সরকারি চাকরিতে প্রবেশ ও অবসর কোনো ক্ষেত্রে বয়স বাড়ছে না। তবে শিগগিরই মূল্যায়নসহ তিন স্তরে পদোন্নতি হচ্ছে। এ ব্যাপারে কোনো চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত না হওয়ায় পদোন্নতির প্রক্রিয়াটিও মাঝ দরিয়ায় পড়ে আছে। জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
সূত্র জানায়, বছরের শুরুতে সরকার প্রশাসনের তিন স্তরে পদোন্নতি দিচ্ছে। গত মাস থেকে শুরু হওয়া ৫টি সুপিরিয়র সিলেকশন বোর্ডের (এসএসবি) পদোন্নতি সংক্রান্ত চূড়ান্ত কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। অতিরিক্ত সচিব, যুগ্ম-সচিব ও উপসচিব পদে বঞ্চিতদের পদোন্নতি দেয়ার লক্ষ্যে প্রথমত সভায় মূল্যায়ন কাজ শুরু হয়। এখন শুধু মূল্যায়ন নয়, এখন তিন স্তরে (অতিরিক্ত সচিব, যুগ্ম সচিবও উপ-সচিব) পদোন্নতি প্রক্রিয়া নিয়ে কার্যক্রম চলছে।
রোববার এ প্রসঙ্গে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব ড. কামাল আবদুল নাসের চৌধুরী বলেন, সরকারি কর্মচারীদের অবসরের ক্ষেত্রে বয়স বাড়ছে না। আর মুক্তিযোদ্ধাদের বয়স বৃদ্ধির বিষয়ে উচ্চআদালতের দেয়া রায়টি খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
সংশ্লিষ্ট এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, পদোন্নতির গোটা প্রক্রিয়া শেষ করতে আরো সময় লাগবে। এরপর কোন স্তরে কতজন কর্মকর্তা পদোন্নতি পাবেন সেই সংখ্যা নির্ধারণ করা হবে।
এদিকে উপসচিব পদোন্নতির জন্য প্রশাসন ক্যাডারে ২১ ব্যাচের কর্মকর্তাদের কাছে তথ্য চাওয়া হয়েছে। মাত্র ৬ মাসের ব্যবধানে যোগ দেয়া ২২তম ব্যাচের কর্মকর্তারা একই সঙ্গে পদোন্নতি চাইছেন। তাদের পদোন্নতি পাওয়ার জন্য যোগ্যতা অর্জন করেছেন। ২২তম ব্যাচের কর্মকর্তারা পদোন্নতির জন্য (২১তম ব্যাচের) সিনিয়র সচিব ও সচিবদের সঙ্গে দেখা-সাক্ষাৎ করছেন।
মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, মুক্তিযোদ্ধা কর্মকর্তাদের বয়স বৃদ্ধির প্রস্তাবটি সহসা মন্ত্রিসভার বৈঠকে উঠছে না। এ ব্যাপারে উচ্চ আদালতের দেয়া রায় খতিয়ে দেখা হচ্ছে। দুই মাসের মধ্যে মন্ত্রিসভায় প্রস্তাবটি উত্থাপনের যে বাধ্যবাধকতা বিষয়ে বলা হচ্ছে, তেমনটি রায় পড়ে মনে হয়নি কর্মকর্তাদের। এখানে রায় বাস্তবায়নে সরকারের আরো সময় নেয়ার সুযোগ আছে বলছেন তারা। তবে উচ্চ আদালতের নির্দেশনা বাস্তবায়নে সতর্কতার সঙ্গে কাজ করছে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়টি।
প্রশাসনে ইতিমধ্যে পদোন্নতির তোড়জোড় চলছে। উপ-সচিব, যুগ্ম-সচিব এবং অতিরিক্ত সচিব এই তিন স্তরের পাঁচ শতাধিক কর্মকর্তার পদোন্নতির জন্য প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি শুরু হয়ে গেছে। অন্যান্য ক্যাডার থেকে যারা প্রশাসন ক্যাডারে আত্মীকৃত হতে চান তাদের আবেদন নেয়াও শেষ হয়েছে ২৫ নভেম্বর।
সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, এবারের পদোন্নতি প্রক্রিয়ায় ইতিপূর্বে বঞ্চিতরাই প্রাধান্য পাবেন। আর তা হলে এটি চমকই হবে; কারণ বঞ্চিতদের খুঁজে বের করে পদোন্নতি দেয়াটা ব্যতিক্রমধর্মী কাজ।
