Site maintenance is running; thus you cannot login or sign up! We'll be back soon.

আবু খায়ের আনিছ

৮ বছর আগে লিখেছেন

শিক্ষা ব্যবস্থা এবং আমি

আজকে ক্লাস করতে গিয়ে একটা কথা বারবার শুনতে হল। এই প্রথম তা নয় এর আগেও বহুবার শুনেছি,জানি এবং আমি নিজেও কথাগুলো বলেছি।
বিশ্বের কয়েকটা উন্নত দেশের নাম বলেন ত দেখি যারা নিজের ভাষা ত্যাগ করে অন্য ভাষায় কথা বলে???
রাশিয়া,জাপান,জার্মানী, ইতালী. চীন, আমেরিকা,ফ্রান্স কোন দেশেই তাদের মাতৃভাষার বাইরে অন্য ভাষায় কথা বলে না।
তাদের লেখাপড়া, কাজ কর্ম থেকে শুরু করে সব তাদের মাতৃভাষায় হয়। এমনকি বাইরের দেশের লোকদেরকেও তাদের সাথে কথা বলতে হলে দো-ভাষী ব্যবহার করতে হয় অথবা সেই দেশের ভাষা শিখে তাদের সাথে কথা বলতে হয়।
তারা যে ইংরেজী পারে না তা নয়। পারে তবে তারা এটার প্রয়োগ করে না।
একজন চীন এর অধ্যাপক বলেছিলেন আমার দেশের লোকসংখ্যা প্রায় পৃথিবীর অর্ধেক তাহলে আমি কেন অন্যের ভাষায় কথা বলতে যাব। বরং যার আমার সাথে কথা বলা দরকার সে আমার ভাষা শিখে আমার সাথে কথা বলূক। উনার এই কথাটায় হয়তবা কিছুটা দাম্ভিকতা প্রকাশ প্রায় কিন্তু উনার পরের কথাটায় বেশ যুক্তি আছে।
ভাষা যাই হোক না কেন শিক্ষাট হচ্ছে মূল কথা। মানুষ যে ভাষায় শিক্ষা গ্রহন করতে বেশি সাচ্ছন্দ্য বোধ করে তাকে সেই ভাষায় শিক্ষা দেওয়া উচিৎ। আর এই কাজটা করা হলে সে তার শিক্ষাটা পূর্ণভাবে গ্রহন করতে পারে।
আমাদের দেশের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে বাধ্যতামুলক ইংরেজী শিক্ষার ব্যবস্থা করা হচ্ছে। আমি এইটার বিরোধীতা করছি না। বরং আমি বলব ইংরেজী শিক্ষাকে বাধ্যতামূলক করা হলেও বাংলাকে কেন বাধ্যতামুলক করা হচ্ছে না। কথাটা পড়ার পড় অনেকেই হাসতে পারেন। বলে কি?? বাঙালী হয়ে বাংলাকে বাধ্যতামুলক করে শিখাতে হবে।
আরে ভাই একটু লক্ষ করে দেখেন, দেশেল ইংলিশ মিডিয়াম স্কুলগুলোতে বাংলা একদমই পড়ানো হয় না।
কয়েকদিন আগে কোন একটা টেলিভিশন অনুসন্ধানে বেরিয়ে আসল একটা তথ্য। ইংলিশ মিডিয়াম এর এই ছাত্রগুলো বাংলা বার মাসের নাম জানে না। জানেনা বাংলা ঋতু সম্পক্যে। এমনকি কিছু কিছু ছাত্রকে যখন প্রশ্ন করা হল বাংলা সাতদিনের নাম বলতে তখন তারা তাও পরে না। দূভাগা যাকে বলে আরকি। বিস্বাস হচ্ছে না। একটু খোজখবর নিয়ে দেখেন বিস্বাস হয়ে যাবে।
আমি বাংলা মিডিয়াম এর ছাত্র। সেই প্রথম শ্রেণী থেকে শুরু করে দ্বাদশ শ্রেণী পযন্ত বাংলায় পড়াশোনা করে আসছি। এখন বিশ্ববিদ্যালয় এ এসে আমাকে পড়তে হচ্ছে ইংরেজীতে। আমার সৌভাগ্য যে আমার শিক্ষকরা যেই বিষয়টা ইংরেজীতে না বুঝি তা বাংলায় বুঝিয়ে দেয় কিন্তু কয়জন সেই সুযোগটা পায়। তারপরেও একটা কিন্তু থেকে যায়।
