনীতা স্বর্ণার কাছে এসে বলল, “ খালামণি আজ কি আমি তোমার সাথে ঘুমুতে পারি?”

স্বর্ণার চোখ ছল ছল করে উঠলো। সে এখনো ভেবে পায় না সেদিন রাতে কিভাবে নবনীতা ছাদ থেকে পরে গিয়েছিল। ছাদ থেকে পরে গেলে বাড়ির কাছাকাছি কোথাও তাকে পাওয়া যাবার কথা কিন্তু তাকে পাওয়া গিয়েছিল তাদের বাড়ি থেকে দূরে আরো দুই বাড়ির পরে অবস্থিত নর্দমার মধ্যে। নবনীতা কিভাবে ছাদ থেকে এতো দূরে গিয়ে সেদিন পরেছিল তার উত্তর আজো কেউ বের করতে পারে নি। নবনীতারও কিছু মনে নেই। বিধাতা আমাদের সবচেয়ে কষ্টের স্মৃতিটুকু ভুলে যেতে সাহায্য করেন। যাতে করে আমরা বেঁচে থাকতে পারি।

স্বর্ণা নবনীতাকে জড়িয়ে ধরে ধরা গলায় বলে উঠল,

কেন পারবি না মা? অবশ্যই পারবি...... অবশ্যই পারবি।

Likes Comments
০ Share

Comments (0)

  • - আলমগীর সরকার লিটন

    সুন্দর ফলাফল -

    • - ব্লগ সঞ্চালক

      ধন্যবাদ, নক্ষত্রের সাথে থাকুন সবসময়। 

    - আমির ইশতিয়াক

    অভিনন্দন সকল বিজয়ী লেখকদেরকে।

    • - দীপঙ্কর বেরা

      জেনে ভাল লাগল। ভাল থাকবেন। 

    - নাসির আহমেদ কাবুল

    বিজয়ীদের অভিনন্দন।

    লেখকের নাম ছাড়া  লেখাগুলো বিচারক পরিষদের কাছে পাঠানো হয়েছে। আমরা লেখা পড়ে পয়েন্ট দিয়েছি। সুতরাং, এই নির্বাচন বিচারকের পক্ষ থেকে নিরপেক্ষ হয়েছে।

    Load more comments...