উল্লেখ্য, ১৯৮২ থেকে ২০০১ সাল পর্যন্ত যেসব ব্যক্তি চাকরিতে যোগ দিয়েছেন সেসব ব্যাচের হাজারখানেক কর্মকর্তা রয়েছেন, যারা বিভিন্ন ধাপে (উপ-সচিব, যুগ্ম-সচিব, অতিরিক্ত সচিব, সচিব) পদোন্নতি পাননি। এবার তাদেরই বিশেষ সুযোগ দিতে পদোন্নতির প্রক্রিয়াটি শুরু করা হয়েছে। পাশাপাশি ১১তম ব্যাচের কর্মকর্তাদের নতুন করে উপ-সচিব পদে পদোন্নতির তালিকায় নেয়া হচ্ছে। যদিও প্রশাসনে কোনো শূন্য পদ নেই। বরং প্রতিটি পদের বিপরীতে অসংখ্য কর্মকর্তার উপস্থিতি প্রশাসনকে ভারি করে তুলেছে।
কর্মকর্তাদের বিদ্যমান অবস্থা: সর্বশেষ ২০১৫ সালের ৬ এপ্রিল তিন স্তরে বড় আকারের পদোন্নতি দেয়া হয়। এ সময় অতিরিক্ত সচিব পদে ২৩১ জন, যুগ্ম-সচিব পদে ২৯৯ জন এবং উপ-সচিব পদে ৩৪২ কর্মকর্তাকে পদোন্নতি দেয়া হয়। ফলে বর্তমানে মঞ্জুরিকৃত পদের ক্ষেত্রে অতিরিক্ত সচিবের ১০৭ পদে ৩৭৩ কর্মকর্তা, যুগ্ম-সচিবের ৪৩০ পদে ৮৬৯ জন এবং উপ-সচিবের ৮৩০ পদে ১,৮১৮ কর্মকর্তা নিয়োজিত আছেন। অবশ্য পরিস্থিতি সামাল দিতে পদোন্নতিপ্রাপ্তদের অধিকাংশকে পদোন্নতি-পূর্ব পদে থেকেই কাজ করতে হচ্ছে।
অর্থাৎ অতিরিক্ত সচিব করছেন যুগ্ম সচিবের কাজ, যুগ্ম সচিব করছেন উপসচিবের কাজ, উপসচিব করছেন জ্যেষ্ঠ সরকারি সচিবের কাজ। অনেকের আবার মঞ্জুরিকৃত পদ জোটেনি। সুপারনিউম্যারারি (সংখ্যাতিরিক্ত) পদে থেকে বিড়ম্বনার মধ্যেই আছেন তারা। তবুু পদোন্নতি পাওয়াটাকে গৌরবের বলেই মনে করেন তারা। কারণ এতে তাদের সামাজিক মর্যাদা বৃদ্ধি পায়।
বঞ্চনা : ২০০৯ সাল থেকে এ পর্যন্ত আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন মহাজোট সরকারের আমলে একাধিকবার পদোন্নতি দেয়া হয়েছে। আর এ প্রক্রিয়ায় বঞ্চনার ঘটনাও ঘটেছে অতীত সংস্কৃতির ধারাবাহিকতায়। বিপরীত চেতনার চিহ্নিত করার পাশাপাশি কাকে টপকাতে পারলে কার পদোন্নতি নিশ্চিত হবে সে বিবেচনা মাথায় রেখেই পদোন্নতি হয়েছে। আর এতেই ‘কপাল পুড়েছে’ অনেকের। সুশাসনের কথা বলে ‘দলীয় আর নীতিনির্ধারকদের ব্যক্তিগত পছন্দ-অপছন্দের’ নিরিখে দেয়া পদোন্নতিতে বঞ্চিত থাকতে বাধ্য হয়েছেন অনেকেই। ’৯০ দশকের পর থেকেই প্রশাসনকে এই নোংরা খেলা কুরে কুরে খাচ্ছে বলে প্রশাসন সংশ্লিষ্টদের মত।
জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব ড. কামাল আবদুল নাসের চৌধুরী অবশ্য একাধিকবার বলেছেন, পদোন্নতি না হওয়ার পেছনে কোনো রাজনৈতিক কারণ নেই। প্রযোজ্য নম্বর না থাকা, বিভাগীয় বা দুর্নীতির মামলা, শাস্তিপ্রাপ্ত হওয়া, বার্ষিক গোপনীয় প্রতিবেদনে বিরূপ মন্তব্য ইত্যাদি কারণে পদোন্নতি দেয়া সম্ভব হয় না; কিন্তু যারা পদোন্নতি পান না তারা কেবলই বলেন বঞ্চনার কথা। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক যুগ্ম সচিব বলেন, বেশিরভাগ কর্মকর্তার পদোন্নতি সুনির্দিষ্ট কারণে আটকানো হলেও কিছু কর্মকর্তার পদোন্নতি দলীয় বিবেচনায় দেয়া হয়েছে এটা ঠিক। তবে এর সংখ্যা খুব বেশি না। এছাড়া ব্যাচভিত্তিক ঠেলাঠেলির প্রতিযোগিতায়ও অনেকে আটকা পড়েছেন।
সুত্রঃ মানবকণ্ঠ
Comments (0)
আছিস বলেই কখনো আবার
ধুত্তুরি ছাই ভাললাগেনা
পান থেকে চুন খসলেই মনোমালিন্য
খানিক পরেই রঙ্গে ঢঙ্গে মান ভাঙ্গানো
দেরি করে আসলি কেন
আজই শেষ, আর কথা নেই
তারপরে ঘুম পলাতক
চোখ ছলছল
আরেকবার সাধলে ফেরার আশা।
খুব খুব ভাললাগা জানালাম...