আমি সহ আরো কয়েকজন আছে যারা ইংরেজীতে দূর্বল। আর এই দূর্বলতার কারণে পরিক্ষার খাতায় ঠিক মত লিখতেও পারি না। যার ফলাফল খুব খারাপ। আমাকে সহ তাদের মূল্যায়ন করা হচ্ছে সেই পরিক্ষার ফলাফলে। অথচ একটা ছাত্র ইংরেজীতে খুব ভাল কিন্তু তার অনান্য জ্ঞান খুব সীমিত বা সে পরিক্ষার খাতায় ইংরেজীতে খুব ভাল লিখতে পারে তাকে মূল্যায়ন করা হচ্ছে ভাল ছাত্র,দেশের ভবিষ্যত হিসাবে। আমরা যারা ইংরেজীতে দূর্বল তারা অন্যায়টা কোথায় করলাম?? আমরা ইংরেজী পারি না এইটাই আমাদের দোষ।
আজ পযন্ত অনেক শিক্ষক দেখেছি যারা ইংরেজীতে পড়ানোর বিরুদ্ধে। এটা তারা নিজেরাই স্বীকার করেছে। আবার তারা এও বলেছে যে তারা নিয়মের বেড়াজালে আটকানো সুতরাং কিছু করার নাই। কিন্তু একটা কথা তারা সব সময় স্বীকার করেছে যে তারা ইংরেজীতে লেকচার দিয়ে যতটা না সাচ্ছন্দবোধ করে তারচেয়ে বেশি সাচ্ছন্দবোধ করে বাংলায় লেকচার দিয়ে। এবং ছাত্ররাও বাংলায় লেকচার দিলে বুঝে বেশি।
আমার মত কিছু গাধা আছে যাদের হয়ত বাংলায় পড়াশোনা করতে দিলে কিছুটা ভাল করতে পারতাম। কিন্তু সেটা আর হচ্ছে না। ঐ যে স্যারের কথায় আমরা নিয়মের বেড়াজালে আটকা পড়ে আছি।
কোথায় যেন পড়ে ছিলাম. আমাদের দেশে ছোট্ট বাচ্ছাদের পড়াশোনায় বছর শেষে পরিক্ষা নামক একটা যন্ত্রণা দিয়ে একটা কু-বুদ্ধি মাথায় ঢুকিয়ে দেওয়া হয়, আমি খারাপ সে ভাল অথবা সে খারাপ আমি ভাল। একটা পরিক্ষা দিয়েই বিচার করা হয়ে গেল কে ভাল আর কে খারাপ।
আমি ত দেখছি অবস্থা আরো খারাপ। এই পরিক্ষার দুহাই দিয়ে একটা মানুষকে বিচার করা হচ্ছে। যে যত ভাল রিজাল্ট করবে সে তত ভাল আর যে যত খারাপ রিজাল্ট করবে সে ততটা খারাপ। কিছুটা মানা যেত যদি এই পরিক্ষাটা হত আমার মাতৃভাষায়। কিন্তু আফসোস কিছু করার নেই। ঐ যে শুরুতেই বলেছি আমরা নিয়মের বেড়াজালে আটকে পড়েছি।
পশ্চিমা দেশগুলোর সাথে তাল মিলাতে গিয়ে হারাতে বসেছি আমাদের নিজেদের জীবন,ভাললাগা,মন্দলাগা, আমাদের ইচ্ছা,আকাংক্ষা সব সব।
আমি যতদুর জানি যেইসব দেশের সাথে তাল মিলিয়ে এই মান্ধাত্বার আমলের শিক্ষা ব্যবস্থা আমাদের দেশে বিদ্যমান সেই সব দেশেও এখন আর এই অবস্থা নেই।
বিচত্র সব নিয়ম আর বিচিত্র সব জীবন।
আমাকে ডাকা হচ্ছে ক্লাসে। ইংরেজী লেকচার দিবে আর আমি সেই লেকচার শুনে শুনে মুগ্ধ হয়ে ক্লাস থেকে বের হব আর যা শুনেছি তা ঐ ক্লাসের চার দেয়ালের ভিতরেই আবদ্ধ করে রেখে আসব।
Likes Comments
০ Share